1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Tuesday, January 26, 2021

অ্যাসিড

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

অ্যাসিড
মধুমিতা রায় চৌধুরী মিত্র

 সকাল ১০টা, শনিবার, ১২.০৭.২০১৯

-হ্যালো রাজাদা??
-হ্যাঁ, বল রুমকি, তোর তো পাত্তাই নেই!
-আজ বিকেলে একবার দেখা করতে পারবে? ভীষণ দরকার ছিল। ওঃ! তোমার তো আজকে টিউশান আছে। থাক তাহলে।
- ধুর টিউশানকে মার গুলি! তোর জন্য জান হাজির। আমি ঠিক বিকেল ৪'টেতে ইটখোলা মাঠের ওই জায়গায় থাকবো। চলে আসিস।
-না, তুমি, বিলাসী ক্যাফেটেরিয়াতে থেকো। ওই ইটখোলা মাঠে আমি আর যাবো না।
-সে'কি রে! এতো কিছু হলো আমাদের ওখানে, আর এতদিন বলতিস টাউনের মধ্যে সবাই দেখে ফেলবে!! এখন কি হলো রে!!
-তুমি সময় মতন এসো। আমি অপেক্ষা করবো। রাখলাম।
-ও'কে! ডার্লিং!

বিকেল ৩.১৫, শনিবার, ১২.১২.২০১৯

-দাদা, তোর তো টিউশান সেই বিকেল ৫'টায়! এখনই জামা পরে কোথায় যাচ্ছিস?
-সব সময়, পেছনে গোয়েন্দা গিরি করবি না রিনি! ক্লাস নাইন হয়েছে, পড়াশোনায়ে মন দে।
-আমার ক্লাস নাইন হলে তোরও ক্লাস টুয়েলভ! তোর তো সামনেই পরীক্ষা। মা'কে সব বলে দেবো! তুই রুমকির সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস। আর কি হয়েছে'রে রুমকির? আজকাল কোচিং ক্লাসেও আসে না, স্কুলেও আসে না। শরীর খারাপ?? 
-নিজের চরকায় তেল মার। আমি চলি।

বিকেল ৩.৪৫,শনিবার, ১২.১২.২০১৯

-হ্যালো, বল তোর আবার কি হলো?
-শোন না! অভয়,, আজ, রাত্রে নোটসগুলো তোর থেকে নিয়ে নেবো। ম্যানেজ দিস প্লিজ।
-এই নিয়ে তিন দিন এরকম করলি রাজা। কাকু তোর পেছনে বেকার টাকা ঢালে। সামনে টেস্ট। আজও, কি ইটখোলা!
-উফফ! তুই আর রিনি, প্রশ্ন করে করে আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিলি। আজ টাউনে। রুমকি, বিলাসী'তে ওয়েট করছে। চলি।

বিকেল ৪.০৫,শনিবার, ১২.১২.২০১৯

-ও'রে না!! আজ একেবারে অন টাইমে, আমার ডার্লিং দাঁড়িয়ে! চল কেবিনে চল! ভালো টাইম বেছে ছিস, একদম ফাঁকা।
-না, পাশের গলিতে চলো, শরীর ভালো নেই! দরকার খুব, তাই এলাম।
-কি হয়েছে রে? জ্বর? দুদিন ফোন তুলিসনি কেন?
-জ্বর না। আমি প্রেগনেন্ট, রাজাদা!!!
-
সব চুপ। যেন হওয়াও বই'ছে না।
-
-
-
-
-মানে!
-আমায়, বিয়ে করবে?
-কি….কি, সব, আলতু…. ফালতু, বকছিস!
-অনেক কষ্টে লুকিয়ে এসেছি? সকালেও লুকিয়ে তোমায় ফোন করেছিলাম। বাড়িতে সব জেনে গেছে। পাশের বাড়ির শান্তি কাকিমার বাড়ি যাচ্ছি বলে এসেছি। নাহলে আমার বেরোনো বন্ধ। কাকিমা, ওই দোকানটায় দাঁড়িয়ে। কিছু বলো।
-দেখ, আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না! তোকে আমি রাত্রে ফোন করবো।
-তাহলে রাত্রে ঠিক ৯'টায় করো। আমি শান্তি কাকিমাকে বলে রাখবো। এসে মা'কে ব্যস্ত রাখবে। তুমি কিছু ভেবে বলো। পারলে বাড়িতে জানিও। আসলাম।।।
-
-
-মফঃস্বল-বাসী রাজা মানে মাত্র ১৯ বছর বয়সী রাজশেখর দাস, ক্লাস টুয়েলভে পড়েন। উচ্চোমধ্যমিক দেবেন এই বছর। গত বছর পুজো থেকে ১৫'বছরের , ক্লাস নাইন পড়ুয়া রুমকি সামন্ত নামে এক সুন্দরী মেয়ের  প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। মানে দুজনেই খাচ্ছেন। কোচিং ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তাঁরা লোক চক্ষুর আড়ালে, গঙ্গার ধারে ইটভাঁটায়ে গিয়ে প্রেম করেন, মানে একে অপরকে গভীরভাবে স্পর্শ করে প্রেম করেন। আজ সেই গভীর প্রেমের পরিণতি হলো, রুমকি দু-মাসের অন্তঃসত্ত্বা। রুমকির বাড়িতে সব জেনে গেছে। ডাক্তার দেখিয়ে জানা যায়, অ্যাবরশন করানো যাবেনা। 

রাজশেখর, প্রায়ে ইটের মতন শক্ত হয়ে ইটভাঁটার কেলেঙ্কারির কথা ভাবছে। কাঁপতে কাঁপতে পকেট থেকে ফোন বের করলো। বিড়বিড় করে বলতে শুরু করলো, অভয়.. অভয়.. অভয়…

বিকেল ৫.১২,শনিবার, ১২.১২.২০১৯

-কি, রে!!! রুমকি আসেনি নাকি'রে? ক্লাস মিস করিস না। চলে আয়ে। স্যার এখনো আসেন নি।
-তোরও ক্লাস করতে হবে না। ভীষণ বিপদ! ওখান থেকে চলে আয়ে। খুব খুব দরকার তোকে।
-মানে! আমি ডুব মারবো? কেনো? হলো কি?
-আমি বিলাসী'র চা'য়ের দোকানে বসে আছি রাখলাম।
-হ্যালো!.... হ্যালো!....ধুর!!

বিকেল ৫.৩৫,শনিবার, ১২.১২.২০১৯

-কি হয়েছে? তোর জন্য রুদ্ধ শ্বাসে সাইকেল চালিয়ে আসছি। জল, চা, বিস্কুট, খাওয়া আগে।
-এখানে পিকনিক করতে ডাকিনি। সমস্যায়ে পড়েছি!! 
-
-
-
  দোকানের এক ছোকরাকে রাজা হাঁক দিলো।
- এই কে আছিস, জল, আর দু-কাপ চা তার সাথে যা খুশি বিস্কুট দিয়ে যা এখানে।
অভয় হা করে রাজাকে দেখে যাচ্ছে।
-অভয়, ভাই, খুব বিপদে, বাঁচা!
-সেতো বুঝতেই পারছি। কিন্তু সমস্যা না জানলে বাঁচাবো কি করে?
রাজা, অভয়কে কানে কানে বললো।
-রুমকি প্রেগনেন্ট! কি করবো? ওর বাড়িতে জেনে গেছে, শান্তি কাকিমাকে নিয়ে দেখা করতে এসেছিল। বিয়ে করতে বলছে। আমার বাড়িতে জানতে পারলে, বাবা তো আজকেই জ্যান্ত কবর দেবে'রে। আর বিয়ে করলে'তো পুলিশে ধরবে। কিছু বল।

ইতিমধ্যে চা, জল, বিস্কুট সব এসে প্রায়ে ঠান্ডা জল হয়ে গেল।
 অভয় এসব শুনে বাকরুদ্ধ।

-ভাই আমায় এসবে মাফ কর। মা অনেক কষ্টে সেলাই করে আমার পড়াশোনা চালাচ্ছে। এসব জানাজানি হলে তোর সাথে আমারও জেল হবে। আমি চলি।
-তুই, না আমার বন্ধু! বিপদে কেটে পড়বি?
-অবশ্যই বন্ধু। কিন্তু এটা মানসম্মান নিয়ে টানাটানি। অনেকবার বার বারণ করেছিলাম রাজা। শুনলি না। তখন আমার কথা ফালতু লাগলো।
-অতীতকে টেনে কি করবি। এখন কি করবো বল। রুমকিকে, আজ ঠিক রাত  ৯'টায়ে ফোন করবো। কিছু একটা বলতে হবে।
-তাহলে দুজনে পালিয়ে যা। আর এদিকে কোনোদিন আসিস না। আমি চলি। মাথাটা ঘুরছে।
-
-
-
রাজা, খানিকক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো। তারপর, চা'য়ের টাকা মিটিয়ে, বেরোলো। 
একা গিয়ে ইটভাঁটায় বসে রইল। একেবারে রুমকি'কে ফোন করে বাড়ি ফিরবে।
সময় আর কাটে না।
বুদ্ধিও আর আসে না।
রাগের চোটে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।
মনে মনে বলছে কি কু-ক্ষনেই যে প্রেমে পড়েছিলাম….

রাত ৯.০০,শনিবার, ১২.১২.২০১৯

-হ্যালো, রাজাদা, কি ঠিক করলে?
-দেখ! আমি বাড়িতে জানাতে পারবো না। আর এখন আমার, তোর কারোর বিয়ের বয়স হয়নি। আর পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলে কোথায় যাবো, কি খাবো? আমি কাল বরং কলকাতা যাবো, ওখানে এসবের অনেক ক্লিনিক আছে, ভালো মতন অ্যাবরশন হয়ে যাবে। তোকে টাকার কথা ভাবতে হবে না। আমি জিতুদার থেকে ধার নেবো। আমায় একদিন সময় দে। তারপর চাকরি বাকরি পেলে বিয়ে করবো। বুঝলি!!
-ডাক্তার দেখানো হয়েছে। অ্যাবরশন করানো যাবে না। আমার গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া, কোনো উপায় নেই।
-কি বলি বল! বিয়ে করা ইম্পসিবল।
-রাখলাম।
-
-দু-দিন কাটলো
-
রাজা, যেনো একটু নিশ্চিন্ত হলো, কারণ বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল রুমকির গলায় দড়ি দেওয়া বা তার নিজের বাড়িতে জানাজানি, কোনোটাই হয়নি।
-
-
-
দুপুর ২.৩০,বৃহস্পতিবার, ১৮.১২.২০১৯

-এই দাদা, আর কত ঘুমোবি! 
-এই তুই যা তো! স্কুল থেকে ফিরেই জ্বালায়?
-এমন খবর দেব, যে তুই সত্যি জ্বলবি। রুমকির আসছে জানুয়ারিতে বিয়ে। ওদের গ্রামে হবে বিয়ে। ও'কে খুব পছন্দ, এখানে বিয়ে দিলে পুলিশ কাচারী হবে তাই গ্রামের বাড়ি থেকে বিয়ে হবে।
রাজা, যেন ইলেকট্রিক শক খেয়েছে। সটান সোজা হয়ে বসে। রিনি, আরো কত কি বলে গেল তার মাথায় ঢুকলো না। মনের মধ্যে শুধূ রুমকির মুখ আর ওর শরীর ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। তাঁর রুমকি আর একজনের হয়ে যাবে, আর একজন রুমকি'কে ছোঁবে। এটা হতেই পারে না। ও বিরক্ত হয়ে রিনি'কে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বললো….
-মা,কে বলে দিস, আমার মাইগ্রেনের ব্যাথা বেড়েছে, আজ খাবো না। তুই বেরো।
-
-
সারারাত ধরে অনেক ভাবলো। তারপর একটা প্ল্যান বের করলো। ভোর ৪'টের সময়, পুরো প্ল্যান তার প্রিয় বন্ধু অভয়'কে জানালো।  অভয় বোধ হয় জাগাই ছিল। সেই মেসেজ দেখে, পাল্টা মেসেজ এলো--

-ভাই খুব তোফা প্ল্যান তোর!  ঠিক সকাল ৬'টায় ফুটবল মাঠের ধারে আয়ে, কথা আছে।
রাজা, অভয়ের থেকে 'অভয়' পেয়ে, সময়ের আগেই মাঠে পৌছে গেল।


সকাল ৬.১৫, শুক্রবার, ১৯.১২.২০১৯


-কি'রে এতো লেট। নিজেই বললি ৬'টা।
-তোর পনেরো মিনিটও এখন বেশি লাগছে, কোচিং'য়ে তো রোজ আধ ঘন্টা দেরি করিস।
-আচ্ছা ঠিক আছে। বল কি বলবি।
-তুই শিওর তো?
-কোন ব্যাপারে?
-এই যে রুমকির ব্যাপারে?
-মানে?
-মানে তুই ভোর বেলায় মেসেজ করলি,...রুমকির বিয়ে!
-হ্যাঁ। কাল রিনি পাক্কা খবর নিয়ে এসেছে।
-তাহলে প্ল্যানটাও পাক্কা করে ফেলেছিস?
-হ্যাঁ, একদম। 'অ্যাসিড' মারব!
-এটাই জানার ছিল যে তুই ঠিক কতোটা প্রস্তুত মারার জন্য?
-হান্ড্রেড পার্সেন্ট!
-ছাড় না! কি দরকার?
-নাঃ! পারলাম না বস্।
-কেন মার'বি? ওর দোষ কোথায়?একবার শুধু বল ওর একার দোষটা কোথায়?
-আমায় ঠকিয়েছে!
-তো'কে? তা'কি... ভাবে ঠকালো শুনি?
-ও আমাকে কথা দিয়েছিল যে আমাকে বিয়ে করবে, এখন অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করবে আর আমি সেটা হা করে দেখবো?
-ওঃ! এই জন্য অ্যাসিড মারবি?
-হ্যাঁ। ওকে আমি না পেলে, কেউ পাবে না। 
-তাহলে বিয়ে করে ফেল।
-এখন বিয়ে!! এই ১৯'বছরে, আর ওর ১৫'বছর। তারওপর এখনো আমি এখনো উচ্চমাধ্যমিক দিলাম না, চাকরি পেতে এখন অনেক...অনেক সময় লাগবে।
-ওঃ, তাহলে ও'কে অপেক্ষা করতে বল।
-সব বলেছিলাম, টাকা ধার নিয়ে আপাততঃ অ্যাবরশন করিয়ে দেব। রাজি হয়নি।
-কেন রাজি হলো না, সেটা জিজ্ঞেস করেছিলি?
-হ্যাঁ, বলে ডাক্তার বলেছে করা যাবে না। আরে পৃথিবীতে রোজ লাখ লাখ হচ্ছে। ওর ডাক্তারই শুধু বারণ করলো। আসলে বিয়ে করার সাধ জেগেছে। তাই আমাকেও এখনই বিয়ে করতে বলছিলো।
-তাহলে, তো ঠিকই বললো। তুই তাঁর বাচ্চার বাপ, তোকেই তো দায়িত্ব নিতে হবে।
-তোর ও কি মাথা গেছে!! এখন বিয়ে করে কোথায় যাবো? জেলে?
-বুঝলাম, তা অ্যাসিড কিভাবে মারবি সেটা তো লিখলি না? আর অ্যাসিড পাবি কোথায়?
-জিতুদার গ্যারেজে গাড়ির কাজের জন্য আসে। সেখান থেকে আজকেই এক বোতল ঝাড়বো। 
আর, রুমকি, রোজ দিদিমার বাড়ি রাত্রে ঘুমোতে যায়। দিদিমা একা থাকেন বলে। আর ভোর ৫.৩০ থেকে ৬' টার মধ্যে বাড়ি ফেরে। এই শীতের সকালে ক'টা লোকই বা ওঠে!! আজও দেখলাম ওদের বাড়ি থেকে দিদিমা'র বাড়ির গলিটা নিঝুম। দূর থেকে দেখলাম ও বাড়ি ফিরছে। সেটা দেখার জন্যই আগে বেরিয়েছিলাম। কুয়াশার মধ্যে চাদর মুড়ি দিয়ে থাকবো কেউ চিনবে না। তখনই মারবো।
-বাঃ! কবে মারবি তাহলে?
-কাল। কাল ভোরে। তুইও থাকবি সাথে।
-ভেবে দেখবো। চলি।
-
সকাল ৫.১৫, শনিবার, ২০.১২.২০১৯

-এই ঠান্ডার মধ্যে তো জমে যাবো'রে! কি কুয়াশা আজ!
-একটু চুপ থাক'না।

সকাল ৫.৩৫, শনিবার, ২০.১২.২০১৯

-আসছে। আসছে।
-তুই কি আসলে'ই মারবি?
-না তো কি চলে গেলে মারবো! কনসেনট্রেট করতে দে।
-একটা কথা বলি?
-আবার কি?
-আজকে মারিস না। তোর বোন'তো বলেছে এই মাসের শেষে গ্রামে যাবে।
-কেন? আজকে মারবো না কেন?
-তোর সাথে একটা জরুরি কথা আছে। শুনে'নে তারপর মারিস।
-জানিস কত কষ্ট করে অ্যাসিডের বোতল'টা ঝাড়লাম। তারপর এই ঠাণ্ডার মধ্যে অপেক্ষা। এখন বলছিস, কথা আছে। কথাটা কাল সকালেই তো বলতে পারতিস বা কাল সারা'রাতে।
- আরে বাবা! অ্যাসিড যখন মারবি'ই তখন একদিন পরেই মারনা!!
-আচ্ছা চল, এখান থেকে। মাঠে চল।

সকাল ৬.১৫, শনিবার, ২০.১২.২০১৯

-বলে ফেল কি বলার আছে তোর।
-যা জিজ্ঞেস করবো সবের ঠিক উত্তর দিবি'তো?
-তোকে কবে মিথ্যে বললাম?
-ওর বিয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলাম।
-তো!
-তুই কি খোঁজ নিয়েছিলিস কেন ও অ্যাবরশন করাতে পারবে না বললো?
-নাঃ। বিয়ে করার ইচ্ছে তাই হয়তো!
-আমি কাল তোর সাথে সকালে কথা বলার পর, শান্তি কাকিমার বাড়ি যাই। গিয়ে জিজ্ঞেস করি।
-মানে! তুই এই অ্যাসিডের কথা ফাঁস করে এলি?
-নাঃ। আগে মানুষকে বিশ্বাস করতে শেখ।
-আচ্ছা! বল তাহলে কি জেনে এলি? 
-রুমকির অ্যানিমিয়া আছে তার সাথে জরায়ুতে সমস্যা। এখন এই অবস্থায় অ্যাবরশন করাতে গেলে ও প্রাণে বাঁচবে না'রে। তাই ডাক্তার বারণ করে দিয়েছে।
ও, তাই নিরুপায় হয়ে তোর সাথে দেখা করে। বিয়ের কথাও বলে। তোকে এটাও জানায় অ্যাবরশন করাতে পারবে না। কিন্তু তুই, না, ও'কে এই মূহুর্তে বিয়ে করতে চেয়েছিস, না অ্যাবরশন না করানোর কারণ জানতে চেয়েছিস।
-হ্যাঁ, কারণ কোনোটাই এখন সম্ভব না। সেটা তুইও জানিস।
- হ্যাঁ, সব জানি। এবার তোকে কিছু কথা বলি। চুপচাপ শোন।  তারপর যা করার করিস। দরকার হলে আমি তোর হয়ে নিজে গিয়ে  অ্যাসিড মেরে আসব। 
রুমকির এই শারীরিক সমস্যা নিয়ে অ্যাবরশন ইম্পসিবল। আর তুই এখনও তো উচ্চমাধ্যমিকই দিতে পারলি না। তোর নিজেরই ১৯ বছর বয়স। নিজের খরচ মেটাবার ক্ষমতা নেই । ওকে  দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে করার মত সাহস, বয়েস কোনোটাই তোর নেই। এত কিছুর পরও তোরা দুজনেই দুজনের সাথে অবৈধ কাজ করেছিস। বুঝলাম তোরা একে অপরকে খুব  ভালবাসিস। তাই এগুলা করেছিস। তাহলে ও যখন প্রেগনেন্ট হল ওকে বিয়ে করতে পারছিস না উল্টে  ভ্রুণ হত্যার মত আরো একটা জঘন্য কাজ করতে চাইছিস। ও'র সমস্যাটাও জানার চেষ্টা করলি'না। কিন্তু ও যখন তোর অক্ষমতা ওর বাড়িতে জানায় , ওর পরিবার ও'কে শাসন করার পর ভরসাও দেয়।  আর যাঁর সাথে ওর বিয়ে হচ্ছে সে ভালো মতন প্রতিষ্ঠিত এবং এই সব কিছু জেনে ওকে  বিয়ে করতে রাজি হয়েছে শুধুমাত্র ও'কে, অপমানের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়ে। আর সেখানে তুই ও'কে এত ভালোবাসিস যে বিয়ে করতে না পারায়,অ্যাসিড ছুড়ে মারার মতন একটা ঘৃণ্য পরিকল্পনা করছিস!  নিজের অক্ষমতা ঢাকার কি দারুন প্ল্যানিং তোর! এবার তুই বোঝ, তুই কি করতে চাস?
-
-
দুজন, দুজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।

আসতে আসতে কুয়াশা কাটছে।

অভয় নিস্তব্ধতা ভেঙে বললো--

 তুই থাক এখানে যতক্ষন খুশি। দাঁড়িয়ে ভাব রুমকি'কে নিয়ে পালাবি? না কি ওকে অ্যাসিড মারবি? না নিজে সুইসাইড করবি? নাকি ভালো মতন পরীক্ষা দিয়ে, মানুষের মতন মানুষ হবি?

আমি চলি। সামনে পরীক্ষা। 
এখন জীবনের অনেক পরীক্ষা বাকি।
madhumitaroychoudhurymitra@gmail.com
কলকাতা



No comments:

Post a Comment