সম্পাদকীয়
তরুণ চক্রবর্তী সম্পাদক |
মহালয়ার পূণ্য দিনে, শরতের উজ্জ্বল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনার মধ্যে, কাশফুলের
শুভ্র আন্দোলনের সাথে তাল মিলিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো ‘বইসই ওয়েবজিনে’র তৃতীয় বর্ষ, প্রথম সংখ্যা ।শারদ সংখ্যা । বিভিন্ন ধরণের লেখায় সমৃদ্ধ এই সংখ্যা আশা করি সমস্ত ধরণের পাঠকের রুচির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে।সমস্ত লেখকদের,বইসই এর তরফ থেকে ধন্যবাদ জানাই।সবাইকে জানাই শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদান্তে
সম্পাদক
'বইসই'
আমার কথা
চিরঞ্জিত ঘোষ প্রধান কার্যনির্বাহী সম্পাদক |
আমার ছোটোবেলার বেশ কিছু বছর মামার বাড়িতে কেটেছে । আর সময়টা আশির দশক । সেই সময় এতো ডিজিটাল ব্যাপার ছিলোনা। মেরেকেটে হাতে গোনা বাড়িতে টিভি আর মোটামুটি কম বেশি সবার বাড়িতে একটা রেডিও । তখন এখন কার মতো “মা আসতে আর ৪৫ দিন বাকি “ এই রকমের বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখা যেতোনা । তখন ক্যালেন্ডার গুণে মহালয়া মনে রাখতে হতো । আর একটা জিনিস দেখলে বোঝা যেতো মহালয়া আসছে ,সেটা হলো রেডিও খারাপ থাকলে সারানো হতো আর নতুন ব্যাটারি লাগানো । ব্যাটারি বলতে এখনকার মতো পাতলা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি নয় , মোটা মোটা কাগজের মোড়ক দেয়া গ্রাফাইট কার্বন ব্যাটারি। এখন হয়তো আর ঐরকম ব্যাটারি পাওয়া যায়না। পাওয়া গেলেও কে বা খবর রাখে ।
মহালয়ার রাতে শুতে যাওয়ার আগে দাদু সবাইকে বলে দিতো ‘ কাল অনেক ভোর বেলা উঠতে হবে মহালয়া আছে ’ তখন মহালয়া শুনলে খুব আনন্দ হতো কারণ সবাই ভোর বেলা উঠবে মহালয়া শুনবে, দাদু গঙ্গায় তর্পন করতে যাবে আমিও দাদুর সাথে ভোর বেলা গঙ্গা যাবো । এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম তার খেয়াল থাকতো না । হঠাৎ দাদুর ডাকা ডাকিতে ঘুম ভাঙ্গতো, দেখতাম রেডিওটা ঘরের মাঝে রাখা, তার পাশে ধুপ বাতি জ্বলছে, রেডিওতে কিছু বিজ্ঞাপনের শব্দ শোনা যাচ্ছে, সবাই সেই ফাকে হাত মুখ ধুয়ে নমো নমো করে মহালয়া শোনার প্রস্তুতি নিচ্ছে । তার পর শুরু হতো মহালয়া , ওই বয়েসে কি বুঝতাম মনে নেই ,শুধু ওই যখন মা দুর্গাকে অন্য সব দেবতারা অস্ত্র শস্ত্র প্রদান করছে এক এক করে ,ওই জায়গাটা খুব ভালো লাগতো। এই ভাবেই অনেক বছর মহালয়া কেটেছে । কোনো এক বার দাদুকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম কে ওই মহালয়া পাঠ করে দাদু বলেছিল বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র। ওই প্রথম পরিচয় হয় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রর সাথে ।
এর পর এলো দুরদর্শনে 'মহিষাসুরমর্দিনী' । রেডিওর মহালয়া শেষ হওয়ার পর শুরু হতো দুরদর্শনে 'মহিষাসুরমর্দিনী' । বেশ লাগতো,একটা সিনেমা সিনেমা ব্যাপার ছিলো, কোন বছর কোন নায়িকা দুর্গা হবে তাই নিয়ে খুব আলোচনা হতো।
এই ভাবে কিছু বছর চলার পর আমিও বাড়ি ফিরে এলাম মামারবাড়ি থেকে, ফলে মামার বাড়ির মহালয়ার এসেন্সটা পরিবর্তন হয়েছিল বাড়িতে এসে , আমিও বড় হয়েছিলাম অনেকটা ,ফলে মহালয়া দেখা বা শোনার বাধ্য- বাধকতা ছিলোনা , মা হয়তো ডেকে দিতো আমিও উঠতাম কিছু ক্ষণ শোনার পর আবার ঘুমিয়ে পড়তাম , আসলে যুগের পরিবর্তনের ফলে ক্যাসেট সিডির যুগে অকাল বোধনের মতো অকাল মহালয়া শোনার একটা চল হয়েছিল।
আরো কিছু বছর পর ডাক্তারি পড়ার সময়ে হোস্টেলে থাকতে হতো,সেই সময়ের মহালয়ার স্মৃতি পুরোটাই অন্যরকম , আসলে কলেজে এক জাগ্রত মা কালির পুজো হতো মহালয়ার অমাবস্যা রাতে তার সাথে ছাগ বলি , আমার যারা হোস্টেলে থাকতাম বেশ কিছু মা ভক্ত সারাদিন উপোস করে পুষ্পাঞ্জলি দিতাম ,তারপর শুরু হতো আমাদের উল্লাস , কারণ সুধা সহকারে মাংস,কখন যে সকাল হয়ে যেতো বুঝতেও পারতামনা কিন্তু প্রতিবছর ভাবতাম এই বছর অন্তত মহালয়াটা শুনবো, শেষ পর্যন্ত ভাবাটাই সম্বল হতো।
এর পর কলেজ শেষ হলে বাড়ি ফিরে বাস্তব জীবনে প্রবেশ ফলে কলেজের মহালয়া শুধু সৃতি হয়ে গেলো। বাস্তব জীবনে বাড়ি হাসপাতাল ,চেম্বার পেশেন্টর গোলক ধাঁধা তে এমন ভাবে অবদ্ধ হলাম যে কবে মহালয়া আসছে যাচ্ছে টেরই পেতাম না ।
এর পর বছর তিনেক আগে 'বইসই' এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশ হলো মহালয়াতে , আমি যখন বাড়ির জানালার ধারে টেবিলে বসে সারা রাত জেগে ম্যাগাজিনের কাজ করছি , কখন যে আমার বাড়ির আশেপাশে বাড়ি গুলো জেগে উঠলো ,এক এক করে বুছতে পারিনি। যখন আমার কাজের একদম শেষ পর্যায়ে তখন বাড়ির পাশের রেডিওতে ভেসে উঠলো সেই শঙ্খ ধ্বনি সমেত কোরাস
“যা চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোন্মূলিনী
যা ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনী যা রক্তবীজাশনী ।“
কাজ শেষ করে ল্যাপটোপ বন্ধ করতে বিরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের গলায় শুনতে পেলাম ...
“আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর;
ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।
আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।
তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন।
আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।“
হঠাৎই মামার বাড়ির রেডিওর পাশে জ্বালানো ধুপের গন্ধ টের পেলাম, ওই চেয়ারে বসে মহালয়া শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই, এবং এই ভাবেই শেষ তিন বছর বইসই করতে করতে মহালয়া শোনা হয় । এও এক নতুন অভিজ্ঞতা ।
বইসই -এর সবটাই তার প্রিয় সাহিত্যিক ও পাঠক-পাঠিকাদের জন্য। যারা আমাদেরএই সংখ্যার জন্য লেখা দিয়েছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতেও সহযোগিতার আশা রাখি। আপনারা পড়ুন, এবং অন্যদের পড়ান। এবং পরবর্তী সংখ্যার জন্য অপেক্ষা করুন।সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সাবধানে থাকুন। আর আমাদের প্রয়াস কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন।আমাদের নতুন নতুন আপডেট পেতে Facebook পেজে ও বইসই ওয়েবজিনে
like ও follow করে রাখুন।
ধন্যবাদান্তে
প্রধান কার্যনির্বাহী সম্পাদক
' বইসই '
সূচিপত্র
লেখা পড়তে ক্লিক করুন
গল্প
কবিতা
অণুগল্প
চলচ্চিত্র সমালোচনা
আমার বাগান
রান্নার রেসিপি
শিল্পাঙ্গন
আর্টওয়ার্ক
চিত্রলোক
No comments:
Post a Comment