![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
চাঁদের দেশে ভাবের দেশে
রানা জামান
ঘরে বসে থাকার সময়টা
বেকার না কাটিয়ে কিছু একটা করতে চাচ্ছে জাহিদ কবির। করোনাভাইরাসের সংক্রমনকালে
রুটিনমাফিক ঘর মুছা ও এঁটো থালাবাসন মাজা ও টয়লেট পরিস্কার করা খানিকটা কাজ হলেও
এতে আট ঘন্টা কাটানো যায় না! কিন্তু কী কাজটা করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। ঢুকলো
গুগলে। সৃজনশীলতা কী খুঁজছে। নতুন কিছু করা অথবা পুরনো কোনো কিছুতে বাঁক আনা-ই
সৃজনশীলতা। বুঝে গেছে। কিন্তু কী বুঝেছে? যে কাজটা সে কখনো করে
নি সেটা শৈল্পিকভাবে করতে পারলে হয়ে যাবে সৃজনশীল সৃজন।
সরকারি চাকরির তেত্রিশ
বছর কেটেছে দাপ্তরিক কাজ করে। দাপ্তরিক কাজে কি সৃজনশীলতা আছে? নেই-থোড়
বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। তবে অনেকেই দাপ্তরিক কর্তব্যের
বাইরে অনেক কিছু করেছে এবং করছে। ওসবই কি সৃজনশীল কাজ? কবিতা
লেখা? ছড়া লেখা? গল্প লেখা? বা গান গাওয়া? কোনো ইন্ট্রুমেন্ট বাজানো? ছবি আঁকা?
কিছুদিন আগে একজন সচিব কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। একজন
অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব একুশে পদক পেয়েই গিয়েছিলেন প্রায়- নাম ঘোষিত হবার পর তা
বাতিল করা হয়েছে। রান্না-শৈলিতে সৃজনশীলতা থাকলেও মনগড়া অরুচিকর রেসিপি উপস্থাপন
করতে থাকায় কেকা ফেরদৌসী দর্শকশ্রোতাদের 'দূঅ দূঅ' পেয়েও নিজেদের টিভি চ্যানেলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে; অপরদিকে
সিদ্দিকা কবির ইন্তেকাল করেও জনপ্রিয় হয়ে আছেন। আবার ড. মাহফুজুর রহমান স্ত্রী ইভা
রহমানকে থামিয়ে নিজের টিভি চ্যানেলে গান গেয়ে চলেছেন দর্শকশ্রোতাদের অবিরাম বকাবকি
উপেক্ষা করে!
গোসল করার সময় ওয়াশরুমে একটু কণ্ঠ উঁচিয়ে গুণগুণ করলে বরাবর ভর্ৎসনা
শুনতে হয়েছে গিন্নির। সেকারণে এখনো মুখে কুলুপ এঁটে জাহিদ কবীর করে যাচ্ছেন স্নান।
এর মানে গান গেয়ে সৃজনশীল কিছু করা যাবে না। গান গাওয়ার প্রচেষ্টাকে চিরবিদায়- গান
শুনেই যেতে হবে বাকিটা জীবন!
রান্না বলতে ডিমের ওমলেট
ভাজতে গেলে সামান্য পুড়ে হয় কিছু একটা- পোচ করতে গেলে ফেটে যায় কুসুম বরাবর।
করোনাকালে রান্নার আনুষাঙ্গিক কাজে যেমন তরকারি কুটা, সিদ্ধ
আলু ভর্তার জন্য চটকে দিতে গেলে শুনতে হয়েছে গিন্নির মৃদু মুখঝামটা!
থাকলো চিত্রাঙ্কন ও
লেখালেখি। সাথে সাথে মনে পড়ে গেলো ছাত্রাবস্থায় অসহায়ত্বের কথা। বিজ্ঞানের
চিত্রগুলো কোনোভাবেই ও আঁকতে পারতো না। ল্যাবরেটরির কেয়ারটেকারকে টাকা দিয়ে
ব্যাবহারিক খাতায় ছবি আঁকিয়ে জমা দিয়েছে প্রতিবছর। পরীক্ষার সময়ও ওকে এই কাজটি
করতে হয়েছে। এখন আঁকতে গেলে ওস্তাদ ধরতে হবে আঁকাআকি শেখার জন্য। কিন্তু করোনাকালে
বাহিরের লোক বাসায় ঢুকানো যাবে না কিছুতেই। তার মানে চিত্রাঙ্কনের চেষ্টা বাদ।
রয়ে গেলো লেখালেখি।
কিন্তু লেখালেখি ওস্তাদ ধরে শেখা যায় না! মনে ভাব থাকতে হয় এবং ভাব প্রকাশের জন্য
জানতে হয় কৌশল। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকলো জাহিদ কবির। কই? ভাব
আসছে না! ফেসবুক খুললে দেখা যায় কত লেখক! কত লেখা- কবিতা ছড়া গদ্য, আরো কতকিছু! ওরা এতোসব লেখে কিভাবে? পড়লে কি লেখার
শক্তি জন্মাবে? সৃজনশীলতা আসবে?
জাহিদ কবির ছুটে গেলো
লাইব্রেরিতে। রবীন্দ্র সমগ্র ও নজরুল সমগ্র কেনার পর খুলে দেখা হয়নি। বইগুলো
নামিয়ে পড়তে শুরু করলো। এক সপ্তায় পড়া শেষ; কিন্তু কোথায় ভাব?
তার মানে শুধু পড়লে ভাব আসবে না- ভাব আসার জন্য সৃষ্টি করতে হবে
পরিবেশ। কোনো একসময় শুনেছিলো জোছনা রাত ভাব আসার জন্য মোক্ষম পরিবেশ। ব্যালকনিতে
এসে আকাশের দিকে তাকালো জাহিদ এদিকওদিক। দিনের আলোয় চাঁদকে তেমন দেখা যায় না,
সেটাও ভুলে গেছে জাহিদ। থাকলো রাতের অপেক্ষায়। আজ পূর্ণিমা না হলেও
অনেক জোছনা।
ছাদে এলো জাহিদ। বাতাস বইছে ফুরফুরে। বেশ ভালো লাগছে চাঁদের আলোয়। শানবাঁধানো বেঞ্চে বসে তাকিয়ে রইলো চাঁদের দিকে।
জোছনা ফুরোলে স্ত্রীর
বকা শুরু হলেও ভাব এলোনা জাহিদ কবিরের মনে!
No comments:
Post a Comment