1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

শাপলা বা শালুক

ছবি : ইন্টারনেট

শাপলা বা  শালুক 

বাঞ্ছারাম

শাপলা অতি পরিচিত একটি নাম তাই না! এটি আসলে একটি জলজ উদ্ভিদ। যাকে আমাদের দেশের জাতীয় ফুল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটি শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল তবে নীল শাপলা সেখানকার জাতীয় ফুল। সেখানে এই ফুল Nil Mānel (নীল মাহানেল) নামে পরিচিত। তবে এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে অনেক বেশি দেখা যায়।

হাওড়-বিল ও দিঘিতেও এটি বেশি ফোটে থাকে। নীল শাপলা ও লাল শাপলা ফুল ঘরের শোভার কাজে সাজানো হয়। এই ফুল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সবজি হিসেবে শাপলার কদর অনেক এবং পুষ্টিগুনেও ভরপুর।

তাহলে চলুন জেনে নেই শাপলা ফুল সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ

শাপলাঃ

এটি পুষ্প বৃক্ষ পরিবারের একটি জলজ উদ্ভিদ। ইংরেজিতে বলা হয় Water lily। তবে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়, ভিন্ন জায়গা ও অঞ্চলভেদে এই ফুলকে বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে।

যেমনঃ তামিল ভাষায় শাপলা ফুল কে বলা হয় ভেলাম্বাল, বাংলায় নীল শাপলা কে বলা হয় শালুক, আবার লাল শাপলা কে বলা হয় রক্তকমল, মনিপুরীরা শাপলা ফুলকে বলে থারো আংগৌবা।

এ ফুল ফুটতে শুরু করে ভোরবেলা, আর যত বেলা গড়ায় ফুলের পাঁপড়ি গুলো আস্তে আস্তে বুজ তে শুরু করে। শাপলা নানা রঙের হয়ে থাকে – গোলাপী, সাদা, নীল ইত্যাদি।তবে বিশ্বে এ ফুলের প্রায় ৩৫ টি প্রজাতি পাওয়া গিয়েছে। শাপলা কমবেশি সারাবছর ফুটলেও এই ফুল ফোটার শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে বর্ষা ও শরৎ কাল।

শাপলা ফুলের উৎসঃ

এ ফুলের উৎপত্তি হয়েছে উত্তর ও মধ্য আফ্রিকা থেকে। ধারনা করা হয়, এই ফুল প্রায় ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব পুরোনো। মিশরের নীল নদের ধারে এটি পাওয়া গিয়েছিলো।

প্রাচীন কালে আদিবাসীরা এটি তাদের আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতো। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে বিভিন্ন পুকুর গুলো এই শাপলা ফুল দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে।

এছাড়াও এই ফুল শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান ইত্যাদি জায়গায় দেখেতে পাওয়া যায়।শাপলা কিন্তু শুধু ঘরের শোভা বাড়ায় তা না, এর আরো নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। চলুন তাহলে এই ফুলের বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই–

শাপলার ব্যবহারঃ

বহু আগে থেকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আফ্রিকার অনেকেই তাদের স্থানীয় বুনো শাপলার মোথা খেয়ে থাকে আর এই মোথা বা কন্দে জলীয় উপাদান রয়েছে (২০.৪%)।

শাপলার বীজে জলীয় উপাদান কম থাকে (৪.১৮%)। তবে বীজে অনেক ফ্যাট থাকে। আফ্রিকার অনেকেই শাপলা চাষ করে থাকে খাওয়ার জন্য।

শাপলার এই কন্দ বিভিন্ন দেশে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয় এমনকি সালাদেও ব্যবহার করা হয়। শাপলার এই মোথা ভেষজ চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অনেকেই শাপলার বোঁটা নারকেল দিয়ে খেয়ে থাকেন এতে অনেক সুস্বাদু হয়। এটি ব্যাপকভাবে বিভিন্ন জায়গায় খাওয়া হয়। তবে সবজি হিসেবে সাধারণত সাদা শপলাই খাওয়া হয়। লাল বা নীল রঙের যে শাপলা হয়, তা সবজি হিসেবে খাওয়া হয় না।

শাপলা সম্পর্কে তো জেনেই নিলাম। আচ্ছা জনেন কি, এই শাপলা একটি পুষ্টি ভান্ডার! অবাক হচ্ছেন তো এ কথা শুনে, আসলে সাধারণ শাক-সবজি থেকেও এর পুষ্টিগুণ কিছুটা বেশিই বলা চলে।

চলুন তাহলে শাপলা তে কি কি পুষ্টিগুণ বিদ্যমান তা জানি–

শাপলার পুষ্টিগুণঃ

শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় মধ্যে রয়েছে-

খনিজ পদার্থ – ১.৩ গ্রাম

আঁশ রয়েছে – ১.১ গ্রাম

ক্যালোরি-প্রোটিন রয়েছে – ৩.১ গ্রাম

শর্করা রয়েছে – ৩১.৭ গ্রাম

ক্যালসিয়াম রয়েছে – ৭৬ মিলিগ্রাম

এছাড়াও শাপলাতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন-বি ১, ভিটামিন-বি ৭, ফসফরাস।বলা হয় যে, আলুর থেকেও সাতগুন বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে শাপলাতে।

শাপলার পুষ্টিগুণের উপকারিতাঃ

আঁশঃ

ফাইবার বা আঁশ আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কারণ ফাইবার হজম করতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

পেট দীর্ঘ সময় ভরা রাখতে সাহায্য করে।

শাপলা ফাইবারের একটি ভালো উৎস।

প্রোটিনঃ

আমাদের শরীরের ত্বক, চুল, নখ, হাড়কে সচল রাখতে প্রোটিন প্রয়োজন।

দেহের ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধি সাধন, নতুন চোষ গঠন এই সব কাজ করে প্রোটিন। এই সব কার্য সম্পাদনে শাপলার ভুমিকা রয়েছে।

ক্যালসিয়ামঃ

শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত করতে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

এছাড়াও মাংসপেশি গঠন, শরীরের বিকাশে সহায়তা করে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ভালো পরিমানে ক্যালসিয়াম রয়েছে।

ভিটামিন সিঃ

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে ভিটামিন সি।

দেহের ইমিউন সিস্টেমকে সবল করতে ভিটামিন-সি অত্যন্ত কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।

ভিটামিন বি ১ঃ

গ্লুকোজ বিপাকের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়তা একটি উপাদান হচ্ছে ভিটামিন-বি ১।

এছাড়াও এটি পেশী, স্নায়ু এবং হার্টের কার্যক্রমে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।

ভিটামিন বি ৭ঃ

ভিটামিন বি ৭, যা বায়োটিন নামে পরিচিত, এটি জলীয় দ্রবণীয় ভিটামিন যা শরীরের বিপাক এবং কার্যক্ষমতার জন্য অত্যাবশ্যক।

ফসফরাসঃআমাদের দেহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পাদন করে ফসফরাস। আর এই শাপলা ফসফরাসের কার্যকারিতায় ভুমিকা রাখে।

স্বাস্থ্যর জন্য শাপলার উপকারীতাঃ

মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য শাপলা ফুলের কার্যকারিতাঃ

শাপলায় রয়েছে ফ্লেভনল গ্লাইকোসাইড। যা মাথার রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করতে এবং এতে মাথা ঠাণ্ডা হয়।

তাই যাদের ঘন ঘন মাথা গরম হয় তারা মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য শাপলা খেতে পারেন।

হৃদরোগের দুর্বলতার জন্য শাপলা ফুলের কার্যকারিতাঃ

হৃদরোগের দুর্বলতা কমাতে শাপলার কার্যকরি রয়েছে । যারা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তারা শাপলা খেতে পারেন। হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়ঃ

রক্তে শর্করার পরিমান বৃদ্ধি পেলে ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। রক্তে শর্করা এবং ইন্সুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে শাপলার কার্যকরিতা রয়েছে।

যকৃত ভালো রাখেঃমানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যকৃত। যকৃত শরীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কাজ করে থাকে। আয়রন ও গ্লাইকোজেন সঞ্চয় করে। দেহ থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে এছাড়াও আরো বিভিন্ন কাজ করে থাকে।

তাই যকৃতের সুস্থতা রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যকৃতের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।

হজমের সমস্যা দূর করেঃ

যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে, তারা শাপলা ফুল খেতে পারেন। এছাড়াও যাদের আমাশয় বা পেট ফাঁপা জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য শপলা কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়ঃ

রক্তে শর্করার পরিমান বৃদ্ধি পেলে ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। রক্তে শর্করা এবং ইন্সুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে শাপলার কার্যকরিতা রয়েছে।

যকৃত ভালো রাখেঃ

মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যকৃত। যকৃত শরীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কাজ করে থাকে। আয়রন ও গ্লাইকোজেন সঞ্চয় করে। দেহ থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে এছাড়াও আরো বিভিন্ন কাজ করে থাকে।

তাই যকৃতের সুস্থতা রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যকৃতের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।

হজমের সমস্যা দূর করেঃ

যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে, তারা শাপলা ফুল খেতে পারেন। এছাড়াও যাদের আমাশয় বা পেট ফাঁপা জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য শপলা কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।

ত্বকের সুস্থতায় শাপলা ফুলের কার্যকারিতাঃ

যাদের শুষ্ক ত্বক রয়েছে তাদের জন্য শাপলা খুবই কার্যকর। এটি ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে তোলে।

ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ত্বক পরিষ্কার রাখে।

এছাড়াও চুলের জন্য শাপলার উপকারিতা রয়েছে। এটি চুলের প্রাণবন্ত করে তোলে। স্ক্যাল্প ভালো রাখে।

ভেষজগুনে শাপলা এর কার্যকারিতাঃ

এ গাছের বিভিন্ন অংশ নানান রোগে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যাদের ঠান্ডার সমস্যা রয়েছে তারা যদি শাপলার শুকনো ফুলের গুড়ো ব্যবহার করেন তাহলে ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাবেন।

এছাড়াও অনেকের কষা হয়ে থাকে শাপলার শুকনো ফুলের গুড়ো এই কষা দূর করতেও সাহায্য করে। শাপলার বীজ বিভিন্ন চর্ম রোগ এমনকি কুষ্ঠ রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

শাপলার ডাটা পাকস্থলী থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে। শাপলার মোথা সবচেয়ে বেশি উপকার করে থাকে।

অর্শ, অজীর্ণ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে শাপলার মোথা কাজে লাগে।

বিশেষ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এর জন্য এই শাপলা অত্যন্ত উপকারী।

ভারতের আয়ুর্বেদিক ঔষধ বানাতে শাপলাকে ঔষধী গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয় জানা যায়। তাই এটিকে ভেষজ উদ্ভিদ বলা হয়।সাদা সবসময় শুভ্রতার প্রতীক বহন করে। তেমনি শাপলার সাদা রং আত্নাকে পরিশুদ্ধ করে। রুপে, গুণে অনন্য একটি ফুল শাপলা। শুধু তাই না, শাপলাতে বিদ্যমান পুষ্টিগুণাগুণ শরীরে উপকারী ভুমিকা পালন করে।

তাই খাদ্য হিসেবে প্রাকৃতিক জিনিস নির্বাচন করুন, এতে রোগ-বালাই কম হবে এবং পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে।

...(সমাপ্ত)...



No comments:

Post a Comment