ছবি : ইন্টারনেট |
মশার কামড় রোগের দাপট
ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়
সামান্য মশার অসামান্য কীর্তিঃ
বিশেষ মশাটি যদি এডিস ইজিপ্টি (Aides aegypti) প্রজাতির হয়। কারণ এই জাতীয় মশার কামড় আমাদের সামনে হাজির করে ডেঙ্গু বা ডেঙ্গি (Dengue) নামের এক মহাব্যাধিকে।
বর্তমানে বহু আলোচিত ‘ডেঙ্গু’ শব্দটি আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছে একটা জ্বলন্ত প্রশ্নচিহ্নকে। মারাত্মক এই ব্যাধিটি একটি ইনফেকশন জনিত রোগ আর এডিস ইজিপ্টি নামের একটি বিশেষ জাতের মশার দ্বারা এই রোগের ভাইরাস বাহিত হয়। সময়ে আর যথাযথ চিকিৎসা না হলে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হতে পারে।
রোগের অধিক্ষেত্রঃ
সারা বিশ্বের ট্রপিক্যাল অঞ্চল, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল। আমেরিকা, ভারত, বাংলাদেশ, মায়নামার ইত্যাদি। স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চল, জলাভূমি, ঝোপ অঞ্চল যেখানে মশা বেশি বংশবিস্তারের সুযোগ পায়। এই রোগের আক্রমণ ও বিস্তার মশা ছাড়া হয় না। তাই যে অঞ্চলে মশার আধিক্য সেই অঞ্চল ডেঙ্গুরোগ-প্রবণ হওয়াই স্বাভাবিক।
সংক্রমণ কোন পথেঃ
এট আগেই বলা হয়েছে যে এডিস ইজিপ্টি (Aedes aegypti) নামের এক বিশেষ জাতের মশার স্ত্রী গোষ্ঠীর কামড় থেকে এই রোগের বিস্তার ঘটে। এই বিশেষ জাতের মশা এই রোগের জীবাণু বহন করে থাকে। কিন্তু এই বহন কীভাবে হয় সেটাই আলোচনার বিষয়।
মশার স্বভাব সুযোগ পেলেই মানুষকে কামড়াবে। মশাটি যখন কোনও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ায় আর তার দেহের রক্ত পান করে তখন সেই রক্তের মধ্যে দিয়ে মশাটি নিজের শরীরে ডেঙ্গু রোগের জীবাণু ধারণ করে। জীবনভর এটি তার শরীরে থাকে বা থাকতে পারে। এই জীবাণু দ্বারা মশাটি কিন্তু কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বটে কিন্তু মশাটি কোনও সুস্থ মানুষকে কামড়ালে ওই জীবাণু সুস্থ দেহের ভিতর সঞ্চারিত হয়ে সুস্থ ব্যক্তিটিকে অসুস্থ করে তোলে। অর্থাৎ এটা জানা গেল কোনও মানুষকে এই ভাইরাস দ্বারা অসুস্থ করতে গেলে মশাটিকে অবশ্যই আগে নিজেকে এই ভাইরাস বহন করতে হবে।
কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই কি অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পাবে?
না, বিষয়টি কিছু সময়সাপেক্ষ। স্ত্রী এডিস মশা একটি রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পান করার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর দেহের ভাইরাস সুস্থ দেহে সঞ্চারিত হয় না। সাধারণতঃ ভাইরাস সুস্থ শরীরে ঢোকে মশার লালার মাধ্যমে। মশার শরীরে এই ভাইরাস তার লালায় আসতে সময় নেয় প্রায় আট থেকে দশদিন। অর্থাৎ একটি মশা ডেঙ্গুবাহী কোনও রোগীকে কামড়াবার পর সঙ্গে সঙ্গে কোনও সুস্থ মানুষকে কামড়ালেই সে ওই সুস্থ মানুষটি অসুস্থ হবে না। কারণ এই সময়ে ভাইরাস তার লালাগ্রন্তিতে আসবেই না। যদি না আগে থেকেই ওই মশা ডেঙ্গুবাহী হয়ে থাকে। একটি মশা ডেঙ্গু রোগীর রক্ত পান করলে সে নিজেই আক্রান্ত হয় আর আক্রান্ত থাকে তার সারা জীবনের জন্যে। সে নিজে রোগগ্রস্থ হয় না বটে যদিও সে চিরকাল এই রোগটির বাহক হয়েই থেকে যায়।
তাই ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ সক্ষম স্ত্রী এডিস মশা সুস্থ মানুষকে কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এই লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লেগে যায় ৩ থেকে ১৪ দিন। কেউ যদি ডেঙ্গু অঞ্চলে যায় আর এই সময়ে মশা দ্বারা আক্রান্তও হয় তবু সঙ্গে সঙ্গে তার রোগলক্ষণ দেখা দিতে নাও পারে। হয়ত সে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর এই লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে পারে। সেই জন্যে ১৪ দিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশিত না হলে বলা যায় সে নিজের আর সকলের পক্ষেই নিরাপদ অন্তত যতদিন না এডিস মশা তাকে আবার কামড়াচ্ছে। এই যে ভাইরাসের আক্রমণ আর তার লক্ষণ প্রকাশের মাঝের সময় তাকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে। ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর ব্যাপারটাকে ইনকিউবেশন বা incubation বলে। এখানে ডিম বলতে ধরা যেতে পারে ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের দেহ আর বাচ্চা ফোটাকে রূপকার্থে ধরা যেতে পারে লক্ষণের প্রকাশকে।
সূচনা ও লক্ষণঃ
সাধারণত তিন প্রকারের আক্রমণ দেখা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগ উপসর্গহীন হতে পারে। এদের কারোর কারোর সামান্য জ্বর গায়ে ব্যথা ইত্যাদি কিছু সাধারণ উপসর্গ থাকতেও পারে। এগুলি অচিরে অন্তর্হিত হতে পারে। উপসর্গ অন্তর্হিত হলেও তার শরীর থেকে ভাইরাস দূর হয় না। শরীরে থেকেই যায়। অর্থাৎ এই অবস্থায় সে নিজে কোনও উপসর্গ উৎপন্ন না করলেও এই রোগের বাহক হতে পারে। তার মানে তাকে কামড়াবার পরে আর কাউকে কামড়ালে এই দ্বিতীয় ব্যক্তি অসুস্থ হতে পারে। উপসর্গহীন ব্যক্তিরা নিজের পক্ষে নিরাপদ হলেও অন্যের পক্ষে বিপজ্জনক হয় বা হতে পারে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে আক্রান্ত মানুষ বিপজ্জনক মানে তাকে ছুঁলে কেউ যে অসুস্থ হবে তা নয়। যতক্ষণ না তাকে একটি এডিস মশা কামড়ে তার ভাইরাস নিজের শরীরে ধারণ করছে আর সেই অবস্থায় কামড়াচ্ছে অন্য মানুষকে ততক্ষণ কিন্তু কেউ রোগাক্রান্ত হবে না। সুতরাং মশা-ই এই রোগের একমাত্র কারণ। রোগাক্রান্ত মানুষকে কখনোই ভয় করবেন না আর রোগের ভয়ে তাকে সেবা থেকে বঞ্চিত করবেন না।
দ্বিতীয় প্রকারের আক্রান্ত উপসর্গ উৎপন্ন করে আর ইনকিউবেশন পিরিয়ডের মধ্যে অর্থাৎ ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জীবাণু আক্রমণ আর শরীরে রোগলক্ষণ প্রকাশের মধ্যবর্তী সময়টিকে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড।
তৃতীয় প্রকার খুব কম সংখ্যক আক্রান্ত এক জটিল অবস্থার সম্মুখীন হয় আর এমন কী মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই সংখ্যা শতাংশের হিসেবে ৫% পর্যন্ত হতে পারে।
ইনফেকশন কীভাবে হয়ঃ
কারণ যে এডিস নামের বিশেষ জাতের মশার স্ত্রী গোষ্ঠীর কামড় থেকে তা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু এটি শরীরে গিয়ে কীভাবে নিজের প্রভাব বিস্তার করে সেটি দেখা যায় না। এই ভাইরাস চামড়া দিয়ে মানুষের শরীরে ঢোকে। মশার লালায় থাকে এই ভাইরাস যা ত্বকের নিচের প্রবাহিত রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। তারপর অতিদ্রুত তার বংশ বিস্তার করে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে।
উপসর্গ সমূহঃ
সমগ্র ব্যাধিটিকে যদি তিন ভাগে ভাগ করা যায় তবে দাঁড়ায় এই রকমঃ প্রাথমিক বা সংক্রমণ পর্যায়, রোগের পূর্ণতা আর আরোগ্য।
প্রথম পর্যায়ঃ
সামান্য জ্বর, মাথাব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা যা রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রচন্ড ভাবে বাড়তে থাকে। চোখ ব্যথা আর চোখে আলোক ভীতি বা ফোটোফোবিয়া। অক্ষুধা আর অরুচি এই রোগের মারাত্মক দুই লক্ষণ। সারা শরীরে চামড়ায় ছোট ছোট লাল লাল চুলকানি যুক্ত উদ্ভদের প্রকাশ। সংবেদনশীল মিউকাস মেমব্রেন যেমন নাক বা মুখ দিয়ে সামান্য রক্তপাত হতে পারে। প্রাথমিক এই অবস্থাটি দুই থেকে সাতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। উপযুক্ত চিকিৎসায় এর পরে আরোগ্য পর্যায় আসতে পারে অথবা রোগ আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ
সমস্ত উপসর্গের বৃদ্ধি। সাংঘাতিক হাড়ের ব্যথা। হাড়ের সন্ধিস্থলে অসহ্য ব্যথা যা রোগের পূর্ণতা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। হাড়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অসহ্য ব্যথার জন্যে এই রোগকে চলতি কথায় হাড়ভাঙ্গা জ্বর বলে। এই ব্যথা বেশির ভাগ দেখা যায় কোমর আর সারা মেরুদন্ডে। বসে থাকা বা শুয়ে থাকা অসহ্য।
পেটের অন্ত্র, লিভার বুকে হৃৎপিন্ড প্রভৃতি স্থানে রক্তসঞ্চয়। চোখ লাল হতে পারে আর তা থেকে জল পড়তে পারে। ঘু্মের প্রচন্ড ঘাটতি দেখা যায়। বমিভাব ও বমি আর ডায়ারিয়াও দেখা দিতে পারে। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি বা র্যাশ। রক্তের জলীয় অংশ কমে যাওয়ার ফলে রক্তচাপ প্রচন্ড কমে যায় আর শরীর দুর্বল হয়।
জটিলতাঃ
সাংঘাতিক দুর্বলতা, রক্তের চাপ অস্বাভাবিক কমে যাওয়া, কিছুই খেতে না পারা। কোমরে আর শিরদাঁড়ায় অস্বাভাবিক যন্ত্রণা আর সেই সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন স্থান দিয়ে রক্তপাত। এমন কী মলের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে (Malaena)।
মনে রাখতে হবেঃ
এই রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হল অনুচক্রিকা বা প্লেটেলেটের হ্রাস। রক্তের এই কণার স্বাভাবিক কাজ হল রক্ততঞ্চনে সাহায্য করা। রক্তের স্বাভাবিক ধর্ম শিরার বাইরে এলে তার তঞ্চন বা জমাট বাঁধা। এই ধর্ম না থাকলে কেটে গেলে রক্তপাত হতেই থাকত আর রক্ত বন্ধ হত না। প্লেটেলেট রক্তপাত নিবারণ করে।
অনুচক্রিকার স্বাভাবিক সংখ্যাঃ
National Health Institute-এর মতে রক্তে স্বাভাবিক অনুচক্রিকার সংখ্যা হল প্রতি মাইক্রোলিটারে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখের মত (১,৫০, ০০০ থেকে ৪,০০,০০০)। এক মাইক্রোলিটার হল এক লিটারের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ 10^-6 লিটার। অর্থাৎ এই সংখ্যা ১,৫০, ০০০ এর নিচে নেমে যাওয়াটা বিপজ্জনক। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসারে এই অবস্থটিকে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বা Thrombocytopenia বা রক্তে অনুচক্রিকার হ্রাস বলে।
শ্বেত কণিকার মতই অনুচক্রিকাও আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে থাকলে রক্তপাত জনিত ঘটনা ঘটতে পারে না শুধু তাই নয়, শরীরের রক্ত চলাচলের গতিও মসৃণ থাকে। রক্তের সবচেয়ে বড় কাজ হল কোষে কোষে খাদ্য পৌছে দেওয়া। তাই রক্তচলাচল সুচারু না থাকলে কোষগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। ডেঙ্গু ভাইরাসের কাজ হল অনুচক্রিকাকে ধ্বংস করা। তাই রোগের গতি যত বৃদ্ধি পায় অনুচক্রিকার সংখ্যা তত কমার সম্ভবনা। এই সংখ্যা পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে কম তবে বাইরে থেকে প্লেটেলেট দেওয়ার দরকার হয়ে পড়ে। নাহলে রোগীকে বাঁচানো যায় না।
প্লেটেলেট বা থ্রম্বোসাইটের সংখ্যা মাপার জন্যে সাধারণ রক্ত পরীক্ষাই (T.C. and D.C.) যথেষ্ট।
রোগের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কালে শরীর যন্ত্রগুলিতে রক্তের অন্তঃক্ষরণ (Internal haemorrage) হতে পারে।
চিকিৎসাঃ
প্রাথমিক অবস্থাটুকু সামলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হলে এটি নিয়ন্ত্রণে আসে। অযথা ভীত হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। তবে সময় নষ্ট না করাটাই বুদ্ধিমানের।
বিধেয়ঃ
রোগীর প্রচুর বিশ্রামের প্রয়োজন। গ্যাস্ট্রো এন্টারিটিসের ডিহাইড্রেশনের সময় যা যা ঘটে এখানেও তাই তাই ঘটে বা ঘটতে পারে। তাই প্রচুর জল ও ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করতে হবে যেহেতু এই সময় রক্তে ক্ষার ধাতু বা সোডিয়াম পটাশিয়ামের প্রচুর ঘাটতি হয়। রক্তের জলীয় অংশ কমে যাওয়ার কারণে রক্তের চাপ কমতে থাকে। তাই শরীরে জলের ঘাটতি যাতে না হয় সেটা দেখতে হবে। ডাবের জল বা ফলের রস উপকারী।
এই সময় রোগীর যেমন জলীয় পদার্থের হ্রাস হয় তেমনি হ্রাস হয় প্রোটিনের। প্রোটিনের হ্রাস পূরণ না করতে পারলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ফেরত পাওয়া মুশকিল। তাই ডিম, মাংস, মেটে ইত্যাদি খেলে এই পূরণ সম্ভব। খাদ্য অবশ্যই সহজ পাচ্য হয়া উচিৎ কারণ মনে রাখতে হবে এই সময় শরীরের অন্যান্য অংশের মতই হজম যন্ত্রগুলিও খুবই দুর্বল থাকে। অতিরিক্ত মশলাদার খাদ্য হজম করার মত পাচক রস এই সময় উৎপাদিতে হয় না। রক্তচাপ কমে যাওয়ার ফলে গা-বমির ভাব বেশি দেখা যায়। মাথা তুললেই এই ভাব বৃদ্ধি পেতে পারে। রোগীর খাদ্য এমন হওয়া উচিৎ যাতে তার বমিভাব (Nausea) না আসে।
প্রতিরোধঃ
মশা না হতে দেওয়া এই ব্যবস্থার এক উল্লেখযোগ্য অংশ। জমা জল হল মশার স্বচ্ছন্দ বাসস্থান। তাই কাছেপিঠে কোথাও জল না জমতে দেওয়াই সঠিক। ব্লিচিং পাউডার, ফিনাইল ইত্যাদি বীজাণুনাশক ছড়াতে হবে। এডিস ইজিপ্টি মশা সাধারণত দিনের বেলাই কামড়ায়। তাই রোগিকে দিনের বেলাতেও মশারির মধ্যে রাখতে হবে। এটা ঠিক যে মশার দ্বিতীয় কামড় এই রোগির কোনও ক্ষতি করবে না। কিন্তু এই রোগিকে কামড়ে যে যদি আবার অন্য কোনও সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তবে এই রোগ ছড়াতেই থাকবে। এই রোগের বিস্তার সংস্পর্শ জনিত (contagious) নয় বাহক (carrier) দ্বারা সংবাহিত হয়। তাই স্পর্শ দ্বারা চিন্তার কিছু না থাকলেও বাহক নিয়ে চিন্তার থাকে। মশা কীট হিসেবে খুব নিরীহ হলেও তার কাজ বড় সাংঘাতিক।
উপসংহারঃ
মশার বিস্তার রোধ করতে পারলে এই রোগের বিস্তার অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই রোগ মোটেই স্পর্শ দ্বারা সংক্রমিত হয় না। তাই রোগীকে খুব নিকট থেকে সঙ্গ দেওয়ায় বাধা নেই বরং তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধির জন্যে এটা খুব দরকার। দরকার হলে দরজা বা জানলাগুলিতে মশা আটকানো জাল লাগালে আরও ভাল। একটা কথা মনে রাখা দরকার যে একবার কেউ রোগাক্রান্ত হলে তার আর মশার কামড়ে ভয় নেই এটা যেন কেউ না ভাবে। কারণ তার হয়ত ভয় না থাকতে পারে কিন্তু সেই মশাটি কিন্তু অন্য সুস্থ মানুষদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারে। এমন কী একজন একাধিক বার পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা, পথ্য, বিশ্রাম আর ব্যবস্থা পেলে এই রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে। তাই অযথা শংকিত হওয়ার কারণ নেই। এডিস মশারা পরিচয় দিয়ে তবে কামড়ায় না। তাই যেকোনো মশার কামড় থেকে দূরে থাকুন। আর শিশুদের বিষয়ে বেশি যত্ন নিন কারণ শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। যে কোনও ইনফেকশন জনিত ব্যাধিই ইমিউনিটির দিকে হাত বাড়ায় আর পরিণতিতে তা কমিয়ে দেয়। কিন্তু এই রোগটি গোড়া থেকেই প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে থাকে আর সারা শরীরে প্রভাব বিস্তার করে।
No comments:
Post a Comment