1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

মতান্তর

 

মতান্তর

বিপ্লব গোস্বামী


বিজয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের প্রায় পাঁচ বছর হয়েগেছে।আমাদের প্রথম পরিচয় ২০১৫ সালে।তখন আমি সবে মাধ‍্যমিকের ছাত্রী।তখনোও ভালোবাসা কারে কয় তা বুঝতামই না।বিজয়ের কথাবার্তা-চালচলন খুব ভালো লাগত আমার।বিজয় আমার থেকে বছর সাতে বড় হবে।কিন্তু আমরা দুজন সমবয়সীর মত চলতাম।সেই ভালোলাগা কি করে যে ভালোবাসা হয়ে গেল তা টেরই পাইনি দুজনেই।দিন যেতে লাগল, আমি মাধ‍্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ‍্যমিকে ভর্তি হলাম।ভালো মার্কস নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করলাম। তারপর ডিগ্ৰীও কমল্পিট করে নিলাম।এতদিনে বিজয়ও সরকারি চাকরির পেয়ে সেটেল হয়েগেছে।বিজয়ের বাবা-মা এখন তাকে বিয়ে দিতে চান।বিজয় আমাকে ও'র বাড়িতে নিয়ে ও'র বাবা মায়ের সঙ্গে দেখাও করিয়েছে।ওরা আমাদের সম্পর্কটা মেনি নিয়েছেন।এখন শুধু আমার বাবা-মা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেলেই হয়।

          অনেক দিন থেকে বিজয় আমাকে আমাদের সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানাতে বলে আসছে।আমি সাহস করে উঠতে পারছি না।কেন জানি মনের মধ্যে একটা ভয় হচ্ছে।যদি আমাদের সম্পর্কটা কেউ মেনে না নেন।বারবার মনে হচ্ছে দিদিভাইয়ের কথা। আমার দিদিভাই একজনকে ভালোবাসত।তারাও বিয়ে করতে চেয়েছিলে।কিন্তু বাবা-মা কেউই ওদের সম্পর্কটা মেনে নেননি।তাই ওদের বিয়ে হয়নি।ওরা চাইলে নিজেরা বিয়ে করে নিতে পারত।কিন্তু বাবা-মাকে কষ্ট দিতে চায়নি তাই মুখ বুজে সব সহ‍্য করে নিয়েছে।

      এদিকে বিজয়ের বাবা-মা ওকে বিয়ের জন‍্য চাপ দিতে শুরু করেছেন।বিজয় আমাকে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা  বলতে বারবার অনুরোধ করছে। আমি কিছুতেই বাবা-মাকে বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না।অবশেষে একদিন সাহস করে দিদিকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলেই ফেললাম।দিদিকে অনুরোধ করলাম বাবা-মাকে বুঝাতে। আমার কথা শুনে দিদি অবাক হয়ে গেল।দিদি কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল।তারপর বলতে লাগল, " তুই কি ভুলে গেছিস আমার বিয়ের ঘটনা ? তুই কি এত সহজে অতীত কে ভুলতে পারলি ! তুই তো সব জানিস,তারপরও তুই ভালোবাসতে গেলি।বল তুইও কি আমার মতো বুক চাপা কষ্ট নিয়ে বাঁচতে চাস ! তুইও কি মরতে মরতে বাঁচতে চাস! কেন বোন কেন ?" এই বলে দিদি কাদতে লাগল।

       আমি দিদিকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আমার সবই মনে আছে দিভাই।আর আমি কিচ্ছু ভুলিওনি।আর আমি খুব ভালো জানি তোর মতো আমাদের সম্পর্কটাও কেউ মেনে নিবে না।কিন্তু,,,, ।আমি কথাটা শেষ করার আগে দিদি আবার বলতে লাগল," এত সব জেনেও তুই ভালোবেসেছিস ! তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? তুই তো জানতে ,আমি দেবাকে কতটা ভালোবাসতাম।আর দেবাও আমাকে কতটা ভালোবাসতো।আমরাও তো ঘর বাঁধতে চেয়ে ছিলাম।কি দোষ ছিল আমাদের ?আমরাতো একে অপরকে খুব ভালোবাসতাম।কি কম ছিল দেবার? দেখতেও তো সুন্দর, স্মার্ট, সরকারি চাকুরিজীবী, ভদ্র ,শান্ত ছিল ! একজন ভালো বর  হতে যে সব গুণ থাকতে হয় ,দেবার মধ‍্যে কি ছিল না ?  তবুও তো কেউ মেনে নেয়নি আমাদের সম্পর্কটা ! কেউ মেনে নেয়নি বাবা,মা,ভাই কেউ নয়।কেন জাতের মিল নেই বলে ? একবিংশ শতাব্দীতেও বিয়ে করতে হলে জাতের মিল থাকতে হয় ? স্কুল কলেজ আমরা কি এসব শিক্ষা নিয়েছিলেন ? না ,কই ওসব তো পড়িনি।উল্ট ধর্ম নিরপেক্ষতা,সম্প্রিতির কথা পড়েছিলাম।।কই কোন ধর্ম গ্ৰন্থতেও তো জাতপাতের কথা শুনি নি ? তবে কেন আজো আমাকে এক বুক কষ্ট নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে? কেন আমার চেয়ে ষোল বছর বয়সে বড় এক অজানা অচেনা পরুষের সঙ্গে ঘর করতে হচ্ছে ? শুধু কি সম্ভ্রান্ত বড়লোক বলে ? নাকি স্বজাতি বলে ? হাররে সমাজ ! বড় বিচিত্র এ সমাজ ব‍্যবস্তা।যেখানে কোরো মতামতের, কারো ব‍্যক্তি স্বাধীনতার কোন মূল‍্য নেই।এই সমাজে  আমাদের মতো মেয়েদের মতামতের কোন মূল‍্য নেই ! তুইতো সবই জানিস, তবে কেন ভালোবেসেছিস বিজয়কে ?কেন দুঃখকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছিস ? তুই জানিস না রে বোন,আমাদেরকে ভালোবাসতে নেই ! যুগ উন্নত হলেও এখনো সমাজ থেকে কুসংস্কার যায়নি।এখনো এ সমাজে আমাদের মতো মেয়েদের মতামতের কোন মূল‍্য দেওয়া হয় না।যা বলেছিস তা আর যেন ভুলেও বাবা-মাকে বলিস না।প্লিজ ওকে ভুলে যা, প্লিজ।এখনো সময় আছে , নয়তো আমার তো তোকেও সারা জীবন বুক চাপা কষ্ট নিয়ে বাঁচতে হবে।" এই বলে দিদি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই।আমারও দু'চোখের কোণ থেকে আপনা আপনি  জল গড়াতে লাগল।

       দিদি একটু শান্ত হলে আমি দিদিকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলাম।বললাম , দিভাই তুই সবকিছু মেনে নিতে পেরেছিস কিন্তু আমার দ্বারা  ওসব হবে না রে। বাবা মা যদি আমাদের সম্পর্কটা যদি মেনে নাও নেন, তবুও আমরা কিন্তু বিয়ে করেই নিবো।আর এটা ভালো করেই জানি বাবা -মা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবেন না।তবু তুই আমার সিদ্ধান্তের কথা ওদেরকে জানিয়ে দিস।আমার কথা  শুনে দিদি আমার বাহুর বাঁধন সরিয়ে দিয়ে দু'পা পিছন দিকে হেঁটে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

biplabgoswami19@gmail.com


No comments:

Post a Comment