![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
টবিন সাহেবের কুকুর
অর্ণব চ্যাটার্জী
অনেক ভেবেচিন্তে শেষমেশ শালবনী
যাওয়াই ঠিক হল।দীর্ঘ লকডাউনে কংক্রিটের ঘেরাটোপে আবদ্ধ থেকে থেকে শরীর, মন দুইই হাঁফিয়ে গেছে। দিনকয়েকের জন্য শাল, পিয়ালের জঙ্গলঘেরা প্রকৃতির সান্নিধ্য এই ক্লান্তি দূর করে
দেবে, মনটা আবার তরতাজা হয়ে উঠবে। এই আশায় ওরা রওয়ানা হয়েছে বাইকে
চেপে।
ওরা বলতে তাপস আর ঋজু। দুই হরিহর
আত্মা। দুজনেরই বেড়ানো অন্ত প্রাণ। তাপস করে সরকারি চাকরি, ঋজুর ব্যবসা। বিয়ে হয়নি,তাই
পিছুটান নেই।
যেখানে দিনকয়েক ছুটি মিললেই বাইকে
চেপে উড়ে বেড়াত দুই বন্ধু, সেখানে এভাবে দিনের পর দিন
বাড়িতে বসে থাকা তো প্রায় শাস্তির শামিল! তাই লকডাউন শিথিল হতেই আর সময় নষ্ট করতে
রাজি হয়নি ওরা।
দুচাকায় গেলে প্রকৃতিকে আরো বেশি সবুজ
সুন্দর দেখায়। কানে শুধু সো...সো..হাওয়া
লাগছে....
দুদিক ফাঁকা আর চাষ জমির মাঝ দিয়ে
এঁকেবেঁকে রাস্তাটা অনেক দূর পর্যন্ত গিয়ে গ্রামে ঢুকেছে, মিদনাপুর রেল গেট
পেরিয়ে কিছুটা গিয়ে বাঁক নিয়ে লোকালয়, ফাঁকা জমি, চক বাজার, গ্রাম, শালবনের মাঝ দিয়ে লাল রাস্তা ধরে পৌঁছনো গেল শালবনী।
শালবনিতে এসে তাপসরা সন্ধান করছিল এমন
জায়গার যেখানে বসে প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে উপভোগ করা যায়। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেল
এমন এক গেস্ট হাউস। ওটার মালিক শহরে থাকে। তাকে ফোন করতে সে সম্মতি জানাল। কারণ
এমনিতেই তো এখন লোকজনের ভিড় কম। ফলে ঘর খালিই আছে।
হালকা জঙ্গলে ঘেরা গেস্ট হাউসটি একদম
সাধারণ মানের। বড় লোহার গেট খুলে দেখা যায় সুরকি বিছানো পথ। পথের দুপাশে বাহারি
ফুলগাছ। মালি কাম কেয়ারটেকারটি ওড়িয়া। নাম লাখন। সেই বাগান পরিচর্যা, রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ করে।ওর রান্নার হাত
খুব ভালো। ডিমভাত দুর্দান্ত রেঁধেছিল। এতক্ষণ বাইক চালিয়ে দুজনকেই ক্লান্তি গ্রাস
করেছিল। তাই ভালো খাওয়াদাওয়ার পর চোখ জুড়িয়ে আসল।
ঘুম যখন ভাঙল, সূয্যিমামা পাটে বসবার তোড়জোড় করছেন। পাখিরা সব বাসায় ফিরছে।
তাদের কিচকিচানিতে চারিদিক মুখরিত। বাইরে কনে দেখা আলো থাকলেও দূরের জঙ্গলে আঁধার
নেমেছে।
ওদের মধ্যে ঋজু একটু ভোজনরসিক। সে বলল
' কি লাখন! কাল দেশি
মুরগি হবে নাকি?'
লাখন ঘাড় নাড়ল ' হ্যাঁ, মু কাল হাটো যাইব।'
মোবাইল টাওয়ার না থাকার মতোই, টিভিও নেই। রাতে বসে গল্প করাই সময় কাটানোর একমাত্র উপায়।
লাখন ডিনার রেডি করছিল। তাপস আর ঋজু ভাবল ওর সাথে কথা বলা যাক। ও লোকাল লোক, এই এলাকা সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারে। ওরা তাই রান্নাঘরে
চলে এল গল্প করতে। লাখন বাংলা বুঝতে শুধু নয়, বেশ ভালো বলতেও পারে।
তাপস জিজ্ঞেস করছিল ' তা এরকম নির্জন জায়গায় এক থাকতে তোমার ভয় করে না?'
লাখন হেসে জবাব দেয় ' এতদিন আছি বাবু। প্রথমো ভয় লাগিলু। কিন্তু পরে অভ্যাস হই
গেছেক।'
লাখনের কথা বলার ভঙ্গিতে ওরা হেসে
ওঠে।
তাপস বলল ' এখানে অনেক পুরনো বাংলো দেখলাম। ভাঙাচোরা দশা। ওগুলো কাদের
ছিল?'
লাখনের কথা থেকে ওরা বুঝল ব্রিটিশ
আমলে ওগুলো
সাহেবদের কুঠি ছিল। দিনে দিনে কালের
গ্রাসে পড়ে ওগুলোর এমন ভগ্নদশা। চারপাশে জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে। ওগুলো এখন সাপখোপের
আড্ডা।
'এসব পুরানো বাংলো নিয়ে তো অনেক ভৌতিক
কাহিনী শোনা যায়। এগুলো নিয়ে সেরকম কিছু গল্প টল্প আছে নাকি? তাপস হালকা স্বরে বলে।
লাখন হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে ' মোরো ভাতো পুইরেক গেল। আমি যাই।' এই বলে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
তাপস আর ঋজু দুজনেই হতভম্ব। পরিষ্কার
বোঝা গেল লাখন যেন পালিয়ে গেল। ও এই আলোচনা করতে পছন্দ করছে না। কিন্তু কেন?
সে যাই হোক, ইতিমধ্যে লাখনের ডিনার রেডি। খেয়ে উঠতে উঠতে দশটা বেজে গেল।
তবে এখানে এটাকে গভীর রাত বলা চলে। লাখন রান্নাঘরে বাসন মাজছে। তাপস আর ঋজু দুজনেই
একটু আগে লাখনের ওই অদ্ভুত আচরণের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পেল না। ঋজু তাপসকে বলল ' মনে হয় তোর কথা শুনে ও ভয় পেয়েছে। ওর চোখমুখ দেখে কিন্তু
সেরকমই মনে হল।'
তাপস কৌতূহলী হল। নাহ, ব্যাপারটায় তো রীতিমতো রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
মাঝরাতে ঋজুর ঘুম ভেঙে গেল। বাথরুমে
যেতে হবে। এটা ওর বরাবরের অভ্যাস। ও উঠে জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। চারিদিক নিস্তব্ধ, ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যাচ্ছে। দুধসাদা জ্যোৎস্না যেন প্রকৃতিকে
ধুইয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু কান পাতলে সেই ডাককে ছাপিয়ে
শোনা যাচ্ছে একটা কুকুরের ডাক। ঋজু পশুপ্রেমী বা আরো ভালো করে বলতে গেলে
কুকুরপ্রেমী। নিজের বাড়িতে একটা জার্মান শেপার্ড আছে। এছাড়াও ও নিয়মিত রাস্তার
কুকুরদের খাওয়ায়,
পরিচর্যা করে। তাই ও শুনেই বুঝল এটা
রাস্তার কুকুরের ডাক নয়। এই ডাক গ্রেট ডেনের।ও অবাক হয়। এই জায়গায় এমন কুকুর কে
পোষে? নাহ, কাল লাখনকে জিজ্ঞেস করতে হবে তো!
পরদিন লাখনকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস
করতে ওর চোখেমুখে একটা ভয়ের রেশ ফুটে ওঠে। ' উটা রাস্তার কুকুরকো ডাক শুনিছ।' ও বলে।
কিন্তু ঋজু নিশ্চিত রাস্তার কুকুরের
ডাক এমন নয়। তবে এই ব্যাপারটা নিয়ে লাখন আর কিছু বলতে পারল না। মনে হল ও যেন
ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চায়। ঋজু ঘটনাটা তাপসকে বলাতে সে মাথা নেড়ে বলল' জরুর ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। লাখনের এই আচরণ, গভীর রাতে ওরকম কুকুরের ডাক, সবকিছুই
মনে হচ্ছে একই সূত্রে গাঁথা।'
সে যাই হোক, সেদিন এসব নিয়ে ওরা আর মাথা ঘামাবার অবকাশ পেলনা। কারণ ওইদিন
ওদের গনগনি যাবার কথা। ব্রেকফাস্ট করে ওরা রওয়ানা দিল প্রায় ২৫ কিমি দূরের গনগনির
উদ্দেশে।
গনগনিকে বলা হয় ' গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অফ বেঙ্গল'।পশ্চিম
মেদিনীপুরের গড়বেতার কাছে শিলাবতী নদীর পাড়ের প্রাকৃতিক ক্ষয়ের ফলে উদ্ভুত্ব
হয়েছে প্রায় ৮০ ফুট গভীর এই ক্যানিয়ন। সিঁড়ি আছে। তা দিয়ে পাথুরে পথ পেরিয়ে নেমে
আসা যায় নদীর পাড়ে। লাল ল্যাটেরাইটের ক্ষয়ই বিস্ময়করভাবে ভূমিরূপের বদল ঘটিয়ে
কোথাও স্তম্ভ,
গম্বুজ,পিরামিড,গুহা ইত্যাদি তৈরী করেছে।
শীতের সকাল। নাম জানা অজানা অনেক
পাখির দেখাও পাওয়া যাচ্ছে। তাপস তো চোখ থেকে ক্যামেরা নামাচ্ছেই না। শুধু শাটারের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঋজু ফটো তোলার
থেকে মনের ক্যামেরায় সেই ছবি ধরে রাখতেই বেশি পছন্দ করে। ও মুগ্ধ চোখে প্রকৃতির
রূপ, রস নিংড়ে নিচ্ছে।
লোকমুখে ওরা শুনল বকরাক্ষস এখানে বাস
করতেন ! বনবাসকালে পঞ্চপাণ্ডব এখানে আসেন, ভীমের সঙ্গে যুদ্ধে বকরাক্ষস
পরাস্ত হন, যুদ্ধের দাপাদাপিতে মাটির এই বিভিন্ন রূপ ! এখানে বকরাক্ষসের
একটা গুহাও আছে ! ওরা সেই বকরাক্ষসের গুহায় গেল।
অস্তমিত সূর্যের লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে
আকাশে। লাল ল্যাটেরাইট গম্বুজের উপর সেই মায়াবী আলো ঠিকরে পড়ে এক অপার্থিব দৃশ্যের
সূচনা করেছে। শিলাই এর জলে কেউ যেন মুঠো মুঠো আবির গুলে দিয়েছে। সব মিলিয়ে এক
স্বপ্নের পরিবেশ। এত সুন্দর জায়গা ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। কিন্তু একসময় অন্ধকার
ঘনিয়ে এল। সবার সাথে তাপসরাও ফেরার পথে ধরল। তবে সারাদিনে পেটে কিছু পড়েনি। তাই
বেরোবার আগে ওরা একটা দোকান থেকে পেটপুরে সিঙ্গারা, মিষ্টি
খেয়ে নিল।
বাইকে বসে ফাঁকা রাস্তায় ঠান্ডার কামড়
ভালোই টের পাওয়া যাচ্ছে। শীতের সন্ধ্যায় রাস্তায় কোনো জনপ্রাণী নেই। দুপাশে
জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলেছে বাইক। ওরা অনেকটা পথ চলে এসেছে। হঠাৎ দেখে রাস্তার
মাঝে গাছের ডালপালা পড়ে আছে। কি ব্যাপার? কোনো ঝড়বৃষ্টি তো হয়নি! তাহলে?
চকিতে প্রমাদ ফোনে ওরা দুজনেই। তাপস
বাইক ঘুরিয়ে বেরোবার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে পাশের জঙ্গল থেকে দুটি বাইকে
প্রায় চার পাঁচজন এসে ওদের ঘিরে ধরেছে। চেহারা দেখেই চেনা যায় গুন্ডা বলে।
' গুরু, ক্যামেরাটি
কিন্তু ব্যাপক। '
এই বলে একটা ছেলে এগিয়ে এসে তাপসের
ক্যামেরাটা ছিনিয়ে নেয়। এটা দামি নিকন ডি এস এল আর ক্যামেরা। তাপসের জান বলতে
গেলে। কোথাও গেলে ও এটাকে নিয়ে যাবেই। এতদিনের সঙ্গীকে তাপস কিছুতেই হাতছাড়া করতে
চায়না। ও প্রাণপণে বাধা দিতে যায়। কিন্তু গুন্ডাগুলোর সম্মিলিত শক্তির কাছে পেরে
ওঠেনা। ঋজু এগোতেই দেখে একটা উদ্যত রিভলভারের নল ওর দিকেই উঁচিয়ে আছে। ও বোঝে এসব
খেলনা জিনিস নয়। একজনের হাতে এই আধো অন্ধকারেও ঝলসে ওঠে একটা বড় ভোজালি। ঋজু বোঝে
আর কিছু করার নেই। ওরা তাপস আর ঋজুকে পিছমোড়া করে বাঁধে।
তারপর ওই গুন্ডাগুলো ওদের পকেট হাতড়ে
বের করে মোবাইল,
মানিব্যাগগুলো। ওখানে টাকা বিশেষ না
থাকলেও এ টি এম কার্ড গুলো আছে। এগুলো হাতছাড়া হলে তো এই অচেনা জায়গায় বিপদের শেষ
থাকবে না! দুজনেই অসহায়ের মত চেয়ে দেখছে আর কাকুতি মিনতি করছে ওগুলো ফেরত দেবার
জন্য। এমন সময়ই ওরা শুনতে পেল কুকুরের ডাক।
মনে হল একটা কুকুর যেন জঙ্গলের দিক
থেকে ডাকতে ডাকতে দ্রুত এগিয়ে আসছে ওদের দিকে। তাপস বুঝতে পারল কাল রাতে শোনা
কুকুরটারই ডাক।
ওরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করল কুকুরের ডাক
শুনে গুন্ডাগুলোর মুখ যেন ভয়ে সাদা হয়ে গেল। ওরা তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে পালাতে চাইল।
কিন্তু ততক্ষণে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে একটা বিশাল গ্রেট ডেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে ওদের
ওপর।
দুজন তো ভয়ে জঙ্গলের দিকে পালাল। যারা
আছে তাদের একজন গুলি চালাল। কিন্তু তাপস অবাক হয়ে দেখল এত কাছে থাকা সত্বেও গুলি
বোধয় লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। কারণ কুকুরটার কিছুই হল না। ওটা দ্বিগুণ বিক্রমে সেই
গুন্ডাটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর টুঁটি কামড়ে ধরল। রক্তজল
করা আর্তনাদে রাতের নিস্তব্ধতা খানখান হয়ে গেল। আরেকটা গুন্ডা ভোজলি চালাল।কিন্তু
সেটা যেন বাতাস কেটে বেরিয়ে গেল। ওরও অবস্থা হল সেই আগের লোকটার মতোই। একটু পড়ে
দেখা গেল দুটো গুন্ডা মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক।
তাপস কুকুর ঘেঁটে ঘেঁটে ওদের সাইকোলজি
ভালোই আয়ত্ত করেছে। ও একটা অদ্ভুত আওয়াজ করে গ্রেট ডেনটাকে ডাকল। সে ওর সামনে এসে
জিভ বের করে লেজ নাড়তে লাগল। তাপস ওর হাতে বাধা দড়িটার দিকে ইঙ্গিত করলে ওটা এগিয়ে
আসে। ধারালো দাঁতের আগাতে একসময় ছিড়ে যায় দড়িটা। তাপস বাঁধনমুক্ত হতেই ঋজুর দড়িটাও
খুলে ফেলে। ও দৌড়ে গিয়ে ক্যামেরাটা তুলে নেয়। নাহ, ভাগ্য
ভালো। তেমন কিছুই হয়নি। মানিব্যাগ, মোবাইলগুলোও কুড়িয়ে নেয়। ওরা
অবাক হয়ে ভাবছে এই ভয়ঙ্কর বিপদে কে ওদের ত্রাতা হয়ে দেখা দিল?
এমন সময় নিঁখুত সাহেবি উচ্চারণে কেউ
যেন ডেকে ওঠে '
টমি! প্লিজ কাম হেয়ার।' ওরা চমকে তাকিয়ে দেখে একটু দূরে ফেল্ট হ্যাট, জ্যাকেট আর গাম্বুট পরে কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকটা সেই
ভিক্টরিয়ান যুগের মত পোশাক।দূরের স্ট্রিটলাইটের চুইয়ে পড়া আলোয় যেটুকু বোঝা যাচ্ছে
ভদ্রলোক বিদেশী। উনি ডাকতেই কুকুরগুলো দৌড়ে চলে গেল।
' টেক কেয়ার, জেন্টলম্যান।' ওদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে
ভদ্রলোক কুকুরটাকে নিয়ে চলে গেলেন।
তাপস আর ঋজু কিছুটা হতভম্ব হয়েই গেস্ট
হাউসে ফিরল। ওই অদ্ভুত কুকুর আর ওই বিদেশী নিয়ে প্রশ্ন করলে লাখন প্রথমে এড়িয়ে
যেতে চাইলে। কিন্তু পরে চাপাচাপি করতে বলে যে ওই অঞ্চলে সেই অনেকদিন আগে জেমস টবিন
বলে এক সাহেব থাকতেন। তৎকালীন বড়লাট উনার উপরেই এই অঞ্চলের দেখভালের ভার দেন। টবিন
সাহেবের একটা কুকুর ছিল, নাম টমি। সে ছিল খুবই প্রিয় আর
বিশ্বস্ত। একদিন সাহেবের বাড়িতে ডাকাতেরা হানা দেয়। কুকুরটা তাদের বাধা দিতে গেলে
দুষ্কৃতিদের গুলিতে মারা যায়। সাহেব খুবই শক পান এই ঘটনায়। কিছুদিন পরে উনিও মারা
যান। তারপর থেকে ওই অঞ্চলে রোজ রাতে কুকুরের ডাক শোনা যায়। অনেকে নাকি টবিন
সাহেবকে দেখেওছে কুকুর নিয়ে বেড়াতে।
এই আপাত অবিশ্বাস্য ঘটনা বিশ্বাস করতে
মন চায়না। অথচ ওদের সাথে একটু আগে যা ঘটল তাকে আর কিভাবেই বা ব্যাখ্যা করা যায়?
সেদিন মাঝরাতে যথারীতি ঋজুর ঘুম
ভেঙ্গে গেল। জেগে উঠতেই কানে এল কুকুরের ডাক। ও বুঝল টবিন সাহেব 'টমি'কে নিয়ে বেড়িয়েছেন। ওই তো জানলা
দিয়ে দেখা যাচ্ছে ফেল্ট হ্যাট পরা চেহারাটা বকলস বাঁধা একটা কুকুর নিয়ে ঘন কুয়াশার
আড়ালে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment