1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

সুগন্ধি-আঁচল



ছবি : ইন্টারনেট 


সুগন্ধি-আঁচল

সুমিত্রা পাল

হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল, তার কথা। বছর তিনেক আগে, দুর্গাপুরে, তার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল আমার। সেদিন হালকা বৃষ্টিতে ভেজা ছিল সারা শিল্পাঞ্চল। সন্ধ্যার পর মাছ কিনতে মাম্ড়া বাজারে প্রবেশের জন্য ছোট গলিটায় ঢুকতেই একরাশ তাজা, মিষ্টি সুগন্ধ ঝাঁপিয়ে পড়ল  আমার উপর। বড্ড চেনা এই গন্ধটা পেয়ে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম আমি।  

মনে হচ্ছিল আমার মা যেন আমার সমস্ত শরীরে, আমার সমস্ত চেতনায় তাঁর সুগন্ধি-আঁচল বিছিয়ে দিয়েছেন। ভীষণভাবে নস্ট্যালজিক আর আবেগতাড়িত হয়ে ইতি উতি তাকাতেই নজরে পড়েছিল সাদা আর গোলাপি বর্ণের, ঈষৎ নিচের দিকে ঝুঁকে থাকা, ফুলে ফুলে ভরা মাধবীলতা গাছটির দিকে। থোকা থোকা ফুলে এমনভাবে ছেয়ে আছে গাছটা যে পাতাগুলিও ঢাকা পড়ে গেছে। এই ফুল আমার মায়ের বড্ড প্রিয়। সেই ছেলেবেলা থেকে মায়ের আঁচলে সবসময় এই ফুলের সুগন্ধ পেয়ে এসেছি।

আসলে, মা ছিলেন আমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু, আমার সবচাইতে কাছের মানুষ। কিন্তু তিনি এই  পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে, এই জায়গাটুকু আমার কাছে হয়ে ছিল রিক্ত আর শূন্য । সেদিন, সেইমুহূর্তে মাধবীলতা গাছটিকে দেখে মনে হয়েছিল- আমার মা যেন দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর আঁচল বিছিয়ে।    

আর আমি! চারদিকের পরিবেশ, পরিস্থিতি ভুলে এগিয়ে গিয়েছিলাম গাছটির দিকে। জড়িয়ে  ধরেছিলাম ফুল-লতা-পাতা সহ গাছটিকে। হাওয়ায় দুলে দুলে ওঠা গাছটি আমার সর্বাঙ্গে বিছিয়ে দিয়েছিল এক স্পর্শ উপচার।  টের পেয়েছিলাম সেই স্পর্শ মায়েরই স্পর্শের মতো কোমল আর স্নিগ্ধ। সেই থেকে সেই গাছ হয়ে উঠেছিল আমার পরম বন্ধু। যখন তখন, যে কোন ছুতোয়,  ছুটে গেছি মাম্ড়া  বাজারে। দাঁড়িয়েছি সেই গাছটিকে স্পর্শ করে। জানিয়েছি তাকে কত অব্যক্ত কথা। ঢেলে দিয়েছি কত ব্যথাভার। হাওয়ায় দুলে দুলে প্রতিবার সে আমায় দিয়েছে আশ্বাস- এই তো আছি আমি।

আজ তিনমাস হল ছেড়ে এসেছি দুর্গাপুর।

মাধবীলতা গাছটি মা হয়ে আজও আমাকে তার সুগন্ধি আঁচলে জড়িয়ে রেখেছে।

sumitrapal29@gmail.com
কলকাতা 

No comments:

Post a Comment