1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

Relling Rangit River Resort, Bijanbari


Relling Rangit River Resort,Bijanbari
ডাঃ রণধী দাশ 

          বাবা রে..... কোমর গুলো খুলে গেল... ভগবানের নাম জপতে জপতে গাল ব্যাথা হয়ে গেল... তারই মধ্যে কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে নিল... সংসারের কোনো রকম ভয় এবং বিপদ টলাতে পারেনা, আমাদের ড্রাইভার ঘেমে স্নান হয়ে গেল.


তাবাকোষি থেকে বিজন বাড়ি রাস্তা গুলো এমন ভয়ানক, ভাঙাচোরা, ধ্বস প্রবন.. ফোর ইন্টু ফোর অফ রোড গাড়ি চালাতেও ভয় ধরে যাবে....
তার সঙ্গে তো ইনোভা গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এমনি কম এবং আমাদের এত ওয়েট তার সঙ্গে লাগেজ প্রচুর ছিল।

যাইহোক ঘন্টা তিনেক পর.. প্রচুর ঘুরে আমরা পৌঁছালাম রঙ্গীত নদীর ধারে এক সুন্দর রিসোর্টে ।
রুমগুলো পুরো নদীর ধারে.. হাত বাড়ালেই নদী ছোঁয়া যায় ।কিন্তু প্রকৃতির ছোঁয়া রাখার জন্য নদীর ধারের রুমগুলো যাদের হাঁটুর প্রবলেম বা যারা বয়স্ক, তাদের পক্ষে যাওয়াটা খুবই কষ্টকর। রুমের ভিউ গুলো খুব সুন্দর হলেও মেইনটেনেন্সের বড়ই অভাব, বাথরুম নিচের দিকে একটু এবং জিনিসপত্রগুলো তথৈবচ ।
কিন্তু সে সবও ভুলে যায়... যদি বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসা যায়.. নদীর কলকাকলি, বয়ে যাওয়া হাওয়া, অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য.. মনের সব নেগেটিভিটি দূর করে দিতে পারে।

আমাদের রুমের কাছ থেকে দেখা কাশ ফুল যেন মা দুর্গার আগমন কে স্মরণ করিয়ে দিল। 
মেনটেনেন্স কম হলেও এরা পরিষেবা দিতে কিন্তু বদ্ধপরিকর, এবং কর্মচারীদের ব্যবহার খুব ভালো।

কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে, আমরা গেলাম খেতে। 
এই রিসোর্টের সবচেয়ে বড় নেগেটিভ পয়েন্ট হল এদের খাওয়া-দাওয়া অতীব বাজে। মা শাশুড়ির দুজনেরই হাঁটু gold titanium দিয়ে বানানো... সেই দামী হাঁটু নিয়ে তারা কিন্তু নদীর ধারে, নদীতে নেমে ফুর্তি এবং ছবি কম তোলেনি। 

যাই হোক খাওয়া-দাওয়া খারাপ হলেও যেটা সবচেয়ে ভালো সেটা হচ্ছে তাদের সিনিক বিউটি। খেয়েদেয়ে আমরা নদীর ধারে পাথরে বসে অনেকটা সময় কাটালাম। 

এদের আবার একটা সুইমিংপুল আছে.. 10 মিনিট হাঁটা পথ.. আমরা খানিকক্ষণ বাদে সেখানে গিয়ে দেখি প্রবল ভিড়, কারণ সেখানে যে শুধুমাত্র হোটেলের লোকেরা সুইমিং করে তা নয়.. বাইরের লোকেরাও 100 টাকার বিনিময় সুইমিং করতে পারে। 
সুইমিংপুল টার লোকেশন অসাধারণ 2 টো পাহাড় আর নদীর পাশে.. চারপাশে জঙ্গল.. অদ্ভুত পরিবেশ। যাইহোক এখন এই আবহাওয়ায় আর অজানা জ্বরের চিন্তায় আমরা সুইমিংপুলে নামলাম না। বেশ কিছু ফটো তুলে আবার ফিরে এলাম হোটেলে নদীর পাশে, পাথরে বসতে আর ছবি তুলতে। 
আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হয়ে গেলো। আমরা আমরা রুমে গিয়ে একটু জিরিয়ে নিলাম... পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রঙ্গীত নদীর অবিরাম সংগীত আমাদের রিফ্রেশ করে দিলো। 


কিছু এক্সট্রা চিকেন পকরা অর্ডার দিলাম কিন্তু সেই পাকোরার মধ্যে আমরা চিকেন খুঁজেই পেলাম না। 
রাতের বেলা ডিনার করে আমরা বেশ খানিকক্ষণ সময় অতিবাহিত করলাম নদীর ধারে.. ধীরে ধীরে জোনাকি এবং ঝিঁঝিঁ ডাকে আমাদের ঘুম পেয়ে গেল আমরা শুয়েও পরলাম। 


পরের দিন সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো কারো একজনের সুরেলা গলার গানে, যেটা রঙ্গীত নদীর সংগীতের থেকেও জোরে, যেন ঠিক অ্যালার্ম ক্লক... দেখি বাবা নদীর ধারে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে, জলে পা ভিজিয়ে, উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে চলেছে গান। 
সেই উদাত্ত গান শুনে আমরা ক্ষুধার্থ হয়ে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে.. চলে এলো স্যান্ডউইচ। 


ব্রেকফাস্ট করার পর আমরা শুনতে পেলাম, মা আর ছোট মার ঘরে নাকি জল সেভাবে আসছিল না, জল নাকি গরম হচ্ছিল না। যাই হোক তাদের এই সময়টা আমরা ছবি তুলে, বাবার গানের শুটিং করে কাটালাম। ধীরে ধীরে আমাদের বেরিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে এলো। আমরা আরও বেশ কিছু ছবি তুলে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছি অমনি আমার মা তার কিছু ইউনিক পোজ.. নদীর পাশে, ফুলের ধারে ব্রিজের উপরে, ফুলে গাল ঠেকিয়ে ছবি তোলা হলো। পরে হিসাব করে দেখলাম শুধুমাত্র বিজনবাড়িতেই মা ছবি তুলেছে 122 টা আর শাশুড়ি একটা কম 121 টা, বউয়ের কথা না হয় নাই বললাম। 


লাগেজটা প্যাক করে গাড়িতে উঠে, সেই ভয়ঙ্কর রাস্তা দিয়ে আমরা বেরিয়ে গেলাম মহালদিরাম এর উদ্দেশ্যে। নদী এবার শেষ, পাহাড় শুরু... 
Review :

পাহাড়ি নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে, ছবি তুলতে, কার না ভালো লাগে... আর তার ওপরে নদীটা যদি জাস্ট হোটেলের পাশ দিয়ে যায়.. যখন তখন ইচ্ছা হলেই নদী টাকে ছোঁয়া যায়, পা ডুবিয়ে বসা যায়.. টোয়েন্টিফোর ইনটু সেভেন নদীর গান শোনা যায়.. তাহলে তো কথাই নেই। 

ঠিক এমনই একটা জায়গা আমাদের উত্তরবঙ্গের বিজন বাড়িতে Relling Rangit River Resort, Bijanbari
এখানে আসার রাস্তা টা ভয়ানক রকমের খারাপ। এক সপ্তাহ আগে আমরা যখন ঘুরে এলাম তখন গাড়ি করে আসতে আসতে একেবারে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়। কিন্তু ভালো কিছু জায়গায় যেতে গেলে খারাপ কিছু পথ অতিক্রম করতেই হবে.. তাই রিসোর্টে গিয়ে আর সেই জিনিসের দুঃখ কিছু মনেই থাকে না। 

এখন lock down এর পর রিসোর্টের মেনটেনেন্স অনেকটাই কম, বাগান গুলো, ফুলগুলো এখন আর ছবির মত নেই। মাঝের পুকুর টাও নোংরা হয়ে গেছে। 

এদের খুব বেশি রুম না থাকলেও যারা একটু বয়স্ক তাদের উচিত হবে ডাইনিং এর কাছাকাছি যে রুম গুলো আছে সেগুলো নেওয়ার। মধ্যে একটা বাঁধানো পুকুর আছে তার ওপরে একটা সাঁকো আছে... সেই সাঁকো দিয়ে পেরিয়ে গেলে এদের চারটে নদীর পাশে রুম আছে। সেইগুলো যাওয়া একটু অসুবিধাজনক যদি হাঁটুর অসুবিধা এবং বয়স্ক মানুষ হন। প্রকৃতিকে প্রকৃতির মত রাখার জন্য রুমগুলোর আশেপাশে প্রচুর পাথর মাথা উঁচিয়ে আছে তাই জন্য মাঝেমধ্যেই উঠতে হয় মাঝেমধ্যে নামতে হয়। 


রুমগুলোর মধ্যে নতুন রুমগুলো যথেষ্ট ভালো, কিন্তু যে দুটো পুরনো রুম আছে সেগুলো অতটা চকচকে নয়, বাথরুম গুলো নিচের দিকে নামতে হয়, বাথরুম ফিটিংস গুলো সবগুলো কাজ করে না। একটা রুমে গিজার নাই। বিছানা চাদর এবং রুমের আশপাশে মেইনটেনেন্স এর অভাব খারাপভাবে চোখে পড়ে। 


রুম সার্ভিস স্লো হলেও ডাকলে সাড়া দেয়। খাবার জায়গাটা বেশ বড়। 
এদের নিজস্ব একটা সুইমিংপুল আছে.. যেটা মেন প্রপার্টি থেকে হাঁটা পথে 10 মিনিট। হোটেল এর জন্য সেটা ফ্রি হলেও যে কেউ 100 টাকার বিনিময়ে সেই পুল উপভোগ করতে পারে। পুল জায়গাটাও খুব সুন্দর, দুটো পাহাড়.. পাশ দিয়ে নদী.. তার পাশেই পুল। সঙ্গে একটা kids পুল ও আছে। এই সময়ে আমরা সবাই একসাথে স্নান করার রিস্ক নেইনি।
এদের মেন অ্যাট্রাকশন, যার জন্য সবাই এখানে যায় সেটা হচ্ছে রঙ্গীত নদী... এই নদীর উপভোগ এই রিসোর্ট ছাড়া অন্য কোনও রিসোর্ট থেকেই এত ভাল করা যায় না। 

খাবার-দাবারের মান খুব একটা ভালো নয়, পরিমানও অনেকটাই কম দেয় কিন্তু যেহেতু উপরের দিকেই বিজন বাড়ি শহর.. তাই সব রকমের জিনিসপত্র এদের কাছে পাওয়া যায়। তাই কেউ যদি নিয়ে আসতে ভুলেও যায় একটু আগে থেকে বলে রাখলে ওরাই সব কিছু এরেঞ্জ করে দেয়। 
ওয়েদার যদি ভাল থাকে কিংবা যদি বৃষ্টি হয় দুটোতেই নদীর পাশে বসে থাকার মজাই হল আলাদা। 


এদের তিনটে রুম প্র্যাকটিক্যালি নদীর ধারে বারান্দা গুলো নদীর পাশেই। আরেকটা বড় রুম সেটা কিন্তু একদম নদীর পাশে হলেও তার কিন্তু বারান্দা নেই ।সামান্য একটু এগিয়ে গিয়ে একটা জায়গা আছে, বারান্দার মতো সেখানে বসা এবং খাওয়া যায়। 

মশা এবং পোকার উপদ্রব ভালো রকম ভাবেই আছে। বর্ষাকালে নদীতে ভালো রকম জল থাকে তাই টান ও ভালো থাকে.. সাবধানে পাথরের উপর বসা উচিত। রিসোর্টের যে কোন জায়গা থেকেই নদীতে নামার সুবিধা আছে। 






নদীর সাথে, নদীকে ভালোবেসে দু দিন কাটাতে চাইলে এইটা আদর্শ জায়গা। 

Ambience - 4/5
Hospitality - 3/5
Service - 3. 5/5
Cleanliness - 3.5/5
Food - 3/5
Value for money - 3/5
Sleep quality - 3.5/5
Facilities provided - 3/5
Senior citizens ease & accessibility - 3/5
Fooding and Lodging - ₹ 1750 / person / Day (Kid - 600/day)

1 comment:

  1. Sir apnar aie pics gulo viral hoye geche.lekha porlam apnar just awesome along with your nice photography.��

    ReplyDelete