![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
১
সেই মাত্র টিফিন শেষ হয়ে আবার ক্লাস আরম্ভ হয়েছে। অনিমেষ ও সঞ্চিতা যথাগ্রমে ক্লাস থ্রি ও ফোরে ক্লাসে নিচ্ছে, বাকি তিনটে ক্লাসের ছুটি। হেড মাস্টার ভোলাবাবু প্রতিদিনের মত টিফিনে দুটো মুড়ি চিবিয়ে একটা বিড়ি টেনে অফিসের কয়েকটা খাতা দেখতে বসেছেন। এমন সময় কয়েকটা ছেলে হুড়মুড় করে অফিসে ঢুকেই বলতে আরম্ভ করল, ‘স্যার, কাজটা কি আপনি ভালো করলেন?’
ভোলাবাবু বেশ অবাক হয়ে গেলেন। জ্ঞানত কোন অন্যায় বা চুরি করেন নি।এই স্কুলে একজনই দিদিমণি, সঞ্চিতা, প্যারটিচার, এই গ্রামেরই মেয়ে, বয়েসে ভোলাবাবুর ছেলের থেকেও ছোট। ভোলাবাবু এমনিতে বেশ ভীতু মানুষ, কোন দিনই জোরে কথা পর্যন্ত বলতে পারেন না। ছেলের বিয়ের পর বৌমা প্রায় প্রতিদিন কিছুটা জমি ছেলের নামে করে দেবার জন্যে জোর করছে, বাড়িতে অশান্তিও হচ্ছে চরম, ভোলাবাবু কিন্তু ভুলেও কোন দিন বৌমাকে কিছু বলতে পারেন নি বরং অশান্তির ভয়ে খামারে বা পুকুর পাড়ে বসে বসে বিড়ি ফোঁকেন। স্কুলে হঠাৎ করে এতজনকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেন।ছেলেগুলো এই গ্রামের, অনেকেই তাঁর পুরানো ছাত্র।তবে নামগুলো সেই মুহূর্তে মনে এলো না।
ইতস্তত করে বলে উঠলেন, ‘আমি তো সেই রকম কিছু করি নাই, তোরা তো আমাকে চিনিস?’
–সেটাই তো দুঃখ স্যার, আপনাকে চিনি বলেই তো স্কুলে এই কয়েক জন এলাম, না হলে তো..
ভোলাবাবু উল্টো দিকের চেয়ারে বসে ঢোঁক গিললেন। এখন তো স্কুলে কোন ছেলে মেয়েকেই মারা বকা হয় না, পড়ছিস পড় না হলে..। ‘তবে কি অনিমেষ বা সঙ্গীতা কাউকে মেরেছে?’
কথাগুলো ভেবে আবার শরীরটা কেমন যেন করতে লাগল। তারপর আবার খুব আস্তে আস্তেই উত্তর দিলেন, ‘তোমরা এখানে বসে আস্তে আস্তে কি হয়েছে বল।আমি ঐ নতুন স্যারকে ডেকে পাঠাচ্ছি।’
–কাজ তো করেছেন আপনি, নতুন স্যারকে ডেকে কি হবে?
-মানে?
ভোলাবাবু রীতিমতো আঁতকে উঠে উত্তর দিলেন।
–স্যার ঐ সব মানে বাক্যরচনা ছাড়ুন, সোজাসুজি বলুন তো এতোগুলো গাছ কেন কেটে দিলেন?
এবার ভোলাবাবুর কাছে ব্যাপারটা কিছুটা পরিষ্কার হয়। একজন কে বলে ওঠেন, ‘ওদিক থেকে স্যার আর ম্যাডামকে একটু ডেকে দাও তো, বল হেডস্যার ডাকছেন।’
তারপরেই যারা এসেছে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘সেদিন তো তোমাদের গ্রামের মোহর এসেছিল, ওর সামনেই তো সব কিছু আলোচনা হয়, গাছটা কেটে আমি তো সব টাকা পয়সা বাড়ি নিয়ে চলে যায় নি। কি খরচ সবের হিসাব দিয়ে দিতে পারি।’
–সে আপনি দিলেও বা, আপনার তো গাছগুলো কাটার আগে আমাদের সাথে কথা বলা উচিৎ ছিল, আমরা আরো ভালো কোন পার্টি খুঁজে দিতাম, আরো একটু টাকা বেশি পাওয়া যেত।
ভোলাবাবু মাথা তুলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই তো এই স্কুলে পড়তিস, আমি তখন হেডমাস্টার ছিলাম, না তো, রহিম বাবু ছিলেন, কি যেন নাম তোর?’
–রমজান। ছেলেটি উত্তর দেয়।
এবার ভোলাবাবুর মনে পড়ে। তখন অ্যাসিন্ট্যান্ট টিচার হয়েই ছিলেন। সারা স্কুল রমজান মাতিয়ে রাখত, আর প্রতিদিন সেই সময়কার হেডটিচার রহিম বাবুর হাতে মার খেত। তখন অবশ্য শাসনের ব্যাপারে এতটা কড়াকড়ি হয়নি।
ভোলাবাবু রমজানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘রমজান তো এখানে থাকিস না, কোথায় কাজ করিস?’
–হায়দ্রাবাদে, এখন অন্যের দোকানে কাজ করি, আসছে বছর নিজের সোনার দোকান করব?
–তুই করবি ? বা, বেশ ভালো, কবে এলি?
-আগের সপ্তাহে।
-স্কুলে এলি, সব কিছু জানিস তো?
রমজান এবার ইতস্তত করতে আরম্ভ করে, ‘না মানে ওরা...’
ভোলাবাবু একটা লম্বা শ্বাস ফেলে মুখগুলো আরেকবার দেখে নেন, বাকি নামগুলো তখনো মনে পড়ে না। সবার মুখ দেখে বলেন, ‘তারমানে তোমরাও ঐ কারণেই এসেছো? হায়দার আসতে বলেছে, তাই তো?’
একজন কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় ‘আমাকে ডাকছেন স্যার?’ বলে নতুন মাস্টার দরজার থেকে ভিড় ঠেলে অফিসের ভেতরে ঢোকে, তার পিছনেই সঙ্গীতা। ভোলাবাবু অনিমেষকে দেখেই বলে ওঠেন, ‘নতুন স্যারের সাথে তো তোমাদের আলাপ হয় নি, ইনি ...’
–থাক স্যার আমরা আলাপ করতে আসিনি, আমরা হিসাবটা দেখতে এসেছি, চারটে গাছ কত টাকাতে বিক্রি হল, আর আপনি কি ভাবে খরচা করলেন, হায়দারদা পঞ্চায়েত অফিসেও একটা চিঠি করেছে, প্রধান সাহেবও স্কুলে আসবেন, সব হিসাবে নিজে দেখবেন বলেছেন।
–আমি তো গাছ কাটার আগে পঞ্চায়েত অফিসে চিঠিও দিয়েছি, আমার কাছে রিসিভ কপিও আছে। ওনারা যে ফরেস্টে জানিয়েছেন তারও চিঠি আমাকে দিয়েছেন। চারটে গাছের মধ্যে দুটো তো মরা গাছ ছিল, বাকি দুটো হেলে পড়েছিল, যেকোন সময় কোন স্টুডেন্টের মাথায় পড়ে যেত, আর তোমরা সব খরচের হিসাব মোহরের কাছেও পেয়ে যাবে।
-আমরা স্যার মোহরদার কাছে যাবো না, ও এখন আমাদের গ্রুপের নয়।
- অ, তা তোরা কোন গ্রুপের?
–বললাম তো আমাদের হায়দারদা পাঠিয়েছে, গাছের কিছু সেটেল করতে হবে।
ভোলাবাবু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু অনিমেষ তাঁকে থামিয়ে বলে ওঠে, ‘ঠিক আছে, তাহলে হায়দারদাকে নিয়ে সামনের সপ্তাহে এসো, সব হিসাব দেখিয়ে দেবো। যদিও তোমাদের মধ্যে কে ভি.ই.সি কমিটির মেম্বার জানি না, কারণ মেম্বার ছাড়া আমরা খরচের হিসাব দেখাতে বাধ্য নয়।’
–সামনের সপ্তাহে নয়, আজ সন্ধে সাতটাই বসবো, মোহরদার সাথে এমনিতেও বসতে হবে, তিনবছর ধরে গজুর বাঁধের একটা পয়সার হিসাব দেয় নি। বছরে লাখ তিনেক টাকার মাছ বিক্রি করে, পঞ্চায়েতকে একটা নয়া ঠেকায় না, গাঁয়েও দেয় না। ও শালারও আজ হিসাব হবে, এখানেই হবে।
এবার অনিমেষ স্যার রেগে ওঠে। ‘ এটা স্কুল, এখানে মুখ খারাপ করবে না, আজ সন্ধেবেলাতে আসবে বলেছ, সেই সময় এসে সব হিসাব দেখবে, এখন যাও, আমরা ক্লাস করছি।’
ছেলেগুলো চলে যেতেই অনিমেষ ভোলাবাবুর দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করতেই পাশ থেকে সঙ্গীতা বলে ওঠে, ‘সেবার টাকা ঢোকার পর থেকেই এরা ঝামেলা করছে, ঐ হায়দার তো আগের বছরে টেণ্ডারের জন্যেও এসেছিল।’
–ও তাহলে কন্সট্রাকসনেরও কাজ করে?
-হ্যাঁ, ওর নামটাতে কম দেখিয়ে আরো পাঁচটা পেপার জমা দেবে বলেছিল। সব তো সেটিং, বুঝতেই পারছো।
-কাজ কি ঐ করছে?
-না না, এস. আই. অফিস থেকে টেণ্ডার করে কাজ দিয়েছে, ভি.ই.সি শুধু চেকে টাকা পেমেন্ট করেছে, সেটাই তো রাগ, যা টাকা দিয়েছিল, তার থেকে ভালো কাজ হয়েছে, রান্না ঘরের উপরে টিন লাগানোর অর্ডার ছিল, আমি ঢালাই করে নিয়েছি। কন্ট্রাকটার আমার মামার বাড়ির গ্রামের, সম্পর্কে আমার মামা হয়। অফিস আর কোন স্কুলের কমিটিকে টাকা খেতে দেবে না, সব নিজে খাবে। সে খাক, আমাদের কাজ নিয়ে কথা। এখানে কাজও হল খুব ভালো, কিন্তু সমস্যা হল রঙ করাতে গিয়ে, আর টাকা নেই। কমিটিতে তখন মোহরই সভাপতি, সেটা গেলবার পঞ্চায়েত ভোটের আগের কথা। উপপ্রধান ছিল, আর এই সাংসদের মেম্বার। ও বলল, ‘মাস্টার মশাই, চারটে গাছ বিক্রি করে দিন, যা টাকা পাবেন পুরো স্কুলটার রঙ হয়ে যাবে।’ না হলে আমি ভেবে ছিলাম, সামনের অর্থবর্ষে টাকা ঢুকলে রঙ করাবো।”
-তার মানে দুটো গোষ্ঠীর ঝামেলা, মাঝখানে স্কুলটা পড়ে গেছে। ঠিক আছে আজ সন্ধেবেলায় আসুন দেখুন কি বলে।
-আমি একা আসতে পারবো না, ভয়ে আমার শরীর খারাপ করে, তুমি সব কথা বলবে, আজ ক্যাশবুকটা নিয়ে যাচ্ছি, বাড়িতে একটু ভালো করে দেখে শুনে নাও। এমনিতেও এরপর তোমাকেই চালাতে হবে, সঙ্গীতা এই স্কুলে তোমার থেকে আগে এলেও প্যারাটিচারকে দায়িত্ব দেবে না। তোমাকে আজ বাড়ি ফিরতে হবে না। দেশী মুরগি কাটছি, রাতে খাবে, কাল স্কুল করে বাড়ি যাবে।
অনিমেষ আর কোন কথা বলে না। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে প্রতিদিন তিনটে বাস চাপতে হয়, একদিন এই ধকল থেকে বাঁচা মানেই বিরাট ব্যাপার। তাও বাড়িতে ফোন করে সব কিছু জানিয়ে দিল।
২
অনিমেষ ও ভোলাবাবু সাতটা বাজার একটু আগেই স্কুলে পৌঁছে গেলেন। সঙ্গীতাকে ভোলাবাবু নিজের থেকেই আসতে বারণ করেছেন। গ্রামের মেয়ে হলেও এই অন্ধকারে স্কুলের এদিকে না আসাই ভালো। স্কুলটা গ্রামের একবারে শেষ প্রান্তে, একটু দূরেই একটা ক্যানেল চলে গেছে। কয়েক মাস আগেই একটা কাকে মেরে ক্যানেলে ভাসিয়ে দিয়ে গেছিল। স্কুলের কারেন্টটাও মাস ছয় হয়েছে, আগে এমনি সকালের দিকে কারেন্ট না লাগলেও ভোটের সময় সামনের পোল থেকেই তার টেনেই কাজ সারতে হত। তারপর ভোলাবাবু নিজের চেষ্টাই স্কুলে কারেন্ট আনলেন, এ.সি.আর এল, মিড.ডে মিলের ফাণ্ড এলো।
-বুঝলে ভাই, প্রত্যেক স্কুলের হেডটিচারের বাড়ি স্কুলের কাছে হলে স্কুলের সুবিধা হয়। রহিমবাবু খুব ভালো লোক ছিলেন, কিন্তু স্কুলের জন্যে কোথাও তদবির করেন নি, আসলে উনি একটু দূর থেকে আসতেন, টাকা ঢুকলেও চিন্তায় পড়ে যেতেন। আমায় বলতেন, ‘আবার টাকা এসেছে, নাও এবার মর।’ আমি কিন্তু দিন রাত এক করে কাজ করিয়েছি। কন্ট্রাকট্ররের কাজ হলেও দেখতে তো আমাকেই হবে, কাজ খারাপ হলে এক্ষুণি আমাকে ধরবে।
অনিমেষ কথাগুলো শুনে উত্তর দিল, ‘সে না হয় হল মাস্টার মশাই, কিন্তু এখন তো সাড়ে সাতটা বাজতে চলল, কেউই তো এল না।’
–আরেকটু অপেক্ষা করো, ওরা সব বাবু, তাছাড়া শুনলে না, আজ মোহরেরও বিচার হবে।
অনিমেষ কোন উত্তর না দিয়ে আরেকবার খাতা পত্রগুলো নাড়াচাড়া করে দেখতে লাগল। স্কুল থেকে ভোলাবাবুর ঘরে যাবার সময় ক্যাশ বুক ও সব ভাউচার সঙ্গে করে নিয়ে গেছিল, সব ভালোভাবে দেখে আবার খাতাপত্র নিয়ে এসেছে, সেজন্যেই আগে এসেছে। কেউ দেখতে পেলে এক্ষুণি বলতে পারে বাড়ি থেকে জল মিশিয়ে এনেছে।
অনিমেষ খাতাপত্রগুলো উল্টেপাল্টে আবার দেখার সময় ভোলাবাবু প্রায়ই ঘরের বাইরে কিছু সময়ের জন্যে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকে আবার ঘরে এসে অনিমেষকে বলেন, ‘কই গো কেউ তো এলো না?’ বেশ কয়েকবার এই রকম বলবার পর অনিমেষ উত্তর দেয়, ‘এক কাজ করুন, একটু প্রধান সাহেবকে ফোন করে ব্যাপারটা জানবার চেষ্টা করুন।’
-এতো রাতে ফোন করা কি ঠিক হবে, কি অবস্থায় থাকবে।
ভোলাবাবু উত্তরটা দেবার কিছু সময় পরেই বলে উঠলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাবলু বোস কে একবার ফোন করে ব্যাপারটা জানতে বলছি, ও প্রধানের খুব কাছের লোক।’
ভোলাবাবু কিছু সময়ের জন্যে বাইরে বেরিয়ে ফোন করলেন। ঘরের ভেতর থেকে অনিমেষ খাতাতে চোখ বোলানোর সময় কথাবার্তাও শুনতে পেল।
ভোলাবাবু ফিরে এসে বেশ আনন্দের সাথে বলে উঠলেন, ‘প্রধান তো কিছুই জানে না বলছে।’
– মানে!
অনিমেষ চমকে ওঠে। তারপরেই ভোলাবাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,‘মোহরদার নম্বর আছে ? ফোন লাগান, সবটা বলুন, এই রকম ভাবে তো সারারাত স্কুলে বসে থাকতে পারি না।’
‘ঠিকই তো।’ বলতে বলতে ভোলাবাবু মোহরকে ফোন করলেন। মোহরের বাড়ি স্কুলের খুব কাছে। ফোন করবার সঙ্গে সঙ্গে, ‘একটু অপেক্ষা করুন আমি আসছি।’ বলে ফোন রাখলেও কিছু সময় পরে অন্ধকারেই স্কুলে চলে এলেন। ভোলাবাবুকে দেখেই বলে উঠলেন, “আপনাকে এই রকম পেয়ে কিছু কামানোর ধান্দা করেছিল। আমি প্রধানকে সব জানিয়ে দিয়েছি। কাল সকালে পুলিশ আসবে, আপনি শুধু একবার বলবেন, ‘ আপনাকে ভয় দেখিয়েছিল।’ তারপর আমি দেখছি।”
মোহর স্কুল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পা রাখতেই পিছন থেকে ভোলাবাবু আবার তাকে ডেকে বলে উঠলেন, ‘মোহর, বলছিলাম কি ঐ সব থানা পুলিশ বাদ দাও। শুধু শুধু ঝামেলা সৃষ্টি হবে, তার থেকে মিটে গেছে এটাই....’
মোহর আর কোন উত্তর না দিয়ে ভোলাবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। অফিসের ভেতরের আলোতে স্কুলের বাইরেটা সেরকম স্পষ্ট ভাবে দেখতে না পাওয়া গেলেও একটা হাল্কা বাতাস পাওয়া গেল, হয়ত এটাই স্বস্তির বাতাস।
No comments:
Post a Comment