1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

নকুল

ছবি  : ইন্টারনেট 

 নকুল

অভিজিৎ চৌধুরী

শাঁখ বাজছিল।সন্ধে ঘনিয়ে আসছিল।আকাশে  চেনা তারাটার দিকে একবার তাকালাম আমি।।লুব্ধক।খুব উজ্বল।শীতের রাতের আকাশ ঝলমল করছে।।

ড্রাইভার বলল,চা খাবেন স্যার!

টানা মিটিং ছিল।খিদেও পেয়েছে।দুপুরে  বিরিয়ানি ছিল।খুব দ্রুত শেষ করতে হয়েছে কারণ তিনটে থেকে ছিল সেকেন্ড হাফের মিটিং। ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডার সবে  ৬টা আইটেম হয়েছিল ফার্স্ট হাফে।আর ৬ টা বাকী।

মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট স্কিম অনেকটা সময় নিয়েছেআমার ব্লক একশ দিনের কাজে প্রথম দিকেই থাকে।ম্যানগ্রোভের নতুন প্রজেক্ট ভাবত ভাবতে গাড়ি চলে এলো মগরাহাট এক সময় ডাকাতির জন্য কুখ্যাত ছিল।পাশেই থানা।অনবরত বিচিত্র কিসিমের মানুষের যাতায়াত।

গাড়ি থামতেই ড্রাইভার কানাইদা চায়ের অর্ডার দিলে নকুলের গলা পাওয়া গেলো,স্যার আজ কিছু খাবেন না!

চমৎকার ম্যাগি করে নকুল।ডিম ফাটিয়ে দেয়।চানাচুর কাচা লংকা সবকিছু মিলিয়ে জম্পেশ।

খিদে পেয়েছে, লজ্জা করে লাভ নেই।

বললাম,নকুলদা দুটো ম্যাগি।আমার আর কানাইদার।

খুশী হল নকুল।

বলল,স্যার একটু বসবেন!

খুব ক্লান্তি ছিল।বললাম,বেশীক্ষণ নয় কিম্তু!

বলল,যাব আর আসব।

গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।কানাইদা শীতেও ফ্যান চালিয়ে দিয়ে গেছে।পাশেই বিস্তীর্ণ মাঠ।

এক দারোগাবাবু নকুলকে এই দোকানটা করে দিয়েছিল।

বুকে একটা ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।বোঝা যায় বেশ গভীর ক্ষত।এখন শুকিয়ে গেলেও দাগ রয়ে গেছে।রক্তপাত হয়েছিল বেশ কারণ কাটাটা বেশ গভীর।তন্দ্রাটা কাটছে না তখনও।তার মধ্যে মনে হল হাওয়ায় ভেসে ভেসে যেন কোন স্বপ্নের ভিতরেই নকুলের দোকানকে দেখেছি।জানি না স্বপ্নেই 

ফিরে এলো নকুল তাড়াতাড়ি।আমি গাড়ি থেকে নেমে বাইরে ওর দোকানের সামনে এসেছি।

শশব্যস্ত ভাবে চেয়ার এনে বসতে দিল।ডিমের খোলা এনে  পায়ের তলায় ধরিয়ে দিল।।এখানে খুব মশা।সাপও রয়েছে।তবে লোকজন বলে শীতের সময় সাপ শীতঘুম দেয়।গরমকালে হাওয়া খেতে বের হলেই যতো বিপত্তি।এখানে এসেই হাসপাতালে এক বালকের মৃত্যু দেখেছি সাপে কাটার।হাসপাতাল ভাঙচুর হয়েছিল।অনেক কষ্টে সামাল দিয়েছিলাম।

এই সময় কাকদ্বীপ থানার গাড়ি এসে থামল।গাড়ি থেকে যে নামল আমার পরিচিত অফিসার।

আমাকে দেখেই বলল,স্যার আপনি!

হেসে বললাম,খিদে পেয়েছে।

ম্যাগি খাবেন তো!

তুমি কি করে জানলে!

নকুলদা বলেছে।আপনার গল্প করে তো!

নকুলের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

এবার পুলিশ অফিসার সজ্ঞয় বলল,স্যার লেখক।জানো তো নকুলদা!

হাসল নকুল।বলল,কানাই বলেছে।

এবার সজ্ঞয় বলল,তবে নকুলদা বাড়িতে অস্ত্র রেখো কিন্তু!

নকুল বলল,ওসব আমি আর ছোঁব  নাকো।

সজ্ঞয় বলল,সে ঠিক আছে।বউ মেয়ের কথাও ভাবতে হবে।

আমায় কেউ মারবে না।মৃত্যু তো প্রায় দেখে ফেলেছিলাম।

পুতুল বউদি কেমন আছে!

ভালো।তবে ভুলে যায় সবকিছু।

আমি বললাম,কেমন!

মাঝে মাঝে বলে ওরা আসছে।আমি শব্দ শুনতে পাচ্ছি।ভাবতেই পারে না,আমার কোন শত্রু নেই আর।

আমি বললাম,ভয়টা তো কাটাতে হবে।

কিনে দিয়েছি।

এখানে আসতে আসতে বেশ জোরালো শাঁখের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম।আবছায়া তন্দ্রার মধ্যেও

শুনতে পেলাম শাঁখের তীর্ব ধ্বনি।

বললাম,কি কিনে দিয়েছে!

ভগবান কৃষ্ণের সেই শাঁখ।

পাঞ্চজন্য শঙ্খ!

এক মুখ হাসল নকুল।

তখনও সেই শাঁখ বেআইনি হয়নি।

কথায় কথায় ম্যাগিও বানিয়ে ফেলেছে।

সজ্ঞয়কে বললাম,খাবে!

সে বলল,না স্যার।আমরা একটু আগে হাজির বিরিয়ানি খেয়েছি।চা খাব এখন।

নকুলদা,তোমার বাড়িতে এক রাত থাকতে হবে।আমি নই, থানার মেজবাবু।

নকুল বলল,নিশ্চয়।ওপরে ঘর করেছি।সেখানে থাকতে পারবেন!

বললাম,এখনও ডাকাতি হয়!

সেলিম নেই আর।খালাস হয়ে গেছে কিন্তু  বিশ্বাস নেই নতুন কেউ যদি ওঠে।

নকুল বলল,সেরকম হলে আমার কাছে খবর থাকবে।

সামান্য অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।বললাম,কি করে!

সে স্যার বলা যাবে না!

তুমি কি তবে ডাকাত ধরিয়ে দিয়ে আনন্দ পাও!

না।আমার বেঁচে ওঠার গল্প শোনাই।সেদিনের নকুল ডাকাতের ভাল হওয়ার গল্প। 

আমি বললাম,ওরা শোনে!

নকুল বলল,কেউ কেউ দেখেও তো আমায়।নজরদারি করে।পুলিশের খোচর বলে ডাকে।আবার কেউ বিশ্বাসও করে।

কষ্ট হয় না!

না।ওদের ভালোর জন্যই তো করি।

গাড়িতে উঠে  দোকান ছাড়িয়ে সামান্য এগুলেই শাঁখের ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল।অবশ্য গাড়ি চলছে কিনা বুঝতে পারছি না।ঘুমের ঘোর কাটেনি আমার।আবার জেগেও তো আছি।

শীতের কুয়াশা আবৃত করছিল পথ।মাঘ মাস। এবার ঠাণ্ডা লাগছে।

রহস্যময় পথে যেতে যতে আকাশে অনেকগুলি তারা দেখতে পেলাম।। সস্ত্রীক, ছেলেও রয়েছে,আমি অবাক হলাম না। ওর ফেলে আসা ডাকাত জীবনের কথা বাড়িতে বলেছিলাম।।ওদেরও ইচ্ছে ছিল নকুলকে দেখার।এরকম আশ্চর্য সমাপতন ঘটতে দেখে মজা পেলাম কিন্তু অবাক হলাম না।যুক্তি,তর্ক ওদের এরকম আসার লজিক ভাবতে পারছিলাম না।

  শাঁখ আবার বেজে  উঠল জোরেই।আর নকুল সেই ধ্বনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চঞ্চল হয়ে উঠল।

তারপর বলে উঠল,এই এক্ষুণি আসছি বাড়ি থেকে।দ্বিতীয় বার ওকে বাড়ি যেতে দেখে আমি বউ ছেলেকে রেখে নকুলকে অনুসরণ করলাম।ওর বাড়ি গিয়ে যা দেখলাম,ভয়ে শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে এলো।

সাপুড়ের বাঁশি নয়,পাঞ্চজন্য শঙ্খের ডাকে নাগ – নাগিনীরা ওর বাড়ির উঠোনে হাওয়ায় দুলছে।নকুল জামবাটিতে দুধ সাজিয়ে দিয়েছে।ভয়ে সিঁটকে রইলাম।প্রতিটি সাপই বিষাক্ত।

ছোবল দিলে অবধারিত মৃত্যু। 

গায়ে নকুলের হাত ঠেকতেই চমকে উঠলাম। 

নকুল কোমল স্বরে বলল,চলুন স্যার।ওরা কিছু করবে না।আমার পুতুলরানীকে ওরাই তো রক্ষা করে,আমাকেও।

কোনক্রমে বললাম,মেজবাবু এলে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারবেন!

অনেকেই থাকেন।তাঁদের কতো রকমের কাজ।তবে বেচাল দেখলেই অবধারিত মৃত্যু। 

বললাম,সেই মৃত্যুও তো স্বাভাবিক।সুন্দরবনে লতায় কাটা তো স্বাভাবিক।

সামন্য ক্রূর চোখে আমায় মেপে নিলো নকুল।


কানাইদা ডাকছিল।স্যার ওঠুন।ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

নকুল বলল,স্যার ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, আরেক বার গরম করতে হবে।

ঘোর তখনও কাটেনি।এরকম সাজানো ভয়ংকর স্বপ্ন কোনদিন দেখিনি তো!

সমস্ত পথ জুড়ে স্বপ্নটা ছিল।কোন নকুল সত্যি আজও উত্তর পাইনি।

sahityeravi@gmail.com
কলকাতা 

1 comment:

  1. দারুণ সুন্দর একটা গল্প লিখেছেন। অভিনন্দন জানাই।

    ReplyDelete