1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

মৎস্যকন্যার চিঠি

ছবি : ইন্টারনেট 

মৎস্যকন্যার চিঠি 

অনিন্দ্য পাল 


দক্ষিণ কলকাতার একটা ঘিঞ্জি বসতির মধ্যে এক কামরার একটা ভাড়ার-ঘর। ঘরের সামনে এক চিলতে বারান্দায় একটা রং চটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে ছিল হিজল, হাতে একটা চিঠি। দুদিন হল হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছে। মরেই যেত হয়তো। একদম যখন আশা ছেড়ে দিয়েছিল তখনই এসেছিল এই চিঠিটা। জমানো টাকা পয়সা, বাড়ি বিঘে-দুই জমি সব ততদিনে ডাক্তার আর হাসপাতালে একাউন্টে। কিন্তু তারপর কে তাকে মৃত্যুর সদর দরজা থেকে ফিরিয়ে আনলো সেটা এখনো জানেনা হিজল। 

তবে হাসপাতাল থেকে এই খামে মোড়া চিঠিটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, সুস্থ হয়ে এটা পড়ে নেবেন সব জানতে পারবেন। চিঠিটা বারবার উল্টেপাল্টে দেখেও কোন ঠিকানা বা নাম দেখতে পেল না। কে হতে পারে? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মুখটা ছিঁড়ে খুলে ফেলল চিঠিটা। 

বাবা, 

বোগেনভেলিয়া গাছটা এই বর্ষায় গেটের মাথা ছাড়িয়ে দু তলার বারান্দায় উঠে আসবে। বাবা তুমি কেটে দেবে জানি তবু যদি শিকড় টুকু রেখে দিতে তবে আবার একটু সবুজ লেগে থাকত আমাদের বাড়ির সঙ্গে। এত বড় বাড়ীটা করতে গিয়ে সামনের বাগানটা যখন নষ্ট হয়ে গেল মা খুব কেঁদেছিল। তুমি সে কথা জানো না। সেদিন রান্নাঘরে, মা আমার বুকে অনেকটা কষ্ট পেলে দিয়েছিল। অথচ তোমার সঙ্গে এক ছাদের নিচে তেত্রিশ বছর! মাকে কখনও বোঝনি তুমি, শুধু বুঝিয়েছো। কেমন করে পয়সা বাঁচাতে হয়, কেমন করে স্বামীর প্রতিটা কথা বেদবাক্যের মতো মেনে চলতে হয়, এমনকি নিমন্ত্রণ বাড়িতে কোন শাড়িটা পরে যাবে-- সেটাও তুমি ঠিক করে দিতে। মা তোমার সমস্ত শাসন মুখ বুজে মেনে নিয়েও সব সময় শান্ত, মুখে হাসির রেখাটা কখনো মুছে যেতে দেখি নি। যত বড় হয়েছি মাকে বুঝতে চেষ্টা করেছি ততবেশি মনে হয়েছে মা একটা গাছের মত, অনেক বড় একটা গাছের মত আগলে রেখেছিল আমাদের সবাইকে। আর আমি লুকিয়ে থাকতে চেয়েছি সেই গাছের ভিতর। 

          ছোটবেলায় যখন আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে তুমি মাকে বকতে, কোমরের বেল্ট খুলে মারতে তখন বুঝতাম না, শুধু বুঝতাম আমি শুধু মায়ের। তুমিই কখনো আমাদের কারো হতে পারোনি। 

মা দূর্বল ছিল না। মা এর ভিতর যে আগুন ছিল তাতে তুমি পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারতে, কিন্তু মা সমস্ত শক্তি দিয়ে শুধু আমাকে বাঁচাতে চেয়েছিল তোমার কাছ থেকে, অন্যদের কাছ থেকে, সমস্ত পৃথিবী থেকে। 

কতই বা বয়স তখন আমার! প্রথমবার গেলাম খুশি পিসির বাড়ি, আমাদের দেশের বাড়ি। তুমি কখনো আমাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে না, অবশ্য সেটা আমার পক্ষে সম্ভবও ছিল না। মায়ের কোলই আমার সবচেয়ে নিশ্চিন্তে, সবচেয়ে আরামের জায়গা ছিল, 

এই সেই দিন পর্যন্তও। 

 সেদিন মার কোলে আমাকে দেখে খুশি পিসি কি বলেছিল, তোমার মনে আছে বাবা? আমার আছে-- 

"কিরে হিজল এই হিড়িম্বে টাকে কোথা থেকে আনলি? সাত রাজ্যি খুঁজে খুঁজে পাকা গমের মতো রং দেখে বে করলি-- আর এই অমাবস্যের মত মেয়ে! হবি নি কেন? শুনলুম তো একেবারে কালীপুজোর রাতে ঘোর অমাবস্যেই হয়েছে!" তবে পিসির তখনো অবাক হওয়া বাকি ছিল। মায়ের কোল থেকে যখন নামলাম, আমাকে দেখে আঁতকে উঠেছিল পিসি, আর সেটাই তো কাল হলো! সিঁড়ি থেকে পা পিছলে একেবারে বারান্দায়, কংক্রিটের মেঝেতে পড়ে সেদিন পিসির কোমরটাই গেল ভেঙে! নাহ, তারপর আর কোনোদিন মা আমাকে নিয়ে পিসির বাড়ি যায়নি। আর কি করেই বা যেত ? 

     তুমি নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি বাবা পিসি পড়ে যাওয়ার পর সেদিন কি ঘটেছিল। তুমি সেদিন মাকে এক বাড়ি লোকের সামনে চড় মেরে ছিলে। তোমার চড়ের আঘাতে নাকি অপমানে সেদিন মা টানা দু ঘন্টা অজ্ঞান হয়ে সেই বারান্দাতেই পড়েছিল তা আমি আজও জানি না। তবে সেই শেষ। আর কোনোদিন মা আমাকে নিয়ে তোমার সঙ্গে কোথাও যায়নি। কোমর ভেঙে পিসি সেদিন "মাগো - বাবাগো - মরে গেলাম গো" করতে করতে যখন বলছিল-- "এই মেয়েছেলে তো সাক্ষাৎ ডাইনি! আগে বিদায় কর ওটারে! দূর হয়ে যা আমার বাস্তু থেকে!"-- তখন শব্দগুলোর কোনোটারই মানে আমি জানতাম না। সেদিন থেকে আজও কানের ভিতরে শব্দগুলো বাসা করে আছে। শুনেছিলাম খুশি পিসি মরার আগে অনেকবার করে আমাকে দেখতে চেয়েছিল। পিসি মারা যাবার পর এ কথা শুনেছিলাম মার মুখ থেকে। অনেক ঘেন্নার মধ্যেও সেদিন পিসির জন্য একটু কষ্ট হয়েছিল। 

         শেষ জীবনটা খুব খারাপই কেটেছিল পিসির। জীবনের শেষ কয়েকটা বছর পিসিকে গোয়াল ঘরে থাকতে হয়েছিল। তিন ছেলে বাড়িটা চুলচেরা ভাগাভাগি করে নেওয়ার পর পিসির জন্য পড়েছিল ওই গোয়াল টুকুই। মা সেদিন বলেছিল, "মানুষটা খারাপ ছিলনা। তোর বাবাকে মানুষ করেছিল ওই পিসি। তোকে কেন যে সেদিন ওরকম করল?" 

পিসি যেদিন মারা যায় তার দিন দুই আগে থেকে পিসির মেজো আর ছোট ছেলে কোন্নগরে আত্মীয়ের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে, তবে বাড়ি যে ফাঁকা ছিল তা নয়। বড় ছেলে, বড় বউ, নাতি সবাই ছিল, তবু পিসির তিনদিন খাওয়া জোটেনি। পৌষ মাসের সেই রাতে সস্তার থানটুকু ছাড়া পিসির গায়ে কিছুই ছিল না। 

বাবা মনে পড়ে? তুমি কিন্তু সেদিন বাড়ি এসে খুব কেঁদেছিলে! আমি দেখেছিলাম আড়াল থেকে। খুব ইচ্ছা করছিলো তোমার চোখ দুটো মুছিয়ে দিই কিন্তু সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারিনি। মার কাছে শুনেছিলাম পিসির মৃত শরীরটা নাকি শিয়াল-কুকুর ছিঁড়ে খেয়েছিল। আমার মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে মা সেদিন খুবই কেঁদেছিল। 

মার বুকের মধ্যে পাড় ভাঙার শব্দ পেয়েছিলাম আমি সেদিন মা। সেদিন মার বুকের মধ্যে পাড় ভাঙার শব্দ পেয়েছিলাম আমি। 

#দুই 

রাত ন'টা বাজলে আমি আর স্থির থাকতে পারতাম না। তুমি জানতে না বাবা। আমি রোজ এই সময় আমার ছোট্ট ঘরের জানালাটা দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। তুমি বাড়ী ফিরতে। কিন্তু সেটাই শুধু কারণ ছিলনা। তখন তোমার বাইকটাকে বারান্দার উপরে ঠেলে তুলতে হত। এই টুকুই আমার অপেক্ষার কারণ। সারাদিনই ঐ একবারই তো তুমি আমাকে ডাকতে, "মিতুল-- তোমার মাকে ডেকে দাও", ওইটুকুই। একবারের বেশি কখনো দুবার ডাকোনি। আমার তখন খুব রাগ হত। নিজের উপর, ভগবানের উপর। কেন আমাকে এমন করে পাঠালে? শুধু একটা ফেলে দেওয়ার জিনিসপত্রের গাঠরির মতো! নিজের কাজটুকুও নিজে করতে পারিনা! তোমার জন্যও কষ্ট হতো আমার। তুমি তো কোন দোষ করনি। একটা ফুটফুটে সুস্থ-সবল সন্তান সব বাবা-মা'ই চায়। কিন্তু এমন অন্ধকার রূপ নিয়ে এমন খুঁত শরীর নিয়ে জন্মালে তোমার কষ্টতো হবেই। পাড়ার লোক, তোমার কলিগরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করলে তোমার তো অপমান বোধ হবেই। এমনকি খবরের কাগজের কাকুটাও যেদিন বলল, "হিজলদা- কিছু মনে করো না, তুমি নিপা বৌদি দুজনই এত সুন্দর, মেয়েটা এরকম কাওরা বাগদী দের মত হলো কি করে বলতো? তাও আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না এ মেয়ের বিয়ে দেবে কি করে?" আমি তখন তোমার চেয়েও নিজের ওপর বেশি রেগে গিয়েছিলাম। 

 আমার পরে আর কেউ এলোনা তোমাদের ঘর আলো করে। আসবেই বা কি করে- আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তো মায়ের ইউটেরাসটাই বাদ চলে গেল। এই কথাটা আমি জানতামই না কখনও, যদি না তুমি কলকাতায় আর একটা ঘর বাঁধার কথা ভাবতে। মানতে পারেনি মা। বাড়ির অমতে প্রেম করে তোমাকে বিয়ে করে চিরকালের মতো বাপের বাড়ির সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে যে তোমার তিন কামরার দেড়তলা বাড়িটাকে সব অপমান মারধোর সত্ত্বেও নিজের বলে ভেবেছিল, সে এটা কি করে মেনে নিত? মানেনি, আর তাই সেদিন তুমি আমাকে আর মাকে বাড়ির বাইরে বার করে ভেতর থেকে তালা দিয়ে দিয়েছিলে। সারারাত আমরা দুজন একে অন্যের বুকে বাসা ভাঙা পাখির মত মুখ লুকিয়ে বসে ছিলাম। পরদিন সকালে মামি তোমাদের ঝামেলা মেটাতে এসে আমাকে দেখে বলেছিলো, "এই অপয়া মেয়েটাকে একদম বাড়ি ঢুকিও না ঠাকুরজি। এখনই কোথাও ফেলে দিয়ে এস। বাঁচার হলে বাঁচবে মরার হলে মরবে। কি পাপ রে বাবা? নিজেও ঐ রূপ নিয়ে এলি, আর পরেরটার আসার পথটাও বন্ধ করে দিলি? রাক্ষুসী একেবারে!" 

   মা কোনদিন আর মামার বাড়ী যায়নি। এমনকি দিদা মারা গেলেও না। এভাবেই চলছিল, বড় হয়ে উঠছিলাম। তারচেয়ে বলা ভালো, আমার শরীরের অর্ধেকটা বড় হচ্ছিল। কিন্তু শরীরে যেমনটাই হই মনটা তো আমার ঠিকই ছিল। সেখানে কোনো খুঁত ছিল না। আঘাত অপমান ওইটুকু বয়সেই আমাকে বড় করে দিয়েছিল। 

  আর পাঁচটা বাচ্চার মতো স্কুলে পড়া হলো না আমার। সেই ইতিহাস তুমি বোধহয় জানো না আজও। তোমার তো মত ছিলই না। আসলে তুমি ভয় পেতে, স্কুলে নিয়ে গেলে তোমাকে অনেক মানুষের বাঁকা কথার মুখে পড়তে হতে পারে। আরও অনেক ধারালো হাসির মুখে কেটে ছিঁড়ে যেতে পারে তোমার সুন্দর খোলসটা। যত বড় হয়েছি বুঝেছি তুমি মানুষটা যতটা বাইরে খারাপ, ভিতরে ততটা নয়। যদি তাই না হবে, তবে পাছু নামে যে লোকটা মাঝেমধ্যেই আসতো তোমার কাছে, সে যেদিন আমাকে হঠাৎ করে দেখে ফেলে বলল "আমার সঙ্গে হিজড়দের একটা দলের খুব ভালো যোগাযোগ আছে, তুমি একবার কথা বলে দেখতে পারো। ওকে এখন থেকে ওরা ওদের মতো করে মানুষ থুড়ি হিজড়া বানিয়ে নেবে।" একটা বিচ্ছিরি হাসিতে সেদিন পুরো বাড়িটা থমথম করছিল। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে উপরে নিয়ে যাবার জন্য সিঁড়িতে পা রেখেছে সবে, তখনই তুমি যেটা করলে সেটা স্বয়ং ভগবানও ভাবতে পেরেছিলেন কি? 

তোমার একটা ঘুষিতে পাছু নামের সেই বিচ্ছিরি লোকটার নাক থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে দেখে মা তাড়াতাড়ি আমাকে দেড়তলার ঘরে বন্দি করে ধুপ ধাপ করে নিচে নেমে গেল। আমার কেন জানিনা সেদিন তোমাকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করতে ইচ্ছা করছিল। সাহস পাইনি। যদি সেদিন সাহস করতাম তবে হয়তো এক মুহূর্তের জন্য হলেও এই জীবনে বাবার আদর টুকু পেতাম। হয়তো তোমার কঠিন কর্কশ খোলসটা ছিঁড়ে যেত। হয়তো এরকম আরো অনেক হয়তো নিয়ে বাঁচতে হতো না আমাকে। 

বড় হচ্ছিলাম শরীরে-মনে। রংটা ছোটবেলার মতো অতোটা কালো মেঘবরন আর নেই। শিশু থেকে নারী হয়ে উঠছিলাম আস্তে আস্তে, অসম্পূর্ণ কিন্তু মায়ের মত। অসুন্দর কিন্তু লোভনীয়। লোভনীয় শব্দ টা হয়ত আমার সম্পর্কে ঠিক খাটে না, তাও শব্দটা ব্যবহার করলাম। 

  তোমার মনে আছে বাবা তোমার একবার খুব জ্বর হয়েছিল। তুমি একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলে। মা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বিজু জ্যাঠাকে খবর দেওয়া হয়েছিল। তখন রাত প্রায় আটটা বাজে। বিজু জ্যাঠা মা আর তোমাকে নিয়ে ডাক্তার কাকুর বাড়ি গেল, আমাকে রেখে গেলো বিজু জ্যাঠার ছেলে পুচুর কাছে। পুচু আমার চেয়ে অন্তত বছর দশেকের বড়। কিন্তু ওকে আমি দাদা বলতে পারিনা আজও। ওর নামটা উচ্চারণ করতেই আমার সমস্ত শরীর এখনো ঘিনঘিন করে উঠছে। এই ঘটনা মা আজও জানে না। 

 তোমাকে নিয়ে চলে যাবার পর আমি ঠাকুরের ছবির সামনে একা একা কাঁদছিলাম। মা কালীর কাছে মাকেও দেখেছি কাঁদতে। পুচু এলো, আমার পাশে বসলো। চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে এটা ওটা বলতে বলতে সরে এলো আমার কাছে। খুব কাছে। এত কাছে মা ছাড়া তার আগে কেউ আসেনি। আমার অস্বস্তি হচ্ছিল। ভয় করেনি। আসলে ভয়ের কারণ গুলো তখনও আমার অজানা। কিন্তু অস্বস্তিটা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগল। তখন আমি সবে বারো, শরীরের কুঁড়িগুলো সদ্য ফুটে উঠছিল। নিজের প্রতি, শরীরের প্রতি জন্মাচ্ছিল ভালোবাসা। ঠিক তখনই শয়তানটা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে যখন ও আমার বুকটা জোর করে চেপে ধরল, আমার শরীরের মধ্যে তখন ঘেন্না গুলো জমে গেছে। উঠে দাঁড়াতে পারি না পালাতে পারবোনা, সেটা ও ভালো করেই জানত, আর তাই আরো জোরে- খুব জোরে চেপে ধরছিল আমাকে। ব্যথা, ঘেন্নার সেই অনুভূতি আজও আমার ভিতর টগবগ করে ফোটে। কিন্তু সেদিন আমি চেঁচাইনি। ছটফট করতে করতে পিলসুজ টা হাতে পেয়ে গেলাম। ওটাকেই আঁকড়ে ধরলাম। তারপর কখন যে ওর মাথা ফেটে রক্ত বেরিয়ে গেছে তা আমিও জানি না। শুধু দেখলাম শয়তানটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে এক ছুটে বেরিয়ে গেল মাথাটা চেপে ধরে। সবাই জেনেছিল পুচু হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছে। মা-ও তেমনি জেনেছিল। আমার কিন্তু সেদিন কোনো কষ্ট ছিলনা। মা কালী সহ্য করার শক্তি দিয়েছিল। মাকেও তাই বলিনি কিছু। তবে মা হয়ত কিছু আন্দাজ করেছিল। পিলসুজটা পরের দিন থেকে আর ঠাকুরের সিংহাসনের সামনে দেখতে পাইনি। পরদিন সকালে আমাকে স্নান করাবার সময় ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছিল মা। বাবার কাছে এসব বলা উচিত কি না জানি না, তবে আমাকে মেয়ে হয়ে জন্মানোর সম্মান কেউ দেয় নি, এমনকি তুমিও না। নাহ্, এখানে তুমিও ডাহা ফেল বাবা। 

এরপরে এলো সেই দিন, আমার আজ পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত, সবচেয়ে খুশির সবচেয়ে সম্মানের দিন। সেদিনও মা আমাকে অন্য দিনের মতো স্নান করাচ্ছে। আমি মায়ের কাছে যেন সবেমাত্র জন্মানো শিশু, কোন লজ্জাবোধ মায়ের কাছে ছিল না আমার। মগে করে গায়ে জল ঢালছিলাম, মা পরম যত্নে ঝিঙের জালিতে সাবান দিয়ে আমার সুস্থ-অসুস্থ সবটুকু শরীর পরিষ্কার করে দিচ্ছিল। তখনই মা হঠাৎ করে আবিষ্কার করল আমার শরীর থেকে রক্ত বইছে। প্রথমটায় মা ভেবেছিল জালির ঘষায় কেটে গেছে হয়তো তাই ছুটে ডেটল আনতে গেল। তারপর অনেক খুঁজেও যখন কোনো কাটাছেঁড়া উদ্ধার করতে পারল না, যখন বুঝল রক্তটা আমার মেয়ে হয়ে ওঠার, বড় হয়ে ওঠার খবর এনেছে- মা তখন এক অদ্ভুত ভাবে হেসে উঠেছিল। সে হাসিতে কান্না কষ্ট আনন্দ সবই মিশেছিল। আমাকে ভীষণ ভীষণ রকম আদর করতে করতে কপালে বারবার হাত ঠেকিয়ে বলে উঠেছিল, "ভগবান তুমি আছো। তুমি আছো।" 

     আমি প্রথমে বুঝিনি, তলপেটে হালকা একটা যন্ত্রনা হচ্ছিল সেদিন সকালেও। যন্ত্রণাটা বেশ জোরেই হচ্ছিল, কিন্তু মাকে বলার মত সুযোগ পাইনি, তাই রক্ত দেখে আমিও খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। কেউ কখনও বলেওনি আমাকে। আসলে আমাকে সত্যিই মেয়ে বলে মনে করেনি কেউ। মায়ের কথা ওভাবে বলা যাবেনা, মা আমাকে আড়াল করে নোংরা চোখগুলোর সূচের মতো দৃষ্টি থেকে আমাকে বাঁচাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল, হয়তো তাই এই ব্যাপারে কিছু বলার সুযোগই পায়নি। অথবা এমনটাও হতে পারে, মা ভেবেছিল এমন ভাঙাচোরা অর্ধেক-মানুষ শরীরে জীবনের বীজ থাকা সম্ভবই নয়। এরকমটা না ভাবাটাই বরং অস্বাভাবিক। কোমরের পর থেকে যার শরীর এমন অমানুষিক তার সম্পর্কে সব কিছুই ভাবা যেতে পারে। তবু সেই কয়েক ফোঁটা রক্তে আমি সেদিন মেয়ে হয়ে উঠলাম, শরীরে-মনে। বাবা, সত্যি বলছি সেদিন প্রথমবার আমার মনে হয়েছিল এই পৃথিবীতে আমার জন্যও একটু জায়গা আছে। আমারও পৃথিবী কে কিছু দেবার আছে। তুমি হয়তো অবাক হচ্ছ এসবের একবিন্দুও তুমি জানো না বলে, কিন্তু তুমি তো তখন কলকাতায় থাকো। সারা সপ্তাহ পর শনিবার বাড়ি এসেও ব্যস্ত থাকতে। মার কাছে জেনেছিলাম কলকাতার অফিসে চাকরির পাশাপাশি তুমি এখানে জমি কেনাবেচার কাজও করতে। তাই এসব তোমার জানার কথা নয়। তাছাড়া আমার সম্পর্কে তোমার কোন আগ্রহ কখনো ছিল বলে আমার অন্তত মনে হয় নি। 

          মা চেষ্টা করেছিল অনেক, তুমি অশান্তি করবে জেনেও আমাকে নিয়ে প্রাথমিক স্কুলে গেছে। দিদিমনিরা তো আমাকে দেখে হেসেই খুন! তাদের সবার একটাই প্রশ্ন, আমি ঠিক কি? প্রধান শিক্ষিকা আমার সামনেই মাকে বলেছিলেন, "একে এখানে ভর্তি নিলে আমার অন্য ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনা করবে না, ওর পিছনেই লেগে থাকবে। আর ওর তো এখন বারো বছর বয়স। ফাইভ সিক্সে পড়ার কথা। আপনি বরং ওকে স্পেশাল চাইল্ড স্কুলে ভর্তি করে দিন। আমি নিতে পারবো না।" 

  মা তাও হাল ছাড়েনি। আমার জন্য শুধু পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতিটা আদায় করে নিয়েছিল। তোমাকে না জানিয়েই পঞ্চায়েতের সদস্য তোমার বন্ধু রতন কাকুর কাছে গিয়েছিল। কেন জানি না রতন কাকু কখনো আমাকে একটাও খারাপ কথা বলেনি। স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে সেদিন আমার মাথায় একটা হাত রেখে কাকু বলেছিল, "ভগবান সবাইকে সব কিছু দেয় না। এই যেমন দেখ আমার তো সব আছে নেই শুধু একটা সন্তান। তবু তো আমি বেঁচে আছি। তুমিও বড় হয়ে ওঠো মা, যেটুকু তোমার আছে সেটাই গড়ে তোল এমন ভাবে যাতে একদিন সবাই তোমার দিকে ঘাড় উঁচু করে দেখতে বাধ্য হয়।" কাকুর চোখ দুটো ভিজে উঠেছিলো। যাবার সময় মাকে বলেছিল, "বৌদি ওকে আজ থেকে আমার ধরম মেয়ে করলাম। কোন অসুবিধা হলে আমাকে ডেকো।" কাকু কথা রেখেছে। আজও আমার অভিভাবকের সইটা কাকুই করেছে। 

#তিন 

মা আমাকে নিরক্ষর করে রাখেনি। বাড়িতেই আমি ফাইভ এর পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছিলাম। ফলে রতনকাকুর চেষ্টাতে আমি পরের দু'বছরে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে ফেলি। স্কুল আমার জন্য আলাদা একটা পরীক্ষা নেয়, সেই পরীক্ষায় আমি আশি শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে নবম শ্রেণীতে উঠলাম। এতদিন মা-ই পড়াচ্ছিল, সারা সপ্তাহ তুমি বাড়ি না থাকায় মার একটা সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু নতুন ক্লাসের সিলেবাস বদলে যাওয়ায় মার একটু অসুবিধা হয়ে গেল। রতন কাকুর চেষ্টায় আমার জন্য প্রাইভেট টিউটর রাখল মা। সৈকত, কলেজে পড়ে। গরিব ঘরের ছেলে পড়াশোনায় খুবই ভালো। অংক আর বিজ্ঞান পড়াতো। 

      অংকটা খুব ভালোই শিখছিলাম ওর কাছে। কাকুর কথাটা শুধু মনে হতো। কি জানি ভগবান একদিকে আমাকে ভেঙেচুরে অন্যদিকে হয়তো ভুল করে একটু গড়ে ফেলেছিলেন। সৈকত আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করত, অনেক কঠিন নতুন অংক খুব দ্রুত শিখেছিলাম। শিখছিলাম আরও একটা কিছু। একটা অন্য অনুভূতি চারিয়ে যাচ্ছিল আমার মনে। 

   সৈকত কামাই করলে একদম ভালো লাগতো না। তখন মাঝে মাঝে একটা স্বপ্ন দেখতাম। জানি এসব শুনে তুমি মনে মনে হাসবে হয়তো। কিন্তু এটাই সত্যি। না, কোন রাজপুত্রের স্বপ্ন আমি দেখিনি, সে সাহস আমার ছিলও না। ডানা ভাঙ্গা পাখি আকাশ দেখতে পেলেও আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতে ভয় তো পাবেই। দেখতাম একটা ছায়ামূর্তি আমাকে একটা উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় কোল থেকে নামিয়ে দিলো। আমি টলমল পায়ে তার সঙ্গে হেঁটে হেঁটে যেতে লাগলাম। এক মেঘের রাজ্যে গিয়ে প্রতিবার আমি তাকে হারিয়ে ফেলতাম। তার মুখটা দেখিনি কখনো, এসেও বারবার সে হারিয়ে যেত। খুঁজতে খুঁজতে আবার সেই কুয়াশা অন্ধকার। হোঁচট খেয়ে পড়ে কোথায় তলিয়ে যেতে যেতে ঘুমটা ভেঙে যেতো এক অদ্ভুত আশঙ্কায়। 

           কখন যে আমি নিজেও লোভী হয়ে উঠেছি, বুঝতে পারিনি। নিজেকে অন্য চোখে দেখার একটা লোভ হয়েছিল মনে। বাথরুমে মা যখন আমাকে নিয়ে ব্যস্ত পড়ত, তখন আমি আয়নায় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। যেমনই হই, মেয়ে তো-- একটা মন ছিল গোপনে কোথাও। সে জেগে উঠেছিল। মায়ের ড্রেসিং টেবিলে আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখতে দেখতে বিভোর হয়ে যেতাম। মনে হত মানুষ তো শুধু রক্ত মাংসে ভরা একটা জ্যান্ত পুতুল নয়-- মন বলেও একটা কিছু আছে। আর সেই মনের গভীরে কোথাও একটা আলেয়ার আলো সৈকতের সঙ্গে আমার জীবনে গুটিগুটি ঢুকে পড়েছিল। 

সেদিন সৈকত এসেছিল সন্ধ্যাবেলা। এমনটাই আসত। আমাকে পড়তে বসিয়ে দিয়ে মা কিছু বাজার করবে বলে একটু বেরিয়ে ছিল। আমাকে নিয়ে ভয়ের কিছু ছিল না। আমার যাওয়ার মতো কিছু ছিল না। কিন্তু বিশ্বাস করো বাবা, এসব বলবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই, তবু মায়ের কথা ভেবেই বলছি। যাই হোক সেই সন্ধ্যায় কিন্তু আমার অনেক কিছু গেছিল। আমি চেয়েছিলাম সৈকত আমার মেয়ে হয়ে ওঠা টাকে সম্পূর্ণ করুক। আমরা ভেসে গেলাম, অসম্পূর্ণ কিন্তু অন্য এক আনন্দে আমি ঝলমল করে উঠেছিলাম। আমার ভাঙাচোরা শরীর জুড়ে এক গভীর সুখের বন্যা সেদিন ধুয়ে নিয়ে গেছিল জমে থাকা পর্বতের মত অপমান। সেদিন আমি মেয়ে থেকে নারী হয়ে উঠেছিলাম। 

  মা আধঘন্টা পরে চলে এসেছিল। কিছু বুঝে ছিল কিনা জানিনা, তবে সৈকত তারপর আর আসেনি। মা বলেছিল, ও নাকি বর্ধমান এ দেশের বাড়িতে চলে গেছে। হয়তো ও ভয় পেয়েছিল, সবাই যেমন পায় অপমানের ভয়, বোঝা বয়ে বেড়ানোর ভয়, তুমিও তো পেয়েছিলে--তাই না বাবা! 

#চার 

সেই দিনটার কথা তোমার মনে আছে তো বাবা। আজও সেই দিনটাই আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন। 

মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাস করলাম। খবরটা তোমাকে দেবার জন্য আমি জেগে বসেছিলাম। এই সাহসটা রতন কাকু জুগিয়েছিল, বলেছিল- "দেখিস এবার তোকে আর দুর-ছাই করতে পারবে না। এত কষ্ট, এত অপমান সহ্য করে তুই যে এইভাবে পাসটা দিলি, কেউ ভেবেছিল? হিজু এবার নিশ্চয়ই বদলে যাবে। 

   সত্যি বাবা, তুমি বদলে গেছিলে! একেবারে অন্য মানুষ হয়ে বাড়ি ঢুকে ছিলে সেদিন। সেই বাবাকে আমি চিনতাম না, আগে কখনো দেখিনি। 

     বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন। হঠাৎ গাড়ির তীব্র হর্ণে ঘুম ভেঙে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে জানালায় এসে দেখলাম, কারা সব গাড়ী থেকে নামছে। বেশ কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। তুমি নামলে যে গাড়িটা থেকে সেটা ফুল দিয়ে সাজানো ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না কিছুই। নীচে একটা চেঁচামেচি হট্টগোল শুরু হয়েছিল। মায়ের কান্না, তোমার চিৎকার আর অচেনা অনেক লোকজনের চেঁচামেচিতে আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কতক্ষণ এসব চলল তা জানিনা, হঠাৎ উপরে আমার দেড়-তলার ঘরে এলো, পিছনে রতন কাকু। আমার হুইল চেয়ারটা কয়েকদিন আগে বিগড়ে ছিল, সরানো হয়নি। রতন কাকু আমাকে কোলে তুলে নিল, মা খুব কাঁদছিল। আমাকে নিতে পারেনি। তুমি নিয়েছো কখনো? মনে পড়েনা আমার! 

সেই রাতটা খুব খারাপ কেটেছিল আমার, মায়ের আর রতন কাকুর। তুমি যে নতুন সংসার পাততে চাও সেটা তো তুমি আগেও বলতে। মা কিছু বললে মারধরও করেছ অনেক। সেদিনও মেরে ছিলে। মার কপালের সেই কাটা দাগটা কখনো মেলায়নি, ওই দাগটা আমাকে শিখিয়েছে তোমাকে ঘেন্না করতে। মায়ের কপালে ওই কাটা দাগটা চোখে পড়লেই তোমার সেই দিনের ভয়ঙ্কর রূপ টা আমার মনে একটা অসহ্য অনুভূতি তৈরি করত। এখন বুঝতে পারি, ওই অনুভূতি আসলে ঘেন্নার অংকুর ছিল। তোমার এই রূপটা আমি আগে দেখেছিলাম। কিন্তু সেদিন নীচে নামার সময় তোমার হাতটা ধরে যে মহিলা দাঁড়িয়ে ছিল তাকে সেদিন প্রথম দেখলাম। না তোমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই আমার, তোমার একটা সুখী পরিবার দরকার ছিল, একটা সুস্থ সন্তানের দরকার ছিল আর আমাকে...!  কিন্তু মা তো কোন অন্যায় করেনি। আমার মত একটা অর্ধেক মানুষ জন্ম দেবার জন্য মা যদি অন্যায় করে থাকে, তবে তুমিও কি সেই একই অন্যায় দোষী হবে না? মাকে রতন কাকুর সঙ্গে জড়িয়ে যে কথাগুলো সেদিন তুমি বলেছিলে, তুমি নিজেও জানো সেগুলো সব মিথ্যে। কিন্তু তোমার কাছে মাকে হিসেবের খাতা থেকে বাদ দেবার আর কোনো উপায় ছিল না।  আজও নেই। সেই রাতের পর থেকে আজ পর্যন্ত এমন একটা দিনও যায়নি যেদিন আমি তোমার শাস্তি কামনা করিনি। 

রাতটা আমরা কোনরকমে রতন কাকুর বাড়ি কাটালাম। কাকিমাও খুব ভালো মানুষ। আমাদেরকে কিছু খাওয়াবার অনেক চেষ্টা করেও যখন পারলেন না, মায়ের হাতে কিছু টাকা জোর করে গুঁজে দিয়ে বলেছিলেন, "লড়াইটা শুরু যখন করেছ, এত তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়লে হবে না, আমাদের মেয়েদের জীবন নিয়ে ছেলেগুলো ছিনিমিনি খেলে, পুরুষ শুধু আমাদের ব্যবহার করবে ইচ্ছামত, তারপর ফেলে দেবে, না- এর থেকে বেরোতে হবে, এগুলো রাখ আর আমি একটা ঠিকানা দিচ্ছি সেখানে যাও, সাহায্য পাবে।" 

হ্যাঁ সাহায্য পেয়েছিল মা। সাবেরিন চাচি মাকে ভদ্র সভ্য ভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ পর মা একটা বাড়িতে আয়ার কাজ পেল। তারা ছিল অবাঙালি। মা আশি বছরের এক প্রায় পঙ্গু মহিলাকে দেখাশোনার ভার পেয়েছিল, তবে নামেই সে কাজ। আসলে ওরা নিজেদের ফাইফরমাশ খাটাবার জন্যই মাকে রেখেছিল। মা  তাদের কথা কিছুই বুঝতে পারত না। প্রথম কয়েকদিন কিছু না বললেও তিন-চারদিন পর থেকে মার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। ওই পঙ্গু মহিলার বড় ছেলে মাকে অনেক লোভ দেখিয়ে অন্য কিছু চেয়েছিল, যখন কিছু হয়নি তখন বের করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে। সেদিন মা বাড়ি ফিরে খুব কেঁদেছিল। আমাকে লুকায়নি কিছু। মা কয়েক মাস পর সেই চাচির চেষ্টায় সল্টলেকের একটা বড় নার্সিংহোমে কাজ পেল। 

              পার্কসার্কাসের কাছে যে বস্তিতে আমরা থাকতাম এখনো চোখ বন্ধ করলে আমি সেই এক কামরার পলেস্তারাহীন ইটের ঘর, সেই কলতলার হইচই আর সন্ধ্যেবেলার হাসি আড্ডার আনন্দের মুহূর্তগুলো পরিষ্কার দেখতে পাই। তোমার হয়তো অবাক লাগবে আমাকে কেউ সেখানে একটা বারের জন্য খারাপ কথা বলেনি। আমার এই অর্ধেক মানুষ শরীরটা, আমার এই অন্ধকারের মত গায়ের রং একটাবারের জন্যও তাদের বাড়তি মনোযোগ এর বিষয় হয়ে ওঠে নি। 

     অবাক হবার এখনো বাকি আছে বাবা। সেখানে আমার অনেক বন্ধু হলো, তারা যখন শুনলো আমি লেখাপড়া জানি ভালো ফল করেছি মাধ্যমিকে তখন আমি ওই বস্তির বাচ্চাদের দিদিমণি হয়ে গেলাম। তবে এর জন্য সাবেরিন চাচি দায়ী। আমার জীবনে যতটুকু সুখ আমি পেয়েছি তার সবটুকুই প্রায় সাবেরিন চাচির দান। অসাধারণ সুন্দরী, দুধের মত গায়ের রং, কিন্তু মনটা ছিল ঈশ্বরের মতো। সবার সুখ-দুঃখে, হাসি-কান্নায় চাচি। তাকে ছাড়া বস্তির কারো চলত না। 

বস্তি থেকে একটু দূরে চাচির বাড়ি। একদিন সন্ধ্যায় চাচি হঠাৎ ছুটতে ছুটতে এল, মা তখনও বাড়ী আসেনি। আমি পড়াচ্ছিলাম। চাচি তাদের ছুটি দিয়ে দিল। রতন কাকু একটা হুইলচেয়ার এনে দিয়েছিল। আমি সেটাতেই বসে পড়াতাম। চাচি চেয়ারটাকে ঠেলতে ঠেলতে আমাকে নিয়ে গেল চাচির বাড়িতে। সেদিন জীবনে প্রথমবার আমি একজন লেডিডাক্তার দেখলাম। জ্ঞান হওয়ার পর কখনো ডাক্তারখানায় গেছি বলে মনে পড়ে না, অসুস্থ হলে মা ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনতে যেত। 

একটা ঘরে আমি আর ডাক্তারদিদি। চাচি অনেক করে বুঝিয়েছে আমাকে, উনি বিলেত পাস করা ডাক্তার। খুব নামডাক। চাচির খালাতো বোন। চাচি বারবার বলছিল, "আল্লাহ তোমার অসুখ নিশ্চয়ই সারিয়ে দেবে, আমাদের সবার দোয়া তোমার সঙ্গে আছে।" 

     আমার প্রথমে খুব লজ্জা করছিল। একদম অপরিচিত একজন মানুষের সামনে মাকে ছাড়া শরীরের সমস্ত পোশাক খুলে শুয়ে ছিলাম। আমি পারিনি। ডাক্তারদিদি নিজেই সব করলেন। তারপর আমার সমস্ত শরীর পরীক্ষা করতে করতে আমার সঙ্গে অনেক গল্প করলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আমাকে নিয়ে যখন বাইরে এলেন, মা ডিউটি থেকে ফিরে সোজা চাচির বাড়ি। থমথমে মুখে মা বসে, পাশে চাচি। আমাকে অন্য ঘরে পাঠাতে বলছিল মা, ডাক্তারদিদি বলল, "থাকুক না ও, ওরও তো জানা দরকার কি সমস্যাটা। আসলে ওর যেটা হয়েছে তাকে বলে মারমেড সিনড্রোম। ওর মেরুদণ্ডের নিচের অংশের গঠন সম্পুর্ণ হয়নি। ওর দুটো পা একটাই সরু হাড়ের উপর মাংসপিণ্ডের মতো হয়ে গেছে। এটা কোন রোগ নয় কিন্তু এরকম হলে শরীরের অন্য অঙ্গ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।" তারপর উনি আমাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন, "এবার লড়াইটা তোমার। জিততেই হবে। আমি তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাব আমেরিকায়, যাবে তো?" 

#পাঁচ 

অন্ধকার গুহার ভিতরে আটকে পড়ে একটু আলোর রেখা চোখে পড়লে যেমন হয়, সব ভেঙেচুরে পড়িমড়ি করে সেদিকে ছুটে যেতে ইচ্ছা হয় কিন্তু তার ফলে যে আরও খারাপ কিছু হতে পারে সেটা আর মনে হয় না। আমারও তাই হলো। আমার চিকিৎসার খরচ অনেক। মায়ের একার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। রতনকাকু, সাবেরিন চাচি সবাই মাকে অনেক বার করে ডিভোর্সের মামলা করতে বলেছিল। খোরপোষের দাবি করার কথা সবাই বুঝিয়ে ছিলো, কিন্তু মা তাদের বলেছিল  "আমি হিজল কে কোন সুখ দিতে পারিনি- কি করে দাবি করব?" 

        আমরা চলে আসার পরও মা তোমার খোঁজ নিত, রতন কাকুর মাধ্যমে। কিন্তু একদিন রতনকাকু মায়ের উপর খুব রেগে চিৎকার করে বলেছিল, "আরে সেই শয়তানটা তো নতুন মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি করছে আর তুমি এখানে তার কথা ভেবে যাচ্ছ এখনও! কেন? ওতো নিজের মেয়েটার কথা একবার ভাবলো না একটু ভেবে দেখল না যে মিতুলকে নিয়ে তুমি কি করবে? কোথায় যাবে? বৌদি তাও যদি তোমার হিজুর খবর দরকার হয়, তবে তুমি অন্য কাউকে বলে দেখো। আমি আর একটাও কথা বলতে পারবো না।" মা আর জিজ্ঞাসা করেনি কোনদিন। 

সাবেরিন চাচি সত্যিই আমাদের খুব ভালোবাসত।আর তাই মায়ের বারণ সত্ত্বেও একদিন গেছিল তোমার কাছে। কিন্তু চাচি ফিরে এসে মাকে কিছু বলতে চাইছিলো না। আমি আর মা চৌকির উপর বসে ছিলাম, চাচি নিচে একটা টুলে। আমি বুঝতে পারছিলাম আমার সামনে চাচি কিছু বলতে চাইছে না। 

কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না আমি একা একা কোথাও যেতে পারি না। চাচি কিছুটা সময় এটা-সেটা গল্পের পর মাকে বলল, "তোর বর ঘরে নেই। হাসপাতালে, লিভার ক্যান্সার। তিন মাস সময় দিয়েছে ডাক্তার। যদি লিভার বদলানো যায় তবে বাঁচতে পারে, না হলে--। আর যার সঙ্গে থাকবে বলে তোকে তাড়াল, সে গুছিয়ে নিয়ে পালিয়েছে।" 

    মা সেদিন থেকে কেমন যেন কঠিন হয়ে গেল। না একফোঁটাও কাঁদেনি মা। আমাকে শুধু বলেছিল, "ঈশ্বর তোকে যেমন করে পাঠিয়েছে তুই তেমনি থাক। বদলে যাস না।" 

   মাকে সেদিন খুব কাছ থেকে দেখেও অনেক দূরের কেউ বলে মনে হচ্ছিল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম মায়ের মুখের দিকে, মনে হচ্ছিল মায়ের মুখটা যেন ছোট হতে হতে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। আমারও কষ্ট হচ্ছিল খুব। তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো, কান্না পাচ্ছিল খুব। একবার খুব জোরে "বাবা" বলে ডাকতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু কোনটাই সম্ভব ছিল না। 

#ছয় 

আঠারো বছর একদিন। আমার বয়স এখন--এই লেখার সময় এটাই। আমি এখন প্রাপ্তবয়স্ক। মা থাকলে আজ একটু পায়েস করে দিত, কপালে তিনবার চুমু খেয়ে বলতো, "মা কালী তোমার ভালো করুক। সুখ না হোক, একটু শান্তি যেন দেয় তোমাকে।" প্রতিটা জন্মদিনে তাইতো করতো মা। এই দিনটাতে যেন মা আমার জন্মের দিনের প্রতিটা অপমান, কটুকথা, সবটুকু কষ্ট আবার নতুন করে অনুভব করতো। মায়ের বুকের গভীর থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাসে আমার বুকের ভিতরে একটা ভয়, জমাট অন্ধকারের মতো ছড়িয়ে পড়তো। 

   নিজের উপর রাগ তো হতই, ঘেন্নার শুঁয়োগুলো সারা শরীরে মনে কাটার মত বিঁধত। একটাই প্রশ্ন বারবার নিজেকে করতাম, আমার জন্মানোর কি খুবই দরকার ছিল? এই কদাকার রূপ, এই কয়লার মত রঙ আর এই অর্ধেকটা তালগোল পাকানো একটা মানুষ পৃথিবীতে যদি নাই জন্মাতো কার কী আসত যেত তাতে? ইচ্ছা করত নিজেকে নিজে আঘাত করি, শেষ করে দিই সব অপমানের আঁতুড়ঘর এই কুৎসিত শরীরটাকে। কিন্তু পারিনি। মায়ের কথা ভেবেই পারিনি। বিশ্বাস করো বাবা, আজকে আমার এই প্রথম বড় হয়ে ওঠার দিনে আমার এতটুকু কষ্ট নেই কোথাও, না শরীরে না মনে। আর কোন অপমানের ছবি আমার চোখ বুঝলেই দেখতে পাচ্ছি না, আর কোন অন্ধকার নেই আমার চারধারে, শুধু আলো আর আলো। 

         মা যদি দেখতে পেত যদি শুনতে পেত তার মিতুল কারো খুব, খুব প্রয়োজনে লাগতে পারে, তবে হয়তো--!  যাক,  যা হবার নয় সেটা ভেবে কি লাভ বল বাবা!  

এদিকে আমার চিকিৎসা কিভাবে হবে, প্রায় লাখ তিনেক টাকা কিভাবে জোগাড় হবে, সেই চিন্তা মায়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। বিদেশি হাসপাতাল বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতো। কিন্তু সেই পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্লেনের টিকিট পাসপোর্ট-ভিসা এগুলো নিজেদের দায়িত্ব, ওরা তেমনটাই বলেছিল। কিছুটা জোগাড়ও হয়েছিল।  রতনকাকু, সাবেরিন চাচি, বস্তির মানুষগুলো ক্লাব থেকে চেষ্টাচরিত্র করে লাখখানেক টাকা যোগাড় করে দিয়েছিল। সাবেরিন চাচি একটা এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তারা একদিন এল আমাকে দেখতে। মাঝ বয়সী একজন এসেছিলেন,  আমার সমস্ত শরীর টাকে হাতড়ে তিনি বোধহয় অন্য কিছু খুঁজছিলেন। রাগে ঘেন্নায় আমার মাথা ঝিমঝিম করছিল, কিন্তু বাকি টাকাটা কোথা থেকে আসবে কেউ বুঝতে পারছিল না, তাই আমিও অনেক কষ্টে সে সব সহ্য করলাম। তাদের প্রস্তাব ছিল আমার ছবি আর ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তারা ট্রেনে বাসে রাস্তায় টাকা তুলবে আর সেই টাকার একটা অংশ আমাদের দেবে, বাকিটা তাদের। মা আর সাবেরিন চাচি তাতে রাজি হয়নি। চাচি সেই লোকটাকে বলেছিল, "আমার বাচ্চার জীবন মরণ নিয়ে তোমরা ব্যবসা করবে! লজ্জা করেনা তোমাদের? তোমরা কি মানুষ?"  

    সবটাই আমার চোখের সামনে ঘটমান বর্তমান। চুপ করে দেখা ছাড়া আমার তখন কিছুই সাধ্য ছিল না। দিনের পর দিন মা আরো বেশি করে চিন্তায় ডুবে যাচ্ছিলো। নিজেকে অভিসম্পাত করা ছাড়া আর কিই বা করতে পারতাম বল? এই সবকিছুর জন্য তো আমিই দায়ী। 

মা যেখানেই যাক সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে ঠিক ফিরে আসতো। সেদিন এলোনা। মোবাইল কেনা হয়ে ওঠেনি আমাদের। মা কোথায় আছে বুঝতে পারছি না। আমার ছাত্রী মুনিয়াকে পাঠালাম ওর দাদার মোবাইল থেকে নার্সিংহোমের নম্বরে একটা কল করে জানার জন্য। শুনলাম, মা অন্যদিনের মত একই সময় ডিউটি ছেড়ে বেরিয়েছে। ভাবলাম কোথাও হয়তো টাকার যোগাড় করতে গেছে। 

            রাত তখন ন'টা। সাবেরিন চাচি আর বস্তির অনেক লোক আমার ঘরে এলো। ওরা বলতে পারছিলো না আমি বুঝে নিয়েছিলাম। নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে তিন মাথার মোড়ে রাস্তা পার হবার সময় মা একটা দলাপাকানো মাংসপিণ্ড হয়ে গেছিল। শুনতে পারিনি সবটা, তার আগেই আমার দু চোখের সামনে থকথকে অন্ধকার নেমে এল। জ্ঞান ফিরল যখন, আমি হাসপাতালের বিছানায়। সাবেরিন চাচি, রতন কাকু, আমার ছাত্রছাত্রীরা সবাই এসেছিল। এতো কান্না একসঙ্গে কখনো দেখিনি আগে। আমার জন্য মা ছাড়া আর কারো চোখে জল আসতে পারে তাও ভাবি নি কখনো। এত কষ্টের মধ্যেও এটুকু ভালোবাসা উপভোগ করছিলাম। 

    শরীর আর সায় দিচ্ছে না। একটা অসম্ভব কষ্ট হচ্ছিল। বুঝতে পারছিলাম সময় শেষ হয়ে আসছে। মা নেই, আমার অভিভাবক এখন আমি। ডাক্তারদিদি আমাকে কিছু লুকোননি। কিডনি, ফুসফুস, হার্ট শেষ অবস্থায়। ব্রেনে তেমন কিছু না থাকলেও যে কোন দিন যেকোনো সময় স্ট্রোক হতে পারে। ভালো আছে শুধু আমার লিভার আর চোখ দুটো। সাবেরিন চাচি আপত্তি করেনি কিন্তু রতন কাকু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছিল না। বোঝালাম কাকুকে। কখনো এত ভেঙে পড়তে দেখিনি কাকুকে। তবু রাজি হল। তোমার হাতে তখনও মাস দুই সময় ছিল, আমার ছিলনা। সাবেরিন চাচি আর রতন কাকু প্রচুর ছোটাছুটি করেছে। ওদের চেষ্টাতেই বলা যায় আমার ইচ্ছাপূরণ, আর তোমার জীবন ফিরে পাওয়া। 

    বাবা, অনেক লড়াইয়ের মধ্যেও জীবনটাকে একটু হলেও ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাই এই ভাবে বাঁচতে চাইলাম। আর কি আশ্চর্য দেখো বাবা, আমার লিভারটা তোমাকে দিতে গেলে যে যে মিলগুলো থাকতেই হত সবই আছে। তোমাকে কেমন একটা শাস্তি ও দিয়ে গেলাম বল! আমার আগে মায়ের কাছে যেতে দিলাম না। তবু বাবা, আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে যাইনি। তুমি যখন এই চিঠিটা পড়বে তখন আমি তোমার শরীরে তোমার মধ্যে নতুন করে বাঁচতে শুরু করে দিয়েছি। 

ভালো থেকো। 

তোমার মেয়ে মিতুল। 

       অসম্ভব একটা কষ্ট হিজলের শরীর মন সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছিল। নিজেকে একটা অসম্ভব কদাকার, পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ বলে মনে হচ্ছিল। নিজেকে শেষ করে দেবার একটা তীব্র ইচ্ছা যা কোনদিন তার মনে আসেনি, সেটাই এখন একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র সান্ত্বনা যেন সেটাই। ঘুমের ওষুধের পাতাটা সম্পূর্ণ ফাঁকা করে হাতে ঢেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল হিজল। এটাই এখন একমাত্র উপায়। কিন্তু ওষুধ গুলো মুখে দিতে গিয়েও থেমে গেল হিজল। যে মেয়েটাকে কোনদিন নিজের সন্তান বলে ভাবতে পারেনি, কখনো এতটুকু ভালোবাসা যার জন্য খরচ করেনি, আজ এই চরম সিদ্ধান্ত নেবার আগেই চিঠিতে লেখা তার শেষ কথাগুলো কানে আবার করে বেজে উঠল হিজলের। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে হাতের মুঠোয় ভরা ঘুমের বড়ি গুলো আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বুক ভাঙা কান্নায় আছড়ে পড়ল মেঝের উপর। 


biltupal2009@gmail.com 
সোনারপুর 

No comments:

Post a Comment