1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

পাওনা।

ছবি : ইন্টারনেট 

পাওনা

মেঘনা মাইতি

কপালের ভাঁজে জমে থাকা ঘামের বিন্দুগুলিকে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে নিলো সবিতা। কিটকিটে গরম আজ। সর্বাঙ্গ শরীরে কেমন একটা জ্বালা অনুভূত হচ্ছে।সোসাইটির প্রবেশদ্বারের সিকিউরিটি গার্ডের কাছে আগাম তথ্য দেওয়াই ছিল।সবিতা নিজের পরিচয় পত্র দেখিয়ে B কমপ্লেক্সের ফিফ্থ ফ্লোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কাজটা খুব দরকার  ছিল। ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেছে। কাজের বাড়িতে আজ তার প্রথম দিন।ফ্ল্যাটের বাইরের কারুকার্য, পরিষ্কার পরিছন্নতা দেখে তাক লাগার জোগাড়। এ তো যেমন তেমন ফ্ল্যাট নয়। বিত্তশালী মানুষদের বসবাস। বেল বাজানোর সাথে সাথে একটি মেয়ে এসে দরজাটা খুললে। নাম বলার পর বসতে বলে মেয়েটি ভেতরের ঘরে চলে গেল । বেশ কিছুক্ষন বাদে, মালকিন সোফায় এসে বসলেন।বয়েস চল্লিশের গোড়ায়। সুন্দরী। ছিপছিপে গড়ন।প্রয়োজনীয় কথোপকথন সেরে নিজের ঘরে চলে গেলেন। প্রয়োজনের বেশি কথা এনারা বলেন না। প্রথম মেয়েটি সবিতাকে নিজের ভাগের কাজকর্ম সব বুঝিয়ে দিল।ধীরে ধীরে সবিতাও নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছিলো।

এইভাবেই মাস দুয়েক পার হলো। মালকিন একটু চুপচাপ গোছের। আখ বাড়িয়ে সবিতাও বিশেষ কিছু বলতে সাহস পায় না। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু আচমকাই একটা বিপদ ঘটে গেল। কথায় আছে না, বিপদ কখনো বলে কয়ে আসে না.... মোদ্দা কথা, সুখের আয়ুষ্কাল স্বল্প, সীমিত। সবিতার আট বছরের ছেলেটা বায়না জুড়লো তার মায়ের কাজের বাড়ি দেখতে যাবে।সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কংক্রিটের ফ্ল্যাট বাড়ি, সাঁই সাঁই শব্দ করে ছুটে চলা গাড়িদের  মিছিল, ব্যস্ত রাজপথ দেখার সাধ জেগেছে তার। নাছোড়বান্দা ছেলের বায়না সামলাতে না পেরে সবিতা সাথে করেই নিয়ে এসেছিল দিদিমনির বাড়িতে। কড়া নির্দেশ ছিল,এক পা যাতে এদিক ওদিক না করে। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু মূল্যবান সব জিনিসপত্র। কিন্তু শিশুমন সেকথা শুনতে এবং বুঝতে অপারগ। খেলার ছলে দামি ই দিল ভেঙে। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো সবিতা। শব্দ শুনে মালকিন ছুটে আসতেই সবিতা হাতে পায়ে ধরে কাঁদুনি গেয়ে উঠলো।

-- ম্যাডাম, ক্ষমা করে দিন। ছেলেটাকে একটু কলকাতা দেখাতে নিয়ে এসেছিলাম। আজ ওর জন্মদিন।আবদারটা ফেলতে পারিনি। কথা দিচ্ছি ম্যাডাম,কোনোদিন আর এমুখো হবে না।এবারের মতো  মাফ করে দিন।

মালকিনের মৌনতা ছাড়া সবিতার কপালে আর কিছুই জুটলো না।বেগতিক বুঝে ছেলেকে নিয়ে চলে আসার সময় ঠিক পেছন থেকে মালকিনের গুরুগম্ভীর ডাক ভেসে এলো। দু'চার কথা তো সবিতাকে শুনতেই হবে। তার জন্য প্রস্তুতও ছিল সে।

-- একটু দাঁড়াও। আমি আসছি ।

বলেন কি ম্যাডাম!! আসছি মানে?? পুলিশে দেবে নাকি ওদের ? ভয়ে গলা- জিভ শুকিয়ে এলো সবিতার। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল গাড়িটার মধ্যে মা- ছেলে একপ্রকার গুটিসুটি হয়েই বসেছিল। গাড়িটা এসে থামলো একটি নামী কেক- পেস্ট্রির দোকানের সামনে। মালকিন ওদেরকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। সানন্দে সবিতার ছেলের জন্মদিন পালন করলেন। সবিতার শত বারণ সত্ত্বেও বাচ্ছা ছেলেটির হাতে হাজার দুয়েক টাকা গুঁজে দিলেন। পড়ন্ত বিকেলের মিঠে রোদ্দুরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবিতার ছোট্ট ছেলেটি। কলকাতা দেখার সাধ মেটালেন সবিতার ম্যাডাম।

না, সবিতা তার মালকিনকে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।ম্যাডামকে বুঝতে তার ভুল হয়নি। বাইরের শক্ত কঠিন খোলসের অন্দরে মোমের মতন নরম তুলতুলে একটি মন আছে ম্যাডামের। হয়তো সেও চেয়েছিল সারাবাড়ি জুড়ে তার প্রাণপ্ৰিয় কেউ এভাবেই ভাঙচুর করে ঘরদোর মাতিয়ে রাখুক। যার জন্মদিন এইভাবেই ধূমধাম করে পালন করা হতো। বিশাল প্রাচুর্য্যের মালকিন হয়েও সবিতার ম্যাডাম আজ নিঃস্ব।সন্তানসুখ থেকে বঞ্চিত। তাই সবিতার ছেলের জন্মদিন শুনে ম্যাডামের মাতৃসুলভ আচরণ যেন অজান্তেই ধরা দিল ।

meghna.maity09@gmail.com

No comments:

Post a Comment