1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

রাত নয়টা কখন বাজবে


রাত নয়টা কখন বাজবে

শাবলু শাহাবউদ্দিন 


সমুদ্রের তীর ঘুরে ঘুরে আমি বড্ড বেশি ক্লান্ত, তাই ভাবলাম সস্তা দরের কিছু ফল কিনে নিয়ে হোটেলে ফিরে যাই। হোটেলে খাদ্যের যে দাম, তাতে আমার মত ছোট লোক মার্কা বাঙালির কোনো মতেই পুষায় না। সব দেশের হোটেল ব্যবসায়ীদের ঐ একই ধান্দা। পাঁচ টাকার জিনিস পাঁচ শত টাকা বিক্রয় করতে হবে। যে হোটেলের জিনিসের দাম যত বেশি, সেই হোটেলের তারাকাচিহ্ন আবার তত বেশি । পাঁচ তারাকা, সাত তারাকা, নয় তারাকা ইত্যাদি। আরে হোটেল ব্যবসায়ী, আমাকে তুমি চিন না; আমি জাতে বাঙালি; তারপরে আবার বাংলাদেশি বাঙালি। পাঁচশত টাকার জিনিস আমরা পঞ্চাশ টাকা বলি; দশ বারো বার ঘুরে ঘুরে দুই শত টাকা দিয়ে কিনি। আমাদের কাছে ঐ সব তারাকা ফারাকা দেখিয়ে লাভ নাই। সস্তা জিনিস যেখানে বাংলাদেশি বাঙালিকে খুঁজে পাবে সেখানে।


ফল কিনতে এসে মহা মুশকিলে পড়ে গেলাম। সমুদ্র তীরের সব ফলের দোকান বন্ধ। দুপুরে খরিদ্দার কম। তাই সব দোকানদার দোকান বন্ধ করে দিছে। দূর থেকে একটি দোকান দেখতে পেলাম। হাফ খোলা হাফ বন্ধ। ব্যপার কী বন্ধ করে দিবে না কী? নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম। জিরাফের মত লম্বা টানা পা করে এগিয়ে গেলাম খুব তাড়াতাড়ি। দোকানে সামনে গিয়ে বুঝতে পারলাম। না, দোকান বন্ধ হবে না। রোদের প্রচণ্ড তাপের দাপট থেকে বাঁচতে এমন করে দোকানে জাপ হালকা নামিয়ে রাখা হয়েছে গ্রামের মাজাপড়া বুড়ির মত করে। ছোট বেলায় গ্রামে প্রত্যেক বাড়িতে এমন বুড়ি মানুষ অনেক দেখেছি। গায়ে শুধু একটা সাদা শাড়ি। চামড়াগুলো জুলজুলে। কোন জৈবিক আকর্ষণ আসে না তাদের শরীরে। শরীরের কোথায় ডাকা আছে আর কোথায় খোলা আছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই । শুধু তারই নয়, পৃথিবী সুদ্ধ কোন মানুষদের এদের প্রতি খেয়াল থাকে না। মানুষের জীবনচক্রে বৃদ্ধাতা যেন এক মর্মান্তিক সময় । যা আসে কিন্তু জীবন্ত অবস্থায় যায় না।

দোকানে মধ্যে উঁকি দিতেই দেখলাম একটি মহিলা পিছন ফিরে বসে ভাত খাচ্ছে। আপন মনে এমন করে তৃপ্ত সহকারে খাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন সে স্বর্গের ভোজন ভোজ করছে। পিছন ফিরে বসায় মহিলার লম্বা চুলের বিনুনি আমার মনে দাগ কেটে বসলো। লম্বা কালো চুলের বিনুনি দেখলে আমার আবার মাথা ঠিক থাকে না। সাপ যেমন করে উলুবনে হারিয়ে যায়, তেমনি আমরাও ইচ্ছে করে মেয়েদের লম্বা চুলের মধ্যে সারা জীবনের তরে হারিয়ে যাই। মহিলা একটি বারের জন্য হলেও পিছে ফিরে চাইলো না, এহাতে আমার আরো সুবিধা হলো। মনের সাত কলা মিশিয়ে তার চুল পর্যবেক্ষণ করলাম। মনের কল্পনায় হারিয়ে গেলাম তার লম্বা চুলের দেশে। খুঁজতে লাগলাম শ্যাম্পু মাখা গন্ধ। আহ্ এ কী শান্তি। 

এখানে অনেকেই আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলিতে পারেন। কিন্তু আমি লম্বা চুল পাগল ছেলে, যৌনক্ষুধার্ত যুবক নয় ।

অবশেষে, আমার দিকে চাইলো; ততক্ষণে তার আহার ভজন শেষ হয়ে গেছে। মিষ্টি মুখে জিজ্ঞাসা করলো, আপকো কিস চিস কী জারোরাত হাই? (aapako kis cheez kee jaroorat hai?)

-কেজি খানেক আপেল লাগবে। 

বলার সাথে সাথে আমার মনে হলো, এ কি বলেছি ! আমি যে বাংলাদেশে নেই এ কথা ভুলে গেছি নাকি? এছাড়া মেয়েটিকে দেখে আমার সব গোলমাল পাকিয়ে গেছে। হুবহু বাঙালি ঘরের নববধূর মত লাগছে। আমারই বা দোষ কী! সঙ্গে সঙ্গে নিজেই নিজেকে সংশোধন করে নিলাম ।

- Sorry, i need a one kg apple. How much price?

- ঠিক আছে বাংলায়-ই বলুন।

- আপনি বাঙালি?

- হমমম।

- Oh my god! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না; এখানে বাঙালি দোকানী পাবো।

- তাই বুঝি! এখানে বাঙালি দোকানি থাকায় কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেলো নাকি...

মেয়েটির বাঁকা কথায় অনেকটাই লজ্জা পেলাম। শামুকের মত আপন খোলসে নিজেকে লুকিয়ে রেখে শুধু এইটুকু বললাম, না তা হবে কেন ।

তারপরে দু'জন নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম। চৈত্র মাসে যখন আকাশে মেঘ লাগে তখন ছেলে-মেয়ে, বুড়া-বুড়ি, কৃষক-শহুরে সবাই প্রচণ্ড খুশি হয়। ছেলে মেয়ে খুশি হয় নাইতে পারবে বলে, বুড়াবুড়ি খুশি হয় ঠাণ্ডা পড়বে বলে, আর কৃষক খুশি হয় নতুন করে ফসলের বাণ হবে বলে, শহুরে খুশি হয় ধূলাবালি মরবে বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কী হয়? চিত্রটি কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ বিপরীত দেখা যায়। বৃষ্টিতে গোসলের ফলে জ্বর আসে, বৃষ্টির পরে গরম বেশি পরে, বৃষ্টি পানিতে জমি নষ্ট হয়, ধুলোবালি মরে হয় কাদা, পোশাক হয় নষ্ট। বৃষ্টির পরে সবার মনে আবার কষ্ট। এমনি পরিস্থিতি হল আমার।

এই তো আধা মিনিট আগে যখন জানতে পেরেছিলাম মেয়েটি বাঙালি; তখন মনের মধ্যে কত কৌতুহল জেগেছিল, মেয়েটিকে কত আপন মনে হয়েছিল। আর এই অর্ধমিনিটের মধ্যে সব কৌতুহল বাতাসে হারিয়ে গেলো। ইচ্ছে করছে এখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাই। যেখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। মেয়েটি কাছে আমি বড় শিশুর পরিচয় দিলাম। ছি: নিজেকে কেউ এইভাবে অপমানে ফেলে। 

লজ্জা মুখে মেয়েটির দিকে আবার তাকালাম, আপন মনে আপেল মাপছে, খুব মনযোগ সহকারে। কত নিষ্পাপ মুখটি। হয়তো মেয়েটি ইয়ার্কির ছলে কথাটি বলছে। আমাকে ছোট করার জন্য নয়। 

আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কী বাবু নিশ্চুপ হয়ে গেলেন যে।

- আরে না, কথা তো বলছি । 

এখন আরো লজ্জা পেলাম । শুনেছি লজ্জা নারীর ভূষণ। আমি তো নারী না তবে কেন এই সাধারণ দোকানির কাছে বার বার হেরে যাচ্ছি। বার বার লজ্জিত হচ্ছি । না, আমি আর হারতে চাই না। আমি পুরুষ; পুরুষের পরিচয় দিতে হবে পুরুষের মত করে, শক্ত শরীরে, দৃঢ় মনোবলে।

- বাংলাদেশি নাকি পশ্চিমবঙ্গের? দৃঢ়তার সাথে জিজ্ঞাসা করলাম ।

মেয়েটি আড়চোখে আমার দিকে তাকালো। কিছুই বললো না। এবার আর আমি লজ্জা ফজ্জা পেলাম না। লজ্জা ফজ্জা ! রিপোর্টদের মানায় না। উত্তর না পেয়ে উদাস মনে সমুদ্রের দিকে তাকালাম। সমুদ্র গরম হাওয়া, দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে বুক ভরে নিলাম। কিন্তু প্রশ্বাস ফিরলাম খুব সতর্কতার সাথে। রাতের অন্ধকারে গোয়ালার ঘরে যেমন সতর্কের সাথে চোর ঢুকে, টিক তেমন করে সতর্কতার সাথে। তবুও কেমন যেন মনে হলো মেয়েটি আমাকে জীবন্ত শব ছেদ করছে। আমার মনের সকল খবর কেমন করে এই এক মিনিটের মধ্যে মেয়েটি বুঝতে পারলো আমি কোন মতেই বুঝতে পারলাম না। আমি যেন তার পোষা বিড়াল ছানা হয়ে গেছি । সত্যি বলছি। এমন পরিস্থিতিতে এর আগে কখনোই  পরি নাই। এর আগে কাউকে চিনতে দেই নাই, আমি কে। কিন্তু আজ এ কী হচ্ছে!

সমুদ্র থেকে মুখ ফিরে তাকালাম আবার দোকানির দিকে। দেখি আপেল মাপা শেষ হয়েছে কিনা? কিন্তু আমি এ কি দেখলাম। সত্যি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। মেয়েটি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে কী দেখছিল। চোখে চোখ পড়ার সাথে সাথে মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে দোকানের সাজানো রেকের পিছে চলে গেলো। কেন গেলো আমি আর সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ জানতে পারলো না। ১৫ সেকেন্ডে মধ্যে চলে এলো মেয়েটি। চোখ লাল। মনে হলো সদ্য গাঁজা টেনে আসলো। 

এরই মধ্যে দুইজন কাস্টমার এসে গেছে। একজন ছেলে আরেক একজন মেয়ে। দুজনকে দেখে তেমন একটা সুবিধার মনে হলো না। মনে হলো পরকীয়া টাইপের কিছু একটা হবে।

-আপেল দে দো.....

ছেলেটির ঐ একটি বাক্য আমি বুঝতে পারলাম। আর বাকি কথা গুলো আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো। আমি হিন্দি কিছুই বুঝি না। ইংরেজি বাংলা একদম পাকা। ইংরেজির উপর ভরসা করে বিনা খরচে দেশ বিদেশে ঘুরি। ভাষাটা আমাকে অনেক দিয়েছে। কেবল আমিই কিছু নিতে পারি নাই ।

ছেলে মেয়ে দুইজন আপেল নিয়ে চলে গেলো। বিল দিয়ে গেলো না। আমি মনে মনে ভাবলাম হয়তো ভুলে গেছে ছেলেটি। তাই পিছন থেকে ডাক দিলাম, "hello, Bill."

-টিকহু । বলে ছেলেটি পিছন থেকে সামনের দিকে মুখ নিয়ে ক্লান্ত ষাঁড়ের মত মেয়েটি সাথে হেঁটে চলে যেতে লাগলো।

তখন আমি আবার দোকানির দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনার বিল দিয়ে গেলো নাতো?

- আমার বিল না। বলেন আপেলের দাম। 

বলে মুচকি হাসি দিলেন মেয়েটি ।

ওমা, মেয়েটি দেখছি আমার সাথে ঠ্যাঁটা করছে। তার এই ঠ্যাঁটার ছলে কথা আর একটু খানি মুচকি হাসি আমার মনের বাগানে আবার গোলাপের চাষ করতে শুরু করে দিলো। 

আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, সে যাইহোক দাম পরিশোধ করলো না তো ।

- হমমম। নিয়মিত কাস্টমার। পরে দিয়ে যাবে।

-অহ্। ঐ মেয়েটি কে? 

- তা দিয়ে আপনার দরকার কী? পছন্দ টছন্দ হয়েছে নাকি? বিয়ে করবেন?

- আরে না। এমনি জিজ্ঞাসা করলাম। 

- আচ্ছা তাই। 

- হমমম

- কলগার্ল। ছেলেটি ওর দালাল.......

- ঠিক আছে আর বলতে হবে না। বুঝেছি ।

- না, আরো একটু বলি। বলে খুব উচ্চস্বরে হেসে উঠলো । এই হাসির শব্দের কাছে সমুদ্রের ঢেউ বিলীন হয়ে গেলো। পাখির কলরব যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলে। সত্যি বলছি এত সুন্দর হাসি আমি অনেক বছর হল দেখি নাই। কলেজ জীবনে এমন হাসি দেখেছিলাম সুমি, চাঁদনীদের মুখে। অনেক বছর পর আজ আবার দেখলাম এই নিস্তব্ধ নির্জীব মানুষটির মধ্যে। সত্যি অনেক ভালো লাগছিলো। মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যি সেই কলেজ জীবনে ফিরে গেছি। ঠিক এমনি করে বেহায়ার মত করে দাঁড়িয়ে গল্প করত আমার বন্ধুরা। মেয়েরা কথা বলতে চাইতো না। কুকুরের মত পিছে পিছে ঘুরত ওরা। সেদে সেদে কথা বলতো। মেয়েরা কোন কথার উত্তর দিতে না চাইলে; হাজার বার জিজ্ঞাসা করতো। আমি এ সবের মধ্যে ছিলাম না। মেয়েরা কথা কইলে  কইতাম না কইলে না। এই স্বভাবের জন্য অনেক মেয়ে আমাকে অহঙ্কারী বলেছে। সত্যি বলছি আমি অহঙ্কারী ছিলাম না। তেল মেরে কথা বলার অভ্যাস আমার কোন কালেও ছিলো না। এখনো নেই। তবে কেমন যেন মনে হচ্ছে এখন এইমাত্র বন্ধুদের ঐ গুণ আমার মধ্যে ফিরে এসেছে। কলেজে সেই মেয়ে পাগল বন্ধুদের গুন এত বছর পর আমার মধ্যে কে দিয়ে গেলো। কে জানে, আমি কী আবার কলেজ জীবনে ফিরে যাচ্ছি? সেই ষোল বছরের জীবনে। যাই না কেন, গেলে দোষের কী কিছু আছে? নিজেই নিজেকে মনে মনে জিজ্ঞাসা করলাম। মেয়েটি সত্যি আমাকে পাগল করে তুললো। জীবনে কখনো কোন ধরনের লুচ্ছামি নিজের মধ্যে ঠাঁই দেই নাই । যাই বা একটু আকটু হয়েছে সেটা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে হয়েছে, সেটা সেই বয়সের দোষ বলে কথা। এই বয়সে এমন দোষ করা নিতান্তই অপরাধ। তবে এখানে আমি তো কোন অপরাধ করছি না । লুচ্ছামিও করছি না। তবে এমন কেন মনে হচ্ছে। অবশেষে অনুসন্ধান করতে পারলাম, এইজন্য এমন মনে হচ্ছে কারণ এর আগে এমন করে সেদে কোন রমণীর সাথে কথা বলি নাই তাই। বলি নাই তাতে কী তবে আজ বলবো ।

 বেহায়ার মত আবার দোকানিকে জিজ্ঞাসা করলাম, বললেন না তো বাংলাদেশি নাকি পশ্চিমবঙ্গের......

 - বগুড়ার । আপনি? বলে আবার মুচকি হাসিতে হেসে উঠলো। 

তার হাসিটাই দেখতে পেলাম; কথা দুইটি আর শুনতে পেলুম না । অবাক হয়ে তাকিয়ে তার আপেল মাপা দেখছিলাম। এক কেজি এক কেজি করে অনেক গুলো প্যাকেট তৈরি করছে সে। 

বললাম , এত এক কেজির প্যাকেট তৈরি করছেন কেন? আমি তো এক প্যাকেট নেবো ।

- না, আপনাকে সব গুলোই দেবো। নিবেন না?

- আরে সত্যি বলছি এত প্যাকেট তৈরি করছেন কেন? Please  বলেন না ।

- বিকেলে প্রচুর ক্রেতা আসে। একা একা সময় করতে পারি না। তাই করে রাখছি এখন।

- অহ্ আচ্ছা । আমাকে এক প্যাকেট দিন। 

একটি খালি প্যাকেট আমার দিকে ছুঁড়ে দিলো এবং বললো নিজের প্যাকেট নিজে তৈরি করে নিন। প্যাকেটি ভর্তি করলাম। বললাম এখন ওজন দিন ।

- ওজন দিতে হবে না ঠিক আছে।

- তাই ।

- হমমম

- আচ্ছা, আমাকে কিন্তু বললেন না, আপনি কোথাকার?

- বগুড়ারার 

- বগুড়া! বগুড়া থেকে এত দূরে কেমনে সম্ভব ।

- সময় হলে সব সম্ভব ।

- তাই বুঝি । তবে বলেন । শুনি । কেমন করে এত দূরে এলেন ।

- সে অনেক বড় লম্বা কাহিনী। শুনতে চাইলে রাত নয়টাই এখানে আসবেন । সব বলবো।

সত্যি তখন বড় ক্লান্ত ছিলাম। তাই আমিও আর জোরাজুরি করলাম না। না হয়; রাত নয় টায় একবার আসবো।

- কত টাকা দেবো?

- কিসের টাকা ! টাকা লাগবে না । যান ।

আমি আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে বাংলাদেশি দাম অনুপাত করে দুই শত টাকা তার সামনে রেখে হোটেলের উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম ।

দোকান থেকে বিশ থেকে পঁচিশ পা ফেলতেই না ফেলতে মেয়েটি আমার সামনে হাজির । থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম । চোখের পলক পরতে না পরতে মেয়েটি আমার বুক পকেটে হাত দিয়ে টাকা টি রেখে দিলো । রাতে এসে দিয়ে যায়েন, বলে মুচকি হাসি দিয়ে দোকানের দিকে দৌড়ে পালিয়ে গেলো । পিছন থেকে তাঁর চুলের লম্বা বিনুনির তরঙ্গ দেখতে পেলাম । বিনুনির তরঙ্গের কাছে সমুদ্রের ঢেউ যেন কিছুই নয়। ইচ্ছে করলো বিনুনি ধরে এই দুনিয়া নামক সমুদ্র পাড়ি দেই । রাখাল যেমন করে গরুর লেজ ধরে নদী পারি দেয় । কিন্তু আমি তা করতে পারি না । কারণ ঐ বিনুনি ধরার অধিকার আমার নেই । হাজার জল্পনা কল্পনা নিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। জানি না রাত নয়টা কখন বাজবে। তবেই আবার দেখা হবে।

 sablushahabuddin@gmail.com
বাংলাদেশে 

No comments:

Post a Comment