রঞ্জন চক্রবর্ত্তী
কোন এক নাম না জানা দেশের রাজার ছিল তিন কন্যা। তাদের মধ্যে সাইকি ছিল রাজার
সবথেকে প্রিয়। তিন
বোনের মধ্যে সে-ই সবথেকে ছোট এবং রূপের বিচারে সকলের থেকে সুন্দরী। রাজকন্যার রূপের খ্যাতি
চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকে বলতে শুরু করেছিল তার সৌন্দর্য নাকি দেবী
আফ্রোদিতিকেও হার মানায়। এখানে বলে রাখি সৌন্দর্যের দেবী ভেনাস আসলে আফ্রোদিতির
রোমান নাম।
পরমা সুন্দরী সাইকির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছিল। ধীরে ধীরে তার রূপমুগ্ধ
মানুষেরা আফ্রোদিতির উপাসনায় অবহেলা করে সাইকির দিকে ঝুঁকছিল। এরকম গুজবও রটতে শুরু
করেছিল যে আফ্রোদিতির সঙ্গে পৃথিবীর এক মরণশীল মানবের মিলনের ফলেই সাইকির জন্ম।
এসব খবর আফ্রোদিতির অজানা ছিল না, আর ব্যাপারটা যে তাঁর মোটেই পছন্দসই হয় নি সেকথা বলাই
বাহুল্য। এতে তাঁর অহংবোধ বেশ ভালরকম ধাক্কা খেয়েছিল। সাইকির ক্রমবর্ধমান
জনপ্রিয়তায় ক্রুব্ধ হয়ে তিনি একদিন পুত্র কিউপিডকে জরুরী তলব করলেন।
মায়ের আহ্বানে তড়িঘড়ি দেখা করতে এল কিউপিড। তাকে দেখামাত্রই আফ্রোদিতি
প্রশ্ন করলেন,
সাইকি বলে কোন মেয়ের নাম শুনেছ?
কিউপিড বেশ ভেবেচিন্তে বলল, তা শুনব না কেন! সাইকি তো এক রাজকন্যার নাম। লোকমুখে শুনেছি
সে অত্যন্ত সুন্দরী।
রাগত স্বরে আফ্রোদিতি বললেন, এই অহংকারী মেয়েটাকে এখনই উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে। ওর দিকে
তোমার শর নিক্ষেপ কর। এমন ব্যবস্থা কর ও যাতে খুব ভয়াল কোনও দানবের
প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়।
নিজের মাকে কিউপিড খুব ভাল করেই চিনত। সে অবাক হয়ে বলল, ওর দিকে তীর ছুঁড়ব কেন? মেয়েটি
আবার কী অপরাধ করেছে? আমি তো ওর কোনও বদনাম . . . . . . ।
ছেলেকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আফ্রোদিতি তড়িঘড়ি বললেন, তোমার অত বিশদে না জানলেও
চলবে। এখন আমি যা বলছি চোখ-কান বুঁজে তাই কর দেখি। মনে রেখ এ তোমার মায়ের আদেশ।
কোন কথা না বলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল কিউপিড। তারপর চিন্তান্বিতভাবে মায়ের
কাছ থেকে তখনকার মত বিদায় নিল। মায়ের আদেশ অমান্য করার সাহস তার নেই। সে ভেবে দেখল
তার বেশী জানার দরকারও নেই। তার মা সন্তানের কোন কাজে বাধা সৃষ্টি করেন না, সুতরাং তাঁকে না চটানোই
বুদ্ধিমানের কাজ। আফ্রোদিতিও খুব ভাল করেই জানতেন কিউপিডের ক্ষমতা কতখানি। এ ধরণের
কাজ করা তার কাছে মোটেই শক্ত নয়। সেইজন্যই তিনি ছেলেকে ডেকে এনেছিলেন।
পরের দিন থেকেই কাজে লেগে পড়ল কিউপিড। গোড়ায় সে মেয়েটিকে খুব একটা গুরুত্ব
দেয় নি। তীর চালানোয় সে বিশেষ পারদর্শী, সাইকি যখন একা বাগানে বেড়াচ্ছিল তখন একটু
দূরে গাছের আড়াল থেকে ধনুর্বাণ হাতে তাকে লক্ষ্য করছিল। বেশ কিছুক্ষণ সুযোগের
অপেক্ষায় থাকার পর এল মোক্ষম মুহুর্ত। কিন্তু তাড়াতাড়ি ধনুকে তীর সংযোজন করতে
গিয়ে তার হাতটা তীরের ধারালো ফলায় লেগে কেটে গিয়ে সামান্য একটু রক্তক্ষরণ হল।
ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হলেও কিউপিড জানত তার ফল হবে সুদূরপ্রসারী। এর
ফলে যেকোন জীবিত ব্যক্তি প্রথমে যাকে দেখবে তারই প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে, কিউপিড নিজেও তার ব্যতিক্রম
নয়। কয়েক দিন যাবার পর কিউপিড নিজের হৃদয়ে রূপবতী সাইকির প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব
করল। একদিন তাকে দেখতে না পেলেই মন আনচান করত, যদিও মেয়েটি
তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারত না। ক্রমে এই একমুখী প্রেম গভীর থেকে গভীরতর হল। সে
বুঝতে পারল এই মেয়েটিকে না পেলে তার জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে। কিন্তু কন্যারত্নটিকে
লাভ করা যায় কী করে? উপায় ভাবতে শুরু করল কিউপিড।
সাইকির দুই বোনের যথাসময়ে বিবাহ হয়ে গেলেও তার জন্য কোনো উপযুক্ত পাত্র পাওয়া
যাচ্ছিল না। শেষে তার পিতার ধারণা হল নিশ্চয় স্বর্গের দেবতারা কোনভাবে অসন্তুষ্ট
হয়েছেন, তাই
কনিষ্ঠা কন্যার বিবাহ হচ্ছে না। সুতরাং সে আমলের প্রথা অনুযায়ী তিনি দেবতা
অ্যাপোলোর ওরাকলের পরামর্শ নিতে চাইলেন। ওরাকল জানাল তিনি কোন মানুষকে যেন কনিষ্ঠা
কন্যার স্বামী হিসেবে আশা না করেন, বরং কোনও ভয়ানক দানবাকৃতি জীব তাঁর জামাতা
হবে। একথা শুনে রাজার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সেদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে সাইকিকে
শোভাযাত্রা সহকারে একটি খাড়া পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হল। সেখান থেকে পশ্চিমা
বাতাস জেফির তাকে হবু পতির কাছে নিয়ে যাবার জন্য উড়িয়ে নিয়ে গেল। যেখানে সে সাইকিকে নামিয়ে
দিল সেটি একটি মোলায়েম ঘাসে ঢাকা জমি। সেই মনোরম পরিবেশে নরম ঘাসের গালিচায় শুয়ে
সাইকির ক্লান্ত চোখদুটি ঘুমে বুজে এল।
ঘুম থেকে জেগে উঠে সাইকি দেখল সে একটি সুন্দর বাগানঘেরা প্রাসাদের সামনে
দাঁড়িয়ে আছে। একটি অদৃশ্য কন্ঠ তাকে বলল, কোনও চিন্তা নেই, তুমি
স্বচ্ছন্দে এই প্রাসাদে প্রবেশ কর। সেই কন্ঠস্বরে এমন একটা কিছু ছিল যে নির্দেশ
উপেক্ষা করতে পারল না সাইকি, মন্ত্রচালিতের মত প্রাসাদে ঢুকল। ভিতরে ঢুকে সে দেখল
প্রাসাদের মধ্যে অনেকগুলি কক্ষ, প্রতিটিই মূল্যবান আসবাব দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজান। একটি
ঘরের ভিতর ঢুকে সে দেখল টেবিলের উপর প্রচুর খাবার রাখা আছে। অত্যন্ত ক্ষুধার্ত বোধ
করায় সে খেতে বসে গেল। তারপর সেই কন্ঠের নির্দেশ অনুসরণ করে ঈষৎ শঙ্কিতভাবে একটি
শয়নকক্ষে ঢুকল।
কক্ষের মধ্যে ঘন অন্ধকারে সাইকি কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না, কিন্তু বুঝতে পারছিল সেই ঘরে
কেউ রয়েছে। তার অন্তরাত্মা বলে দিচ্ছিল ঘরে যে রয়েছে সে-ই তার স্বামী। সুললিত
কন্ঠে সেই ব্যক্তি তাকে শয্যায় আহ্বান জানাল। সাইকি বুঝতে পারছিল সেই আকর্ষণ
উপেক্ষা করা তার পক্ষে অসম্ভব, এর কাছে তাকে আত্মসমর্পণ
করতেই হবে। সে নিঃসঙ্কোচে সেই ব্যক্তিটির বাহুবন্ধনে ধরা দিল, যদিও অন্ধকারে তার মুখ দেখতে পাচ্ছিল না।
সেই রাতটা স্বপ্নের মত কেটে গেল। মিলনের আনন্দে ভেসে গেল সাইকি, কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল
ছিল না। পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতেই সে দেখল সেই ব্যক্তি অন্তর্হিত হয়েছে। সারাটা
দিন সে একাই কাটাল। এর পর থেকে প্রতিটি রাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত এবং
অনির্বচনীয় সুখের সাগরে ভেসে যেত সাইকি। কিন্তু ভোরের আলো ফোটার আগেই কিউপিড বিদায়
নিত। ফলে সে কখনই তার স্বামীর আসল রূপ দেখতে পেত না। সাইকি অবশ্য তা দেখতে চায়ও নি,
কারণ তার মনে কোনও সন্দেহের উদয় হয় নি। সে প্রেমাস্পদর সঙ্গে সুখেই
দিন কাটাচ্ছিল। এভাবে চলতে চলতে একসময় সাইকি অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়ল।
সাইকি কিন্তু এতদিনেও কিউপিডের আসল পরিচয় জানত না। কিউপিড তাকে বারংবার অনুরোধ
করেছিল সে যেন কখনও তার প্রকৃত পরিচয় জানতে না চায়। কিন্তু সাইকির কৌতূহল মাঝে
মাঝে প্রবল হয়ে উঠত। একবার ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে সে
কিউপিডকে বলেছিল,
তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে।
কিউপিড তৎক্ষণাৎ তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল, তুমি কিন্তু কোনদিন আমার আসল রূপ দেখার
চেষ্টা করবে না বা প্রকৃত পরিচয় জানতে চাইবে না।
স্বামীর কথায় আহত হয়ে সাইকি বলেছিল, আমি তো তোমার স্ত্রী। আমি যদি তোমার পরিচয়
জেনে যাই তাহলে কী এমন ক্ষতি হবে?
কিউপিড চাপা গলায় বলেছিল, এখন এর বেশী বলতে পারব না। তবে জেনে রাখ, যদি কোনদিন আমার পরিচয় জানতে
পার তাহলে আর আমাকে কাছে পাবে না। আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি
এবং কোনও অবস্থাতেই তোমার থেকে দূরে চলে যেতে চাই না। সেইজন্যই আশা করি তুমি
কোনদিন বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না।
এরপর আর কথা বাড়ায়নি সাইকি। তাছাড়া বিশ্বাস ভঙ্গ করার চিন্তা তার মাথায়ও
আসেনি।
এদিকে সাইকির পরিবারের লোকেরা অনেকদিন তার কোনও খবর পায় নি। বিশেষ করে তার
বোনদুটির আকাশচুম্বী কৌতূহল যেন বাধা মানছিল না। প্রথমে কিউপিড তাদের প্রাসাদে
আসতে দিতে রাজি না হলেও অবশেষে স্ত্রী-র অনুরোধে সম্মতি দিতে বাধ্য হল। তার
নির্দেশক্রমে জেফির তাদের প্রাসাদে নিয়ে এল। সাইকির দুই বোনের মন কিন্তু জটিলতায় ভরা।
মুখে মিষ্টি কথা বললেও ছোট বোনের সুখ তাদের সহ্য হচ্ছিল না। সাইকির প্রাচুর্য ও
বিলাসবহুল জীবনযাত্রা দেখে তারা মনে মনে হিংসায় জ্বলছিল। তারা
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছোট বোনকে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করল। এক বোন বলল, তোর স্বামী বোধহয় অত্যন্ত
কুর্দশন ব্যক্তি, তাকে দেখলে পাছে তুই অপছন্দ করিস তাই সে
মুখ দেখাতে চায় না। অপর বোন বলল, আমার মনে হচ্ছে তোর স্বামী
মানুষ নয়, আসলে সে এক বীভৎস দানব যে তোর গর্ভস্থ সন্তানের
ক্ষতি করবে। এখানে আসার আগে বাবার মুখে এরকমই কিছু শুনেছিলাম মনে হচ্ছে।
প্রথম দিকে সাইকি তাদের কথায় পাত্তা দেয় নি। বোনদের স্বভাব সে ভাল করেই জানত।
কিন্তু দিনের পর দিন একই ধরণের কথা শুনতে শুনতে একসময় তার মনেও সন্দেহ বাসা বাঁধল।
সে নিজের মনেই ভাবতে শুরু করল - কিউপিডের আসল উদ্দেশ্য কী? কেন সে নিজের আসল রূপ
দেখাতে চায় না? কেনই
বা তার প্রকৃত পরিচয় জানতে দিতে চায় না? পাশাপাশি তার মনে স্বামীকে দেখার জন্য অদম্য
কৌতুহল মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।
বোনেদের প্ররোচনায় অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে স্বামীর প্রকৃত রূপ দেখার জন্য ব্যগ্র
হয়ে উঠল সাইকি। একদিন
বিকেলে বোনদের সঙ্গে কথা বলার সময় সে বলল, আমারও ভীষণ ইচ্ছে স্বামীর মুখ দেখার,
কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব হবে বুঝতে পারছি না। রোজ অন্ধকার থাকতেই ও
ঘর থেকে চলে যায়, আমি মুখ দেখার সুযোগই পাই না।
বড় বোনটি তাকে পরামর্শ দিল, তার জন্য তোকে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। শোবার ঘরের এক কোণে একটা
মোমের প্রদীপ লুকিয়ে রাখ। তোর স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে প্রদীপটা জ্বেলে ওর মুখের সামনে
নিয়ে যাবি। তাহলে প্রদীপের আলোয় তুই স্বামীর মুখ স্পষ্টভাবে দেখতে পাবি।
কথাটা মনে ধরল সাইকির। কিন্তু ধরা পড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা ছিলই। তাই সে
প্রশ্ন করল,
কিন্তু ঘরে প্রদীপ রাখলে ও যদি কোনভাবে ধরে ফেলে?
এবার মেজ বোনটি বলল,
তুই তো বলেছিস তোদের শোবার ঘরে সবসময় এত ঘন অন্ধকার থাকে যে দৃষ্টি
চলে না। তাহলে
ঘরের এক কোণে প্রদীপটা লুকিয়ে রাখলে অন্ধকারে কিছুতেই ধরতে পারবে না। ঘুমিয়ে পড়ার
পর প্রদীপটা জ্বেলে চট করে একবার মুখটা দেখে নিয়েই আবার নিভিয়ে দিবি।
সাইকির কৌতূহলের পারদ অনেকক্ষণ ধরেই চড়ছিল। এবার সে উৎসাহী হয়ে বলল, ঠিক আছে, আজ রাতেই চেষ্টা করব তাহলে।
সেদিন রাতে কিউপিড যখন গভীর নিদ্রায় অভিভূত, তখন পা টিপে টিপে শোবার ঘরের
কোণে গিয়ে লুকিয়ে রাখা মোমের প্রদীপটা জ্বালল সাইকি। প্রদীপের আলোয় নিদ্রিত
স্বামীর মুখটা সে ভাল করে দেখে নিতে চায়। মোমের নরম আলোয় ঘরের মধ্যে জমাট বাঁধা
অন্ধকার কিছুটা দূর হল। আবছা আলোয় সে আবিস্কার করল শয্যায় অঘোরে ঘুমিয়ে আছে এক
স্বাস্থ্যবান পুরুষ। দূর থেকে তাকে দেখেই চমকে উঠল সাইকি। একলহমায় সে বুঝতে পারল
তার স্বামী মোটেই কুদর্শন নয়, সম্ভবত ভালবাসার দেবতা সুদর্শন
কিউপিড স্বয়ং তার কাছে ধরা দিয়েছেন। কিন্তু নিশ্চিত হতে গেলে
তার মুখটা আরও ভাল করে দেখতে হবে। তাই সে প্রদীপটাকে কিউপিডের মুখের একেবারে
কাছাকাছি নিয়ে গেল। এই সময় বইল একঝলক শীতল পশ্চিমা বাতাস, কোন এক অজানা আশঙ্কায় তার
সারা শরীরটা শিহরিত হয়ে উঠল। সাময়িক উত্তেজনায় তার হাত কাঁপছিল। হঠাৎ করে কম্পিত
হাতে ধরা প্রদীপ থেকে একফোঁটা গলন্ত মোম পড়ে গেল কিউপিডের মুখের উপর। গরম মোম
গায়ে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল কিউপিডের, চমকে গিয়ে সে চোখ খুলে
দেখল তার মুখের ঠিক উপরেই ঝুঁকে রয়েছে সাইকি।
কিউপিডের ঘুমজড়ানো দুই চোখে ফুটে উঠল অবিশ্বাস। তার বুঝতে বাকী রইল না যে
সাইকি তার প্রকৃত পরিচয় জেনে ফেলেছে। ভালবাসা দাঁড়িয়ে থাকে যে বিশ্বাসের উপর, সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে সে। এতক্ষণ সাইকি যেন একটা
ঘোরের মধ্যে ছিল,
স্বামীর চোখের দিকে তাকাতেই সম্বিৎ ফিরে পেল। সে যে কতবড় ভুল করেছে তা
বুঝতে আর বাকী রইল না। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। তার আর্তিতে কান না
দিয়ে তৎক্ষণাৎ শয্যা ত্যাগ করে জানালার দিকে এগিয়ে গেছে কিউপিড। আর একমুহুর্তও
দেরী না করে প্রাসাদের জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল সে, একটিবারের জন্যও পিছন ফিরে
চাইল না। সেই
যে গেল, আর কখনও
সাইকির কাছে ফিরে আসেনি কিউপিড।
No comments:
Post a Comment