1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

দাদুর দাঁতে দাদুর নোলা জব্দ

ছবি : ইন্টারনেট 

দাদুর দাঁতে দাদুর নোলা জব্দ 

কবিতা সামন্ত  


রমাপদ দাদু আমাদের সবার প্রিয় দাদু। আমরা সবাই রমা দাদু বলেই ডাকি।

দাদু পুরানো দিনের লোক তাই অনেক মজার মজার গল্প শোনান আমাদের।

তবে বিনা পারিশ্রমিকে বলেন না। রীতিমত ঘুষ দিতে হয়।

দাদুর ভীষণ নোলা তাই ঘুষে তেনার সব সময় খাবার জিনিসই চাই।

আমরা গল্প শুনবো বলে দাদুর জন‍্য বাড়ি থেকে কখনও চাল ভাজা কখনও কড়াই ভাজা আবার কখনও নাড়ু ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে আসি।

আবার কখনও কখনও আমাদেরকেও দাদু চকলেট এটা ওটা দিতেন।

দাদু বলছিলেন একবার নাকি দাদুদের বাড়িতে ইলিশ রান্না হয়েছে।

গরীবের সংসারে সবার খাওয়ার পর দাদুর মা কয়েকটি মাছের পিস ঢেকে রাখলেন রাতের জন‍‍্য ;

কিন্তু যৌথ পরিবারে অনেক লোকের মাঝে দাদু আর দাদুর বোন সবার ছোট ছিল বলে সব জিনিস একেবারেই একটু একটু করে পেতেন তাই দুজনে মিলে ফন্দি এঁটে দু তিনটে মাছের পিস এমন ভাবে খেয়েছে যেন দেখে ঠিক বিড়াল খাওয়ার মতো লাগে।

এবার কী হবে?

মাছ গুলো ফেলে দেওয়ার জন‍্য আলাদা সরিয়ে রেখে দিলে পরে আবার দুই ভাই বোন মিলে খেতে গিয়ে ধরা পরে বেধড়ক মার পড়েছে।

এরকম অনেক ঘটনার গল্প বলেন।

যেমন রমা দাদু ঠাম্মাকে ভাত কাপড়ের দিন লোভ সামলাতে না পেরে ভাত কাপড় দেওয়ার আগেই থালা থেকে মাছের মাথাটা কামড় দিয়ে তারপর ঠাম্মার হাতে থালা দিয়েছিলেন।

সে কী কাণ্ড!

বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে নাক কাটা যাওয়ার অবস্থা।

আবার দাদু ঠাম্মাকে নিয়ে দ্বিরাগমনে গিয়েও কাণ্ড বাঁধাতে ছাড়েননি।

নতুন জামাই শ্বশুরবাড়িতে প্রথবার গিয়ে  একটু লজ্জাও আছে।

শাশুড়ীমা যত্ন করে অনেক কিছু খেতে টেতে দিলেন।

এদিকে লোভও সামলাতে পারছেননা, অথচ খেতেও পারছেননা।

দ্বিতীয় বার দিতে গেলে আর না বলে উঠে পরেছেন।

বাড়ি থেকে দাদুর মা বলে দিয়েছেন হ‍্যাংলামো না করতে।

তা না হলে দাদুর তো মান যাবেই সঙ্গে দাদুর মা বাবারও মাথা কাটা যাবে।

কোন রকমে খাওয়া সেরে উঠেছেন।

কিন্তু পায়েস আর খাসির মাংসটা এতো সুন্দর হয়েছে যে মন মতো খেতে না পারলে যা খেয়েছেন সব বদহজম হয়ে যাচ্ছে।

দাদু ঠাম্মাকে যে কথা গুলো বলবেন তারও উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।

ঠাম্মা নিজের বাড়িতে গিয়ে সবার সঙ্গে ব‍্যস্ত হয়ে পড়েছেন দাদুর কাছে আর যাননি।

বিকেলে ফল মূল খেতে দিলে লজ্জার মাথা খেয়ে নিজেই বলে ফেললেন আমাদের বাড়িতে মাংস হলে মা আমাকে বিকেলেও একবাটি খেতে দেন।

শাশুড়ী মার বুঝতে দেরী হলোনা যে জামাই মাংস খেতে চাইছে।

তিনি মাংস সঙ্গে পায়েস আরও অনেক কিছু খেতে দিলেন।

দাদু খাবার খেয়ে বলেই ফেললেন খাওয়াটা ঠিক মনের মতো করতে না পারলে আমার আবার ঘুম আসেনা।

রাতে শোবার সময় ঠাম্মা রেগে গেলে দাদু বলেন কী করবো বলো?

তুমি তো এখানে এসে আমাকে ভুলেই গেলে,তা না হলে তো তোমাকেই সব বলতাম।

বাড়িতে ফিরে দাদুর বাবা সব শুনে ঠাম্মার সামনেই দাদুকে ধুয়ে দিলেন।

এই নোলার জন‍্য আমাদের মান সম্মান কিছুই রাখলিনা?

সেদিন এক কাণ্ড ঘটেছে।

দাদুর বাঁধানো দাঁত বলে আমরা জানতামনা।

সেদিন দাদু কিছুইতে কিছু খেলেন না,আমাদেরকে গল্পও শোনালেন না।

ভাবলাম দাদুর কিছু হয়েছে।

পরে জানতে পারলাম রাতে যখন দাদু দাঁত খুলে ঘুমোচ্ছিলেন ঠাম্মা তখন দাদুর দাঁত গুলো লুকিয়ে দিয়েছিলেন।

দাদুকে বলেছেন রাতে হয়তো ইঁদুরে নিয়ে চলে গেছে।

দাদু সারাদিন ইঁদুরের গর্ত গুলো খুঁজে গেছে কোথাও পাননি।

যেহেতু দাঁত ছিলোনা আর কিছু খেতেও পারবেন না তাই আমাদেরকে আর গল্পও বললেন না।

পরে ঠাম্মা দাদুর দাঁত গুলো দিয়ে দিয়েছিলেন যদিও।

কারণ এতো নোলার জন‍্য কখনও কখনও বেসামাল হয়ে গেলে ঠাম্মাকেই পরিস্কার করতে হয়।

অনেক বার অনেক রকম করে ঠাম্মা দাদুকে বোঝানো সত্বেও কিছুইতে কোন কথা কানেই তোলেননি দাদু।

গত কয়েকদিন আগেই দাদু কড়াই ভাজা খেতে খেতে দাদুর বাঁধানো দাঁতটা খুলে পড়ে গেল।

আমরা দেখে অবাক!

দাদু কড়াই ভাজা খাওয়ার মতো খপ করে মুখের ভেতর দাঁতটা দিয়ে হি হি করে হেসে ফেললেন।

এমন ভাব দেখালেন যেন কিছুই হয়নি।

গতকাল রাতে এক দারুণ কাণ্ড ঘটেছে।

আজ শুনি!

কদিন হলো দাদুর বাড়িতে শহর থেকে দাদুর নাতি এসেছে।

বাড়িতে ভালো মন্দ খাবার হচ্ছে কিন্তু দাদুর মনের মতো করে ঠিক ঠাক হচ্ছে না।

তাই রাতে রাতে ফ্রিজ থেকে এটা ওটা চুপিচুপি সেরে দেন দাদু।

ঠাম্মা সকালে উঠে দেখেন ফ্রিজের থেকে সব উধাও।

ঠাম্মার বুঝতে বাকী থাকেনা।

কিন্তু যেহেতু বাড়িতে নাতি রয়েছে তাই নাতির সামনে দাদুকে তেমন কিছু বলতেও পারেননা।

গতকাল রাতে দাদুর দাঁত গুলো নাকি ভূতের নাচন নেচেছে।

কদিনের জন‍্য নাতি এসেছে।

এটা ওটা করতে করতেই সময় চলে যায়।

নাতি বিরিয়ানি খেতে খুব ভালোবাসে।

গতকাল রাতে ঠাম্মা নাতির পছন্দসই বিরিয়ানি বানিয়েছিলেন।

রাতে ফ্লাইটে নাতি চলে যাবে বলে রাতেই বানালেন।

যেহেতু সবাই বিরিয়ানি খেয়েছে তাই দুধটা আর কেউ খায়নি।

দাদুর নজর এড়ায়নি যে আজ দুধের সরটা ঠাম্মা তুলে রাখতে ভুলে গেছেন।

তাই রাতে ঠাম্মা ঘুমিয়ে পড়লেন দাদু দেখলেন এবার রাস্তা পরিস্কার।

দাদু চুপিচুপি গিয়ে ফ্রিজ খুলে দুধের সর খেতে গিয়ে দেখলেন রাতে বিরায়ানির গন্ধে ফ্রিজটা ম ম করছে।

কিছুটা বিরিয়ানি বেঁচে গেছে।

তাই বিরিয়ানি খাবার জন‍্য ঘর থেকে দাঁত গুলো নিতে গিয়ে দেখেন অন্ধকারের হালকা আলোতে দাদুর বাঁধানো দাঁত গুলো এদিক ওদিক ঠক্ ঠক্ করতে করতে নাচছে আর হিঁ হিঁ করে হাসছে।

এমনিতেই দাদু ভূতে ভীষণ ভয় পান।

দাদু ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে যান।

ঠাম্মা  আলো জ্বেলে সব ঠিক ঠাক করে রেখে দাদুর চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরান।

দাদুকে জিজ্ঞেস করেন আসলে কী হয়েছে?

দাদু ভয়ে ভয়ে রাম নাম জপ করছেন আর বলছেন আর কোনদিন চুরি করে খাবনা এই বলে তেনাদের গড় করছেন।

ঠাম্মা দাদু উঠে যাওয়ার পর সুতো দিয়ে দাঁত গুলোকে এদিক ওদিক এমন ভাবে বেঁধে ঝুলিয়ে দিলেন যাতে হাওয়া দিলেই নড়তে থাকে।

দাদু যেই ঘরে ঢুকতে যাবে অমনি টেপে ভূতের হাসির শব্দ চালিয়ে দিলেন।

ঘরে ফ‍্যানের হাওয়াতে দাঁত গুলো ঠক্ ঠাক্ করে নড়ছিল।

ঠাম্মা মুখ টিপে টিপে হাসছেন।

আর মনে মনে বলছেন বুড়ো তুমি জব্দ হবেনা?

তোমার চৌদ্দ গুষ্ঠি কে শুদ্ধ জব্দ করে দেব না আমি।

abitasamanta699@gmail.com
থানে 

No comments:

Post a Comment