1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

প্রিয় বন্ধু


ছবি : ইন্টারনেট 

 প্রিয় বন্ধু

অনুশ্রী সরকার 

- "কিরে, কেমন আছিস?"

গলাটা শুনে চমকে গিয়ে পেছনে তাকায় রূপসা। বহুদিন পরে শুনছে তবু এতটুকু অপরিচিত নয় তার গলা। হাতের কফিকাপ টা ধুপ করে রেখে দেয় মাটিতে। মুখ তুলে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়েই চোখ ছলছল করে ওঠে মেয়ে টার। মুখ ভর্তি দাড়ি, তবু সেই পরিচিত হাসি। মনে ভেসে ওঠে কিছু এলোমেলো স্মৃতি। ছেলেটি রূপসার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। তার প্রিয় বন্ধু উজান।

কিন্তু আজ তো তারা অনেক দূরে। এসব ভেবে সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করে মেয়েটা, "তুই হটাৎ এখানে! তা কি মনে করে? একাই এসেছিস নাকি?"

- "হুম একাই এসেছি। কারণ যার সাথে দেখা করতে এসেছি সে এখানেই আছে।"

- "ওহ তাই নাকি। বেশ তো তাহলে যা গিয়ে সেখানে বস। আর কি খাবি বল?"

- "তোর হাতের সেই স্পেশাল মুড়ি মাখা আর বিচ্ছিরি খেতে চা টা। রেখেছিস মেনু তে?"

- "না রে।সেটা তো রাখি নি তবে অনেক কিছু আছে দেখ না কি খাবি।"

- "শোন না আজ কিছু খেতে নয় কিছু চাইতে এসেছি তোর কাছে। বল না দিবি  প্লিজ।"

- "আমার কাছে চাইতে!! কি বল তো?"

- "আর তাছাড়াও রিকোয়েস্ট করার দরকার নেই কারণ তুই চেয়েছিস আর আমি দেয়নি এরকম টা কখনো হয়নি হয়তো আগে।"

- "তা অবশ্য হয়নি কিন্তু ... আজকে ১ টা ঘন্টা সময় দিতে পারবি আমাকে? দেখ জানি হটাৎ করে 3 বছর পরে এসে এমন একটা আবদার শুনে তুই অবাক হচ্ছিস কিন্তু প্লিজ না করিস না।"

হা অবাক মেয়েটা হচ্ছে হটাৎ করে মনে ভিড় করছে হাজার প্রশ্ন, নতুন করে দানা বাঁধছে জমানো অভিমান গুলো, ঝরে পড়তে চাইছে সবার থেকে আড়াল করে রাখা চোখের জল। খুব প্রিয় একটা সুরের তার যেন জোড়া লাগতে চাইছে কোনো অনুমতি ছাড়াই। কিন্তু সেসব এর এখন কোনো মানে হয়না। তাই মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দেয় সে, "ঠিক আছে তুই একটু দাঁড়া আমি ভেতর থেকে আসছি।" ভেতরে গিয়ে এক কর্মচারীকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আসে মেয়েটা। তার পরে দুজন বাইকে চেপে বেরিয়ে পড়ে এক চেনা গন্তব্যে, সেই নদীর ধারে। হ্যাঁ, খুব চেনা জায়গাটা দুজনের ই।

এই জায়গাটা ওদের বন্ধুত্বের হাজারো ওঠা নামার সাক্ষী। ওদের বন্ধুত্ব, ঝগড়া, অভিমান, যত্ন, কান্না, হাসি, ওদের সমস্যা, ওদের সম্পর্ক আর বিচ্ছেদের সাক্ষী।

এখানে এসে দুজনই চুপ করে আছে হয়তো দুজনের মনেই সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি গুলো জটছাড়িয়ে উকি মারছে একে একে। উজান জানে বড্ডো অভিমানী মেয়েটা। ছোট থেকে তো দেখছে সে তার বান্ধবীকে, কষ্ট পাবে কাঁদবে কথা বলার জন্য গুমরে মরবে কিন্তু কখনো আগে এসে কথা বলবে  বলবে না ও। এটা বড়ো বাজে স্বভাব রূপসার, যত বার এর আগে ঝগড়া হয়েছে ওদের ততবার ই উজনকেই আস্তে হয়েছে রূপের মান ভাঙাতে।। তবে হ্যা একবার  উজান রূপসার সামনে এসে দাঁড়ালেই মেয়েটার সব রাগ ভেঙে জল হয়ে যেত। উজান জানে আজও সেটার ব্যতিক্রম হবে না। রূপসা শুরু থেকেই ওর প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে খুব বেশি possessive.. উজান ও কিন্তু কম যায় না তবে সেটা সে রূপকে কখনো বুঝতে দেয় নি।

 

এত কিছু ভেবে তাই উজান নিস্তব্ধতা ভেঙে কথা বলা শুরু করে

- "আচ্ছা এই তিনটি বছরে তোর কথনো মনে হয়নি না আমার কথা?"

ছেলেটির দিকে তাকায় মেয়েটা । মেয়েটার চোখ যেনো কথাটার তীব্র বিরোধিতা করছে।

- "জনি না। তবে তোরও তো মনে পড়েনি কখনো।"

চুপ করে থাকে ছেলেটা। খানিক বাদে আবার বলে

- "জানিস আমি আমাদের সম্পর্কটাকে কেন এত স্পেশাল ভাবতাম? কারণ আমি জানতাম আমার না বলা কথা গুলো আমার bestfriend না বলতেই বুজে নেয়। একমাত্র তুই আমাকে বুঝতিস, আমার খামখেয়ালি গুলোকে সহ্য করতিস ,প্রতিটা ups and downs এ আমার পাশে দাঁড়াতিস । আমার অভিমান এর কথা যা আমি তোকে কখনো বলতে পারি নি সেটা যেন তুই বুঝে যাস আমি এটাই চাইতাম। তাই অনেক কষ্ট হলেও তোর কাছে আমি আসিনি। আসলে আমি কখনো সেভাবে তোকে হারিয়ে ফেলার কথা ভাবি নি রে , তাই হয়তো তোকে আলাদা ভাবে আটকে রাখার কোথাও ভাবি নি।"

- "আজকে হটাৎ এসব কথা কেন তুলছিস। যা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আবার কেন এত কথা টর আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে বলতো?"

- "তুই না আমাকে বলেছিলি সময়ের সাথে সাথে সব পাল্টাতে হয়।তুই সেদিন ঠিক যে বলেছিলি ।তাই তো আমি চেষ্টা করেছি নিজেকে পাল্টে নেওয়ার।"

- "আজ না রে,কথা গুলো ৩ বছর ধরে আমি আমার মনে চেপে রেখেছি।"

- "আমি জানি আমি তোর থেকে যতটা নিয়েছি তোকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি কখনো তোর মন খারাপ গুলোকে কমাতে পারি নি কখনো, কখনো দেখাতে পারি নি তুই আমার কাছে ঠিক কতটা , আমিও তোকে নিয়ে কতটা ভাবি আমি তোকে সেটা বোঝাতে পারি নি । কারণ তোর মতন করে আমি আমার অনুভুতিগুলোকে জাহির করতে পারি না। আর কেউ না বুঝুক তুই তো বুঝতিস বল। তাও তুই তখন আমায় বুঝতে চাস নি। তোর কি মনে হয়েছিল তখন? অভিমান তোর একার হয় আমার হয়না আমার bestfriend এর উপরে?"

উজানের কথা শুনে আর চোখের জল আটকে রাখতে পারে না রূপসা । খুব রাগ হয় ওর নিজের ওপরে। উজান এসব কথা রূপ কে আগে না বললেও রূপ এসব জানে, ও বোঝে ওর বন্ধুকে। কিন্তু তাও ও ওর অভিমান এর  পাহাড় টাকে ভেঙে উজান কে বুঝতে চায়নি। সময়ের নিয়মেই যখন ধীরে ধীরে উজান ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল তার জীবনে, তার নতুন প্রেমে, নতুন নতুন আলোর রোশনাই,নতুন মানুষের আনাগোনায়  উজান বুঝতেই পারিনি দূরে সরে যাচ্ছিল রূপ। আর অন্য দিকে রূপের জীবন টা ধীরে ধীরে অন্ধকার হতে শুরু করে।তার  প্রথম prioriti তার bestfriend তার থেকে এভাবে দূরে চলে যাওয়া ও মেনে নিতে পারে নি। ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে দুর্বল হতে শুরু করেছিল সে। সে কখনো ভাবিনি উজান ছাড়া তার জীবনটা এইভাবে অন্ধকার হয়ে যাবে।

আর  তখন সে তার bestfriend কে তার পাশে পায় নি। উজান তখন একেবারেই যে রূপের পাশে থাকতে চাইনি এমনটাও নয় । কিন্তু রূপ বুঝতে পারে এই ছেলেটা রূপের আগের উজান নয়। তাই মনে ভর্তি অভিমান আর চোখের জল নিয়ে সরে গেছিলো সে উজানের জীবন থেকে। আজ আবার উজান তার সামনে দাঁড়িয়ে। হ্যা এটাই সেই উজান । ওর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। আজ আবার ওর পুরোনো উজান ওর কাছে ফিরে এসেছে। এসব কিছু ভাবছিল রূপসা।হটাৎ এ উজানের কথা কানে আসে ওর।

- "কিরে কিছু বলছিস না যে,ঝগড়া করবি না আজ আমার সাথে!?"

আজ রূপসা কোনো কথা বলে না ওর আজ ঝগড়া করতে মন চায় না। কোনো কথা না বলেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উজান কে। আর দুজন দুজন কে জরিয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকে দুজনই। আর ওদের কান্না গুলো ওদের ৩ বছরের সমস্ত জমিয়ে রাখা রাগ দুঃখ কান্না মনখারাপ অভিমান সমস্ত কিছু ধুয়ে দিচ্ছে। আর পাশ থেকে একটা পাড়ার ক্রিকেট এর ময়দান থেকে গান ভেসে আসছে...

 

Toota hai toh juda hai kyn

Meri taraf tu muda hai kyu

Haq nahi tu yeh kahe ki yaar ab hum na rahe

 

Ek teri yaari ka hi

Saaton janam haqdaar hoon main

Tera yaar hoon main…..

anusndpn@gmail.com 
বালুরঘাট 

No comments:

Post a Comment