1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

স্বাস্থ্য বিপ্লব



স্বাস্থ্য বিপ্লব

ডাঃ লক্ষ্মণ চন্দ্র পোড়ে

       আমি একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার এবং ডাক্তারির দীর্ঘ 12 বছরের মধ্যে আমি শুধু মানুষের যন্ত্রণা দেখেছি। হ্যাঁ, আপনারা হয়তো বলবেন ডাক্তার হয়েছেন তো যন্ত্রনা দেখার জন্য,আপনারা একদম ঠিক কথাই বলেছেন। 

কিন্তু আমি যখন দেখি সেই যন্ত্রণা নিরাময় করার কোন উপায় আজকের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সেই রকমভাবে নেই,তখনই ডাক্তার হিসেবে আমার যন্ত্রণাটা হয়। আর তখনই যেমন মনে হয় চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নতুন কিছু আবিষ্কার  

করার কথা, ঠিক তেমনি সমানভাবে মনে হয় কেন এই রোগ গুলি হয়? আমার মনে হয় যখন কোন রোগের সামনে আমাদের নামিদামি চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলি মুখ থুবরে পড়ে তখন একজন ডাক্তার হিসেবে সেই বিখ্যাত লাইনের

 কথাটি মনে পড়ে যায়। "prevention is better than cure" । আজকের এই প্রবন্ধ সেই 'Prevention 'কে নিয়েই। Prevention মানে  আমি Vaccination;কে বলতে চাইছি না।

আমি বলতে চাই সামাজিক prevention এর কথা। সবার মনে ভীষণ উৎকণ্ঠা যে এই সামাজিক prevention টা আবার কি?

সামাজিক প্রতিরোধক মানে এটি রোগ না হওয়ার পিছনে আপামর বিশ্ববাসীর  যে ভূমিকা আমি ঠিক সেই টাকেই বোঝাতে চাইছি । সবাই ভাবছে রোগপ্রতিরোধকে আবার আমাদের ভূমিকা কি? 

আবার অনেকে ভাবছেন নিয়মমাফিক বর্ষাকালে T.Vতে  ADD আসার মত। আপনার বাড়ির চারপাশে জল জমতে দেবেন না কারণ এই জমা জল থেকে ম্যালেরিয়া মশা উৎপন্ন হয়।

আমি যেটা বলতে চাইছি ভগবান আমাদের বুদ্ধি দিয়েছে,আর সেই বুদ্ধি জন্ম দিয়েছে বিজ্ঞানের। আমি একজন বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র ছিলাম এবং ক্লাসে পড়ার সময় নিয়মমতো দু থেকে তিন বছর ছাড়া ,ছাড়া প্রবন্ধ লেখার 

বিষয় আসত, " বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ "। আজকের  দিনে হয়তো এই লাইনটির গুরুত্ব কারো কাছে নেই। জীবন কখনো থেমে থাকে  না। তাই সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবন যাত্রা আরো উন্নত হচ্ছে। তার উদাহরণ স্বরূপ 5 G internet সেবা,satellite ,Kidney transplantation, Heart transplantation, Liver transplantation, Diet Habit  অনেক কিছুই উন্নত হয়েছে । আরো ও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের জীবনযাত্রা ও উন্নত হয়েছে। কিন্তু আমি সকলকে অনুরোধ করব যে একটু ভেবে দেখার জন্য যে,এটা উন্নতির-অবনতি নয় তো?কারণ সমস্ত জিনিসেরই একটা শেষ আছে। আর  সেই উন্নতির আমরা  শেষ গোড়ায় দাঁড়িয়ে নয়তো? আজকের এই গতিশীল জীবনে যেখানে ঠিকভাবে ঘুমোনো, খাওয়া তো দূরের কথা, শান্তিতে washroom এ ও থাকা যায় না, ঠিক সেই সময়ে বসে আমার  এই প্রবন্ধ লেখা টাও অমূলক কিনা আমি জানিনা। লেখাটা দরকার তাই লিখছি।বিজ্ঞান  উন্নত হয়েছে ,তাই আমরা পেয়েছি চটের ব্যাগ এর জায়গায় পলিথিন,বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে তাই আমরা কাচের বোতলের জায়গায় পেয়েছি প্লাস্টিকের বোতল, বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে তাই আমরা কাঠের জায়গায় পেয়েছি ফাইবার,তেমনি ভাবে বলদ গাড়ির  জায়গায় পেয়েছে বাইক, কার , প্লেন।তেমনিভাবে চিঠি লেখার জায়গা পেয়েছি টেলিফোন এবং টেলিফোনের জায়গায় পেয়েছি মোবাইল!

তেমনি বিজ্ঞান উন্নত হওয়ার সাথে সাথে সংবাদপত্রের জায়গা পেয়েছি রেডিও এবং রেডিও এর  জায়গায় পেয়েছি টিভি এবং টিভির  জায়গা পেয়েছি কম্পিউটার। এবং লাউডস্পিকার টি যে কি,  বিজ্ঞানের আশীর্বাদে পেয়েছি না অভিশাপে পেয়েছি তা ঠিক  বুঝে উঠতে  পারছি না।  তেমনি ভাবে কেরোসিন তেলের জায়গায় পেয়েছি ইলেকট্রিক। তেমনি ভাবে বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে আমরা ভাত আর রুটির জায়গায় পেয়েছি পিজা, বার্গার ,চাওমিন ,চিপস ইত্যাদি। বিজ্ঞান উন্নত হওয়ার সাথে সাথে সব থেকে বেশি পরিবর্তন এসেছে আমাদের কর্মজীবনে। সভ্যতার প্রাক্কালে স্বীকার করা ও তারপর কৃষিকাজি  ছিল প্রধান   কর্ম। কিন্তু বর্তমানে কর্মের প্রধান জায়গাটা বিশেষত ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। আর এর জন্য গড়ে উঠেছে বড় বড় কল কারখানা। আর যদি আমার  এই কথাটা ঠিক হয়, তাহলেএই কর্মগত বেড়ে চলা বিশ্বের জনসংখ্যার অন্নসংস্থান  (কাঁচামাল )এর যোগান কিভাবে হচ্ছে ,সেটা একটা বড় প্রশ্ন। যত দিন যাচ্ছে তত চাষ যোগ্য জমির সংখ্যা যেমনভাবে কমছে ঠিক সমানতালে কমছে চাষীর  সংখ্যা ও। তাহলে খাওয়ার যোগান কিভাবে হচ্ছে। এর পিছনে ও আছে বিজ্ঞান, কম জায়গায় কম সময়ে ফলন কে বাড়িয়ে  দিয়ে দেওয়া হচ্ছে যোগান।আজকের দিনে বাজারে আপনি যে সবজি নিচ্ছেন তার বেশিরভাগ Hybridizationএর ফল। আবার মাছ-মাংসের ক্ষেত্রেও তাই,খুব অল্পসময়ের মধ্যে চাই বেশি Growth,কিভাবে? তাও বিজ্ঞান।

আমাদের যারা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় তারা কিন্তু এই সমস্ত জিনিস নিয়ে ওয়াকিবহল।তাই এই সমস্ত জিনিস কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সময়ের সাথে ,সাথে বিভিন্ন ধরনের আইন ও প্রণয়ন করেছেন। যেমন একটি গাছ কাটার পূর্বে সরকারের অনুমতি নেওয়া, যেমন আপনার বাইক অথবা কার এর জন্য Polution certificateবাধ্যতামূলক ইত্যাদি। কিন্তু আমরা সাধারন মানুষ কি  এটা বুঝি?হয়তো বুঝেও বুঝিনা ।  বিজ্ঞানের উন্নতি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও ভীষণভাবে ছাপ ফেলেছে। আগেকার শিক্ষাব্যবস্থা বাচ্চাদের ওপর এতো মানসিক চাপ সৃষ্টি করতো না , কিন্তু এখন একটা বাচ্চার ওপর শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এতটাই মানসিক চাপ যে, তা থেকে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন মানসিক রোগের। এই রকম অনেক  বিজ্ঞানের ই  উদাহরণ রয়েছে।কিন্তু এই সমস্ত জিনিসের সাথে আমাদের জীবন যাত্রার একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই উন্নতি যদি আমাদের কাছে আশীর্বাদ এর মত হয়, তেমনি asthma , allergic  Rhinitis, cancer , ADHD, Autism, Brain Hamrrage, Depresion Anxiety,Insequrity,Any type of skin desease,Obesity,PCOD ইত্যাদি গুলোকে অভিশাপ হিসেবে মেনে নিতে হবে।

       আমরা শিক্ষিত , আমরা সবাই এই জিনিস ভালো করে  বুঝি । কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ বা নিজেকে পরিবর্তন করার ঝুঁকি নিচ্ছি  না। সবাই বলে জীবনের থেকে বড় আর কিছু নেই, কিন্তু কাজে কি তা মানি । উদাহরণ স্বরূপ দিল্লি প্রতিবছর শীতকালে পৃথিবীর কতগুলো  ভালো শহরের মধ্যে rank করে,  অত্যাধিক Pollutionএর জন্য। সবাই জানে যে কিসের জন্য এই Pollution।কিন্তু কেউ সেই সমাধানের দিকে দৃষ্টিপাত পর্যন্ত করে না। আবার এটাও সবাই জানে Smoking,alcohol and tobacco is injuries to health. কিন্তু তার সমাধানের দিকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। আবার এটাও সবাই জানে Stress and anxiety বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ, কিন্তু কেউ তার সমাধানের জন্য  কোন উদ্যোগ নেয় না। এটাও সবাই জানে শিশুদের শিক্ষা তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু কেউ  কি তা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে। কেনো  নিচ্ছে না,তার পিছনে একটা বড় কারণ হল  দেশের  GDP অথবা অর্থনৈতিক উন্নতি। যদি সত্যিই আপনি এই সমস্যার সমাধান করতে  চাইতেন অথবা স্বাস্থ্যই সম্পদ অথবা স্বাস্থ্যের সঙ্গে যদি সত্যিই আপনি আপস করতে রাজি না হন তাহলে সিগারেটের খামের উপরে Smoking is injurious to health না লিখে ওটাকে ব্যান্ড করে দিতেন অথবা Alcoho consumption is injuries to healthনা, লিখে ওটাকে ব্যান্ড করে দিতেন। অথবা দিল্লির বুকে পেট্রোল ও  car এর চলাচল এর Odd & even numberএর নিয়ম এর প্রয়োজনীয়তা না রেখে ওগুলোকে ব্যান্ডি করে দিতেন। শিল্প -ব্যবসা-বাণিজ্য, Pollutionএর একটা বড় কারণ জেনেও আমরা উন্নতির নামে  সেগুলো কে বেশি Preference দিচ্ছি। যদি pollution ছাড়া শিল্প ব্যবসা ও বাণিজ্যের কথা ভেবে ,কৃষিকাজে উদ্যোগ বাড়িয়ে আমরা যদি অর্থনৈতিক উন্নতি অথবা GDP এর কথা ভাবতাম তাহলে হয়তো আমরা অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান থাকতে পারতাম। কিন্তু না, তাহলে যে আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় GDPতে পিছিয়ে পড়বো তখন কি হবে।আসলে এখনকার পৃথিবীতে সাস্থের সাথে নয়, অর্থের সাথে কোন আপোষ হবেনা। অর্থের বিনিময়ে আমাকে যেটা হারাতে হবে, আমি তাতে রাজি।

    সত্যি এখনকার সময়ে কোন দেশ ই তার GDP এর সাথে আপোষ করতে চায় না।সেটা স্বাস্থ্যের সাথেই বা কেননা হোক। কিন্তু কেউ কি কোনদিন GDP অথবা অর্থনীতির  সাথে স্বাস্থ্যের একটা ভারসাম্য  খোঁজার চেষ্টা করছে, না শুধুমাত্র লোক দেখানো কিছু নিয়মকানুন করেই ক্ষান্ত। এমনকি সেই নিয়ম কানুন গুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা সেটা দেখার প্রয়োজন বোধ মনে করে না।আমরা একে অপরকে বলি সাফল্যের জন্য কোন Shortcut হয়না, কিন্তু GDPএর জন্য হয়। উন্নত মানুষ ,উন্নত সমাজ,উন্নত দেশ,উন্নত পৃথিবী অবিরাম অবিরত ঘুরে চলেছে, দৌড়ে চলেছে। আমার কবি কাজী নজরুল ইসলামের  একটা লাইনের কথা মনে পড়ে গেল ' ;দেখব এবার  জগৎটাকে কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।'দেখুন এই পৃথিবীর বুকে যত কিছুই অসম্ভব আজ সময় হয়েছে তা আমাদের দ্বারা হয়েছে। অতএব আমাদের মুখে এটা মানায় না যে GDP আর সাস্থ্যের ভারসাম্য টা অসম্ভব। আমি পারি, আপনার পারেন, আমরা পারি। সকলে মিলে যদি চেষ্টা করি এটাও সম্ভব। শুধু এটা করার সময় একটু খেয়াল করবেন অন্য কে করলো, না করলো তাতে আপনার কিছু আসে যায় না। পৃথিবী ও এই পৃথিবীর মানুষ আগেও  অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে থেকেছে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় শিল্প বিপ্লব, সবুজ বিপ্লব ইত্যাদি। এমনও তো হতে পারে যে আপনি এবং আমি ও এই পৃথিবীর বুকে একটি বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে থাকি আর সেই বিপ্লব হল " স্বাস্থ্য বিপ্লব " । 

dr.lcporey@gmail.com
Dr.L Square Multispeaciality Homoeopathic Clinic
www.drlsquare.com
পূর্ব মেদিনীপুর


No comments:

Post a Comment