1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 6, 2021

টিট্টি


ছবি : ইন্টারনেট 

 টিট্টি

দেবব্রত রায় 

অফিসের নাইটগার্ড হলধর মাহাতো তপেশের টেবিলের সামনে এসে একটা কান এঁটো করা হাসি হেসে বললো , " আপনার লেইগে একটো জিনিস আইনছি আইজ্ঞা ! " কথাটা বলেই ওর হাতে ধরা ব্যাগের ভিতর থেকে একটা চন্দনা পাখির বাচ্চা বের করে তপেশের টেবিলের উপর নামিয়ে রাখল । পাখিটার সমস্ত শরীর উজ্জ্বল- সবুজ পালকে ভরে গিয়েছে যদিও সেটা এখনো  ঠিকমতো উড়তে শেখেনি ।টেবিলের উপরেই অনভ্যস্ত পায়ে পাখিটা খচমচ করে হেঁটে বেড়াতে লাগলো । তপেশ পাখিটার দিকে একনজর তাকিয়ে নিয়ে হলধরকে জিগ্যেস করলো , এটা নিয়ে আমি কী করবো ? আইজ্ঞা, শুশুক বাচ্চাটো বাসা থিকে পইড়ে গিয়্যা ইদিকউদিক ঘুরছিলেক। ভাবলম, কুত্তা,বিল্লি-ই ছেড়া-কামড়া করবেক তাই... তারপর, পানের দাগছোপে ভরা দাঁতগুলো মেলে ধরে বললো," আর,তা-বাদে বউদিদি তো বাড়িতে একলাটিই থাকেন। পাখ-ছ্যানাটা কাছে থাকলে তেনারও আর একলাটি মনে হবেক নাই ! " হলধর বিজ্ঞের মতো কথাগুলো বলে তপেশের দিকে বেশ একটা  ভারীভরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।   তপেশ ওর চোখ থেকে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে মাথাটা ফাইলে নামালো।                                                                                                                                   তপেশ আর,মানালী-র তিন বছর হলো বিয়ে হয়েছে কিন্তু,আজপর্যন্ত ওদের কোনো বাচ্চা হয়নি ! গত দেড়-দু-বছর ধরে কলকাতার নামি-দামি গাইনোকোলজিস্ট দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি !  সকলেরই একমত । পলিসিস্টিক ওভারিয়ানের কারণে মানালী কোনোদিনই মা হতে পারবে না ! ডাক্তারদের এইসব অপিনিওনগুলো অবশ্য, তপেশ মানালীকে আজও জানায়নি । ও জানে, মানালী যতটুকু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এসব শুনলে সেটাও আর সম্ভব হবে না ! বেশ কয়েক মাস যাবৎ-ই মানালী ভীষণরকম হাইপার টেনশনে ভুগতে শুরু করেছিল!  হৈচৈ, গাড়ি-ঘোড়া-র আওয়াজ ও একদমই সহ্য করতে পারছিল না,যখনতখন ভীষণ ভায়োলেন্ট হয়ে উঠত !                                                                                                                                                                       শেষমেশ ডাক্তারের পরামর্শেই তপেশ অনেক বেছে এই নির্জন পাহাড়ি-এলাকায় ট্রান্সফার নেয়।                                                                                                                                                                                                    দেখতে দেখতে চন্দনাটা এই ক-মাসে বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে !  গলায় কণ্ঠি-দাগ ধরেছে  !  মানালী ওকে চানা দেয়,কাঁচালঙ্কা খাওয়ায় গোবিন্দনাম শেখায় কিন্তু, পাখিটা আজ পর্যন্ত  কোনো কথাই বলতে শেখেনি  ! মানালী ওকে ডাকে টিট্টি বলে। খাবার সময়টুকু ছাড়া প্রায় সারাদিনই পাখিটা একনাগাড়ে চিলচিৎকার করে আর, ঠোঁট দিয়ে খাঁচার মজবুত শিকগুলো কাটবার আপ্রাণ চেষ্টা করে । চন্দনাটার এই খাঁচা ভাঙার প্রাণান্তকর চেষ্টা দেখে মানালীর খসখসে ঠোঁটে-মুখে একটা নিষ্ঠুর হাসি ছড়িয়ে পড়ে । সেও যেন ভিতরে ভিতরে একটা প্রস্তুতি নেয়। ভাবে, টিট্টি খাঁচাটা ভেঙে উড়ে গেলেই,সেও আর তপেশের সংসারে থাকবে না ! একটা পুরুষত্বহীন মানুষকে ছেড়ে চলে যেতে কোনো পিছুটানই যেন মানালীকে একমুহূর্তও আর তপেশের সংসারে আটকে রাখতে পারবে না !                                                                                                                                                           আজকাল মানালী আরোই রুক্ষ-স্বভাবের হয়ে উঠছে। কারণে- অকারণেই সে তপেশের সঙ্গে ঝগড়া করে। খুব নোংরাভাবে মানালী তপেশকে বারবার  বুঝিয়ে দেয় তার মা হতে না পারার একমাত্র কারণ,তপেশের অক্ষমতা !                                                                                                                                                                        সেদিন তপেশের ছুটি ছিল। সকাল থেকেই মানালী অকারণে তপেশের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দেয়।অনেক বুঝিয়েও মানালীকে শান্ত করতে না পেরে তপেশ শেষমেশ ওর স্কুটারটা নিয়ে বাঘমুন্ডি পাহাড়ের দিকে বেড়িয়ে পড়ে। এই একটা জায়গায় এলেই তপেশ যেন একটু শান্তি পায়। সূর্য ডুবে যাওয়ার অনেক পরে একটু সন্ধ্যে করেই তপেশ বাড়ি ফিরে দেখল গোটা বাড়িটাই  ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে !  তপেশ বারান্দায় উঠে লাইটটা জ্বালিয়ে এদিকওদিক তাকাতেই দেখতে পেলো খাঁচার দরজাটা ভেঙে নীচে পড়ে আছে আর, টিট্টিকেও আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা !                                                                                                                      সে রাত্রে মানালী আর তপেশের মধ্যে একটা ধুন্ধুমার অশান্তি হয়ে গেল ! তপেশের ঠোঁটের ডগায় বারবার কথাটা চলে আসা সত্ত্বেও সে কিছুতেই চরম সত্যটা মানালীর মুখের উপরে বলতে পারলো না !  ভোরবেলা মানালী ওর ট্রলি- ব্যাগটা গুছিয়ে নিয়ে মেনগেট খুলে বড়ো রাস্তায় পা রাখতে না রাখতেই, শুনতে পেল কে যেন বাড়ির ভিতর থেকে অস্পষ্ট স্বরে  মা-মা বলে ডাকছে ! মানালী-র বুকের ভেতরটা হটাৎ-ই, ধড়ফড় করে উঠলো। সে ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে পড়িমরি করে ভেতরে পা রাখতেই দেখলো ভাঙা খাঁচটার উপর ওর টিট্টি ঘুরে বেড়াচ্ছে আর,  একনাগাড়ে "মানালী ! মানালী ! " বলে চিৎকার করেই যাচ্ছে   ! 

hganjerhat92132@gmail.com
বাঁকুড়া 

No comments:

Post a Comment