মগডালে ভ্যালেন্টাইনস ডে
গার্গী চৌধুরী
পুরোনো বাগান বাড়িটার কোণের গাছটার মগডালে তেনাদের বাস।
শাকচুন্নী আর ব্রহ্মদৈত্য।
সন্ধ্যে হব হব,পাখিরা নীরে ফিরে যাচ্ছে…..
ব্রহ্মদৈত্য উদার গলায় গান জুড়েছে .লালা…..লালা
শাকচুন্নী::…এতো পুলক কিসের?
গুণগুণ করছো যে
ব্রহ্মদৈত্য :: হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে!!!
শাকচুন্নী :: ভালোন্…….ভালোন্…..
ব্রহ্মদৈত্য :: ভালোন্ নয়।
ভ্যালেন্টাইনস,আজ হলো প্রেম দিবস।
একজন সাধু ছিলেন।
ভ্যালেন্টাইন যার নাম।
তার নামে এই প্রেম দিবস।
শাকচুন্নী : অঅ…
তা তোমার মনে এত সোহাগ কেন?
ব্রহ্মদৈত্য :নিজের বৌয়ের জন্য প্রেম জেগেছে।
শাকচুন্নী:: মরণ্!!
হাহাহা
ব্রহ্মদৈত্য:
বুঝলে গিন্নী এই দিন কপোত কপোতীরা একে অপরকে কত কিছু গিফ্ট করে, ভালোবেসে।
শাকচুন্নী :(গাল ফুলিয়ে )তুমি কিন্ত বেঁচে থাকতে আমায় কিচ্ছুটি দাওনি।
ব্রহ্ম্দৈত্য :দিয়েছি তবে এই দিনটিতে নয়।
তখন কি ভালোবাসার আলাদা দিন ক্ষণ ছিল?
শাকচুন্নী: সোহাগ দেখানোর আলাদা দিনের কি দরকার?
সোহাগের দেখনদারী হয় নাকি?
ব্রহ্ম্দৈত্য : একটা বিশেষ দিনকে ভালোবাসার মানুষের জন্য আলাদা করে রাখাটা মন্দ নয়।
নতুন প্রজন্ম সব কিছুর জন্যই একটা আলাদা দিন রাখে।
শাকচুন্নী : হ্যাঁ গো, দোকানে দোকানে পান পাতার মতো কি ঝুলছে?
ব্রহ্মদৈত্য :ওটা হলো হৃদয়,প্রেমের প্রতীক।
শাকচুন্নী : হিরিদয়, ওটা কি কাজে লাগে?
ব্রহ্মদৈত্য : ওটা ভালোবাসার মানুষকে উপহার দেয়। মানে আমি তোমায় প্রেম দিলাম। আচ্ছা গিন্নি, ভালোবাসা বলতে তুমি কি বোঝো?
শাকচুন্নী (স্বলজ্জ্বে):: তোমাকে
ব্রহ্মদৈত্য ::তাইই?
আরেকটু বুঝিয়ে বলো।
শাকচুন্নী :বেঁচে থাকতে তোমার শরীরের খেয়াল রাখা,
তোমার মনের মতো খাবার দাবার বানানো..আর এখন
পুকুর থেকে মাছ চুরী করে এনে খাওয়ানো।
ব্রহ্মদৈত্য :হাহা
শাকচুন্নী:আর তোমার কাছে ভালোবাসা মানে…?
ব্রহ্মদৈত্য :: শীতের রাতে তোমার গায়ে সরে যাওয়া কম্বলটা টেনে দেওয়া,শরীর খারাপে তোমার খেয়াল রাখা, তোমার পছন্দের ফুল কিনে আনা।
শাকচুন্নী (অভীমান করে )কিনে এনে তাকে রেখে দিতে।
ব্রহ্ম:: আজকালকার ছেলে মেয়েদের মতো এতো সপ্রতিভ ছিলাম না যে।
শাকচুন্নী :দেখো দেখো,ছেলেটা মেয়েটাকে কেমন গোলাপ দিচ্ছে।
ব্রহ্মদৈত্য : দাঁড়াও তোমাকে একটা গোলাপ দি।
হুউউস্ এই নাও লাল গোলাপ।
শাকচুন্নী :আরে দারুণ, তুমি গোলাপটা তুলে নিলে,থাঙ্কু।
ওই দেখো ছেলে মেয়ে গুলো হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেরাচ্ছে।
আচ্ছা ওই বেলুনআলাটা মুখ শুকনো কেন? ওর হিরিদয় বেলুন কেউ কিনছে না!!
ব্রহ্মদৈত্য :দাঁড়াও,ওর জন্য কিছুকরা যাক।
হুসসসসসস্
শাকচুন্নী :কি দারুণ!!সব ছেলে মেয়েগুলো ওর কাছে চলে এলো।
শাকচুন্নী :গয়নার দোকানের সামনে কি ভিড়।
ব্রহ্মদৈত্য :এই সব দিনগুলো ব্যবসা পত্তর বাড়ানোর একটা উপায়।
তাই জন্য নতুন প্রজন্মকে আলোড়িত করা।
শাকচুন্নী :আচ্ছা এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা কি জানে ভালোবাসার মানে?
ব্রহ্মদৈত্য : হঠাৎ এতো গুরু গম্ভীর কথা?
শাকচুন্নী :এমনি…ওই যে কি সব বলে না….ছেলে মেয়েরা ডেটিং করে।
আজ এর সাথে,কাল ওর সাথে ঘোরে, ভালোবাসা দেয়, তার পর ছাড়াছাড়ি।
ব্রহ্মদৈত্য : দেখো দিনকাল আর আগের মতো নেই।
ছেলে মেয়েরা কার সাথে কে থাকবে সেটা দেখে বুঝে নেওয়ার মধ্যে খারাপ কি আছে?
শাকচুন্নী :হুউউম্, বুঝেসুঝে মন দেওয়া।
প্রেমে আর কেউ পরে না আজকাল,ভেবে চিন্তে প্রেম ঘটায়।
অত ভেবে চিন্তে প্রেম ঘটানো যায়?
ব্রহ্মদৈত্য :না তা যায় না।
তবে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থান হয়।
শাকচুন্নী :আমাদের বাবানই পারলো না
ব্রহ্মদৈত্য : ও সব কথা ছাড়ো…
প্রেম টিকলো না মানে মানুষ দুটো খারাপ,প্রেম বলে কিছু নেই তা তো নয়।
দুটো মানুষ সব সময় এক জেয়গায় থেকে প্রেম বজায় রাখতে পারে না…
এই যেমন তিন্নি আর বাবান এখন কেমন বন্ধু হয়ে পাশে আছে।
শাকচুন্নী : যাক গে…আমাদের দিন শেষ।
ব্রহ্মদৈত্য :এ সব ভেবে মন খারাপ করিস না সুমি।
শাকচুন্নী:হুম….
প্রেম ভালোবাসার জন্য একটা ধৈর্য লাগে, একটা আলাদা কিছু লাগে….
ব্রহ্মদৈত্য : চাওয়া পাওয়ার উর্দ্ধে ওঠার প্রয়োজন পড়ে।
শাকচুন্নী…..আচ্ছা,ওই পার্কের কোণে ওই লোকটা আর মহিলা কি করছে…
ব্রহ্মদৈত্য :চল দেখে আসি।
একটা লোক বেঞ্চে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পরা মহিলার মাথায় হাত বোলাচ্ছে।
“কাঁদিস না,কাঁদিস না, ঈশ্বর সব দেখছেন……একদিন এর বিহিত করবেন।
তুই যেন কাটা জেয়গায় ঔষুধ লাগাস।
মহিলা :রোজ রাতে মদ খেয়ে এতো অত্যাচার করে….
লোক : কি করা যায় ভাবছি।
আমার বাড়িতেও কম অশান্তি নেই….মা মরা বাচ্চা গুলোর কথা ভেবেই বিয়ে করলাম।
এই নে খা।
মহিলা :কি ?
লোক: চকোলেট
আজ হলো ভালোবাসার দিন। আর এই নে পঞ্চাশ টাকা।
মহিলাটি চোখ মেলে চাইতেই পুরুষটি ওর কপালে একটা চুমু দিল।
ব্রহ্মদৈত্য :বুঝলে সুমি…এর নাম ভালোবাসা।
শাকচুন্নী :পরকীয়া!!!
ব্রহ্মদৈত্য: এই মানুষগুলোর বেঁচে থাকার অক্সিজেন!!
ওরা দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো…..
ব্রহ্মদৈত্য তার প্রিয় গানটা
গুন্ গুন্ করে গাইতেই শাকচুন্নী গান ধরলো….
“মেরি জান….মুজে জান না কহো মেরি জান……”
পূবের আকাশ ফর্সা হবো হবো….,
পাখির কিচিরমিচির,ধীরে ধীরে ভালোবাসায় ভরা পৃথিবী ছেড়ে শাকচুন্নী ব্রহ্মদৈত্য নিজেদের দুনিয়ায় পারি দিলো।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment