![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
স্কুল জীবন
সন্দীপ পাল
আজ অনেকদিন পর অগ্নি নিজের সেই হাইস্কুলে যাবে , যেখানে সে নিজের
সব থেকে বেশি বয়স অতিবাহিত করেছে , যেখানে তার জীবনের সব থেকে আনন্দের মুহূর্ত
গুলো গাঁথা আছে । সে বাড়ি থেকে বেরোতে
বেরোতে ভাবতে লাগলো , " এখনও কি আছে সেই স্কুল আগের মত ?"
হটাত অগ্নির ফোনটা বেজে ওঠে , ফোনটা রিসিভ করে
অগ্নি । ওপাশ থেকে একটা গলা শোনা যায় , " হেলো , কোথায় তুই ?
আরেহ
তাড়াতাড়ি আয় , আর কতক্ষন ওয়েট করতে হবে ? " এগুলো শুনে
অগ্নির হুস ফেরে । সায়ক ফোন করেছে । আজ ওদের
স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবস , তাই অনেকদিন
ধরেই যাওয়ার প্ল্যান চলছিল শেষমেশ সবাই টাইম বের করে যাচ্ছে ।
অগ্নি বললো , " আরে দাঁড়া চলে এসেছি । "
শেষ পর্যন্ত দেখা হলো সায়ক এর সাথে । অনেকদিন দেখেনি ওরা দুজন
দুজনকে , আসলে
এখন ওরা বড়ো হয়ে গেছে তাই কাজের চাপ আর অনেক দায়িত্ব এসে ঘাড়ে চেপে বসেছে ওদের
। অনেকদিন পর বন্ধুকে দেখে দুজনই খুশি হলো
।
মিনিট দশেক পর ওরা এসে দাঁড়ালো ওদের সেই চিরপরিচিত স্কুল বিল্ডিং
টার গেট এর সামনে । প্রতিষ্ঠা দিবসে স্কুলের ছাত্ররা খুব সুন্দরভাবে গেটটা
সাজিয়েছিল । দুজনই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল । অগ্নি বললো , "কিচ্ছু বদলায়নি
বল ? " সায়ক কিছু বললো না ।
এরপর তারা ভিতরে ঢুকলো ।
ভিতরে ঢুকে দেখল তাদের সব পুরানো বন্ধুরাও এসেছে সেখানে । অনেকদিন পর
সবাইকে দেখে ওদের খুব ভালো লাগছিল ।
কিছুক্ষণ পর স্কুলের ছাত্ররা প্রার্থনা সংগীত এর জন্য লাইন করে
দাঁড়ালো । অগ্নির ওদেরকে দেখে নিজেদের ছেলেবেলার কথা মনে পড়তে লাগলো । সে চোখ
বুজে ছোটো বেলার স্মৃতি গুলোকে হাতড়াতে লাগলো । কিনা করেছে তারা এই স্কুলে ।
বেঞ্চে পেন খেলা , মারপিট, স্যার দের বিভিন্ন নাম দেওয়া, স্কুল পালানো
আরো কত কি ।
চোখ খুলে হটাৎ ওর চোখ গেলো শিক্ষক- শিক্ষিকা দের দিকে । পুরনো স্যার - ম্যাডাম রা সবাই নেই ,
নতুন
কিছু জন এসেছেন বলে মনে হলো । হটাৎ তার মনে পড়লো তাদের একজন অঙ্কের স্যার ছিলেন,
ওনার
কাছে ও কি মারটাই না খেয়েছিল একবার । কিছুইনা প্রেয়ার এর ঘণ্টা পড়ে গেছিলো
কিন্তু আমরা কয়জন তাও মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম বলে । এসব কথা ভাবতেই হেসে ফেলে
অগ্নি ।
এবার অনুষ্ঠান শুরু হলো ।
আমাদের হেডস্যার এখনও আছেন , ওনার এ বক্তিতা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা
হলো । দুজন ছাত্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন ওদের কে দেখে অগ্নির নিজের আর সায়কের
কথা মনে পড়লো । ওরা ও অমন ভাবেই অনেকবার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছে ।
অনুষ্ঠান এগোতে লাগলো ।
গান , আবৃত্তি , বক্তিতা সব চলতে লাগলো ।
এর মধ্যেই দেখা গেলো কিছু ছাত্র যারা নাটক করবে তাদের সাজ । অগ্নি
ভাবলো ওরা যখন নাটক করতো তখনও এমনি সাজত সবাই । আর এই সব এ ওদের আয়ুশ স্যার অনেক
সাহায্য করতেন ।
এবার প্রাক্তন ছাত্র মানে অগ্নি দেরকে স্টেজে ডাকা হলো । সবাই গেলো ।
কিছু বলতে বলা হলো ওদের সবাইকে । সবার কথা শুনে বোঝাগেলো সবাই খুব খুশি এখানে এসে
। আর শুধু অগ্নি নয় বাকি সবারই একটা নস্টালজিয়া ফিলিং আসছে ।
তারপর সব পুরনো আর নতুন শিক্ষক- শিক্ষিকা দের সাথে অগ্নিরা কথা বলতে
লাগলো । অনেক স্যাররা অগ্নিকে চিনতে পারল, তারা বললেন, " বাবা তুই এত বড়
হয়েগেছিস! তোকে সেই ছোটোটি দেখেছিলাম, কিছু হলেই কান্না জুড়ে
দিতিস।" অগ্নির এসব শুনে হাসি
লাগছিল। এরপর ওরা স্যারদের প্রণাম করে
আবার গিয়ে বসল।
অনুষ্ঠানের শেষ হবে টিচারদের নাটক দিয়ে। অগ্নির মনে পড়ল, ওরা এই নাটকটাকে
খুবই পছন্দ করতো।
নাটকটা
কখন যে শেষ হলো অগ্নি বুঝতে পারলো না । সবাই এক সাথে হাততালি দিয়ে উঠলো ।
এবার বাড়ি ফেরার পালা । অগ্নি দেখলো সায়াকেরও মনটা খারাপ হয়ে গেছে
বাড়ি ফিরতে হবে তাই । অগ্নি তাই ওকে খুশি করতে বললো , "পরের বার ও আসবো
, কি
বলিস ?" সায়ক হাসলো । সায়ক বললো , "এই স্কুলের সব
বেঞ্চ , বোর্ড
, ডাস্টার,
ক্লাসরুম,
টিচার,
বন্ধু
সবাইকে খুব মিস করি রে ।" অগ্নি সায়ক কে জড়িয়ে ধরলো , আর বললো ,
"হ্যাঁ
রে আমিও এখানকার প্রত্যেকটা ইঁট, কাঠ , পাথরকে মিস করি ।"
সায়ক বলে , " তুই ঠিক এ বলেছিলি , সত্যিই কিছুই
বদলায়নি , আমরা আবার আসবো । এই স্কুল আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে থাকবে
সারাজীবন। "
No comments:
Post a Comment