1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, April 17, 2022

ছাতা

   ছবি : ইন্টারনেট 

ছাতা 

 দেবানন্দ মুখোপাধ্যায় 


আজ থেকে মনে হয় বৃষ্টি পড়া বন্ধই হয়ে গেল।সকাল থেকেই রোদের হাসিমুখ, গরম গরম ভাব চারদিকে।মানিক দত্তের যেন ধড়ে প্রাণ আসে,তার সঙ্গে শহরের সবারও।ক'দিন ধরে বৃষ্টি আর বৃষ্টি, কাঁহাতক সহ্য করা যায়? কাজ কর্ম সব শিকেয় তোলা,খবরের মতো করে বলতে গেলে সমস্ত জনজীবন স্তব্ধ ছিলো।আজ সবাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।মানিক দত্ত বিশেষ করে।মেয়ের বিয়ের আর আড়াই মাস বাকি,কেনাকাটা,কার্ড ছাপানো সবই বাকি।
আবহাওয়া দপ্তরের খবর আজকাল খুব মিলে যায়,কাল রাতের খবরেই বলেছিল কাল সকাল থেকে বৃষ্টি হবেনা, মিলেই তো গেল।যাক্ এবার বর্ষাতি,ছাতারা একটু বিশ্রাম পাবে,যা ধকল গেল ওদের ওপর দিয়ে,আজকেই শুকিয়ে তুলে রাখতে হবে ভালোভাবে।এই সব ভাবতে ভাবতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বের হন মানিক বাবু।মনে মনে ভাবেন অনেক কাজ বাকি,বিয়ের প্রস্তুতি চাট্টিখানি কথা?মাধুরি তাদের একমাত্র আদরের মেয়ে,তার বিয়ে বলে কথা,কোনো কিছুরই কার্পণ্য করছেন না কেনাকাটার ব্যাপারে।যদিও পাত্রপক্ষের সে রকম দাবিও কিছু নেই। মেয়েকে তিনি সাধ্যমতো পড়াশুনোও করিয়েছেন, বাংলায় এম এ,তার সাথে মিউজিকেও একটা ডিগ্রি আছে।মোট কথা মাধুরির কোনো ইচ্ছাতেই কখনও বাধা দেননি।মেয়েটাও হয়েছে বাপের নেওটা। পাত্র সুবীরও যতটুকু দেখেছেন খুব ভালো ছেলে,ব্যাংকের ম্যানেজার।বাবা,মা'আরেক বোন এই নিয়েই তাদের সংসার। মেয়ের আগামী সুখের দিনগুলোর কথা ভেবে মনের আনন্দে  দু এক কলি গান গুনগুন করে গেয়েই ফেললেন মানিক দত্ত।আবার পরক্ষণেই মাধুরি চলে যাবার পর বাড়িটা শূণ্য হয়ে যাবে সে কথা ভাবতেই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো।কি আর করা যাবে এ তো চিরাচরিত প্রথা।এই সব রকমারি ভাবনার মধ্যে হাবুডুবু খেতে খেতে কখন যে বাজারে পৌঁছে গেলেন তা বুঝতেই পারলেন না।
#
বাজার থেকে ফিরেই দেখেন মা,মেয়ে দুজনেরই মুখ ভার।মায়া বলে " তুমি মোবাইলটা ফেলে গেছিলে?"
"হ্যাঁ,কেনো? তোমাদের মুখ এতো গম্ভীর কেনো?কিছু হয়েছে?কেউ ফোন করেছিলো?" এক অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে মানিকবাবুর।
মায়া বলে" আগে মুখ হাত পা ধুয়ে এসো,চা দিচ্ছি তারপরই না হয় শুনো কথাগুলো"
" আহা বলই না কে ফোন করেছিলো?শুনি কি কথা?হাত পা তো পালাচ্ছেনা!মাধুরির মামা বাড়ির কোনো খবর না কি?"
"না।সুবীরের বাবা, তন্ময় বাবু ফোন করেছিলন।একটা খুব খারাপ খবর আছে,আমাকে কিছুতেই বলতে চাইছিলোনা প্রথমে।তারপর বলেই দিলেন।"
" আহা অত ভনিতা না করে বলেই ফেলো তো" ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে মানিক বাবুর।
" শোনো একটু আগে তন্ময়বাবু ফোন করে বললেন সুবীরের না কি আগে থেকেই মেয়ে পছন্দ করা ছিলো,এতই ভালো ছেলে যে লজ্জায় বলতে পারেনি বাপকে।কাজেই এ বিয়ে হচ্ছে না।আমরা যেনো ওনাকে ক্ষমা করে দিই।"মায়ার গলায় দুঃখ ও শ্লেষ একসাথে ঝরে পড়ে।

মানিক দত্তর মাথায় যেন বজ্রপাত হয়,মাথাটা বনবন করে ঘুরতে থাকে।
প্রকৃতির বর্ষণ তো আটকে এসেছেন এতোদিন বর্ষাতি,ছাতা দিয়ে,কিন্তু মনের মধ্যে যে দুঃখ কষ্টের বর্ষন শুরু হোলো সেটা আটকাবার কোনো ছাতাই তো তার কাছে নেই!
...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment