1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, August 15, 2022

দ্বিতীয় জীবন

ছবি : ইন্টারনেট

দ্বিতীয় জীবন 
ডঃ জনা বন্দ্যোপাধ্যায় 

রাকাকে আজকাল অনেক পুরুষই বলে "তুমি আমার মনের মতো "
ছেচল্লিশ পেরিয়েও রাকার বয়স বোঝা যায়না! তারুণ্যের দীপ্তির সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার ছাপ স্পষ্ট! স্বাধীনভাবে একটি প্যাথোলজি সেন্টার চালায় রাকা, তাই পরিচিত মানুষের অভাব নেই। বেশ কয়েক বছর হল সে স্বামী রূপমের সঙ্গে থাকেনা। তবে ডিভোর্স-এর সিদ্ধান্ত এখনো তারা নেয়নি। এরকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে কোন তাড়া নেই রাকার। শুনেছে রূপম নাকি আবার একটি তরুণী সুন্দরীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। তবে রূপম তাকে সরাসরি জানায়নি।
            রাকার মা বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার বানানো বাড়িতে একাই থাকে রাকা।  একমাত্র মেয়ে হিসাবে বাবার ব্যাংকব্যালেন্স-এর টাকাও পেয়েছে। যদিও দ্বিতীয়বার বিয়ে করার কোন ইচ্ছে রাকার নেই, তবে সম্পর্কের ব্যাপারে রাকা স্বাধীনচেতা। প্যাথোলজি সেন্টারের  ডাক্তার রায় ও কলেজের ব্যাচমেট ব্যাচেলর সোমদেবের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে রাকার কোন সমস্যা নেই। এছাড়া  আরো অনেক পুরুষই রাকার স্তাবকের দলে পড়ে।
        কম বয়সে রূপমের কবিতা রাকাকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু বিয়ের পর রূপমের অলস স্বভাব,অকারণ মিথ্যে বলা ইত্যাদি দোষগুলো রাকার কাছে ধীরে ধীরে অসহ্য হয়ে ওঠে।
যাকে ভালোবেসে নিজের মনের মতো ভেবেছিল, সেই মোহ ভেঙে যাবার পর নিজেকে  আর বৈধ অবৈধর সীমারেখায় বেঁধে রাখেনি রাকা। কোনদিন যদি ডাক্তার রায় বা কলেজের ব্যাচমেট সোমদেবের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে যায়, তবু মন আর ভাঙবেনা! রাকা জানে একটা ভাঙা পাড় আর ভাঙতে পারেনা!
           বর্ষার বাঁধ ভাঙা বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে হঠাৎ-ই একদিন ব্রেক হারিয়ে রাকার গাড়ির সঙ্গে লাইট পোস্টের ধাক্কা লাগে।হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর তিন চারটে দিন থাকতে হয় তাকে। সৌভাগ্যবশত: গুরুতর জখম হয়নি, তবে মাথায় হাতে দু তিনটে স্টিচ পড়েছে।রূপম এসেছিল দেখা করতে। নিজের বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিল। রাকা যায়নি। রাকার পাশের বেডে পাঁচ বছরের একটি অনাথ মেয়ে ভর্তি ছিল। অনাথ আশ্রমের লোকেরা দুবেলা আসতো। রাকা জানতে পারে মেয়েটির একটি কিডনি নষ্ট। বাচ্চা মেয়েটির সরল অনাবিল মুখের দিকে তাকিয়ে রাকার বড় মায়া হয়। মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে  রাকা রূপমকে ডিভোর্স-এর কথা বলে।
রূপম বলে,
"হঠাৎ ডিভোর্স কেন বলছো? তুমিই তো বলেছিলে আমাদের ডিভোর্স-এর আগে সময় নেওয়া দরকার!"
রাকা রূপমের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট ভাবে বলে, " আমি সিঙ্গল মাদার হতে চাই। এটা আমার অনড় সিদ্ধান্ত! আমায় আর কিছু বোঝাতে এসোনা। "
           রূপমের সঙ্গে ডিভোর্স-এর পর অনাথ মেয়েটিকে দত্তক নিয়ে রাকা তার কাঙ্খিত দ্বিতীয় জীবনে প্রবেশ করে!
...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment