1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

রোজনামচায় ভ্যালেন্টাইনস ডে

ছবি : ইন্টারনেট 

রোজনামচায় ভ্যালেন্টাইনস ডে

গার্গী চৌধুরী 

তীর্থবাবু অফিস থেকে তাড়াতাড়ি এসেছেন আজ ,চন্দ্রাকে নিয়ে বেড়োবেন।

চন্দ্রাদেবী  তাড়াতাড়ি চায়ের জল বসাতেই বললেন ”চল বাইরে যাই।

কতদিন বাইরে বেরোনো হয়নি। তৈরী হয়ে নাও “

চন্দ্রা দেবী জানেন আজ ভ্যালেন্টাইনস দিবস।

মেয়ে সকালে ব্যাঙ্গালোর থেকে ফোন করেছিল।

ষাট ছুঁই ছুঁই  দম্পতি বেরিয়ে ঠিক করলেন পায়ে হেঁটে কাছেই  CCD তে কফি খেতে যাবেন।

হঠাৎ চন্দ্রা দেবী কঁকিয়ে উঠলেন “আআআআ”

তীর্থ বাবু শক্ত করে চন্দ্রাদেবীর হাতটা ধরে “কি হল?”

“পরে গেছি।পা মচকে গেছে সব তোমার জন্য।“

“আমি কি করলাম?”

“শক্ত করে অমন হাতটা ধরলে “

“ওওও

হাত ধরলেও বিপদ।

বলছো না কেন বুড়ো হয়েছো।

শক্ত টান সহ্য হয় না।“

“খবরদার বুড়ো বলবে না।বুড়ো হলে এতো কিছু করতে পারতাম।“

“তাহলে বেসামাল হলে কেন?”

“পায়ে ব্যাথা।“

“ওষুধ খাচ্ছো তো  ঠিক করে?”

চন্দ্রার হাত তখনো তীর্থ বাবুর মুঠোয়

“আআআ”

তীর্থবাবু চমকে উঠে কি হলো

“চশমার একটা কাঁচ খুলে গেল “

তীর্থ বাবু কাঁচটা তুলে পকেটে রাখতে রাখতে “চোখ বন্ধ করে আমার হাত ধরে চল”

চন্দ্রা ভয়ার্থ কন্ঠে”চোখ বন্ধ করে?”

“কেন ভরসা নেই “?

“না মানে”

চন্দ্রা দেবী এক চোখ বন্ধ করে আরেকটা  খুলে চললেন তীর্থ বাবুর হাত ধরে।

সিসিডি তে পৌঁছে চন্দ্রা দেবী কপোত কপোতীদের জোড়ে দেখে একটু যেন উদাস হয়ে গেলেন।

কতো যুগ হয়ে গেল এরকম ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে মুখোমুখি  বসাই হয়নি।

কফিতে চুমুক দিতে দিতে পুরোনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চমকে উঠলেন।

তীর্থ আইসক্রিমসেক খাবেন বলে যেই  বলতে যাবেন অমনি চন্দ্রা দেবী চোখ পাকিয়ে “মনে নেই,গত এক সপ্তাহ ধরে হুপিং কাশি কাঁশছো।

সারা রাত ঘুমোতে পারি না 

কি বেআক্কেলে গো।

আইসক্রিমসেক অর্ডার দিচ্ছো “

“কেন একটা আইসক্রিমষেক থেকে দুজনে ভাগাভাগি করে 

খাবো ভাবলাম ।“

“উউ শখ দেখো না।তার পর হেপো রুগীকে সামলাবে কে শুনি”

“বাজে কথা বলবে না। বেতো রুগী হলে তুমি।

“পায়ে ব্যাথা বলে খোঁড়াও তুমি,আমি না “

“হ্যাঁ সে তো বয়স কালে কিছু অসুবিধা থাকেই।

কিন্তু সামলে থাকতেও হয়।

চুপ করে কফি খাও “ 

অগত্যা কি আর করা যাবে।

কফি শেষ করে দুজনে বেরিয়ে পড়লেন।

এক সাথে হাঁটার আনন্দ উপভোগের যথার্থ দিন ভ্যালেন্টাইনস ডে।

ওই যে প্রেমে বিভোর কপোত কপোতীদের দেখে চোখ জুড়িয়ে নেবার দিন আজ।

এই সব ভাবতে যেই না দু পা এগোনো চন্দ্রা দেবী ষোড়শীতুল্য উত্তেজনায়

বলে উঠলেন “ফুচকা ফুচকা ফুচকা খাব।“

তীর্থ বাবু ওর হাতটা শক্ত করে চেপে রেখে “খবরদার না, কালকেই antacid খেয়েছো।

একদম খাবে না।

এই সব খেয়ে পেট ব্যাথা হবে আর আমায় শুনতে হবে ওনার কান্না।“

“ উফফফ,আমি ছাড়া কি 

এই জগতে আর কেউ ছিল না, আমাকেই সাত পাকে বাঁধতে হল।“

এই ডায়লগ বত্রিশ  বছর রোজ দুবার করে শুনে শুনে তীর্থ বাবুর কান পচে গেছে।

প্রথম প্রথম বুকের ভেতর টন টন করতো।

কিন্তু এখন জানেন গায়ে সরে যাওয়া লেপ টেনে দিতে দিতে চন্দ্রা এই ডায়লগ দেয়।তীর্থ বাবু

“খবরদার ফুচকা খাবে না বলছি” 

“তুমি বললেই আমাকে শুনতে হবে।“

তার পর একটু মুচকি হেসে মোলায়েম গলায় চন্দ্রা দেবী “খাও না গো,এক বাটিতে ভাগাভাগি করে খাবো ছোটো বেলার মতো “

তীর্থ কানের ভেতরে ছোটবেলা কথাটা করকর করছে।

বিয়ে হল আঠাশে।

মাঝে মাঝে সন্ধ্যেবেলা ফুচকা খাওয়া হতো ঠিকই  তবে সেটা ছোটবেলা নয়।

তবে বয়স নিয়ে বেশী কথা বলে আবার আগুনে ঘী দেওয়ার সাহস নেই।

তীর্থ বাবুর বেআক্কেলে কথা বলে মাঝে মাঝে নোনা জলে ঘর ভাসানো স্বভাব আছে বৈকি তবে বয়সের সাথে সাথে সামলে নিয়েছেন।

তবু মানুষের মন তো “কোন ছোটো বেলা?আঠাশ বছর বয়স আবার ছোট বেলা?”

“একদম তক্কো করবে না।

আঠাশ কেন আমি এখনো young তোমার মতো কেশো,হেপো 

রূগী নই।“

“শীত পড়লেই বেতো রুগীদের মতো বিছানা নেবার স্বভাব তোমার।“

কর্তাগিন্নীর ঝগড়াটা ফুচকাআলা গরম তেলে ভেসে বেড়ানো ছানার বড়ার মতো চোখ নিয়ে গিলছিল।

তাড়াতাড়ি দুটো শালপাতার  বাটি ধরাতে যাবে অমনি তীর্থবাবু একটা বাটি চন্দ্রার হাতে ধরিয়ে বলল “ছয়টার বেশী নয় “চন্দ্রা  দেবী মুখ ব্যাজার করে “এর থেকে তোমায় ভাগ দেব তো “

এর পর যতোবার তীর্থ বাবু ওনার বাটি থেকে ফুচকা খেতে যাবেন অমনি চন্দ্রা দেবী ফুচকা গুলো খপাত করে মুখে পুরে যাচ্ছেন।

কালে ভদ্রে একটু ফুছকার ভাঙ্গা টুকরো পাচ্ছেন বটে তীর্থ বাবু।

অগত্যা পাওয়ার আশা ছেড়ে নিজের বাটিটা তীর্থ বাবু যেই এগোতে যাবেন  চন্দ্রা দেবী হাত চেপে ধরলেন।

“দুদিন ধরে তোমার পেট খারাপ সে কথা মনে আছে?”

“তুমিতো কিছুই দিলেনা।“

“আমার ফাওটা ওকে দিয়ে দাও’

“Acidity র সমস্যা তোমার।তাও কুড়িটা ফুচকা তুমি খেলে আর কবে গত সপ্তাহ পেট খারাপ হলো তাই পেট খারাপের জন্য আমায় শুধু ফাও ফুচকা।

এটাকি ঠিক হলো “

পয়সা মিটিয়ে আবার বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন দুজনে।

চন্দ্রার পায়ে মোচ লাগার ব্যাথাটা মনে পড়ে গেছে।

তাই তীর্থ বাবুর হাতটা ধরে রেখেছেন।চোখেও একটা কাঁচের চশমা।চোখটা আধবোজা।

তীর্থ বাবু জ্ঞান দিতে ব্যাস্ত “আজ ওষুধ খেতে ভুলোনা যেন। আচ্ছা আমি দিয়ে দোবো নইলে আবার সেই বুক জ্বালা অম্বল শুরু হবে।

ষাটের কাছাকাছি দুই নরনারীর ভ্যালেন্টাইনস ডে 

এই ভাবেই রোজনামচার তক্কো যত্নেই কেটে গেল।গোলাপ চকোলেট কিছুই নেই তবু ওরা রোজ এই ভাবেই ভালোবেসে চলে।

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment