জানালা বান্ধবী
চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়
চোখের সামনেই দেখলাম, নতুন বউ থেকে মধ্যবয়সী, স্থুলাঙ্গিনি রমণী হওয়ার দীর্ঘ পথের যাত্রাটা।
এখন সে রোজ সকালে উঠে ঠাকুরের বাসি ফুল পরিষ্কার করে। পুজো করে। আগে কখনো দেখিনি তার এমন রূপ। সে আমার প্রতিদিনের জানালা সঙ্গিনী। রোজ আমি তাকে দেখি সেও আমাকে। মাঝখানে শুধু মুচকি হাসির ব্যবধান।
সে অনেক বছর আগের কথা।
তখন সে সদ্য মা নামের তকমা নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ি আসার পর এমনিতেই বউ আর বৌমা এই দুই, এক আলম্বকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে। তাদের আলাদা আলাদা দায়িত্ব। এবার সে মা। তার দায়িত্ব বুঝি কোনো মাকেই বুঝিয়ে দিতে হয় না।
ছেলেকে নিয়ে ছাদে স্নান করানো, তাকে নিয়ে কত খুনসুটি, খেলা, আর যতরকম সংসারের কাজ থাকে তার ফাঁকের বিরতিটুকুও ছেলের জন্য রাখে।
আমি দেখি তাকে...
সে, তার ছেলে, তার অবিন্যস্ত চুল, এলোমেলো পোশাক আর গর্বিত সুখ।
সে আমার জানালা বান্ধবী।
যে জানালা দিয়ে আমি তাকে দেখি, সে জানালায় একটা আয়না ঝোলান আছে।
নিজেকে দেখি আয়না দিয়ে আর দেখি জানালা বান্ধবীকে।
সন্তানের সাথে সাথে সেও বেড়ে ওঠে।
তার ছেলে এখন কলেজে...
বার্ধক্য দরজার কাছে দাঁড়িয়ে, ছোঁয়ার অবকাশ পায়নি।
আর আমি এখনও সেই জানালা আর সেই আয়নার মুখচ্ছবিতেই আটকে আছি।
আমার যৌবন আমার বার্ধক্য এক আয়নাতেই বন্দি হয়ে থাকে। কখন যেন সব পার করে আসি আমার জানালা বান্ধবীর জন্য।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment