1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 21, 2025

রি-ইউনিয়ন

ছবি : ইন্টারনেট

রি-ইউনিয়ন

সুমন সেন

অবশেষে বিয়েটা সেরেই ফেললাম। দীর্ঘ ৭ বছরের প্রেমের পর সত্যি হল আমার আর পায়েলের স্বপ্নটা। আজ রিসেপশন পার্টি। আমার স্কুল, কলেজ, অফিস, আর এলাকার এমন কোনো বন্ধু নেই যে এই পার্টিতে আমন্ত্রিত নেই। পায়েলেরও তাই। আর সবথেকে খুশির কথা হল -আমন্ত্রিত সকলেই প্রায় উপস্থিত হয়েছে আমাদের এই আনন্দ আসরে।

আজ একেকজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছি, আর কেমন যেন নস্টালজিক হয়ে পড়ছি। প্রতিটা মুখের সাথে কোনো না কোনো ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তবে বেশ কয়েকজন শারীরিকভাবে এতটাই পরিবর্তিত হয়েছে যে তাদের চিনতে আমার বেশ ভালোই বেগ পেতে হচ্ছে!

তবে এদের মধ্যে কয়েকজনের মুখ দেখে আমার এতই খারাপ অবস্থা – কী আর বলি! আমার ভিতরের আমি-টার যেন হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে। কেন জানি না আজ ওদের মুখ দেখে আমার সেই পুরোনো সময়ের হাস্যকর দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে!

ওই যে... যেমন ওই ছেলেটা -মাথায় কোঁকড়ানো চুল, কপালে চৌকো মত কাটা দাগ; ওর নাম রতন পোদ্দার, আমার হাই স্কুলের বন্ধু। সেদিন আমাদের কমিউনিকেটিভ ইংলিশ-এর ক্লাস হচ্ছে। সুব্রত স্যার ওকে দাঁড়াতে বললেন, এবং জিজ্ঞেস করলেন, “বলতো রতন, ‘ইন্দিরা গান্ধী বন থেকে হেগে এলেন’ –এর ইংরেজি কী হবে?”

রতনের উত্তর, “ছিঃ ছিঃ স্যার, আমি এইসব অসভ্য কথা বলতে পারব না।”

শুনে পুরো ক্লাস তো একচোট হো হো করে হেসে নিল। আর অন্যদিকে সুব্রত স্যারের চোখ বড় বড় হয়ে ভাটার মত জ্বলতে শুরু করল। তিনি দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে তিনি দৌড়ে এলেন রতনের দিকে। তারপর, “অসভ্য ছেলে, বলে কিনা এটা অসভ্য কথা!” –বলেই গদাম গদাম করে ৮-১০ টা কিল্‌ চালিয়ে দিলেন সুব্রতর পিঠে।

তারপর একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন অরিজিতকে। অরিজিৎ আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয়, ওর কাছে সব সঠিক উত্তর পাওয়া যায়। অরজিৎ বলল, “ইন্দিরা গান্ধী হ্যাজ কেম টু হেগ ফ্রম বন।”

সুব্রত স্যার উৎফুল্ল হয়ে বললেন, “কারেক্ট! এখানে ‘বন’ আর ‘হেগ’ বলতে জায়গা বোঝানো হয়েছে। ‘হেগহচ্ছে নেদারল্যান্ডের একটা শহর, এবং ‘বন’ হচ্ছে তৎকালীন জার্মানীর রাজধানীর নাম।” তারপর রতনের দিকে ঘুরে বললেন, “ইডিয়ট একটা!”

আমরা রতনের দিকে ঘুরে দেখি – সে বড় বড় চোখ করে, মুখ হা করে, মাথা চুলকিয়ে যাচ্ছে! সুব্রত স্যারের ৮-১০ টা কিল্‌ দিব্যি হজম করে নিল ব্যাটা!

তারপর ওই যে ছেলেটা দেখছেন – সজারুর কাঁটার মত খোঁচা খোঁচা চুল, বেশ নাদুস-নুদুস দেখতে; ওর নাম অরূপ কোলে। ওকে দেখেই আমার একটা দিন মনে পড়ে যাচ্ছে। আমরা তখন পলিটেকনিক কলেজে পড়ি। রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনস্ত কলেজ। সেদিন আমাদের ‘ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্স’-এর  ক্লাস হচ্ছে। ওই ক্লাসের দায়িত্বে থাকতেন এস.কে.সি স্যার। উনি প্রতিদিন পড়া দিয়ে যান, এবং পরের দিন এসে পড়া ধরেন। কেউ ঠিকঠাক পড়া না দিতে পারলেই বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে দিতেন। সেদিন পালা এল অরূপের। অরূপ এমনিতে পড়াশোনা করেই আসে। তবে তার আগের দিন সে স্কুলে উপস্থিত না থাকায় হোমওয়ার্ক করে আসতে পারেনি। স্যার ওকে ডেকে বললেন, “অরূপ, তুমি বলোতো – ‘টর্ক’ কাকে বলে?”

অরূপ সোজাসাপটা বলেই দিতে পারত যে – সে আগের দিন আসেনি, তাই পড়া হয়নি। তা না করে সে ঘুরিয়ে স্যারকে প্রশ্ন করল, “কী স্যার? ‘টম’?”

পুরো ক্লাসঘরে সেই মূহুর্তে পিন ড্রপ সাইলেন্স। আমি জানিনা সে এই শব্দটা কোত্থেকে আবিষ্কার করেছিল! কারণ, ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্স-এর সাথে এই শব্দের দূর-দূরান্তেও কোনো সম্পর্ক নেই।

মিনিট দুই চুপচাপ থাকার পর এস.কে.সি. স্যার অঙ্গুলি নির্দেশ করে তাকে বেঞ্চের উপর দাঁড়াতে বললেন। আমি দেখলাম স্যারের কপালের শিরাগুলো মোটা মোটা হয়ে ফুলে উঠেছে। কেন জানিনা আমার মনে হল – স্যারের হাসি চাপতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে!

এস.কে.সি. স্যারের কথা বলতে, আর আজকের পার্টিতে সুজিতের মুখটা চোখে পড়তেই - আরও একটা ব্যাপার মনে পড়ে গেল। সে’বারও কোনো এক ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্স-এর ক্লাস চলছে, স্যার সোজা সুজিতের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “বলোতো ‘লাক্স’ কী?”

সুজিত পোল্লে, ব্যাটা কোনোদিনও পড়াশোনা করে আসে না। স্যারের প্রশ্ন শুনে প্রাথমিকভাবে গেল ঘাবড়ে। স্যার আবার জিজ্ঞেস করলেন, “লাক্স, ফট্‌ - এসব আছে না? সেই ‘লাক্স’ কী?”

সুজিত ব্যাটা এইবার মন খুলে, সাহসে ভর করে বলেই ফেলল, “ওহ্‌ স্যার... লাক্স? লাক্স তো একটা সাবান। খুব ভালো সাবান স্যার। শরীরের ময়লা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার হয়। টি.ভি.-তে তো প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই বিজ্ঞাপন দেয় লাক্স-এর, শাহ্‌রুখ খান আর করীনা কাপুর অভিনয় করে। কিন্তু স্যার, আমাদের বাড়িতে লাক্স সবান এনে রাখলেই ইঁদুরে নিয়ে পালিয়ে যায়, তাই বাবা ইদানিং ওই সাবান বন্ধ করে ‘নীম’ সাবান আনা শুরু করেছে।”

ব্যাটার উত্তর শুনে সারা ক্লাস জুড়ে হো হো হাসির রব। পুরো দশ মিনিট চলল সেই হাসি। তারপর এস.কে.সি. স্যার সুজিতের কানটা ধরে বললেন, “অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবার জন্য। এবার কৃপা করে উপরে দণ্ডায়মান হোন।”

তারপর, ওই ছেলেটাকে দেখতে পাচ্ছেন – গায়ের রঙ দুধ-সাদা, যে ভর সন্ধ্যেবেলাও চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে আছে, এবং আসার পর থেকেই মেয়েদের পিছন পিছন ঘুরে যাচ্ছে... ওর নাম সুশোভন দেবনাথ। ওর ব্যাপারে একটা গল্প বলি। আমাদের পলিটেকনিক কলেজ রামকৃষ্ণ মিশনের অন্তর্গত হওয়ার কারণে সেখানে সকল ছাত্রদের কড়া নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হত। সবসময় কলেজ ড্রেস পরে আসতে হবে, সেখানে অনুষ্ঠিত যেকোনো অনুষ্ঠানে ফরমাল ড্রেস পরতে হবে - ক্যাসুয়াল ড্রেস নট অ্যালাউড, অস্বাভাবিক রকমের চুলের স্টাইল করা যাবে না, ফুল স্লীভ জামা পরে আসলে গুটিয়ে সেটা হাফ স্লীভ করে নেওয়া যাবে না - হয় হাফ স্লীভ পরো নয়তো ফুল স্লীভ কবজি পর্যন্ত বোতাম লাগিয়ে পরো, সময়ের প্রতি খুব পাঙ্কচুয়াল থাকতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি... এরকম একটা জায়গায় সুশোভনের সাথে ঘটল সেই ব্যাপারটা। সেদিন শৈবাল মহারাজের ক্লাস চলছিল। শৈবাল মহারাজ অঙ্কের শিক্ষক। জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশী। অঙ্কের উপর তাঁর দুর্দান্ত দখল। তিনি প্রচন্ড কড়া শিক্ষক হিসেবেই আমাদের সকলের মধ্যেই পরিচিত। হঠাৎ ক্লাস চলতে চলতে তাঁর চোখ পড়ল সুশোভনের উপর। চোখ জোড়া স্বাভাবিকের থেকে অনেক ছোটো করে তিনি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলেন সুশোভনের দিকে। ব্যাপার বুঝতে না পেরে সুশোভন মাথা নীচু করে নেয়। কিন্তু মহারাজ এক খামচে তার চুলের মুঠি ধরে মুখটা উপরে তোলেন, এবং নজরে আনেন সুশোভনের থুতনির নীচে সদ্য গজানো লম্বা রাম-ছাগলের মত দাড়ি। তারপর সেই দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করেন, “এটা কী বাবা?”

বেচারা সুশোভন কী বলবে বুঝতে না পেরে “মহারাজ... মহারাজ...” করতে থাকে। মহারাজ ওর ডান হাতটা বেঁকিয়ে পিছমোড়া করে ধরে, পাশ থেকে চঞ্চলকে ডেকে বলেন, “পকেট থেকে ওর মানি ব্যাগটা বের কর তো...”

চঞ্চল সেটা করলে আরও বলেন, “একশো টাকার নোট্‌টা নিয়ে সামনের দোকান থেকে রেজর, শেভিং ক্রীম আর ব্রাশ নিয়ে আয়।”

কথামতো জিনিসগুলো চঞ্চল নিয়ে আসার পর মহারাজ নিজের হাতে সুশোভনের ছাগল দাড়ি সাফ করে দেন।

সেই পিরিয়ডটা শেষ হওয়ামাত্র সুশোভনের সেকি হাউ-মাউ করে কান্না! ওটা নাকি তার প্রথম গজানো দাড়ি ছিল, সে ভেবেছিল একেবারে কলেজ পাশ করেই দাড়িটা কাটবে।

আরেকটা গল্প বলি, সেটা ওই রোগা মত কুতকুতে চোখ ওয়ালা ছেলেটার ব্যাপারে। ওর নাম আকাশ সর্দার। ঘটনাটা আরও একজনকে নিয়ে, তিনি হলেন আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং-এর টীচার এম.কে.পি স্যার। ভদ্রলোক অসামান্য মেধার অধিকারী। দারুণ ড্রাফ্টস্‌ম্যান। তবে ওঁর মাথায় একটু ছিট্‌ ছিল। ব্ল্যাকবোর্ডে চক্‌ দিয়ে একটা সোজা দাগ টেনে – সেটাকে একবার বাঁ দিক থেকে, একবার ডান দিক থেকে, একবার উপর থেকে, একবার নীচে থেকে, আর একবার সামনে থেকে দেখতেন দাগটা ঠিকঠাক সোজা হল কিনা! সেদিনও এম.কে.পি স্যার যথারীতি বোর্ডে একটা সরলরেখা এঁকে পাঁচদিক থেকেই দেখে নিলেন। তারপর ছাত্রদের দিকে ঘুরে কিছু একটা বলতে যাবেন, এমন সময় আকাশ হাত তুলল।

“বলো।” –স্যার বললেন।

“স্যার, আমার মনে হচ্ছে সরলরেখাটা ডানদিক থেকে একটু বেঁকে রয়েছে।” –আকাশ বলল।

আকাশের মন্তব্য শুনে স্যার একটু ঘাবরে গিয়ে, আবার ভালো করে দেখলেন সরলরেখাটা। তারপর হঠাৎ পিছনে ঘুরলেন তিনি। কোমরে হাত, চোয়াল শক্ত এবং চোখ ছোট করে – জ্বলন্ত দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলেন সোজা আকাশের দিকে। মুখে বললেন, “প্রমাণ করো। সাথে তোমার ‘টি-স্কোয়ার’টাও নিয়ে এসো।”

ব্যাস্‌, আকাশতো তখন মহা-ফাঁপড়ে! স্যার বুঝে গিয়েছেন তার সাথে ফাজলামো হচ্ছে। আর নিস্তার নেই। সে ঠক্‌ঠক্‌ করে কাঁপতে কাঁপতে ‘টি-স্কোয়ার’ নিয়ে এগিয়ে গেল ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে। বোর্ডে ‘টি-স্কোয়ার’ সেট করে দেখা হল – শুধু ডানদিক কেন, সরলরেখা কোনোদিকেই বেঁকে নেই, একেবারে পারফেক্ট স্ট্রেইট লাইন!

“ফাজলামি?” –এটুকু বলে স্যার আকাশের হাত থেকে ‘টি-স্কোয়ার’টা কেড়ে নিয়ে ঝপাং ঝপাং করে চালিয়ে দিলেন পিঠে। প্রহার ততক্ষণ চলতে থাকল যতক্ষণ না ‘টি-স্কোয়ার’ চৌচিড় হয়ে গোটা ক্লাসরুমে তার দেহ ছড়িয়ে দেয়।

আরেকবার একটা ব্যাপার ঘটেছিল ওই ছেলেটাকে নিয়ে, ওই যে দেখছেন প্রায় সাত ফুট লম্বা চেহারার ছেলেটা, অথচ উচ্চতা অনুযায়ী শরীরে মাংসের প্রবল ঘাটতি – ওর নাম দেবাশিষ মাজি। পড়াশোনায় খুব একটা খারাপ ছিল না দেবাশিষ, তবে আমাদের কেমিস্ট্রি স্যার এস.এস. বাবুর ক্লাস একদম পছন্দ করত না। আসলে এস.এস. বাবুর ক্লাস আমরা কেউই তেমন একটা পছন্দ করতাম না। ক্লাসে এসে, চেয়ারে বসেই উনি বইটা খুলে শুধু রীডিং পড়ে যেতেন, তাও আবার এতই আস্তে আস্তে পড়তেন যে – কেউ সামনে গিয়ে ওঁর মুখের গোড়ায় কান না ধরলে কী বলছেন কিছুই বোঝা যায় না।

সেদিন ওভাবেই ক্লাস চলছিল। হঠাৎ স্যার পড়া থামিয়ে তাকালেন সেকেন্ড বেঞ্চের দিকে। দেবাশিষ আর দুজন বন্ধু মিলে কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে নিজেদের মধ্যে ফিস্‌ফিস্‌ করে কিছু কথা বলছিল, আর হাসাহাসি করছিল। স্যার বই বন্ধ করে আস্তে আস্তে এসে দাঁড়ালেন সেকেন্ড বেঞ্চের সামনে। দেবাশিষ ব্যাটার এতই সাহস – স্যার এসে ওর পাশে দাঁড়িয়েছেন, ওর হুঁশই নেই, বেমালুম নিজেদের গল্পে মত্ত হয়ে আছে। সম্বিৎ ফিরে যখন বুঝতে পারল বিপদ ঘটেছে – তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। স্যার তিনজনের চুলের মুঠি ধরে এমন ঘোরপাক খাওয়ালেন – যেন ত্রিভূবন দর্শন হয়ে গেল তাদের।

তারপরই ছাড়লেন সেই কালখ্যাত উক্তি, “তোমরা বোম বাঁধতে পারো না? মা-বাবার টাকা-পয়সা ধ্বংস করে পড়াশোনা করতে এসেছ কেন?”

দেবাশিষ এখন ‘ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টার’-এ কর্মরত। সেইদিন যদি সে এস.এস. স্যারের পরামর্শটা গুরুত্ব সহকারে নিত, তাহলে কী যে হত – ভাবলে আমার আজও হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়!

তারপর... ওই যে ওই ছেলেটা, চৌকো ফ্রেমের চশমা পরা, চক্‌চকে চুল পিছনের দিকে টেনে ব্যাক-ব্রাশ করা – ওর নাম সুমিতাভ রায়। আমার সবথেকে কাছের বন্ধু। আমরা থাকিও এক পাড়াতে; স্কুল, কলেজ, প্রাইভেট টিউশন – সব পড়েছিও একই সাথে। বন্ধুর থেকেও বেশি বলতে পারেন আমরা দুজন ছিলাম ‘পার্টনার্স ইন ক্রাইম’। কত যে ভালো কাজ, খারাপ কাজ, ভয়ানক কাজ আমরা একসাথে করেছি – তার কোনো ইয়ত্তা নেই! রিষড়াবাসী হবার সুবাদে সেই সময়ে কলেজে আমাদের এইচ.ও.টি-র কাছে আমরা খুব পরিচিত মুখ ছিলাম। অসময়ে তাঁর অফিসঘরে গেলেই তিনি বুঝে যেতেন, আর বলতেন, “আজকেও রিষড়াতে ট্রেন বন্ধ? ঠিক আছে তোমরা ছুটি নিয়ে চলে যাও।”

আমরাও সেই সুযোগে বাড়ি চলে আসতাম, বা সিনেমা দেখতে চলে যেতাম। ছুটি নিয়ে চলে এলেও, বেশিরভাগ দিনই এমন হত যে - আসলে কোনো ট্রেন ধর্মঘটই হয় নি! আপনারা হয়তো আমাদের প্রতারক ভাবছেন, কিন্তু বিশ্বাস করুন দোষটা আসলে আমাদের না। আসল দোষটা ছিল রিষড়াবাসী আমাদের সিনিয়র দাদাদের। তারা অনেক আগের থেকেই এইচ.ও.টি-র মাথায় ভরে দিয়েছিল যে – রিষড়ায় নাকি খুব ঘন ঘন ট্রেন অবরোধ বা ধর্মঘট হয়, আসলেও কিন্তু তেমনটা নয়।

সুমিতাভ-র সাথে আমার একটা খুব ভালো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। সে’বার সরস্বতী পূজায়  আমার আর সুমিতাভ-র উপর দায়িত্ব পড়ল কলেজের বাইরের ডেকরেশন করার। থার্মোকল, সোয়েড পেপার, আর বাঁশের চটা দিয়ে বানানো হবে গেট। থার্মোকল ডিজাইন করে কেটে সাজাতে হবে সেই গেট। তাছাড়াও ফুল ও টব দিয়ে পুরো কলেজ সাজানো, আল্পনা দেওয়া, চারিদিক ঝাড়পোছ করা, প্রভৃতি অনেক কাজ করতে হবে। সাথে পেয়েছিলাম আমাদের আরও দুই বন্ধু – ধৃতিমান আর প্রীতমকে। চারজন মিলে শুরু করলাম কাজ। কলেজ-টাইমেই চলত আমাদের কাজ। বাকিরা যখন পড়াশোনায় মত্ত এবং একেকজন টীচারের ঝাড় খেতে ব্যস্ত, তখন আমরা মনের সুখে সৃজনশীল কাজ করে চলেছি। তিনদিন ধরে চলল আমাদের কাজ। চারদিনের দিন সরস্বতী পূজা। তাই তিন নম্বর দিন কাজ করতে করতে রাত আটটা বেজে গিয়েছিল। সুপারিন্টেন্ডেন্ট মহারাজ আমাদের কারুকার্য দেখে খুবই খুশি। কাজ শেষ হতে এত দেরী হয়ে গেছে দেখে মহারাজ নিজেই আমাদের টিফিন করানোর জন্য নিজের কেবিনে নিয়ে গেলেন। সেখানে নিজের হাতে চা করে খাওয়ালেন, সাথে মোটা মোটা কুকীজ্‌। আমরা চারজনই সেই রাতটার জন্য আজও নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি। সবার তো আর মহারাজের হাতে তৈরী চা খাবার সৌভাগ্য হয় না!

যাইহোক, এই টপিকটা এখানেই বন্ধ করা যাক। এভাবে সকলের পরিচয় দিতে হলে আজকের পুরো রাতটাই কাবার হয়ে যাবে। তারচেয়ে চলুন নৈশ ভোজটা সেরে নেওয়া যাক। আমরা বন্ধুরা একসাথে বসব – এমনটাই কথা হয়ে ছিল আগে থেকে। পায়েল বসবে তার বন্ধুদের সাথে। দেখি ওদিকটায় কতদূর এগোল!

***

“এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার – যারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তাদের মধ্যে ১০০ শতাংশ কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হয় না, পাশ করার পর তারা অন্য লাইনে চলে যায়। গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে এ’রকম ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে।” –সুশোভন বলল।

আমরা সব বন্ধুরা মিলে একসাথে খেতে বসেছি। দুটো টেবিল একসাথে জোড়া করে আমরা ছেলে বন্ধুরা একসাথে বসেছি। আর পায়েল ওর কিছু মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে বসেছে একটু দূরে।

সুশোভনের কথায় সহমত প্রকাশ করে চঞ্চল বলল, “হুম্‌! আমাদের মধ্যেই দেখ না – সৈকত আর নীলাভ ফুটবলার হয়ে গেল; ধৃতিমান তো এখন একটা নামকরা বাংলা ব্যান্ডের ড্রামার; আকাশ তো লেখক হয়ে গেল; আর সন্দীপ-এর কথা তো বলে দিতে হয়না, ও তো এখন বাংলা সিনেমা জগতে একজন নামকরা মুখ!”

“আমি বুঝে পাইনা বাপু – তোর প্যাশন যদি অন্যকিছু হয়, তাহলে তুই সেটা নিয়েই পড়তে পারিস তো, কেন বেকার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আসা?” –অরিজিৎ বলল।

“শোন... সাইকোলজিটা বোঝ... অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলেপুলেরা বাবা-মায়ের চাপে পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চলে আসে। তারা মনে করেন – ছেলে-মেয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারলে একটা সিকিওর লাইফ লীড করতে পারবে না। এবার... ডাক্তারী পড়ার খরচ ও পড়ার মানসিকতা সবার থাকে না। তার ফলে সোস্যাল স্টেটাস বজায় রাখার জন্য একটাই সোজা রাস্তা থাকে – ইঞ্জিনীয়ারিং। যদিও ছেলেপুলেরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে বোঝে – এটা খুব একটাও সহজ রাস্তা নয়! কিন্তু বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা সেটাকে অ্যাক্সেপ্ট করে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের মনে একটা চাপা ইচ্ছে রয়ে যায় অন্য পেশা বেছে নেবার। সে যত এগোতে থাকে, তার মানসিকতা যত ম্যাচুওর হতে থাকে, তত তার সেই পেশার প্রতি প্যাশন আরও বাড়তে থাকে। একটা সময় দেখা যায় – সে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে সেই পেশাটাকেই আপন করে নেয়। ব্যাস্‌... আশা করি তোকে বোঝাতে পারলাম অরিজিৎ?” –সুমিতাভ বলল।

“ব্যাস্‌ ব্যাস্‌... অনেক মনস্তত্ত্ব চর্চা হয়েছে। এখন আমাকে একটা কথা বলতো... কুনালের কথা কেউ জানিস তোরা? অ্যান্থনি কুনাল বক্সি? আমি তো ইন্‌ভাইটেশন পাঠিয়েছিলাম ওকে, কিন্তু দেখলাম না তো আজ! তোরা কেউ ওর কোনো খবর জানিস নাকি?” –আমি বললাম।

“আমি যতদূর জানি – ও তো এখানে ডিপ্লোমা পাশ করার পর নর্থ-বেঙ্গল চলে যায় কোনো একটা কলেজে অ্যাডমিশন নিয়ে। সেখানেই ও বি.টেক. কন্টিনিউ করছিল!” –রতন বলল।

“হুম... হি অ্যাকচুয়ালি ওয়াস ফ্রম নর্থ বেঙ্গল। ওর মা থাকেন ওখানে।” –সুজিত বলল।

“থাকেন না... থাকতেন...” –আকাশ বলল। “উনি মারা গেছেন, ওর বি.টেক.-এর ফাইনাল ইয়ারেই। বছর দেড়েক আগে ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল - নর্থ বেঙ্গলেই, একটা অডিটোরিয়ামে। প্রথমে তো চিনতেই পারিনি ওকে। পরে কথা হল। ওর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ইন্সিডেন্টের ব্যাপারে বলল। আমি ওখানে একটা সাহিত্য সম্মেলনে ইনভাইটেড ছিলাম। হঠাৎই দেখা হয়ে গেল ওর সাথে। ওর মা কোনো একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা লোন নিয়েছিলেন, মেইনলি ওর বি.টেক.-এর খরচের জন্যই। মহিলা লাংস ক্যান্সারে ভুগছিলেন – সেটা চেপে রেখেছিলেন কুনালের কাছ থেকে। কুনালের ফাইনাল ইয়ারে হঠাৎ ওঁর অবস্থার অবনতি হয় এবং মারা যান। ওদের পৈতৃক ভিটে মর্টগেজ রেখে লোন-টা পাশ করিয়েছিলেন। লোন শোধ করার আর কেউ ছিল না বলে উনি মারা যাবার পরেই ব্যাঙ্ক এসে ওদের বাড়ির দখল নিয়ে নেয়। এসবের মধ্যে কুনালের মানসিক অবস্থার প্রচন্ডভাবে অবনতি হতে শুরু করল। দুম্‌ করে পড়াশোনা ছেড়ে দিল। বি.টেক. কমপ্লিট-ই করল না। কাছেই একটা ক্যাথলিক চার্চে শরণার্থী হয়ে থাকতে শুরু করল। টুকটাক কবিতা লেখার অভ্যাস তো আগে থেকেই ছিল, অন্য কাজবাজ না করে সেটার উপরেই জোর দিল কুনাল...” –বলে জলের গ্লাসে একটা চুমুক দিল আকাশ। তারপর আবার শুরু করল, “সত্যি কথা বলতে কি ভাই – এখন বাংলা সাহিত্য জগতের যা অবস্থা তাতে এরকম উঠতি কবি বা লেখকদের লেখাটাকেই মুখ্য পেশা হিসেবে বেছে নিলে মুশকিল আছে... ও সেটাই করেছিল... ফলে...”

“কিন্তু ও তো ছোটোখাটো কিছু একটা কাজ করতেই পারত। ডিপ্লোমাতে তো ওর ভালোই মার্কস ছিল!” –অরিজিৎ বলল।

“আমার মনে হয় ও মানসিকভাবে এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল যে – কোনো কাজ করার মত ইচ্ছাই আর তৈরী হয়নি ওর মধ্যে।” –আকাশ বলল। “অথচ জানিস... এতকিছুর মধ্যেও ও চরিত্রগত দিক থেকে একটুও বদলায়নি। সে’বার সাহিত্য সম্মেলন শেষে আমরা একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসেছিলাম, চা খাবার জন্য। চা খেয়ে ওকে একটা সিগারেট অফার করতে - সেটা নিল না। ও তখনও কোনোরকম নেশাজাত দ্রব্য থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিল, ঠিক যেমনটা কলেজে ছিল!” –আকাশ আরও বলল।

“কিন্তু... ওর একজন গার্লফ্রেন্ড ছিল না? সে ওকে মোটিভেট করতে পারল না কোনোভাবে?” -আমি বললাম।

“বি.টেক. ছেড়ে দেবার পর ওর গার্লফ্রেন্ড কোনোভাবে যোগাযোগ রাখেনি ওর সাথে।” –আকাশ বলল।

“হাহ্‌...!” –একটা শ্লেষোক্তি বেরিয়ে গেল আমার মুখ থেকে।

***

পরের দিন হল গিফ্‌ট্‌ আনবক্সিং-এর দিন। আমাদের বন্ধুগুলো কিন্তু সবক’টা সেরা! ওহ্‌ কি গিফ্‌ট্‌ দিয়েছে সকলে! এক সে বড়কর এক! তবে বলাই বাহুল্য, সবথেকে সেরা গিফ্‌ট্‌-টা দিয়েছে আমার বন্ধু সুমিতাভ। এটা একটা সারপ্রাইজ গিফ্‌ট্‌। আমার আর পায়েলের ‘ফিজি’-তে এক সপ্তাহের ছুটি কাটানো। গিফ্‌ট্‌ র‌্যাপ থেকে বেরোলো সেখানকার টিকিট সমেত বাকি সব কাগজপত্র। পায়েল তো খুব খুশি।

বাক্সগুলো ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ হাতে এল একটা ছোটোমতো বাক্স। তাতে একটা গোলাপফুল, আর একটা চিঠি। চিঠির নীচে বড় বড় করে লেখা – ‘শুভ বিবাহের অভিনন্দন!’, আর চিঠির বাকি অংশে চার লাইনের একটা কবিতা –

ভাঙাচোরা স্বপ্নগুলো লুকিয়ে পিঞ্জরাতে,

অন্তহীনা সময় বলে একলা বয়ে যেতে...

নিছক এক সমাপতনের টানেই আজ আমার আসা,

এক আকাশ খুশীর মাঝে, তোমায় দিলাম এক মুঠো ভালোবাসা...

আমি চিঠিটা পায়েলের দিকে বাড়িয়ে দিলাম, বললাম, “দেখ তো তোমার পরিচিত কিনা!”

চিঠিটা পড়ল পায়েল। তার মুখ দেখে মনে হল – হাতের লেখা চিনতে পেরেছে সে। মুখে একটা অদ্ভুত অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে – অনেকটা উদাসীন ভাব।

আমি ঠেলা মেরে বললাম “চিনতে পারলে?”

পায়েল তার আনমনা ভাব ভেঙে ঘুরে তাকাল, মুখে বলল, “অ্যাঁ...!”

***

চার বছর আগে। মায়ের হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না কুনাল। পলিটেকনিক পাশের পর দুটো ভালো চাকরী পেয়েছিল সে কলেজ ক্যাম্পাসিং-এ। কম মাহিনার চাকরী, তবে ভালো কোম্পানী। ক্যান্সার যদি মায়ের শরীরে আগে থেকেই বাসা বেঁধে থাকে – তাহলে তখন কেন মা তাকে চাকরী নিতে দিলেন না? কেন বললেন – বি.টেক.-টা কম্‌প্লিট করতে? একটা ছাকরী নিয়ে নিলে তো সে মায়ের চিকিৎসা-টাও করাতে পারত, লোন-টাও নিতে হত না, আর পৈতৃক ভিটে-টাও হাতছাড়া হত না!

কিন্তু আফসোস্‌ - এ’সব প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য মা আর নেই। তাকে সম্পূর্ণরূপে একলা ফেলে রেখে মা চলে গেছেন। মা হয়তো অন্যকিছু ভেবে রেখেছিলেন কুনালের ভবিষ্যতের জন্য! হয়তো ভেবেছিলেন এভাবেই আর ক’টা দিন কাটিয়ে দেবেন, তারপর কুনাল বড় ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মায়ের দেখাশোনা করবে। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে সে আর হল কোথায়!

কুনালের প্রেমিকা, যার সাথে কুনালের পাঁচ বছর ধরে সম্পর্ক – সেও এসবের মাঝে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। হাত ছেড়ে দিয়েছে কুনালের। অথচ চাকরী পেয়েই তারা বিয়ে করবে ঠিক করে রেখেছিল।

মায়ের প্রতি তার অভিমান – একটা সময় প্রচন্ড ক্ষোভে রূপান্তরিত হল। মানসিকভাবে ভারসাম্য হারাতে শুরু করল কুনাল। বাড়ি-ঘর খুইয়ে সে এখন একটা স্থানীয় চার্চে আশ্রয় নিয়েছে।

ধীরে ধীরে চার্চের তত্বাবধানে তার মানসিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও, কাজ করার ইচ্ছে সে একেবারেই হারিয়ে ফেলেছিল। কবিতা লেখার নেশা চেপে ধরেছিল তাকে। তারপর থেকেই বিভিন্ন ছোটো পত্রিকা ও বানিজ্যিক পত্রিকাতে লেখা পাঠাতে শুরু করে সে। একসময় টুকটাক নামও হয়। ছোটো-বড় কিছু সাহিত্য সম্মেলনে আমন্ত্রণও পেতে থাকে।

মানসিকভাবে সামান্য স্থিতিশীল হলে বুঝতে পারে – কবিতা তার মনের খোরাক মেটালেও, পেটের খোরাক মেটাতে সক্ষম নয়। চার্চের উপর বোঝা হয়ে কতদিনই বা থাকবে সে! এরপরেই সে যোগাযোগ করে ‘প্যারামাউন্ট ইভেন্ট ম্যানেজার’ নামক একটি কোম্পানীর সাথে। এই কোম্পানী পশ্চিমবঙ্গ তথা আশেপাশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বড় বড় অনুষ্ঠানগুলোর বন্দোবস্ত করে।

কুনাল সেই কোম্পানীতে খাবার পরিবেশনার কাজে নিয়োজিত হয়। তার কাজ শুধুমাত্র রাত্রে, কয়েক ঘন্টা। বাকি সময় সে যথেষ্ট সময় পাবে কবিতা লেখার। অনুষ্ঠান বাড়ি থেকেই তার খাবার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বাকি দলের সাথে একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থাটাও হয়ে যাবে। সে বুঝতে পারে – এটাই তার জন্য যথাযথ কাজ।

এরপর একদিন, এক অনুষ্ঠান বাড়িতে এসে কুনাল আবিষ্কার করল – সেটা তার এক প্রিয় বন্ধুর বিয়ের রিসেপশন পার্টি। কিন্তু সবথেকে বেশি অবাক হল – নববিবাহিতা মেয়েটিকে দেখে। এ তো পায়েল! তার প্রাক্তন প্রেমিকা! অবাক হলেও নিজেকে সামলে নেয় সে। এই কয়েক বছরে তার মন অনেকটাই পরিণত হয়েছে। সমাজ সম্পর্কে অনেক কঠিন ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে সে। পায়েলের বর্তমান অবস্থা দেখে দুঃখ পাবার থেকে সে তার জন্য খুশিই হল বেশী। পায়েল ভালো থাকুক – এটাই সে চায় মনে মনে।

চারিদিকে তার পুরোনো বন্ধুদের মুখগুলো দেখে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়ে কুনাল। তবে, দীর্ঘদিনের অনিয়মিত জীবন যাপনের ফলে কুনালের শরীর একেবারেই ভেঙ্গে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই কেউই তাকে চিনতে পারেনি। আর সে নিজেও আগ বাড়িয়ে কাউকে নিজের পরিচয় দিতে গেল না। তবে উপহার তো একটা দেওয়া উচিৎ...!

সে অনুষ্ঠান বাড়ি থেকেই একটা গোলাপ জোগাড় করে নিল। তারপর সেটা একটা ছোটো বাক্সে ভরল। সাথে ভরল একটা কাগজ। যাতে লেখা চার পংক্তির একটা কবিতা। তারপর, কাজের ফাঁকে সুযোগমত সেটা গিয়ে তুলে দিয়ে আসল পায়েলের হাতে।

No comments:

Post a Comment