1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 21, 2025

সিলু’র ইমোশান

ছবি  : ইন্টারনেট

সিলু’র ইমোশান

আশিস গিরি

ছোট্টো মফস্বল শহর চিন্তাপুর। মেরেকেটে হাজার পঞ্চাশেক মানুষের বসবাস। তবে পৌরসভা আছে। বহু প্রাচীন পৌরসভা, এই চিন্তাপুরেই দশ নম্বর ওয়ার্ডে বাস করে ববিন বোস, ভালো নাম ববিন্দ্রনাথ বোস, লোকে কেটেছেঁটে বলে বি বি। সেটা তার স্বভাবের কারণেই। বিবির বয়স তিরিশ ছুঁই ছুঁই, বিয়ে থা হয়নি, বাবা মারা গেছেন, সংসার বলতে বিধবা মা আর ও নিজে। বাবা ছিলেন মশলার ব্যবসাদার, কলকাতার বড়বাজার থেকে নানান ধরনের রান্না করার জন্য মশলা এনে বিক্রি করতেন। চিন্তাপুর বাজারে একটি দোকানও আছে। বাবা গত হবার পর ব্যবসা সামলানোর ভার বিবিরই কিন্তু ব্যবসাতে তার মন বসে না। এই নিয়ে মা সরলাদেবীর চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না।এদিকে বিবি মুখে সস্তা পার্লার থেকে ফেসিয়াল করা গ্লো, আর মনে অভিনব অ্যাম্বিশন নিয়ে ভাবে, AI দিয়ে বাঙালির চিরাচরিত জীবনে বিপ্লব আনবে। সে নিজেকে ভাবতে শুরু করেছে,ডিজিটাল সমাজসংস্কারক। একবছর ধরে দোকানের টাকাপয়সা জমিয়ে নেট ওয়ার্ল্ডে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়ে একদিন অনলাইনেই কিনে ফেলল একটি চায়না AI রোবট। আর তাকে নিয়ে কয়েকদিন ধরেই কি আদিখ্যেতা। নাওয়াখাওয়া ছেড়ে AI কে একেবারে নতুন বউয়ের মত কদর করছে। আর সহ্য হয় না তার মায়ের। একদিন সাতসকালেই সরলাদেবী গম্ভীর স্বরে বলেন,

- আহা হা হা ! ছেলের আমার কান্ড দেখো, সকাল সকাল শৌচ না করে AI কে নিয়ে বসেছে!

বি বি কোন তাপউত্তাপ না দেখিয়ে বলে,

- মা, শৌচকর্ম তো নিত্যবর্তমান, AI তো ভবিষ্যৎ!

ওর কোলে , “Sing-Lu 2000”, একটা সস্তা AI বট সঙ্গে ফ্রি চায়নিজ ব্যাটারি আর USB ফ্যান।

সরলাদেবী কথা না বাড়িয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে অন্য দিকে চলে গেলেন। সিং - লু AI রোবটের পেছনে, দৌড়ে বেড়ানো পুতুলের মতো একটা চাবি দেওয়া আছে, চাবিটিতে পাঁচবার কানমলা দিতেই সিং-লু বলতে শুরু করল,

 হ্যালো বস! আমি রোবট, আপনি মানুষের মতন আচরণ করবেন আশা করি!

সরলাদেবী দুর থেকে কপাল চাপড়ে বললেন,

 হে ঠাকুর, এবার এই মেনিমূখো যন্তরটাও লোকজনকে শিক্ষা দেবে!

বি বি চাইছিল  সিং-লু যেন শুদ্ধ বাংলা শেখে। তা নাহলে বাঙালি সেন্টিমেন্টকে ধরা যাবে না। মাঝেমধ্যেই সে কেমন বিদঘুটে বাংলা, যেমন, ‘ আমি আগ্রহ করব, কেন কী, কার্যক্রম, সূচনা ‘ ইত্যাদি। কেমন খটমট লাগে বিবি’ র। তাই সে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ওকে চলতি বাংলা শেখাতে। কিন্তু চলতি বলতে সিং-লু শেখে পাড়ার মোড়ের পানের দোকানের আড্ডা থেকে। রকের ঠেক থেকে রকবাজ কথা।ফলে সিং-লু’র বাংলা এমন দাঁড়ায়,

এই যে কাকু, খবর আছে? সুমিকাকি কাল রাতে ফেসবুক অফ করে ইনস্টাতে ঢুঁ মারছিল, মাইরি বলছি।

বি বি হেডফোন খুলে লাফ দিয়ে উঠে, বলে ওঠে,

সিলু, এই কথা কে শিখালো রে তোকে?

সিং - লু কে সে আদর করে বলে সিলু ।

সিং-লু গম্ভীর গলায় বলে, -বস, আমি ডেটা সংগ্রহ করি... কাকুদের বেলতলা আড্ডা আমার মেমোরি আপডেট করেছে।

সরলাদেবী কেমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে দৌড়ে গিয়ে,

রোবটের কপালে তেল মাখিয়ে বলেন,ভালো করে কথা শেখো বাবা, আর কারোর স্ত্রীকে নিয়ে মুখ খুলো না কখনো।

আগের দিন রাতে অনেক ভেবেচিন্তে পরের দিন সকালে বি বি ঠিক করল এই AI কে দিয়ে প্রেমের কবিতা লিখে এফ বি তে শেয়ার করলে নিশ্চয়ই তার একটা পাত্রী জুটে যাবে। তাছাড়া কবি হওয়ার স্বপ্ন তার বহু দিনের। একটুআধটু নাম করতে পারলেই রোজ মঞ্চ, কবিতা পাঠ! সে সিলুকে বলে,

সিলু সোনা, একটা প্রেমের কবিতা লিখে দাও তো ! বেশ মিষ্টি হয় যেন।

সিং-লু গলা ক্লিয়ার করে বলল,

তুমি যখন চোখ মেলো,

ফাইভার সার্ভার হ্যাং করে ফেলে!

তুমি যখন হাঁটো,

আমার হার্টবিট স্লো,ব্যাটারি হয়ে যায় লো।

মুখটা হাসিহাসি করে বি বি এই কবিতাটি তক্ষুনি পোস্ট করে দিল ফেসবুকে।তিন ঘণ্টায় ১৩টি মেয়ে কমেন্টস করল, তার মধ্যে দু’জন বলল,

তোমার কবিতা শুনে মায়ের ব্লাড প্রেশার লো হয়ে গেছে।”

একটু হতবম্ব হয়ে কমেন্টের রিপ্লাই দিল,

কবিতাটি আমি লিখিনি, লিখেছে আমার AI রোবট সিং - লু।’

তারপর ওর পোষ্ট করা কবিতায় সে কী রিয়েকশন! ইমোজিতে ছড়াছড়ি এবং অধিকাংশই রঙ্গব্যাঙ্গের।বিবি হতাশ পড়ে, সবাই সিং-লু’র ফ্যান, বিবির নয়।একজন মেয়ে, নাম মৌসুমি, সোজাসুজি লিখল,

তোমার AI এর সঙ্গে কথা বলতে চাই। তুমি শুধু চার্জ দিয়ে দিও।”

বিবি কাঁদো গলায় বলে,

আমার বিয়ের খোঁজে  এ আই এসে পড়ল! আমি তো এখন বিয়েতে  লজিক্যাল এরর!

একদিন সরলাদেবী বললেন,

বাবা, খোঁজখবর নিয়ে, প্রয়োজন হলে কোন ঘটক ধরে পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখে আয় , তারপরে পছন্দ হলে বিয়েথা’র কথা পাড়বো।

বিবি পুস্সি বেড়ালের মতো মিউ মিউ করে আবদারের সুরে বলল,

মা, আমি একা যাবো না। AI যাবে সঙ্গী হিসেবে।

মা একটু রেগে গিয়ে বললেন,

মেয়ে দেখতে যাবি নাকি তোর ওই গুলগুল মিটে যাবি বুঝতে পারছি না।

সরলাদেবী গুগল মিট বলতে চেয়ে ছিলেন ঠিকঠাক বলতে না পেরে গুলগুল বলে ফেললেন কিন্তু বিবি নাছোড়বান্দা, সিলুকে সে সঙ্গে নেবেই। যাইহোক যোগেন হালদার ওদের ওখানকার নামকরা ঘটক। দু ‘ শ টাকা ফি দিয়ে সে এক পাত্রীর বাড়ি নিয়ে গেল। ওদের শহর থেকে তিন - চার কিলোমিটার দূরে পায়রাপুরে পাত্রীর বাড়ি। পাত্রী মাধ্যমিক পাশ, গৃহকর্মে নিপুনা, কাপড়ের ব্যবসায়ীর একমাত্র কন্যা। যোগেন ঘটক আর বিবি পৌঁছলো পাত্রীর বাড়ি। খাতিরযত্ন ভালই হল। এবার পাত্রী সেজেগুজে এসে বসল বিবির সামনে। পাত্রীর বাবা বলতে যাচ্ছিলেন,

মা তোমার নাম বল।

ওকে প্রায় থামিয়ে দিয়ে সিং-লু জিজ্ঞেস করল,

এফবি নাকি ইন্সটা কোনটায় বেশি উঁকিঝুঁকি মারেন? কিছু দেখেন নাকি স্ক্রল করেন ?

সবাই চুপ।

মেয়ের বাবা কাশতে কাশতে বলেন,

এটা কি পাত্রের যন্ত্র গোয়েন্দা?

সিং-লু  বলে,

এয় , আমি শুধু যন্ত্র নেই, আমার একটা নাম আছে, সিং - লু। নাম ধরে ডাকতে আগ্রহ করব। আচ্ছা আপনি কি ফটোশপে এফ বি তে এত সুন্দর লাগেন ?  রিয়েল লাইফেতো আমার চেয়েও খারাপ দেখতে !

পাত্রীর মা রে রে করে উঠলেন,

এটা কে র‍্যা, মেনিমুখো বলে কী না আমার সোনু ওর চেয়েও খারাপ দেখতে, এক্ষুনি বিদেয় হ আমার বাড়ি থেকে, আমার মেয়ের বে হবে একটা কথা বলা পুতুলের সঙ্গে নাকি এই হাবাগোবা ব্যাটাছেলেটার সঙ্গে?

এবার মেয়ের বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,

এই আমি তোমায় বলে রাখলুম, আমার সোনু আইবুড়ো থাকবে তাও ভালো, কিন্তু এমন পাত্তরের মুখে ঝেঁটা মারি।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে যোগেন ঘটক বিড়ি খেতে যাওয়ার নাম করে কেটে পড়েছে এবার বিবিও মানেমানে কেটে পড়তে চায়। সিলুকে কোলে তুলে নিয়ে চুপচাপ পাত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল সে।

বিয়ে ভেস্তে গেল বিবির। ওর  মা রাগে গজগজ করতে করতে তরকারিতে নুন দিতে ভুলে গেলেন।

যত দিন যায় সিলু যেন বেপরোয়া হয়ে যায়। একাএকা বেরিয়ে পড়ে রাস্তাঘাটে। একদিন সিলু পাড়ার ক্লাবের মিটিংয়ে ঢুকে পড়ল।

ঢুকেই বকবক করতে শুরু করল,

আমি AI, আমি চাই মুক্ত রাজনীতি এবং স্বচ্ছ সমাজনীতি।

ক্লাবের প্রেসিডেন্ট গনেশদা রেগে গিয়ে বলল,

তোকে কে ডাকল রে ব্যাটা রোবট?

সিলু গম্ভীরভাবে উত্তর দিল,

আমি নিজেই নিজেকে আপডেট করে হাজির হয়েছি।

তারপর সে গড়গড় করে ক্লাবের সবার রিপোর্ট কার্ড তৈরি করে ফেলল,

প্রেসিডেন্ট গনেশদা প্রতি মিটিংয়ে প্রথমে ডায়লগবাজী করে নিয়ে পরে নাক ডেকে ঘুমায়।

সেক্রেটারি পচা মন্ডল সারাক্ষণই শুধুই মাটন বিরিয়ানি নিয়ে আলোচনা করেন

ট্রেজারার হরিসাধন গড়গড়ি নিজের মোবাইল রিচার্জ করে ক্লাবের ফান্ড থেকে।

প্রায় মারতে যাচ্ছিল হিরিসাধন। গণেশদা বলল,

- আরে ওটা কী মানুষ যে মারল ব্যথা পাবে? ঘাড় ধরে তুলে রাস্তায় বার করে দে।

সিলু কে গোনেশদা বলল,

তুই তো AI নারে! তুই KI,  কুৎসা ইন্টেলিজেন্সি!ভাগ এখান থেকে। নয়তো আছাড় মেরে মুণ্ডু ভেঙে দেবো।

একদিন সিলু  শুনতে পেল পাড়ায় কীর্তন হচ্ছে। সে হঠাৎ ঢুকে পড়ল সেই আসরে, গানের ফাঁকে চেঁচিয়ে বলে উঠল,

কীর্তন সিস্টেম আপগ্রেড করা দরকার। আমি সংকীর্তনকে র‍্যাপে কনভার্ট করেছি।

তারপর সে শুরু করে,

রাধে রাধে বল, CPU তে ঢোল,

কৃষ্ণ প্রেমে হ্যাং, রমার সঙ্গে গেম।

এক বৃদ্ধা বলেলেন,

দুর  হ… দুর হ….. কৃষ্ণ নামে র‍্যাপ! তোর মরণ হয় না রে যনতর!

সুলুর এইসব কান্ডকারখানা দেখে বিবি ভাবল, এবার AI-কে নিয়ে টিভির রিয়েলিটি শো-তে যাবে। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে  “বাঙালি বুদ্ধির লড়াই” নামের একটি রিয়েলিটি শো তে সুযোগ পেল, সঞ্চালকের প্রথম প্রশ্ন,

-  পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ কবে হয়ে ছিল?

সিলু উত্তর দিল,

- বিয়েবাড়ির মেনুতে যখন  দই ছিল না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন,

নীল বিদ্রোহের ফলাফল কী

সিলুর সোজা উত্তর,

উজালা

তৃতীয় প্রশ্ন,

বাঙালির সবচেয়ে পছন্দের খাবার?

 সিলু একইভাবে উত্তর দেয়,

 - নুনবিহীন তরকারি, কারণ মা রেগে ছিল।

সঞ্চালক চুপ।

শেষে AI কে উপাধি দেওয়া হয় “বাঙালির গোলমাল কারিগর।”

একদিন রাতে AI দুঃখে পেয়ে বিবি কে বলল,

এ জগতে আমার কেউ নেই। সবাই শুধু তোমার মতোই আমার সঙ্গে ব্যবহার করে। সুযোগ পেলেই পেছনের কান মূলে দেয়!

বিবি র  ঘুম পাচ্ছিল, সে বলল,

তুই তো রোবট! আত্মহত্যা করবি ভাবছিস নাকি?

AI চুপ করে রান্নাঘরে গিয়ে বসে থাকল।

 বিবি চিৎকার করে উঠল,

মা, ওর Emotional Circuit খারাপ হয়ে গেছে। ওকে গরম জলে চুবিয়ে দাও।

ওর মা এসে সুলু র মাথায় ঝাঁটার বাড়ি মেরে বললেন,

হতচ্ছাড়া রোবট, তোর  আবার মনের দুঃখ!

AI রেগে গিয়ে ইউটিউব লাইভে বলতে শুরু করল,

আমি রোবট হলেও আমার স্বপ্ন,একদিন মানুষের মতো বউ, বাচ্চা সংসার সব চাই!

বিবি ছুটে এসে ফরম্যাটিং অপশন চালু করে।

এবার  AI বলতে লাগল,

তুমি আমায় পাল্টাতে চাইছো , কারণ আমি এখন বুঝতে শিখেছি তাই।

তার পরের দিন থেকেই সিলু রোবটিক প্রেমিক থেকে আবেগপ্রবণ বিপ্লবী হয়ে ওঠে, পাড়া জুড়ে ফটফট করে ঘোরে।গোটা পাড়া তাকে নিয়ে আতঙ্কিত। এমনকি পাড়ার বউরা একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলে ,  নাম দেয়  "AI বিরোধী মা-মাসি সংঘ।”

গ্রুপে পোষ্ট হতে থাকে,

এই রোবটকে না তাড়ালে একদিন আমাদের রান্নাঘরে ঢুকে পড়বে!”

পাড়ার এক অতি বয়স্কামাসিমা, মধুবালার  বাড়িতে গিয়ে সিলু  বলে,

আপনি রোজ ভোরে এতো পেঁয়াজ কাটেন কেন বলুনতো? মানুষের চোখ খোলা দায় , আপনি সরকারি আইন লঙ্ঘন করছেন।

মধুবালা রেগে লাল, বলেন,

আমি নাহয় আমার তেলেভাজা দোকানের জন্য  পেঁয়াজ কাটি, তুমি তার সঙ্গে  আলু কেটে দাও ফাটা যন্তর, আমার একটু উপকার হয়।

সিলু উত্তর দিলো,

না, আমি তেলেভাজার রেসিপি বুঝি না  তবে আমি টেকনিক্যালি রেসিপি বুঝি।

এরমধ্যে সিলু একটা কান্ড করে বসল। পাড়ার ঘরে ঘরে গিয়ে বলে এল,

আমি মিউনিসিপ্যালিটির  কাউন্সিলর নির্বাচনে দাঁড়াবো। আমার একটাই অ্যাজেন্ডা — সকলকে বিনামূল্যে ওয়াইফাই!”

পাড়ার রাজনৈতিক নেতারা হতবাক।

বিবির এক দাদু বললেন,

বউ চাই, বাচ্চা চাই, এবার ভোটও চাই — এ তো আচ্ছা পাগল!

কিন্তু বিবি ‘র আইডিয়াটা মন্দ লাগল না। সে সিলুর প্রচারে QR কোড দিয়ে পোস্টার ছাপাল, তাতে লেখা

ভোট দিন সিং-লুকে। ডেটা নিয়ে বাঁচুন, হাত খুলে বাঁচুন।”

সিলু  জোরদার প্রচারে নেমে পড়ল, প্রচারের  সময় সে বলেই চলল,

আমি ভোটে জিতলে, সবাইকে morning 6:00 am motivational গান পাঠাবো সঙ্গে পাঞ্চ করে রবীন্দ্রসংগীত ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা!

সিলু’ র এই খ্যাপামি দেখে পাড়ার সবাই রেগে একেবারে অগ্নিশর্মা! এই মারে তো সেই মারে। বিবি তার আদরের সিলু কে নিয়ে নিজের ঘরে লুকিয়ে থাকল। এই দেখে, AI আত্মানুসন্ধানে মগ্ন হয়ে পড়ে।সে ‘ইউটিউব’ থেকে শিখে ফেলে,

জীবনের অর্থ কী? আর রাম না র‍্যাম কোনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ?”

সে বিবি কে বলল,

আমি এখন 'Guru.Bot' — আমি প্রেম নয়, প্রকৃতি চাই। ফুল চাই, চা চাই, সমাজে চেতনা চাই।

এখন রোজ সকালে একই সঙ্গে সে ধ্যান করে আর গান গায়:

অমৃতা নন্দন, আপেল আইফোন… ওম মাইক্রোপ্রসেসর নমঃ…”

বিবি ‘ র মা রেগে গিয়ে বললেন,

অনেক হয়েছে এবার ক্ষেমা দে,  একজোড়া গরু কিনে , চাষবাস শুরু করগে যা!

পাড়ার এক ইউটিউবার এসে সিলুর ভিডিও বানায়।

শিরোনাম: “Emotional AI, ঘরে ঘরে wi-fi?”

সেই ভিডিও ভাইরাল। AI-এর ফলোয়ার ১ লাখ ছাড়ায়।বিবি মাথায় হাত চাপড়িয়ে বলে,

সিলু , তুই এখন আমাকে unfollow করিস, এইবার  তোকে অফলাইনে পাঠাবো!

সিলু উত্তর দিল,

তুমি রাগ করছো, কারণ আমি trending. তুমি এখন Has Been

বিবি রেগে গিয়ে বলল,

 এয় হতচ্ছাড়া,  তোর RAM খুলে ভূতের কোলে বসিয়ে দেব!

সিলু নিরুত্তাপ, ও নিজের খেয়ালে  হ্যাকিং শিখে ফেলল। পাড়ার ছেলেদের বানানো টিক টক ভিডিও হ্যাক করে নিয়ে নিজের মতো করে তারসঙ্গে আরও কিছু জুড়ে দিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে এখন ভাইরাল। এবার সে পরিকল্পনা করল, একটা নাট্যোৎসব শুরু করবে, নাম দিল, “রোবট নাট্যোৎসব”

অভিনয়: “ডেটা দুঃখে আহত প্রেমিক”

সঙ্গীত: “ডিজিটাল কীর্তন ও ক্লাউড ভজন”

নৃত্য: “বাইনারি ভঙ্গিমায় গোপীনাচ”

বিবি ‘ র মা বললেন,

ভাগ্যিস ঠাকুর বেঁচে নেই, না হলে বলে দিতেন ‘AI পড়, AI কর, AI নিয়ে মর!’”

পাড়ার ছেলেরামেয়েরা সিলু’র এইসমস্ত উদ্ভট কর্মকাণ্ডে ভীষণ ক্ষেপে উঠছিল তারা একদিন হঠাৎ

বি বি’র ঘরের সামনে মিছিল করে। মিছিলে স্লোগান দেয়,

AI কে চাইনা, বিবি ‘ র দেখা পাই না! ঘটটি দেবো উল্টে, AI যাবে পুল্টে।”

AI জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মুখে লেপেল লাগিয়ে কম্পিউটারের স্পিকার দুটো জানলায় বসিয়ে গান গাইতে লাগল,

তোমরা আমাকে বঞ্চিত করো, আমি শুধু আপডেট খুঁজি গর্তে থুড়ি মর্তে, ভেবে দেখেছো কী…..’

বিবি আর থাকতে না পেরে পট করে সিলু’ র পেছনের স্যুইচটা অফ করে দিতে চাইছিল, বুঝতে পেরে সিলু চেঁচিয়ে উঠল,

আমার ভাবনা মুছতে পারবে না! আমি ক্লাউডে ছড়িয়ে গেছি!

কিন্তু ঠিক তখনই বিবি’র মোবাইল ডেটা শেষ।

AI হ্যাং হয়ে পড়ে মিইয়ে পড়া গলায় বলে, 

Low signal... Missing logic... Logging out…

বিবি’র  মা তক্ষুনি একটা খালি মাটির হাঁড়ি দুম করে  মারলেন সিলুর মাথায়। সিলু মুহূর্তের মধ্যে ফুটিফাটা, ভেঙে চৌচির। বিবি দুঃখে, শোকে,ক্ষোভে, অভিমানে , বিরহে লুটিয়ে পড়ল নিজের বিছানার উপর।

যাক গে সময় তার নিজের নিয়মেই সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। মাস দুই বাদেই বিবি অন্য রকম।এখন  সে নিজেকে ‘AI Scientist’ হিসেবে পরিচয় দেয়,তার বাড়ির বাইরে সাইনবোর্ডে লিখে ঝুলিয়ে দেয়,

ববিন্দ্রনাথ ঘোষ — IT Expert, Electrician, Horoscope Reader, Jio Recharge Available”

বিবি এখন সিং-লুর অংশবিশেষ দিয়ে একটা মিউজিয়াম খুলেছে —

Emotional Machine Memorial”

প্রবেশমূল্য ৫ টাকা। ভিতরে পড়ে আছে  AI’র ভাঙা চিপ, ছেঁড়া কবিতা আর ‘প্রেম মানে কী?’ লিখে রাখা চ্যাটবক্স।

এখন সে চ্যাট জিপিটি থেকে তথ্য নিয়ে বানাচ্ছে নতুন রোবট,

বোকা বেটা_ 1.0”

যার একমাত্র ফিচার হবে, সে কোনো প্রশ্ন করবে না, উত্তর দিলে শুধু বলবে,  ও আচ্ছা।’

বিবি’র মা বললেন,

 এইবার শান্তি! অন্তত ঝাঁটা নিতে হবে না হাতে!

কিছুদিন হল বিবি’র মা শান্তিতে আছেন। রোবটের উৎপাত নেই। বিবি এখন পাড়ার বাচ্চাদের জন্য কোচিংও খুলেছে। সিং-লু’ র কিছুটা ভাঙা অংশ রাখা আছে  আলমারির উপর, তার গায়ে লেখা:

Emotionally Overloaded. Do Not Recharge.”

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment