1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, January 1, 2020

ক্যাপ্টেন ভেড়ি

(ধারাবাহিক রহস্য কাহিনী )


                                                                                                               ...তরুণ চক্রবর্তী
                    
                

           তু অনেকক্ষন ধরেই খেয়াল রাখছিল।এখন রাত প্রায় নটা।সেই সন্ধ্যে ছটা থেকে দুজনে বসে আছে একটা বেন্চ দখল করে ।গা লেপটে।ভাদ্রমাসের কুকুরদের মতো।আলাদা করাই দু:সাধ্য।কিন্তু সতুকে অপেক্ষা করতেই হবে,  যতক্ষণ না জায়গাটা ফাঁকা হয় । কারণ নির্জনতাই সতুর শিকার ধরার জন্য আদর্শ পরিবেশ । 
   শিকার মানে এই ধরনের যুগলরা ।যারা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য একটু নির্জনতা খোঁজে । সতুও তক্কে তক্কে থাকে । ঠিক সুযোগ বুঝে শিকারের সামনে দাঁড়ায় , তোলা আদায়ের জন্য । 
  জায়গাটার নাম ক্যাপ্টেন ভেড়ি। বাইপাসের ধারে একটা জলাশয় । পুব দিকে ধাপা । পশ্চিমে নলবন  ভেড়ি । সরকার এখন জায়গাটার খুব উন্নতি করেছে । ভেড়ির ওপর ব্রিজটা , যা বাইপাসের অংশ , এখন সুন্দর করে সেজেছে । ব্রিজের দুধারে বসার বেঞ্চ । পুরনো দিনের গ্যাস বাতির মতো আলো । সামনে সুন্দর লোহার রেলিং । সবকিছু মিলে বড় মনোরম পরিবেশ । সকালবেলার দিকে প্রাতঃভ্রমনকারির ভিড়ে ভর্তি থাকে বেঞ্চ গুলো । সন্ধেবেলায় জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকে নারী ও পুরুষ । বিভিন্ন বয়সের । বিভিন্ন পেশার । বিভিন্ন চরিত্রের । 
   শীত সবে পড়তে শুরু করেছে । সন্ধে থেকেই হিমেল হাওয়ার সাথে হাল্কা কুয়াশা পড়ছে । রাত নটায় তা এখন বেশ ঘন কুয়াশা ।
    বেঞ্চে বসা মানুষ গুলো যেন চাদরের আড়াল নিয়েছে । কুয়াশার চাদর । এই সময়েই ,জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকা নারী পুরুষদের আনেকেই মদনশরে বিধ্য হয় । সতুর কথায় কুকীর্তি শুরু করে । সময় , সুযোগ বুঝে সতুও সামনে দাঁড়ায় । শিকার যদি নিরঝাঞ্ঝাট হয় , সতুর হাতে দাবি মতো টাকা তুলে দেয়। ঝামেলার পার্টি হলেই মুস্কিল । কিচাইন শুরু করে। এমন কি আশেপাশে বেশি পেয়ার থাকলে সতু এগোয় না । নিরীহ পেয়ার  গুলোও তখন জোর পেয়ে যায় । গালাগালির ঝড় বয়ে যায় । 
   গালাগালি অবশ্য সতু ভয় পায় না । সিভিক ভলেন্টিয়ারের  চাকরি করতে গিয়ে প্রচুর গালাগালি শুনতে হয়েছে । ‘হাফপ্যান্ট , হাফ গান্ডু, ‘এসব তো নিত্য নৈমিত্যিক ব্যাপার ছিল । একবার তো একটা তেএঁটে লোক ওকে ‘ পুলিশের কনডম ‘ বলে গালি দিয়েছিল । রাগতে গিয়েও সতু হেসে ফেলেছিল । সত্যি তো ,ওরা আছে বলেই তো সরকার নতুন পুলিশ নিচ্ছেনা । সেই হিসেবে তো ওরা একরকম ‘পুলিশের কনডম ‘ । 
  সতুও একসময় সিভিক ভলেন্টিয়ারের চাকরি করতো । একবছর আগে পর্যন্ত । শেষবার আর রিনিউ হয়নি । কন্ট্রাক্ট সার্ভিস । রিনিউ না হলে চাকরি থাকেনা । সতু তাই এখন অফিসিয়ালি চাকরি করেনা । কিন্তু পেটের ধান্দায় এই ধরনের ছ্যাঁচড়ামি করতেই হয় । ভাগ্যিস চাকরি ছাড়ার সময় ইউনিফরমটা সাথে করে নিয়ে আসতে পেরেছিল । সেটা পড়ে থাকার  জন্যই লোকে একটু গুরুত্ব দেয় । 
   চাকরি চলে যাওয়াটাও একটু অদ্ভুত । এই এলাকাতেই চাকরি করতো সতু । এলাকাটা ‘ পরমা আইল্যান্ড ‘ থানার আন্ডারে । সেখানকার বড়বাবু একদিন সতুকে সারা শরীর ম্যাসেজ করে দিতে বলেছিল । সাধারণত এই ধরনের কাজগুলো থানা হাজতে থাকা ছিঁচকে চোর , পকেটমার এরাই করে। সেদিন যে বড়বাবু কেন ওকেই করতে বলেছিল কে জানে ? সতু সরাসরি বড়বাবুকে না করে দিয়েছিল । ফলে যা হয় । সতুর কনট্র্যাক্ট রিনিউ হয়নি । চাকরিটাও গেল । 
   এই এলাকাটার চরিত্রটা অদ্ভুত । অসামাজিক কাজকর্মের আতুর ঘর । ড্রাগ মাফিয়া , তোলাবাজ , রাজনৈতিক দাদা , মস্তান , পতিতা নিয়ে জমজমাট অপরাধের পরিবেশ । রোজই কিছু না কিছু অপরাধ ঘটেই চলেছে । মাঝে মাঝেই এখানে ওখানে লাশ পড়ে থাকে । এলাকা দখলের লড়াই চলে । আশিস , তারক , শম্ভু এরা সব এই অঞ্চলের দাদা । প্রত্যেকের নিজস্ব এলাকা ভাগ করা আছে । যে যার এলাকায় শের ।লোকজন থাকে জবর দখল করা জমিতে বানানো বস্তিতে । কোন কোন তালেবর লোকজন পাকা বাড়িও বানিয়ে নিয়েছে । এখানকার কোন বস্তির ঘর দেখে বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল , কোন ঘরে কি চলছে। কোথাও পতিতাবৃত্তি , কোথাও ড্রাগের ব্যাবসা , কোথাও বেআইনি অস্ত্রের কারবার । আর এটা তো সত্যি , যেখানে যত খারাপ কাজ , সেখানে পুলিশদের ততো বেশি আমদানি । আর কেনা জানে , পয়সার কোন ভালো মন্দ হয় না । 
   সতু একটু আধটু আনমনা হলেও , টার্গেটের দিকে খেয়াল রাখছিল । মাঝখানে ছেলেটা চিংড়িহাটা মোড় থেকে দুজনের জন্য মনে হয় কিছু খাবার টাবার নিয়ে এলো। এত ঘন কুয়াশায় অবশ্য সতু মুখ দেখতে পায়নি । তারপর আবার মাফলারে মুখ ঢাকা ছিল। তবে জ্যাকেট পড়ে আছে , এটা সতুর খেয়াল আছে । 
   আর মেয়েটাকে তো প্রথম থেকেই পেছন থেকেই দেখছে । কি পড়ে আছে , কেমন দেখতে , কিছুই ধারনা নেই । 
সতু চারপাশ তাকিয়ে দেখল , মোটামুটি জায়গাটা এখন ফাঁকা হয়ে গেছে । ওই দুজন এখনো বসে আছে । সতুর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলল , এইতো সময় । সিগারেটের শেষটা পা দিয়ে পিষে,  সতু ,  ক্যাপ্টেন ভেড়ির বেঞ্চে বসা যুগলের দিকে এগোল তার পাওনা আদায়ের জন্য । 
   কিন্তু সতুকে আশ্চর্য করে দিয়ে , ছেলেটা হঠাৎ, মেয়েটাকে বসিয়ে রেখেই সাইন্স সিটির দিকে হাটা দিল, দ্রুত । সতু কিছুক্ষণ হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকাল । সতুর পেটের মধ্যে গুরগুর করে উঠল। মেয়েটা তো একদম নড়াচড়া করছে না । সতু দ্রুত মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল । 
   এক ঝলক দেখেই সতু বুঝতে পাড়ল মেয়েটার শরীরে প্রাণ নেই । মেয়েটার পড়নে লোকাট রঙ্গিন কুর্তা । কালো লেগিংস । কোন ওড়না নেই । সারা মুখে চড়া মেকআপ । চুলে বিভিন্ন রঙের হাইলাইটস । 
   সতু পকেট থেকে রুমাল বার করে হাতে জরিয়ে নিয়ে চারপাশে তাকাল । না আশেপাশে কেউ নেই । সতু মেয়েটার গলার   ধমনিতে হাত রাখল । না কোন স্পন্দন নেই। সতু বুঝতে পারলো , এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ঝামেলায় পড়তে হবে। সতু ওরফে সত্যবান চৌধুরী আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। পেছনে পড়ে রইল একজন অজানা, অচেনা মহিলার লাশ । (ক্রমশ)

                             

tchak1961@gmail.com
কলকাতা 

2 comments:

  1. শুরুটা বেশ ভালো হয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

    ReplyDelete
  2. ei city te kato ki ghate, Mane hoi eta Tari akta. eager 2 know d end of it.

    ReplyDelete