......মহুয়া মিত্র
ঐ বাচ্চাগুলোরও
পরীক্ষা আছে, কিন্তু জীবনের
রংটাও আছে । আর পাপানের হয়তো একটা রঙিন ভবিষ্যত আছে তবে বর্তমানের পরীক্ষাগুলো
বড্ড কঠিন বেরঙের বাস্তবের মধ্য দিয়ে ওকে পার করতে হচ্ছে ।
পরশু থেকে
পাপানের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু । অথচ আজ দোল । ওর পরীক্ষার জন্য এবছর পাপানের মা,
বাবা, কাকা -- কেউই বাড়ীতে রং নিয়ে হুলস্থুল করছে না
। অন্যান্য বার এদিন ওদের বাড়ীতে সকাল থেকে রং খেলা শুরু হয়ে যায় । সকাল বেলা
পাপানের ঠাকুমা ঘরের ঠাকুরের পায়ে আবীর দিয়ে সবাইকে আবীরের টিপ দিয়ে ওনার হাতে
তৈরি নাড়ু খাইয়ে মুখ মিষ্টি করান । সকলে ওনার পায়ে আবীর দিয়ে প্রণাম সেরে রং
খেলায় মেতে ওঠে ।
বাবা মা কাকা ,
সবার বন্ধুরা দলে দলে
আসতে থাকে । এছাড়া পাড়াপ্রতিবেশীরাও আসে । পাপানের মামা মাসীরা আসে । কত আবীর,
কত রং , হৈহৈ, খাওয়া দাওয়া -- সে এক এলাহি কান্ড । পাপান কাউকে পেলে ভালো না হলে একাই
পিচকিরিতে রং ভরে একে ওকে দিয়ে আনন্দ করে ।
কিন্তু এবারটা
একদম চুপ । ঠাকুমার সকালে মিষ্টি খাওয়ানো অবধি সব হয়েছে, তারপর মা পাপানকে নিয়ে পড়ানো শুরু করেছেন ।
প্রথম দিন অঙ্ক পরীক্ষা । গত ইউনিট টেস্টে পাপান অঙ্কে তিরিশে আঠাশ পেয়েছে মাত্র ।
কিন্তু এবার তো পুরো পঞ্চাশে পঞ্চাশ পেতেই হবে । এবার পাপান বড়ো স্কুলে পড়ে,
উঁচু ক্লাসে উঠবে । সব
ঠিক থাকলে পাপান এবারে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠবে । গতবার পর্যন্ত সে নার্সারি স্কুলে
পড়ত , এক ব্যাপার । কিন্তু
এবারে পুরো আলাদা ব্যাপার ।
দরজা জানলা আটকে
ঘরে বসে পাপান মায়ের কাছে পড়ছে । ওর পরীক্ষার জন্য এবার বাড়ীতে রং খেলা বন্ধ ।
একটু বেলা হতে কাজের রমলা মাসী ঘর ঝাঁট দিতে ঢুকল । পাপানকে দেখে বলল , --
" ও বৌদি, পাপান সোনা এবার রং খেলবে না গো ? সব বার তো তোমরাও কত মজা করো ! "
মা গম্ভীর মুখে
বললেন, -- " পরশু দিন পরীক্ষা
তো । তাই আজ এসব ফালতু রং খেলে সময় নষ্ট করতে হবে না । "
-- " সে তো বৌদি আমার
দুই ছেলেরই পরীক্ষা চলছে । সেই ভোরে উঠে পড়ে নিয়ে এখন দেখ গে ঐ মাঠে কী হৈচৈটাই
না করছে ! যাক্, এখন চলো তো বাসন
মাজা সাবানটা দেবে । "
-- " এই অঙ্ক গুলো কর্
, আমি আসছি । "
মা যেতে পাপান
উঠে জানলাটা খুলে দেখল মাঠে কতগুলো বাচ্চা
রং মেখে খুব খেলছে । একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ছোট্ট পাপানের বুক থেকে ।
mahuyamitra827@gmail.com
No comments:
Post a Comment