1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, March 31, 2021

আমার মেয়েবেলা

 

ছবি  : ইন্টারনেট 
আমার মেয়েবেলা 
 রীনা ঘোষ


কোনো স্মৃতি মেঘলা দিনের মতো আঁধারে ঢাকা আবার কোনোটা সূর্যের মতো উজ্জ্বল ,তীক্ষ্ণ তার তেজ। সত্যি বলতে স্মৃতিচারণায় যে এতো সুখ আগে তা জানতাম না। এই সূর্য-মেঘের লুকোচুরিতেই আমার সকল স্মৃতি জমানো আছে। সযত্নে তুলে রাখা ।শুধু মাঝে মাঝে তাদের নিজস্থান থেকে বাহিরে এনে ঝাড় পোছ করে আবার যথাস্থানে রেখে দেওয়া। এ যেন এক মজার খেলা, এক মজার অনুভূতি।

স্কুল জীবনের কথা বলতে কার না ভালো লাগে । সেই নিয়মমাফিক জীবন, তার মধ্যেও কত অবাধ্যতা, কত দুষ্টুমি আর অনেকটা ভালোবাসা মিশে থাকা। আমার কাছে তো সেটা ছিল এক সুখস্বপ্ন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেই দিনগুলিকে আমার রূপকথা বলে মনে হয়।

আমার সেই রূপকথার রাজ্যটি কেমন ছিল সেটা জানতে ইচ্ছে করছে? হ্যাঁ জানাবো বলেই তো আজ এই তলোয়ার ধরা। এই তলোয়ার তো সেই সুখস্বপ্ন, সেই রূপকথার রাজ্য থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।

আমার দ্বিতীয় স্কুল, যেখানে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীর পাঠ গ্রহণ করি, একটু একটু করে বাল্যের আমির কৈশোর  থেকে যৌবনের দোড়গোড়ায় পৌঁছোনোর সাক্ষী। তখন এই পথটা অতিদীর্ঘ মনে হলেও এখন বুঝতে পারি সেই দিনগুলির মর্ম।

প্রথম যেদিন স্কুলের মুখ্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিলাম সেদিনের কথা বিশেষ মনে নেই। আসলে আমি লঘু স্মৃতি সম্পন্ন গোছের মানুষ। সকালে কি খেয়েছি রাতে সেটা ভুলে যাই। বাজার করতে গেলে সব কিছু হুবুহু লিখে নিয়ে যেতে হয় নইলে 'চিরে আনবো কি জিরে' এই নিয়ে বড় গোল বাধে আমার মস্তিষ্কে। এজন্য অবশ্য আমার জননীর চিন্তার শেষ নেই। তখন তো আমার নিজেই  নিজেকে গঞ্জনা দিতে ইচ্ছা করে।

যাই হোক পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির পর পুরনো স্কুল, পুরনো বন্ধু আর বিশেষ করে আমার পুরনো স্কুলে দাদাভাই দিদিভাই দের( পুরনো স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের এই নামে সম্বোধন করা হতো) অভাবটা পূরণ হতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল। আসলে আমার জীবনের প্রথম স্কুলে আমি এত ভালোবাসা, এত স্নেহ পেয়েছিলাম যে সেই বাহুডোরে এড়িয়ে অন্য স্নেহের বাঁধনে নিজেকে জড়াতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল।

এখানে বলে রাখি আমি কিন্তু ছোট থেকেই শান্ত স্বভাবের, সেই হেতুই হয়তো আজ পর্যন্ত বিশেষ করে বিদ্যা গ্রহণের জন্য যত জায়গায় যেতে হয়েছে সেখানকার গুরুস্থানীয় ব্যক্তিদের থেকে স্নেহ-ভালোবাসা টাই বেশি পেয়েছি। এটা আমার কাছে খুবই সৌভাগ্যজনক ।

ফিরে আসি আবার আমার সেই বন্ধু ঘেরা স্কুলের ব্যালকনিতে। আমাদের স্কুলটি ছিল শুধুই মেয়েদের। শিল্পা, শ্রাবন্তী, অঙ্কিতা, রিয়া, ঝুমা, প্রিয়া, তৃষা, প্রিয়াঙ্কা, উর্মিলা ছাড়াও আরও অনেকে ছিল যারা আমার এই অধ্যায়টি কে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। শহরের একদম মধ্যগগনে ছিল আমার এই স্কুল খানি। অফিস টাইমে যেমন ভিড় তেমনি গোলযোগ। রোদ উঠলে তো পিচঢালা রাস্তার তাপে মাথার ব্রহ্মতালু পর্যন্ত জ্বলে উঠত। ক্লাস রুমের ভিতরেও তেমনি গরম। আমাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল যারা বাড়ি থেকে হাতপাখা নিয়ে যেত আর বাকিরা( যাদের মধ্যে আমি পড়ি) কখনো বই খাতা মুড়িয়ে পবন দেবকে আহবান জানাত।

একদিন হলো কি বাইরের তীব্র গরমের সাথে ইলেকট্রিক ও পাল্লা দিল, বিনা কারণে আমাদের উপর প্রতিশোধ নেবে বলে। ক্লাসের পর ক্লাস চলছে আর আমরা গলদ ঘর্ম হয়ে অসুস্থ হবার যোগাড়। এমন সময় সপ্তম পিরিয়ডের ঘন্টা পড়ল। ক্লাস এলেন অঙ্কের ম্যাডাম জয়ন্তী দি। অংকের মতো কঠিন বিষয়ের মানুষ যে এত সরল হতে পারে সেটি জয়ন্তী দিকে না দেখলে কখনো জানতেই পারতাম না। উনি ক্লাসে এসেই বললেন- কি ! গরম লাগছে?। আমরাও সারা ক্লাস একসাথে সুর করে বলে উঠলাম হ্যাঁ..। তখন উনি বললেন- " আজ আমরা একটি খেলা করব, তার জন্য সকলকে চোখ বন্ধ করতে হবে( সকলের চোখ বন্ধ করার পর) এবার আমরা ভাববো যে আমরা হিমালয়ের চূড়ায় বসে আছি আর আমাদের ভীষণ শীত করছে।" এটি করার পর গরম কমেছিল কিনা খেয়াল নেই কিন্তু জয়ন্তী দির প্রতি আমাদের ভালোবাসাটা আরো বেড়ে গেছিল আর এই খেলাটা করে এতো মজা পেয়েছিলাম যে এটি আমাদের প্রিয় খেলা গুলির অন্যতম হয়ে উঠেছিল। এখন এগুলি মনে পড়লে হাসি পায় আবার ভালোও লাগে।

এতো গেল গরমের কথা, শীতেও তেমনি কনকনে ঠান্ডা। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবা একটা সোয়েটার কিনে দিয়েছিল যেটা তখন আমার পা অব্দি ছিল। ক্লাস এইট পর্যন্ত সেটি পড়ে দিব্যি স্কুলে গেছি। জিনিসটি এতটাই বড় ছিল যে তারমধ্যে আমি সম্পূর্ণটা ঢুকে গেলেও কারোর ঠাওর করার সাধ্যি ছিলনা ভিতরে কোন মানুষ আছে। এই সোয়েটার এর মধ্যে হাত-পা গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে শীতের দিনে ক্লাস করতাম। আর শুধু আমিই নয়, আমার বন্ধুরাও একই পন্থা অবলম্বন করে শীত দৈত্যের সাথে যুদ্ধ করত।

বর্ষাকাল আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি আর আমার পেটের ভিতর মায়ের হাতের গরম খিচুড়ি আর ডিম ভাজা,তারসাথে স্কুল কামাই ব্যাস আর কি চাই? এটা অবশ্য আমাদের বন্ধুদের প্ল্যান ছিল। প্রথমেই বলেছি আমাদের স্কুলটি শহরের একদম মাঝখানে অবস্থিত। তাই একটু বৃষ্টিতেই নর্দমা ভরে গিয়ে প্রায় হাটু পর্যন্ত জল হয়ে যেতো। আর বৃষ্টি টাও ঠিক স্কুল ছুটির সময়েই এসে উপস্থিত হত। আমাদের স্কুলে আবার বেশ কড়া নিয়ম ছিল জুতো-মোজা ছাড়া স্কুলে ঢোকা একদমই নিষেধ। এই সুযোগ টাই কাজে লাগাতাম । রিক্সাকাকুর কথার অবাধ্যতা করে জুতো-মোজা সমেত সেই নর্দমার হাটু জলে বেজায় আনন্দে লাফালাফি করতাম। ব্যাস পরের দিন স্কুলের হ্যাপা থেকে একদম নিশ্চিন্ত । মোজা জুতো শোকায় নি, স্কুলে যাবো কি করে।

শুধু কড়া নিয়মই নয় আমাদের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাচ-গান-নাটক এগুলিও বেশ হতো। আমার যা গলা তাতে গান টা আমার দ্বারা কোনোদিনই হয় না। আর ক্লাস ফোর এর পর থেকে নাচ টাকেও  ইতি বলে দিয়েছিলাম। বাকি থাকল নাটক , যেটার উপর আমার বিশেষ আকর্ষন ছিল।

একবার হলো কি - আমি একটি পাশের বাড়ির কাকীমার পাট পেয়েছিলাম। যেখানে আমাকে একটি বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে যেতে হবে। তাই সাজগোজটা বেশ মানাইসই করতে হবে।এদিকে নাটকের দায়িত্বে ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ পিয়া দি। যিনি ওষ্ঠ রঞ্জনের জন্য আমাকে খয়ের ও চুন সহযোগে পান খেতে বললেন। এতে নাকি আমার ঠোঁট লাল হবে আর আমি বিয়ে বাড়ি যাওয়ার উপযুক্ত হব। ঠোঁট রাঙানোর জন্য যে বাজারে অনেক প্রসাধনী পাওয়া যায় এটা বলার সাহস হয়নি।পরে শ্বেতাদি(ইনিও নাটকের দায়িত্বে ছিলেন) এসে পিয়াদি কে বলে আমায় পান খাওয়া থেকে উদ্ধার করেন।

ইতিহাসের টিচার শ্বেতাদি। আমরা অবশ্য ইংরাজী বিষয়টাই এনার কাছে বেশি পড়েছি। ইনি একবার আমাদের এক গল্প শুনিয়েছিলেন - হাজার দুয়ারি ঘুরতে গিয়ে নবাব সিরাজ দৌলার কবরের মাটি এনে ঘরে রাখায় প্রতি রাতে ঘরের মধ্যে কোনো অদৃশ্যের দীর্ঘশ্বাস আর বাড়ির ছাদের উপর  কারোর পদশব্দ শুনতে পেতেন। পরে সেই মাটি অন্যত্র ফেলে তবে রেহাই পেয়েছিলেন। এই গল্প শোনার পর দীর্ঘদিন আমি রাত্রে ঘর থেকে বেরোতেই পারতাম না। তবে হ্যাঁ ইনি ছিলেন আমার স্কুল জীবনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষিকা। সপ্তম শ্রেনীতে সমস্ত বিষয়ে পাশ করার জন্য এনার থেকে অষ্টম শ্রেনীর ইংরাজী বই উপহার পেয়েছিলাম।

আমি তখন অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী। স্কুল জীবনে যদি কাউকে সবচেয়ে ভয় পেয়ে থাকি সেটা হল অঙ্কের  নূপূর দি। আর ওই বছর ইনি ছিলেন আমাদের শ্রেনী শিক্ষিকা।সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম এই বুঝি ডাক এলো। আর একটা মজার ব্যাপার ইনি আমাকে ঝুমা বলে ডাকতেন। উনি কি আমার নামটা ভুল জানতেন নাকি আমার মুখাবয়বের সাথে ঝুমা নামটার বিশেষ কোনো মিল আছে সেটা জিঞ্জাসা করার সাহস বা সুযোগ কোনোটাই আমার হয়নি।

তবে অষ্টম শ্রেনীর বার্ষিক ফলাফল বেরোনোর দিনটা আজ ও আমার চোখে ভাসে। আমি আর আমার বন্ধু প্রিয়া কোনো বিশেষ কারনে নূপূর দিকে ডাকতে গেছিলাম। দিদি তখন আমাদের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন -  'জীবনে বড়ো হউ' । আমরা দুই বন্ধু খুব অবাক হয়ে ছিলাম আর তার সাথে নিজেদের খুব ভাগ্যবতী ও মনে হয়েছিল - এই রকম একটি রাগী মানুষের কোমল ব্যাবহার আর স্নেহের স্পর্শ পেয়ে।

আমাদের নাতিদীর্ঘ জীবনে বন্ধু সংখ্যা বেশ দীর্ঘই হয় কিন্তু তাদের মধ্যে বিশেষ কোনো বন্ধু সবচেয়ে কাছের হয়, যাকে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড বলি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নাম গুলি জোড়ায় জোড়ায় উচ্চারিত হয়। আমার স্কুল জীবনে ও সেই রকমই ছিল। যেমন- তৃষা-প্রিয়াঙ্কা, মাম্পি-জয়ন্তী, প্রিয়া-রিয়া। কিন্তু আমার সেই রকম সৌভাগ্য ঘটেনি, তবে শিল্পার সাথে আমার বোঝাপড়াটা একটু অন্যরকম ছিল। এছাড়া ছিল শ্রাবন্তী, সময়ের ব্যবধানে এখন আর আমাদের কোন যোগাযোগ নেই কিন্তু সেই দিনগুলি আমরা একসাথে খুব উপভোগ করেছি। হাসি মজা যেমন ছিল পড়াশোনা টাও কিন্তু নেহাত মন্দ হতো না আমার মা-বাবার কথায় আমার স্কুল জীবনটি  সুসঙ্গেই কেটেছে।

এই স্কুলজীবনেই আমার প্রথম কবিতা, অবশ্য যৌথ উদ্যোগে সমাপ্ত করেছিলাম। তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রী আর আমার লেখার সঙ্গী নাজনীন। জীবনের প্রথম কবিতার প্রথম লাইনটি এখনো মনে আছে -  "অন্ধ হে প্রতিবন্ধি "। ভীষণ উৎসাহে কবিতাটি ছাপানোর জন্য চিঠি লিখেছিলাম তখনকার এবং এখনকার নামকরা শিশু সাহিত্য ম্যাগাজিনে কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা ছাপা হয়নি। এখন বুঝতে পারি সেই অপরিপক্ক হৃদয়ের লেখা আমায় দিলে আমিও কখনো ছাপাতাম না। কিন্তু তখন কবিতা   অপ্রকাশের দুঃখে আমার কবিতার ডায়েরি আপনা আপনি ই বন্ধ হয়ে গেছিল।

আমার এক বন্ধু ছিল অর্পিতা। এত উত্ফুল্ল মেয়ে আমার জীবনে খুব কম ই দেখেছি। সব সময় ওর মুখে হাসি লেগেই থাকত। সেদিন দশম শ্রেণীর টেস্ট  পরীক্ষা চলছিল। আমি যে ঘরটিতে বসেছিলাম সেখান থেকে বরদির (হেড মিস্ট্রেস) ঘরটি দেখা যেত । দেখলাম সকলে এসেছে পরীক্ষা দিতে এসেছে কিন্তু অর্পিত আসেনি। পরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে হঠাৎ দেখি বড়দির ঘরের সামনে অর্পিতা দাঁড়িয়ে। ভাবলাম হয়তো কোন অসুস্থতার জন্য পরীক্ষা দিতে পারবে না তাই বড়দির থেকে অনুমতি নিতে এসেছে। যথারীতি পরীক্ষা শেষ হল আর অর্পিতা আমাদের কাছে এসে দাঁড়ালো । হাসিমুখেই বলল - " বাবা আর নেই, স্ট্রোক হয়েছিল "। বুঝলাম এই হাসির পিছনে বড় ব্যথা লুকিয়ে আছে। আসলে ও তো কখনো কাঁদতে জানে না, কখনো দেখিনি ওকে কাঁদতে। পৃথিবীতে হয়তো এমন কিছু মানুষ আছে যারা তাদের হাজার দুঃখ, হাজার বেদনাকে হাসির মাধ্যমেই মুক্তি দেয়।

এই প্রথম ষোলো বছর বয়সে এসে মৃত্যু নামক জিনিসটি আমায় ভাবতে বাধ্য করল। যা আমি এখনো ভেবে চলেছি। ঐদিন বাড়ি ফেরার পর থেকে ওর ওই একটা কথা বারবার আমার ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠছিল "বাবা আর নেই"। কিন্তু মানুষটি কোথায় গেল? মানুষ কিভাবে মারা যায়? আর কোথায় ই বা যায়? তাদের কি আর কখনো দেখা যায় না? হাজার চেষ্টা করলেও কি ফিরে পাওয়া যায় না? কেন এমনটা হয়? পরবর্তী প্রায় এক সপ্তাহ, আমি ভালো করে খেতে পারিনি, ঘুমোতে পারিনি। বড় আঘাত পেয়েছিলাম। মাঝে মাঝে ভাবনা আসতো অর্পিতার কি হবে? কিন্তু সেসব দিন চলে গেছে এখন অর্পিতা সুখী ঘরণী আর তার সুন্দর একটি কন্যা সন্তান ও আছে।

খারাপ স্মৃতিতে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক, তাই এবার একটু অন্য দিকে যাই । আমার এক শ্রেণি বন্ধু নৃত্য পরিবেশনায় তুখর । কিন্তু আমার মনে হতো সে অভিনয় পেশায় নিযুক্ত হলে বেশি নাম অর্জন করত। এখানে বলে রাখি সেই বিশেষ বন্ধুর নাম উল্লেখ করব না, তাকে 'বিশেষ বন্ধু' বলেই ডাকবো। কারণ এই গরিবের লেখাটি কোনোক্রমে তার চোখে পড়লে সে অতিশয় কষ্ট পাবে। যাইহোক নবম শ্রেণীর প্রথম অঙ্ক পরীক্ষা ক্লাসের দুজন ছাড়া আমরা  প্রায় সবাই দশ এর মধ্যে তিন পেয়েছিলাম। সেই বিশেষ বন্ধুটি ও ব্যতিক্রম নয়। খাতা দেখার পর তার প্রতিক্রিয়া ছিল বাংলা সিরিয়ালের কোন বয়োজ্যেষ্ঠের তাঁর সম্পত্তির দলিল ছিঁড়ে ফেলা বা কোন গৃহবধূর ডিভোর্স পেপার ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলার মত উত্তেজনাময় একটি পর্ব। তো সেই বিশেষ বন্ধু খাতাটি তো ছিঁড়ে ফেলে কিন্তু অংকের দিদিকে কি জবাব দেবে? তখন অবশ্য আমাদের মিথ্যা বলতে হয়েছিল যাতে বন্ধুটি শাস্তি না পায়। তবে ওর পিছনে এটা নিয়ে আমরা কিন্তু বেশ মজা করতাম।

এবার আসি তৃষার কথায়। ওর কথা আমার অন্য একটি লেখাতেও আছে। তাও ওকে নিয়ে না লিখলে আমার স্কুল জীবনের মধ্যে অসম্পূর্ণতা রয়ে যাবে। ওই একটি মেয়ে যার মধ্যে বিনোদন মূল্য( এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যালু) ছিল। ও একাই আমাদের সকলকে মাতিয়ে রাখত।

প্রথমেই বলেছি আমি একটু শান্ত স্বভাবের ছিলাম। তবে অন্যেরা যে দুষ্টুমি গুলি করেছে সেগুলো খুব আগ্রহের সাথেই উপভোগ করতাম। তবে নিজে যে কোন দুষ্টুমিই করিনি এটা বলা ভুল কিন্তু আজ থাক সে কথা। এই তৃষা প্রত্যেকের নকল করতে পারতো। সে জীবনবিজ্ঞান পিরিয়ডে মানুষের চোখ( কর্নিয়া) আঁকা হোক বা সাঁওতাল উপজাতি থেকে উঠে আসা আমাদের আর এক দিদির বাচনভঙ্গির নকল - সবকিছু এত নিখুঁত করত যে আমরা না হেসে পারতামই না।

এক দিদি ক্লাসে এসেই আমাদের সবাইকে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে দিতেন। এরপর এক এক করে পড়া ধরতেন, যে পড়া পারবে সে বসার অধিকার পেত আর যে পারবেনা সে তো আগে থেকে দাঁড়িয়েই আছে। ক্লাসে দাঁড়িয়ে থেকেও যে এত আনন্দ পাওয়া যায় তা হয়তো এই বন্ধু গুলো কে না পেলে ভাবতেও পারতাম  না।

এভাবেই আমার জীবনের সুন্দর একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি আর অপর একটি অধ্যায়ের সূচনা ঘটে।

 (সমাপ্ত)


rina21.ghosh@gmail.com
নদিয়া 

No comments:

Post a Comment