![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
পেন ও একটি (আত্ম)হত্যাকান্ড
অর্ণব চ্যাটার্জী
অফিস থেকে ফিরে শার্টটা খুলতেই ঠক করে একটা পেন পড়ল মাটিতে। দিলীপবাবু তুলে দেখলেন বেশ দামী একটা পার্কার পেন। উনি তো এত দামি পেন ব্যবহার করেন না। তাহলে অফিসের কারুরই হবে। কাল জিজ্ঞেস করতে হবে। এ নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে দিলীপবাবু অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
রাতে ডায়েরি লেখা দিলীপবাবুর অনেকদিনের অভ্যেস। সেদিন দামি পেনটা দিয়েই লিখতে বসলেন।
কিন্তু লিখতে বসে দিলীপবাবুর মনে হল পেন উনার হাতে থাকলেও অদৃশ্য কেউ যেন উনাকে দিয়ে লেখাচ্ছে।
'' আমি অদিতি সেন। ৩৬/১ নকুল ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা। পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকের ক্রমাগত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত সপ্তাহে আমি আত্মহত্যা করি। এর মূল আছে আমার বর আর শ্বাশুড়ী। কিন্তু এরা প্রভাবশালী হওয়ায় ছাড়া পেয়ে গেছে। আমার উপর দিনের পর দিন যে নির্যাতন হত সব আমি ডায়েরিতে লিখে রেখেছি। আমার ডায়েরিটা ওরা পুড়িয়ে ফেলতে পারে এই আশঙ্কায় ওটা বাগানের টগর গাছের নিচে পুঁতে ফেলি। আমি বিচার চাই।'
এর পর ডায়েরিতে ফুটে উঠল এই কেসের তদন্তকারী অফিসারের নাম, ঠিকানা।
লেখাটা শেষ হবার পর দিলীপবাবু এই শীতেও ঘামতে লাগলেন। এসব কি ভুতুড়ে কান্ড ঘটছে উনার সাথে!
এই জায়গাটা তো উনার পাশের গলিতে! হ্যাঁ, মনে পড়ছে একটা বউ মারা গেছিল। পাড়ার লোক জড়ো হয়েছিল। তবে উনি থানা পুলিশের চক্করে যেতে হতে পারে ভেবে ওদিকে আর বিশেষ ঘেঁসেননি।
রাতে ঘুম আসছিল না। যাতায়াতের পথে দেখা মুখটা যেন বারবার ভেসে উঠছে চোখের সামনে। অনেক ভেবে দিলীপবাবু নিজের কর্তব্য স্থির করে ফেললেন।
পরদিন রাতে হাঁটতে হাঁটতে ওই বাড়িটার পিছন দিকে এলেন। কারণ গেটের সামনে একটা পুলিশ বসেছিল। এই বয়সেও দিলীপবাবুর শরীর বেশ ফিট। উনি পাঁচিলটা টপকে ভেতরে ঢুকলেন। তারপর অন্ধকারে চোখটা সইয়ে নিয়ে একসময় খুজে পেলেন টগরগাছটা। সাথে আনা মাটি কাটার খুপরিটা দিয়ে খুব আস্তে আস্তে মাটি খুঁড়ে বার করলেন ব্রাউন কভারের ডায়েরিটা। সন্তর্পণে চারিদিক দেখে দিলীপবাবু ফের পাঁচিল টপকে বাইরে এসে ডায়েরি আর খুপরিটা জ্যাকেটের ভেতর ঢুকিয়ে বাড়ি ফিরলেন। অপর্ণা শুয়ে পড়লে দিলীপবাবু ডায়েরিটা বার করে পড়তে লাগলেন। সত্যি! কি অত্যাচারই না সহ্য করতে হয়েছে অসহায় মেয়েটাকে!
উনি একটা ভুয়ো ঠিকানা থেকে তদন্তকারী অফিসারকে ওই ডায়েরি আর তার ভেতরে রাখা মেডিক্যাল রিপোর্টেগুলো পাঠালেন।
কয়েকদিন পর পেপার পড়তে গিয়ে চমকে উঠলেন দিলীপবাবু। এক কোণে বেরিয়েছে নকুল ব্যানার্জি লেনের খবরটা। সেই মেয়েটার স্বামী, শ্বাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এর মূলে নাকি ওই মেয়েটির লেখা একটা ডায়েরি যা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ডায়েরির প্রেরক কে সেই নিয়ে পুলিশ এখনো ধন্দে। দিলীপবাবুর ঠোঁটের কোণে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।
No comments:
Post a Comment