![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
অন্য কোপাই
অনিন্দিতা হাজরা
এক
ভালোবাসা!! এর কোনো বয়স বা সময় কোনোটাই হয় না। তবে ভালোবাসার গভীরতা
থাকলে তার প্রকাশ একটু কমই হয়।সব সম্পর্ক হয়তো পরিনতি পায় না। কালের অতলে হারিয়ে
যায়। তেমনি একটা সম্পর্ক ছিল মহুয়া আর পলাশের। দুজনের বাড়ি খুব কাছাকাছি ছিল। মনের
মধ্যে জমে ছিল অনেক ভালোবাসা, একে অপরকে উজাড় করে ভালোবেসেছিল।কিন্তু
নিয়তি!!! পলাশ মানুষ হিসাবে যে খুব খারাপ তাও না। তবে পুরুষতান্ত্রিক আচরণের
বহিঃপ্রকাশ প্রতি বাক্যেই ছিল। নিজেকে উদারপন্থী বলে দাবি করলেও পলাশ মোটেও উদার
ছিল না। তার মধ্যে মধ্যযুগীয় মানসিকতা কিছুটা ছিল। একটা মেয়েকে রান্না যেন শিখতেই
হবে, করতেই
হবে। মহুয়ার মতো উচ্চশিক্ষিত একজন মেয়েকেও অনেক প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়েছিল।
আজ সবকিছুই অতীত। তবে ভালোবাসাতে খাদ ছিল না। আজ মহুয়ার মনে হয় পলাশ
ঠিক কি চায়? ঘরোয়া মেয়ে? নাকি খুব শিক্ষিত মেয়ে? প্রাচ্য ও
পাশ্চাত্যের সমন্বয়? কি চেয়েছিল? মহুয়া এখন একজন লেখিকা, অনেক মানুষ তাকে
চেনে। তার কয়েকটি বই ও প্রকাশিত হয়েছে। আজ অনেক ধরনের বুদ্ধিজীবী মানুষ তার বন্ধু।
তার বর্তমান সম্পর্কে সে খুব খুশি। বর্তমান প্রেমিক মানুষ হিসাবে অসম্ভব ভালো।
একমুঠো উতল হাওয়ার মতো মহুয়ার জীবনে।
মহুয়া নিজে একজন প্রগতিশীল মহিলা। অত্যাধুনিক। সিগারেট থেকে মদ্যপান
সবই করে। সে নারী স্বাধীনতা নিয়ে বেশ সোচ্চার বরাবরই। তবে আঠারো- উনিশ বছর বয়সে
তার যতটা সোচ্চার বিষয় ছিল, আজ আর নেই। মহিলাদের অতিরিক্ত লোভ, পরশ্রীকাতরতা,
পরচর্চা
পরনিন্দা এবং সবশেষে বিয়ে নামক ব্যবসা করা। এইগুলোর কোনোটাই মহুয়া আর মানিয়ে নিতে
পারে না। পার্থিব ভোগবিলাসে পূর্ণ জীবন, আজ এটা চাই, কাল ওটা চাই
এইসব ক্লিশে লাগে তার।
জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে যতটুকু দরকার ওইটুকুই যথেষ্ট।
দুই
চলো, শান্তিনিকেতন যাই – একরাশ আনন্দ নিয়ে মহুয়া বললো।
পলাশ বললো- গেলে এখন চলো, বসন্তোৎসবের সময় ভীড় হবে খুব।
মহুয়াকে বললো – বাড়িতে কি বলবে?
মহুয়া একগাল হেসে বললো- একটা সাতাশ বছরের মেয়ের যদি এইটুকু স্বাধীনতা
না থাকে সেটা আশ্চর্যের। বাড়িতে সবাই তোমাকে পছন্দ করে। আর প্রেম করতে গেলে এত ভয়
পেলে চলে না।
পলাশ একটু নিশ্চিন্ত হলো।
ছয় বছর আগের এই ঘটনা ভাবলে মহুয়ার বেশ হাসি পায়। তারা গিয়েছিল
কবিগুরুর স্মৃতিজড়িত শান্তিনিকেতনে। সেদিন ছিল পূর্ণিমা। হোটেলের ঘরে একাত্ম
হয়েছিল দুটি শরীর। ভালোবেসে একে অপরের কাছে এসেছিল। আর এসেছিল দুটি আনন্দিত মন।
কোপাই এর জলে পা ডুবিয়ে ছিল দুজন। ঘুরে ঘুরে দেখেছিল সব।
তারপর কোপাই দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে।
আজ এইসব ভাবলে মহুয়ার বেশ কষ্ট হয়। শরীরটা খারাপ লাগে। পলাশের জন্যে
এখনো অনুভূতি আছে?
তিন
আজ দুজনে আবার শান্তিনিকেতনে। আজ পলাশ বিবাহিত, সুন্দরী বৌ তার।
কোপাই এর ধারে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। লাল শালে মহুয়া তার সুগন্ধ ছড়িয়ে বিদ্যমান। হঠাৎ
পিছন থেকে পলাশের ডাক। পিছনে ফিরে দেখে পলাশ ও তার স্ত্রী অর্পিতা দাঁড়িয়ে। দুজন
প্রাক্তন একে অপরের দিকে অবাক নয়নে দেখে। সূর্য অস্ত প্রায় যাচ্ছে।
মহুয়ার চোখের সামনে মনে হয় অন্য কোপাই, বড় বিষন্ন।।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment