1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, August 15, 2022

ঋণশোধ

ছবি : ইন্টারনেট
ঋণশোধ 
অর্ণব চ্যাটার্জী

ক্রিং..ক্রিং...বেলটা বেজেই চলেছে। এই রবিবারের সকালেও ঘুমোনোর উপায় নেই। একরাশ বিরক্তি নিয়েই দরজাটা খুলল সুমন।
কিন্তু দরজা খুলতেই দেখে এক বয়স্ক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে। সুমন চিনতে না পেরে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। তাই দেখে ভদ্রলোক হেসে বললেন ' কি রে! চিনতে পারছিস না তো? খোকনকে ডাক।'
খোকন হল সুমনের বাবার ডাকনাম। সুমন ডাকতেই বাবা এসে খানিক্ষণ চেয়ে রইলেন। তারপর উচ্ছসিত ভঙ্গিতে বলে উঠলাম ' আরে সন্তু যে! তুই তো ভুলেই গেছিলি আমাদের। এই শুনছো, সন্তু এসেছে।' এই বলে মাকে ডাকলেন। ডাক শুনে মাও হন্তদন্ত হয়ে এসে উপস্থিত। উনিও অবাক।
মা বাবার কথাবার্তায় সুমন বুঝল ওই ভদ্রলোক হলেন বাবার পিসতুতো ভাই সনাতন সাহা ওরফে সন্তু। থাকেন হুগলিতে। সুমনের ছেলেবেলায় একবার নাকি এসেছিলেন, কিন্তু তার স্মৃতি সুমনের কিছুই মনে নেই। কথায় কথায় জানা গেল উনার আগমনের হেতু। সুমনের বাবা নাকি উনার পিসেমশাইকে একসময় পাঁচহাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। এতদিন পরে সন্তুবাবু সেই টাকা শোধ করতে এসেছেন।
বাবা তো শুনে প্রথমে অবাক হলেও পরে হেসে ফেললেন ' দূর! সে কবেকার কথা। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তোর কথায় মনে পড়ল। আর তার জন্য এতদিন পরে..সত্যি তুই পারিস বটে। তবে হ্যাঁ, এই একটা বাহানায় আমার বাড়িতে তো তোর পা পড়ল।'
উনি এতদিন পরে বাড়িতে এসেছেন, মা  বললেন খেয়ে যেতে। কিন্তু সন্তুবাবু বললেন উনার খুব তাড়া আছে। উনি সুমনের বাবা মাকে হুগলিতে যাবার নিমন্ত্রণ করে গেলেন। বললেন একটা অনুষ্ঠান আছে। কিন্তু কিসের অনুষ্ঠান তা জিজ্ঞেস করতে একটু হেসে বললেন 'ঠিক সময়ে খবর পেয়ে যাবে।' সুমনের বাবা ভাবলেন সন্তু বোধয় কোনো সারপ্রাইজ দিতে চায়। তাই এই নিয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। 
এরপর 'কে কেমন আছে' এই জাতীয় কিছু টুকটাক  কথাবার্তা হল। জানা গেল উনার একমাত্র মেয়ে রিমি স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখন হুগলিরই একটু স্কুলের টিচার। বাবা মা দুজনেই শুনে খুব খুশী। রিমিকে অভিনন্দন জানালেন।
এসবের মাঝে সন্তুবাবু সুমনের বাবার হাতে পাঁচ হাজার টাকা ক্যাশ দিলেন। বাবা প্রথমে নিতে না চাইলেও উনি জোর করতে একসময় নিলেন।
একসময় সন্তুবাবু বিদায় নিলেন। মা আর বাবা উনার যাবার সময় বারবার বললেন আরেকদিন আসতে। জবাবে উনি কেমন যেন ম্লান হাসলেন।
সন্তুবাবু বেরোবার ঘন্টাখানেক পড় ফোনটা বেজে উঠল। সুমনের বাবাই ধরলেন ফোনটা। রিমির কান্নাভেজা গলা পাওয়া গেল 'কাকা! বাবা গতকাল রাতে হার্ট এটাকে চলে গেছেন। কদিন ধরেই তোমাদের খুব নাম করছিলেন। কিসের যেন একটা ধারের কথা বলতেন। সে যাই হোক। সামনের সপ্তাহে কাজ। তোমরা কিন্তু অবশ্যই আসবে....'
সুমনের বাবা আর কিছু শুনতে পেলেন না, হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। শুনে বাকিরাও যেন বজ্রাহত। সামনের টেবিলেই এখনো রাখা আছে টাকাটা।
...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment