ছবি : ইন্টারনেট |
ভূত চতুর্দশী
সন্দীপ দত্ত
--- দাদাই, আজ কি ইন্ডিয়ার হ্যালোউইন ইভ?
প্রশ্নকর্তা টুবাই। অলকেশবাবুর প্রবাসী নাতি। জন্মের পাঁচ বছর পর এই প্রথমবার বাবার জন্মভিটেতে পদার্পণ। এবার তাই মিত্তির বাড়ীতে স্পেশাল দীপাবলি। গ্রামের সাবেকি ভাঙাচোরা বাড়িও সেজেছে বিদেশি আলোকমালায়।নাতির প্রশ্নে মৃদু হাসেন অলকেশবাবু। তারপর বলেন,
---অনেকটা একইরকম বটে! তবে পার্থক্যও আছে। হ্যালোউইন ইভে তোমরা ভয়ানক সব মুখোশ পরে ভূতেদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দাও। আর আমরা, এই ভূত চতুর্দশীর রাতে, আকাশ প্রদীপ জ্বালিয়ে তাদের বাড়ি ফেরার রাস্তা আলোকিত করি।
--- আকাশ প্রদীপ কি, দাদাই?
--- উঁচু গাছের মগডালে, কিম্বা বাঁশের আগায় একটা প্রদীপ জ্বেলে রাতভর ঝুলিয়ে রাখা হতো আগে। তাইই আকাশ প্রদীপ।
--- আচ্ছা! কিন্তু বাবাই যে বলে ভূত বলে কিছু নেই!
--- আসলে, যাকে ইংরেজিতে তোমরা ঘোস্ট বল, তা আছে কিনা জানিনা। তবে ভূত মানে আবার অতীতও হয়, তোমরা যাকে পাস্ট বল। যাকিছু গত, মানুষ, ঘটনা --- সবই পরবর্তীকালে আমাদের স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসে, তাই-ই হয়তো ভূত। মানুষ তো অতীতকে সচরাচর ভাল ভাবে নেয়না, তাই ভূতকেও ভয় পায় হয়তো।
--- কিন্তু আজ যে আকাশ প্রদীপ জ্বালানো হলনা! তাহলে ভূতেরা বাড়ি ফিরবে কেমন করে?
--- কে বলল! প্রকৃতি নিজে হাতে শত শত আকাশ প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে। ওই দেখো।
দাদুর প্রসারিত আঙ্গুলের ঠিকানায় চোখ মিলিয়ে ছোট্ট টুবাই তাকায়। বাড়ির সামনের উঁচু গাছ গাছালীতে অসংখ্য ছোট ছোট আলো অনবরত জ্বলছে আর নিভছে।
বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই, লোডশেডিঙে নেভা আলোগুলি হঠাতই জ্বলে ওঠে। টুবাই আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। আকাশ প্রদীপগুলো কেমন স্তিমিত হয়ে যায়।
--- দাদাই, যাই মাকে গিয়ে বলি, তুমিও এসো না!
---- তুমি তোমার ঘরে যাও। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি।
সাদা পোশাক পরা অলকেশবাবু প্রিয় আরাম কেদারাটি থেকে উঠে দাঁড়ান।বংশ প্রদীপের ছেড়ে যাওয়া আলোটুকুই হয়তো তার আকাশ প্রদীপ! সেই আলোপথ ধরে তাকেও এবার ফিরতে হবে।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment