1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

হীরা-মানিক জ্বলে

 হীরা-মানিক জ্বলে

অভিষেক ঘোষ 

      একটা বিচিত্র বিশ্বে ঢুকে গেছি কখন যেন। দুপুরে ঘাসের ওপর বসে থাকতে থাকতে ঝিমুনি এসেছিল খানিক। হঠাত্ ঘুম গেল ছুটে। না, আমার রুমালটা হঠাত্ বেড়াল হয়ে যায়নি, বরং আমি আর কি আমি আছি? আমি সামনের জামগাছটা কখন যেন বাঁশঝাড় হয়ে গেছে। আমি সন্তর্পণে উঁকি দিয়ে দেখলাম, চিনিবাস ময়রা যাচ্ছে, পিছনে একটা কুকুর। কিন্তু এ তো সেই লোক নয়, কুকুরটাও তো গেছে বদলে। আর ঐ মাঠজোড়া কাশফুল কি উবে গেল নাকি?

ট্রেনটা ছুটে আসছিল কালো ধোঁয়ার মেঘের মধ্য দিয়ে। "দেবী" দয়াময়ী উদ্ভ্রান্ত হয়ে সেদিকেই কি ছুটে আসছিলেন? আমি সাবধান করতে গেলাম। মগনলাল অট্টহেসে বলে উঠলেন... শাবাস! 

কাট্ কাট্!! একটা ব্যারিটোন ভেসে এল। সব যেন মুছে গেল নিমেষে। 

মনমোহন। মৃদু হেসে বললেন.. "কূপমণ্ডূক নাই বা হলে,একটু চেয়ে দেখ না? সামনে কি অনন্ত দেখতে পাও না?"  

আমি দেখলাম চেয়ে। শান্তিনিকেতনের মেঠো পথ। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া। কিন্তু দেখলাম এ কী আশ্চর্য! ঘাসের শিষে শিষে শিশিরবিন্দু, আর আলোর নাচন নেই, আকাশ থেকে নেমে আসছে রাশি রাশি মিঠাই এর হাঁড়ি। যেন গ্রহান্তরের জীব অ্যাং হয়ে নেমে আসবে কোনও প্রায়ান্ধকার মাঠের পাশে, ছায়া ছায়া পথে, হাত বাড়িয়ে দেবে... বন্ধুত্বের। 

না। চারুলতার ধরা হবে না সে হাত। ফ্রিজ শট মুহূর্তে থামিয়ে দেবে প্রাণস্পন্দন, দোলনা সহসা যাবে থেমে, কলম নড়বে না, হাতের বীক্ষণযন্ত্র হয়ে যাবে ঝাপসা, অকস্মাৎ আঁধার নেমে আসবে, করুণ সুরে বীণার ধ্বনি দূর থেকে সুদূরে বেজে বেজে যাবে, হৃদকুঠুরি চেপে ধরবে কোনও মাংসমেদহীন কঙ্কাল। একটা ব্যারিটোন ভেসে আসবে... কাট্। 

অরিন্দম ডুবে যাচ্ছে... কাম, ক্রোধ, লোভের পাহাড়ে ধ্বস নেমেছে, অরিন্দম তলিয়ে যাচ্ছে রিপুর গভীরে। কোনও বিশ্বম্ভর রায়ের লাঠি টেনে ধরবে না তার হাত, তার পা যাবে ডুবে। অতলে। মুহূর্তে দুলে উঠবে হাজার হাজার ঝাড়বাতি, জলসাঘরে উঠবে কালবোশেখীর ঝড়। জীবন যেন উচ্চকিতে বলে উঠবে... ছুটি... ছুটি... ছুটি.... 

ক্ষ্যাপা পরশপাথর খুঁজে ফেরে। একখণ্ড নাম না জানা পাথর যদি বদলে দিতে পারে একটা গোটা পৃথিবী, তছনছ করে দেয় সব আইন-কানুন-বিধি-নিষেধ, তবে কেমন হয়? অথবা কালই এসে যদি কেউ বলে "ওহে! এই নাও। তিনটে বর দিলাম গুণে গুণে। কোন্ পথে যাবে? সত্যের দিকে? নাকি ঋতের পানে? অথবা কেউ যদি এখনই বলে ওঠে-" চন্দ্র-সূর্যের গতি নিয়ন্ত্রণ করি আমি, বুদ্ধ তো সেদিনের ছেলে, মনু আমাকে শ্লোক লিখে দেখিয়ে নিত। বলেছিলাম, করেছ কি মনু, বাদ দাও, বাদ দাও, এসব পড়বে কে আর বুঝবেই বা কেডা। সব ছিঁড়ে উড়িয়ে দাও পাহাড়ের উপর থেকে। ফেলে দাও। সব ভেসে যাক কবিতা হয়ে।" 

ক্ষ্যাপারা তবুও পরশপাথর খুঁজে চলে। 

লালমোহনবাবুও খোঁজেন। তা‍র যাত্রা অনন্ত, ফেলুদার সন্ধান অসীম। জীবন কি ধরা দেয়? দুহাত বাড়িয়ে কি বলে.." সব, সব, সব ভ্যানিশ।... হাতে শুধু পেন্সিল, তোমার ফিতে দিয়ে যাই মাপতে যাও ছাব্বিশ ইঞ্চির বেশি আর কীই বা পাবে? আর তা হবে নাই বা কেন... আমি কমছি। আমার বয়স কমছে। কমতে কমতে কমতে কমতে.... 

আচ্ছা! যদি রাজা সত্যিই খোলা মাঠে নেমে হাওয়া খেত, অথবা রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজায় বসে হেঁটমুখে মুখে পুরে দিত একটার পর একটা বাদাম, যদি হীরক রাজা নিমেষে হয়ে যায় হ্যাপি প্রিন্স, যদি বরফি আর বিজ্ঞানী একটা অ্যানাইহিলিনে "নেই" করে দেয় সবকিছু, যদি কাশীর গলি সোজা এসে মেশে কলকাতার জনারণ্যে, যদি ঘর এসে বাইরে মিশেও না মেশে, যদি আপনি হঠাত্ হয়ে যান গণশত্রু, যদি গঙ্গাজল ভাসিয়ে দেয় স্টেথোস্কোপ, যদি অসীম হয় সীমাবদ্ধ যদি কাঞ্চনজঙ্ঘায় মেঘ জমে.... যদি আরও আরও কিছু হয়.... এত ভিড়ে নিজেকে পাবে তো খুঁজে অপু? 

"পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন – মূর্খ বালক, পথতো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে, ঠ্যাঙ্গাড়ে বীরু রায়ের বটতলায় কি ধলচিতের খেয়াঘাটের সীমানায়? তোমাদের সোনাডাঙ্গা মাঠ ছাড়িয়ে, ইছামতী পারহয়ে, পদ্মফুলে ভরা মধুখালি বিলের পাশ কাটিয়ে, বেত্রবতীর খেয়ায় পাড়ি দিয়ে, পথ আমার চলে গেল, সামনে, সামনে, শুধুই সামনে ... দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে, সূর্যোদয় ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে, জানার গন্ডী এড়িয়ে অপরিচয়ের উদ্দেশে ...

   দিন রাত্রি পারহয়ে, জন্ম মরণ পার হয়ে, মাস বর্ষ মন্বন্তর, মহাযুগ পারহয়ে চলেযায় ... তোমাদের মর্মর জীবন-স্বপ্ন শ্যাওলা-ছাতার দলে ভ’রে আসে, পথ আমার তখনো ফুরোয় না ... চলে ... চলে ... চলে ... এগিয়েই চলে ...

      অনির্বাণ তার বীণা শোনে শুধু অনন্ত কাল আর অনন্ত আকাশ ...

সে পথের বিচিত্র আনন্দ-যাত্রার অদৃশ্য তিলক তোমার ললাটে পরিয়েই তো তোমায় ঘরছাড়া ক’রে এনেছি! ...

     চল এগিয়ে যাই।"

তবু.... এগিয়ে আসবে একটা ট্রাম, সোজা চলবে, সমরেখায়, ঝিলিক দিয়ে যাবে জীবন, বৃষ্টি পড়বে টুপ টুপ, মহানগর জাগবে, কল্লোলিনী হবে, ঝমঝমিয়ে ঢুকবে রেলের গাড়ি, জ্বলে উঠবে বিদ্যুতের আলো, টেলিগ্রাফের খুঁটি বেয়ে বেয়ে ছুটে যাবে ভাবীকালের বাণী... পাষাণ টুটে ব্যাকুল বেগে। সহসা মেঘ সরে ঝলকে উঠবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। তার অরুণ আলোয় ভেসে যাবে সোনার কেল্লা, মুকুল কুসুমিত হয়ে হেসে হেসে লুটিয়ে পড়বে। 

একটা ব্যারিটোন বেজে উঠবে। ফোর থ্রি টু ওয়ান। কাট্। 

ধর্ম মানুষকে ধারণ করে। মানুষও তাকে ধারণ করে বৈকি। ধর্ম প্রধানতম। তাই চতুর্বর্গে তার স্থান সর্বোচ্চ। মানুষ বড় না ধর্ম, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকেই। তবে ধর্মের থেকে অর্থ আর কাম যদি বড় হয়ে যায় তাহলে তার পরিণাম ভাল হয় না। হীরকরাজার দেশে অধর্মের বাস, ধর্মান্ধতা দেবীর প্রতিপাদ্য বিষয়, সেখানে মানবধর্মের চেয়ে রিচুয়াল মুখ্য, প্রধান। সদ্গতিতে রিলিজিয়নের ফুটিফাটা বীভৎস আর কদর্য কঙ্কাল। আর মহাপুরুষ ধর্মব্যবসা আর মুখোশপরা ভণ্ডামিকে তুলে ধরে। এ যেন রথ, পথ, মূর্তি সকলেই নিজেকে দেবতা ভাবছে। আর প্রকৃতই যিনি অন্তর্যামী তিনি অন্তরের নিভৃত কোণে বসে হাসেন।

বাহ্য আড়ম্বর যখন সিম্পল লিভিং হাই থিঙ্কিংকে পাক দিয়ে দিয়ে বেঁধে ফেলে, বুদ্ধি যখন অস্ত যায় তখন গডম্যানের উত্থান ঘটে। তিনি প্রকৃতই বুদ্ধিমান বটে, কিন্তু শয়তানও তো বুদ্ধিমান। তিনি অবাঙ্মনস্-গোচরকে গোচরীভূত করতে চান। যিনি বুদ্ধিরও অতীত অথবা যাঁকে ইন্দ্রিয়-মন-বুদ্ধিপরম্পরায় একে অপরকে অতিক্রম করে করে জানতে পারা যায়, বুদ্ধি গডম্যানের কাছে বন্ধক রেখে তাঁকে পাওয়া কি নিতান্তই সম্ভব হয়? এই ভক্তকূলের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সম্ভবতঃ প্রফেসর ননী ঘাস অক্সিডাইজড করে খাদ্যে পরিণত করার কথা ভাবেন। এরা মিথ্যা বাগাড়ম্বরকে ভাবে উচ্চচিন্তা, চাতুর্যকে ভাবে জ্ঞান। গডম্যান চন্দ্রসূর্যকে কন্ট্রোল করতে থাকেন, মাঝে মাঝে অয়েলিং করে নেন। মনুর রেখে যাওয়া মনুসংহিতা এডিট করতে করতে তিনি যীশু আর গৌতম বুদ্ধকে কাজের পরামর্শ দিতে থাকেন। বিরিঞ্চিবাবারা আনাচে কানাচেই থাকেন। সমাজের সব সেক্টরেই এঁরা নিজের নিজের মত আধিপত্য বিস্তার করতে চান। তবে শেষরক্ষা কি হয়? ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে চৌবাচ্চায় ডুবেই মরণ আসে। অতএব সাধু সাবধান। 

সত্যজিৎ রায়ের বহুবিদিত অনেক ছবির থেকে সরে এসে একটা ছবি আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। তার অন্যতম একটা কারণ হতে পারে একেবারে শৈশব থেকে অজস্রবার ছবিটি দেখেছি। দূরদর্শনে দেখাত। বিজ্ঞাপন বিরতি ইত্যাদি ধরে অনেকক্ষণের ব্যাপার হলেও এই ছবির শেষটা আমি কখনো মিস করেছি বলে মনে হয় না। আরো নির্দিষ্ট ভাবে বললে, এই ছবির শেষটা দেখার জন্য আমার বসে থাকা। হেনরিক ইবসেনের অ্যান এনিমি অফ দ্য পিপল। গণশত্রু।

এক অদ্ভুত পরিসমাপ্তি। অভাবনীয় পরিমিতিবোধ। পরিচালক এই পর্বে সরে এসেছেন আউটডোর লোকেশন থেকে। চারদেওয়ালে ঘেরা শাণিত তর্ক-বিতর্ক, তীব্র ঘাত-প্রতিঘাত। নাটকের অনুপ্রেরণায় নির্মিত বলে নাটকীয় দ্বন্দ্ব এখানে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে প্রক্ষুব্ধ ও বিস্ফারিত হয়। স্তিমিত হয়। আর শেষ পর্যন্ত অনিঃশেষের দিকে এগিয়ে যায়। সুর কাটে। সুর বাঁধা হয় আবার। আশাবাদ এখানে চূড়ান্ত অবলম্বন হলেও কর্ম, সত্য ও অখণ্ড মেরুদণ্ডকে বিকিয়ে না দেওয়ার তীব্র প্রতিজ্ঞাই এখানে আশার সঞ্চার করে। বাস্তব পরিস্থিতি ও এথিক্সের সংঘাত, নির্দিষ্ট করে বললে হাত ধরে হাঁটতে থাকা রাষ্ট্র, দুর্নীতি, রিলিজিয়ন মুখোমুখি হয় মেডিক্যাল এথিক্স, মানবতাবাদ ও ধর্মের। এ ছবি দেখায় মানুষই দেবতা গড়ে। এখানে মানুষ পৌঁছয় দেবত্বের পথ ধরে একদম খাদের ধারে, অসহায় হয়। দেবতা হয় গণশত্রু। তারপর ফিনিক্স হয়ে উড়ে যায়।

এরপর আসে শেষের শুরু। রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজ যখন বিরূপ হয়, সেই ক্রান্তিকালে, দ্রোহকালে যখন সব আলো একে একে নিবে আসছে, তখনই চেতনার দেদীপ্যমান দৈবী আলো ঘিরে ধরে। গণশত্রুর হাত ধরে গণ। প্রকৃত শত্রু যে বা যারা, মুখ আর মুখোশের অন্তরাল থেকে তারা আত্মপ্রকাশ করে। তখন থাকে শুধু দুটো ভাগ - গণ আর শত্রু। এবার সম্মুখসমর।

সভ্যতার ইতিহাস জানায়, বিজ্ঞান আর রিলিজিয়ন এর দ্বন্দ্বজর্জর ঘাতপ্রতিঘাতী অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতের পথরেখা এঁকে দেয়। ধর্ম না রিলিজিয়ন - একটি শেষপর্যন্ত জয়যুক্ত হয়। আত্মদীপ হয়ে সভ্যতার পথে, কল্যাণের পথে বিজ্ঞানের সত্যনিষ্ঠা এখানে মুখ্য হয়ে ওঠে। ডাক্তার বলে ওঠেন, সব শেষ হয়ে যায়নি। আমরা এখানেই থাকব। এখানেই তো আমার কাজ। বাইরে তখন জনতার সমর্থনের মিছিল এগিয়ে আসছে। অফ দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল এর প্রকৃত তাত্পর্য তখন নিমেষে ধরা দেয়।

 লঙশট। স্টাডিতে তখন বিষাক্ত চরণামৃত তীব্র ব্যঞ্জনাময়। রিলাজিয়নকে ঘিরে ধরে বিজ্ঞান। চিকিৎসকের স্টেথোস্কোপ যন্ত্রের ভরসার ঘেরাটোপে তখন সে। বিজ্ঞানের আলোয় প্রতি অণুতে অণুতে বিচার হবে তার। স্টেথোস্কোপে সমাজের হৃদয়ের ধ্বনি কোন সুরে বাজবে?

একজন ডাক্তার আর কিছু আত্মীয় অনাত্মীয় চরিত্র তাকে ঘিরে থাকে। কেউ স্বার্থপর, কেউ কুচক্রী, কেউ সংঘাতপ্রবণ, কেউ মেরুদণ্ডী, কেউ অমেরুদণ্ডী, কেউ সমব্যথী, কেউ ধার্মিক, কেউ তাত্ত্বিক, কেউ ইয়েসম্যান, কেউ পলিটিক্যালি কারেক্ট, কেউ বিদ্রোহী। সর্বত্র ক্রমবিন্যস্ত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। শেষ পর্যন্ত দুটি ভাগ থাকে। সত্ অসত্। ভাল মন্দ। শুভ অশুভ। ধর্ম আর বিজ্ঞান। স্বাধীন আর পরাধীন। মুক্তচিন্তা ও সংকীর্ণতা। সবুজ আর ধূসর তাদের রং। বাইরে কেউ ধূসর হয়েও গভীরে সবুজ। বাইরে সবুজ হয়েও গভীরে ধূসর। শেষে থাকে দুটো পরিচয়। কে দশের আর দেশের মঙ্গল চায় আড়ম্বরে আর অন্তর থেকে। আর কে হয়ে যায় জনগনের শত্রু। গণশত্রু। যে শোকোত্তীর্ণ ক্রান্তপ্রজ্ঞ। দেখতে পায় ভাবী আশঙ্কার গোপন পদসঞ্চার। কিন্তু তার স্বরূপের পূর্ণোদ্ঘাটন ঘটে না। ভেঙে পড়তে পড়তে অপরিসীম শক্তিসঞ্চয় করে মহাপ্রলয়ের আকার নিতে পারে হয়তো সে। হয়তো বা তীব্রতর আঘাত হেনে ভেঙে পড়াই তার ভবিতব্য। তিনি ডাক্তার অশোক গুপ্ত। গণশত্রু। হেনরিক ইবসেনের নাটকের ছায়ায় গণশত্রু স্বাধীনতোত্তর ভারতবর্ষের আর প্রাগিতিহাসোত্তর মানবসভ্যতার একটা ডিসকোর্স তথা রাজনৈতিক ভাষ্য। যেখানে মুখোমুখি লড়াই করে ধর্ম ও বিজ্ঞান। মানবসভ্যতার দুটি পরমাশ্চর্য জিয়নকাঠি। ধর্ম - বিজ্ঞানে ভেদ নেই একটা পর্যায়ে। যেমন কোনো সংঘাত নেই আধুনিকতা আর আধ্যাত্মিকতায়। যখন তারা সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে ঘোরাফেরা করে তখন বিজ্ঞান পরে ধর্মের মুখোশ। আর ধর্ম বিজ্ঞানের ভেক ধরে। তারা দুলতে থাকে একটা বিপুল সার্কাসের তাঁবুর সুউচ্চে এক ট্রাপিজ থেকে অন্য ট্রাপিজে। আমরা হাসি, হাততালি দিই আর জোকারের মত উঠি আর পড়ি। তবুও কেউ কেউ থাকে অবাধ্য বাঘের মত। ফায়ার রিঙে তারা ঢোকে না। বাইরে দিয়ে যায়, চাবুক খায়, হালুম করে। তাতেও আমরা হাততালি দিই আর হাসি।

একটা লড়াই কিন্তু জারি থাকেই। জল জীবন দেবে না জীবন নেবে। যদি বিজ্ঞান জেতে তার ধর্ম হবে জীবনের পরিপালন। আর যদি অন্য কিছু হয়? সেটা ধর্ম নয়। বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞান যখন পাশে পায় ধর্মকে আর ধর্ম পায় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তখন তাদের দুজনেরই অনন্তযাত্রার শুরু। সেই যাত্রা ঠুনকো রিলিজিয়ন, তাবিজ, চরণামৃতের থেকে বহু ব্যবধানে অমৃতের পথে। আপন আলোক জ্বেলে তামসী রজনীর পরপারে যাত্রা। তখন বুঝি মেঘ আর কুয়াশা সরে গিয়ে সোনার কেল্লার মত কাঞ্চনজঙ্ঘা জেগে উঠবে একটা দুঃস্বপ্নের পর।

একটা ছবির দৃশ্য। বিক্রম আসছে তার সকল দীপ্তি আর শৌর্য নিয়ে। দ্বাদশবর্ষীয় বালক। তার হাতে সত্য। তার চোখে চেতনার দীপ্তি। তার মুখ আলোকিত স্বর্গীয় প্রভায়। সে যেন দেবশিশু। সে ভেঙে দেবে সব অচলায়তন আর কুটিলতার ফাঁদ সে কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলে নিষ্কলুষ করবে চরাচর। সে বয়ে আনে অনন্ত আলো, তার সামনে কাল তুচ্ছ, ঝঞ্ঝা তুচ্ছ, মৃত্যু তুচ্ছ, লয় তুচ্ছ। সে আসে অনাদি দীপ্তি আর সত্যের আদর্শ নিয়ে। সে মিতভাষী, ঋতবাক্। সে অজাতশত্রু, অমিতবিত্ত। সে রুদ্র অথচ শিব। সুন্দর। সে বিক্রম।

অচলায়তন ভেঙে গুরু আসেন। কিন্তু গোডোর জন্য অনন্ত অপেক্ষা থেকে যায়। অপু মিলিয়ে যায় দিগন্তে। তারাপদ ছিন্ন করে বন্ধনহীন গ্রন্থি। সব্যসাচী অজানায় পাড়ি দেয়। কেউ আদর্শের জন্য, কেউ মুক্তির জন্য, কেউ সৃষ্টির জন্য। কেউ নির্ঋতির জন্য। এদের সৃষ্টি অবিনশ্বর। স্থিতি চিরকালীন। লয় অনন্ত।

বিক্রম কোন সাহিত্যের চরিত্র নয়। তার অস্তিত্ব শুধু চেতনায় ভাস্বর থাকে। অবিচল সত্যের আদর্শে আর মিথ্যাদীন শক্তির আস্ফালনের বিপ্রতীপে তার অমলিন শাশ্বত স্থিতি।

বিক্রম, এক দ্বাদশবর্ষীয় শিশু। সেই শিশু, যে বলেছিল অনন্ত বিস্ময়ে... রাজা তোর কাপড় কোথায়?

আরেকটি চিত্র। সিনেমা চলেছে তার নিজস্ব ভাষার ব্যবহারে, স্বকীয়তায়, স্বাধীনতায় আর নির্মেদ পরিবেশনে। এ আরেক কাহিনী মূলতঃ ইট কাঠ কংক্রিটের রুক্ষতায় নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার অভিমুখে। কিন্তু এখানে আছে বহুস্তরীয় ভাববিন্যাসের উপাদান। মহানগরের নায়িকা ঘরেবাইরের বিমলা নয়। এমনকী সত্যবতী, সুবর্ণলতা বা বকুলও নয় সে। বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় এক উত্তর আধুনিক সংবেদনের অধিকারিণী সে। এ কাহিনী নিম্ন মধ্যবিত্তের রক্ষণশীল ও সংশয়াকীর্ণ ধূসর ঘেরাটোপ থেকে বৃহত্তর স্বার্থপর জগতে পা রাখার কাহিনী। যেখানে মানুষ প্রকৃতই একা। স্বতন্ত্র। অথচ স্বার্থের বন্ধন আর আদান প্রদান নির্ভর সম্পর্কের সংঘাত ঐ সাংসারিক ক্ষুদ্র গণ্ডীতেও। অচলায়তন ভেঙে বেরিয়ে আসার মুহূর্তগুলোতে তা নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। 

নায়িকা চাকরি পায় সেলস গার্লের। সেলাই মেশিন বিক্রির। চাকরি ঘুরে ঘুরে সংযোগস্থাপন করে মেশিনের ডেমনস্ট্রেশন ও বিক্রয়। সেলাই এখানে সম্পর্কবন্ধনের বার্তাবহন করে। কিন্তু লক্ষণীয় যে তার মাধ্যম হল যান্ত্রিক। তাই কৃত্রিম। সুখ দুঃখের মেলবন্ধন এ নয়, মানবিক ছোঁয়া রেখে যায় না কোথাও। সব হয় নিভাঁজ, নিখুঁত, সুন্দর অথচ প্রাণহীন। 

শিক্ষিত, ভদ্র নিম্নমধ্যবিত্তের সংকট, দোদুল্যমানতা, অনিশ্চয়তা, আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তি - অপ্রাপ্তি এখানে পদে পদে। জীবন চলে এখানে একমুখী ট্রামের গতিতে। ছবির টাইটেল দেখা যায় ট্রামের একরৈখিক তার বেয়ে এগিয়ে যাওয়ার চিত্র। মধ্যে মধ্যে ঘর্ষণে আলো ঝলকায়। ঐটাই জীবনের আর চেতনার দীপ্তি আর সৌন্দর্য। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা নিয়ে আসে বড় সিদ্ধান্ত। আচম্বিতে। আপাত হঠকারী অথচ মানবিক। যেটার বড়ই অভাব এই মহানগরের পাঁজরে পাঁজরে। এখানে আছে কুটিল পঙ্কিল ঈর্ষা, আত্মাবমাননা, স্বার্থসংঘাত, অমানবিক মুনাফানির্ভর কর্পোরেট, বাণিজ্যিক চাল, ক্রেতা ও বিক্রেতায় বিভক্ত পৃথিবী, বাজার, চাকরির সঙ্কট, ব্যাঙ্কফেল, অর্থনৈতিক সঙ্কট, বিপন্ন যান্ত্রিকতা, বিজ্ঞাপনের চমক, ঝকঝকে অন্তঃসারশূন্যতা, সর্বোপরি ছাঁটাই আর বেকারত্ব। এখানে আছে সংকটের মুখে জীবনের জয়, এখানেই আছে উচ্চবিত্তের আপাত রমণীয় দরদ, মূল্যবোধের টানাপোড়েন, অবিশ্বাস আর ভেঙে ভেঙে চুরমার হয়ে আবার স্ফূলিঙ্গ হয়ে জেগে ওঠা। এ কাহিনী তবুও শেষ পর্যন্ত নারীজাগরণের। 

শহরে আসন্নপ্রায় সন্ধ্যার বুকে কাজ হারানো দম্পতি পরস্পরের ভরসার হাত বাড়িয়ে দেয়। তারপর ফিনিক্সের মতো মিশে যায় মহানগরের জনস্রোতে সমধর্মী ও অসমধর্মী মানুষের ভিড়ে। জীবনযুদ্ধে। অনিশ্চয়তায়। কিন্তু পরম আগ্রহে। মহানগর আবার তাদের আশ্রয় দেবে তার অনন্ত সম্ভাবনায়, প্রাণচাঞ্চল্যের রহস্যময়তায়। এই রহস্যময়তার বুকেই নিহিত থাকে তার দৈন্যতা ও শক্তি যুগপত্। তার সাক্ষী হয়ে জ্বলতে থাকে ল্যাম্পপোস্টের সদ্য জ্বলে ওঠা আলো, স্থির অথচ সমুজ্জ্বল জীবনের, আশার বার্তা নিয়ে।

অন্য আরেক কথা। 

"তৎক্ষণাৎ ভূপতি কহিল, 'চলো, চারু, আমার সঙ্গেই চলো।' চারু বলিল, 'না, থাক।"

এই দৃশ্য চলচ্চিত্রায়িত হল যখন, এই মানসিক ব্যবধান দেখানো হল হল এভাবে - - দুজনের দুটি হাত মিলতে গিয়েও মিলল না। কোন্ এক অদৃশ্য বাধা আটকে দিল দুটি মিলনোন্মুখ হাত। ফ্রিজ শট। দুটি নীরব হাত। মাঝে অনন্ত ব্যবধান আর বাধার পাহাড়। শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার রেশ থেকে গেল অনন্তকালের জন্য। এ হল মানসিক ব্যবধান। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে মানুষে মানুষে নানা ভেদ যখন বেড়েই চলেছে, অথচ কায়ক্লেশে হলেও ফিজিক্যাল এটাচমেন্ট কিছুটা বজায় ছিল, যদিও মধ্যে ছিল সাদামানুষ কালোমানুষ, আমরা ওরা, শ্রেণিবৈষম্য, ধনী দরিদ্র, ক্ষুধার্ত ও পুষ্ট, টেকস্যাভি অর নট, বুদ্ধিমান আর বুদ্ধিহীন, কেতাসর্বস্বতা এবং কেতাহীন নামানুষী জীবন... আরও কত কি। তবুও জানা ছিল হাতের উপর হাত রাখা সহজ না হলেও, সম্ভব। সম্ভব এক একটা বিশাল বাধার বিরুদ্ধে মানবপ্রাচীর গড়া। হায়, নতুন সময় এসে দেখিয়ে দিল তাও আর সম্ভব নয়। সৌজন্যে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং। এটাই হয়ত প্রকৃত ভিশন ২০২০।

মানসিক ব্যবধান পার হয়ে শারীরিক ব্যবধান ও সুরক্ষার প্রশ্নই এখন সবার উপরে। সবার উপরে মানুষ সত্য ছিল এককালে। এখন মনে হয় তারো উপরে আরও নানা সত্যের স্থান আছে। আসলে মানুষ তার বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে পারে নি - - এটাও একটা বিষয়। মনে হয় যেটুকু আশা ভরসার জায়গা ছিল তাও গেল। কোন সাহসে বলব - - আমি তাইতে কি ভয় মানি, জানি বন্ধু জানি, তোমার আছে তো হাতখানি। ঐ হাতেই তো সব সমস্যা। এতদিন যে কালো হাতগুলো ছিল অদৃশ্য অপশক্তিবাহী, যেকোন কাজেই কোনও 'হাত' থাকার আশঙ্কায় আমরা কণ্টকিত হয়ে উঠতাম, সেই আমরাই এই অসংখ্য সাদা কালো, সভ্য অসভ্য, শক্ত অশক্ত হাত গুলিকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখব সেই চিন্তায় আকুল। এটাই হয়ত উত্তর আধুনিকতার করুণ পরিণতি। এই হাতগুলি একত্রিত হয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতের মতো এক বিশাল ছায়াপ্রদ বৃক্ষ হয়ে সুস্থ পৃথিবীতে আবার কবে অক্সিজেন বিতরণ করবে? শারীরিক সান্নিধ্যে উপেক্ষা করে মানসিক নৈকট্য বজায় থাকবে? ঐ ফ্রিজ শটেই শেষ হয়ে যাবে জীবন নাকি তারও ওপারে থাকবে আরও কোনও সম্ভাবনা? 

অবশেষে। 

TWO... দুটি জীবন। দুটি যাপন। একটি পরিশেষ। টু। একটি নির্বাক ছবি। বলা হয়েছে আ ফিল্ম ফেবল। একদিকে শক্তি, ক্ষমতা, ঔদ্ধত্য অন্যদিকে কি? অসীম শক্তির বিপরীতে আগুনের কবল থেকে ফিনিক্স পাখি কীভাবে সংগ্রহ করে প্রাণবায়ু? কোন মন্ত্রবলে শিকল কেটে শিকলভাঙার গান গায় সে?

উন্নত বিশ্ব, ক্ষমতার কেন্দ্র, বর্ণশ্রেষ্ঠ, চমক জাগানো, প্রথম বিশ্বের উত্তর আধুনিক যন্ত্রজীবন বনাম অনুজ্জ্বল, বোকাসোকা হতকুচ্ছিত নামানুষী অস্তিত্ব। যুদ্ধোন্মাদনা বনাম শান্তি।

দুটি শিশু। দুটি শ্রেণী, দুটি সমাজ। কোনো বন্ধনহীন গ্রন্থি এদের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে পারে? একজনের আছে মেশিনগান, ট্রাম্পেট, স্যাক্সোফোন, দামী পানীয়, অগাধ পুষ্টি, ঔজ্জ্বল্য, তীব্র নিশানা, যন্ত্ররোবট আর অনন্ত মুখোশ। আর একজনের? তীর ধনুক, ঘুড়ি লাটাই, ঢোল বাঁশি। সেই বাঁশি বাজে আপন সুরে। তার অসীম শক্তি আরেকজনকে বিদীর্ণ করে দেয়। যুদ্ধবাজ ধনীর দুলাল কি মৈত্রীর বাণী মানে? সে দেখাতে চায় অগাধ বৈভব, প্রাচুর্য আর মেকি প্রাণচাঞ্চল্য। আসলে সে একা। একদম একা। দুষ্টু দৈত্যের মত। তাই এ কাহিনী ফেবল। সে বসিয়ে দিতে পারে একটা আস্ত সার্কাস, দামি দামি শব্দসম্ভারে বিদীর্ণ করতে পারে চারদিক। সে সাজাতে পারে নকল বুঁদির গড়। সে সাজে সম্রাট। তার আছে পেশীবল, সাম্রাজ্যবাদ আর সুন্দরের আড়ালে একটা ভয়ংকর এলোমেলো করে দেওয়ার মানসিকতা। সে দেবশিশুর মত মনোরম। অথচ বিশ্ব নিয়ে ভাঙার খেলায় পটু। তবে একটা বাঁশির সুর ভেস্তে দিতে পারে সব আয়োজন। যে বাঁশির সুরে সে খেয়াল খুশির দম্ভের ছাড়িয়ে যাওয়ার খেলায় মাতে সেই বাঁশির সুর আবার ঘুরে ঘুরে বেজে ওঠে... ঘুড়ির সীমার বাইরে দূরে দূরের আকাশে ছড়ায় সে সুর। সে সুরে থাকে শুধুই মুক্তি। ঘুড়ির মত নিয়ন্ত্রিত নয়, অবাধ। সে সুরই কি তাকে টেনে নিয়ে যাবে হ্যামলিনের বাঁশিওলার মত? তার মুখোশ খুলে পড়ে, সাজ ভেসে যায়, যন্ত্রদানব আর ভোগের চিটচিটে স্বার্থপরতা মুখ থুবড়ে পড়ে। একজন রাজা আর একটা ভিয়েতনাম।

টু। ওয়ান। জিরো।

শূন্য কিন্তু অসীম।

"দুঃখ কীসে হয়

অভাগারা ভাবে জেনো শুধু নয়

যার ভাণ্ডারে রাশি রাশি

সোনা দানা ঠাসাঠাসি

তারও হয়

জেনো সেও সুখী নয়

এক যে ছিল রাজা

তার ভারী দুখ..." 

আমি, কখনও অপু, কখনও বা অসীম, কখনও সন্দীপ, কখনও নেহাতই বা গুপী, কখনও আমি অমূল্য, কখনও গঙ্গাচরণ, কখনও শশীভূষণ তো কখনও কখনও শ্যামলেন্দু বা অমল, আমি হতে চাই মনমোহন, অথচ আমার ভবিতব্য পরেশ চক্কোত্তি, আমার বুদ্ধিতে ফেলুদা, সাধ্যে লালমোহন। আমি চোখ রাখি ম্যাজিক বাক্সে। দেখি বায়োস্কোপ কখন যেন মুভি হয়ে গেছে। আমার মনের মানচিত্রে কখন যেন হীরকরাজ্য, শুন্ডী আর হাল্লা ছুঁয়ে জয়সলমীর ঘেঁসে কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষ ছোঁয়, নরসিং সেই পথের চির অভিযাত্রী হয়ে একটা আস্ত দুরন্ত রেলগাড়ীকে ছাপিয়ে যায়, পার হয় একেকটা মাইলফলক, বিধির বাঁধন শক্ত হতে হতে বাঁধন টোটে, নটরাজের প্রলয়নাচনের পাশেই মধুর সুরে কার নিরুপম বীণা নিরন্তর বেজে চলে। 

"ছুটবে আবার কল্পনাটা সত্যজিতের পথ ধরে"। 

শতবর্ষের ওপার থেকে। শত শতবর্ষ ছাপিয়ে। 

ghosh.abhishek.abhishek@gmail.com

কলকাতা 



No comments:

Post a Comment