1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, January 1, 2020

নার্সিসাস



                                                                     ...গৌরব রায় 


          ঝিম ধরে আছে মাথার ভেতর।মোহর কে কেউ নাম ধরে ডাকছে।জানতে চাইছে কবে বাড়ি ফিরবি তাতাই?এই নামে ওকে কেউ  ডাকে না।নামটাই তো আসলে কেউ জানে না।ও বুঝতে পারল ওকে ওর মা ডাকছে।ও সারা দিতে পারছে না।ঠোঁট দুটো  কাঁপছে।
(এই ঘটনার ছমাস আগে)
তখন কলকাতায় নতুন মোহর।ওর আসল বাড়ি বর্ধমান এ।গ্রাজুয়েশন শেষ করে চলে এসেছে কলকাতায়।ওর ইচ্ছে মডেল হবে।ছোট্টও থেকেই ও খুব সুন্দর,সেটা ও নিজেই বড় হওয়ার সময়ে বুঝতে পারত।ছোট্ট মুকুট কপাল,আলতো টোল খাওয়া থুতনি,একরাশ কালো জলপ্রপাতের মত চুল আর মাখন ফরসা ত্বক।ছোট্ট ও থেকে মানে ক্লাস এইট নাইন থেকেই খুব ফিগার কনসাস।কিছুতেই শরীরে মেদ জমতে দেবে না।স্কিপিং দৌড়াদৌড়ি আরও কত কসরত করত।
এখন ট্রেডমিল এ দাঁড়িয়ে মোহর এর মনে পড়ল এসব কথা।বাড়িতে চুড়ান্ত রকমের অশান্তি করে বেরিয়ে এসেছিল নিজের জমানো কয়েক হাজার টাকা আর কিছু ডকুমেন্টস নিয়ে।গ্রামের দিকে এখনো কেউ মডেলিংকে পেশা হিসেবে ভাবতেই পারে না।ওরা ভাবে এটা নষ্টামির লাইন।
যাই হোক মোহর এর পর কলকাতায় চলে আসে।নিজের একটা পোর্টফোলিও তৈরি করে।একটা মোবাইল নেয়।ওর এক বান্ধবীর সাথেই পিজি শেয়ার করে থাকে।কলকাতার বিভিন্ন অ্যাড এজেন্সিতে গিয়ে পোর্টফলিও জমা দিয়ে আসে।প্রথম দিকে চার পাঁচ মাস কোনও কাজ ছিল না।খুব কষ্ট করে চালিয়েছে।তারপর বিটা অ্যাড আর অ্যাড গ্ল্যাম থেকে ডাক পায়।দু একটা মাঝারি মাপের জুয়েলারী দোকান এর জন্য মডেলিং করে।একটু একটু করে পায়ের তলার জমি শক্ত করে।কিন্তু ওর আসল লক্ষ্য হল মনীশ পল বা  সব্যসাচী গুপ্তার ড্রেস পরে ল্যাকমে ফ্যাশন উইক এ র‍্যাম্পওয়াক করবে আর শো স্টপার হবে। দু একজন এজেন্ট এর সাথে পরিচয় হয়েছে ওর।যারা বলেছে মুম্বাই যাওয়ার ব্যাবস্থা করবে কিন্ত তার জন্য ১-২ লাখ টাকার প্রয়োজন আর ওর ফিগার আরও স্লিম আর ট্রিম করে তুলতে হবে।ও সেইমত ক্র‍্যাশ ডায়েটিং করা শুরু  করে।সকালে একবার খাওয়া আর রাতে প্রোটিন পাউডার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া।ইতিমধ্যে ও একটা অন্য ফ্লাটে শিফট করেছে।বেশ কিছু অ্যাড এজেন্সি এর সাথে মডেল হিসেবে যুক্ত আছে।টাকাও পাচ্ছে।কিন্ত ফিগার নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতানি টা রয়েই গেল।বারবার আয়নায় গিয়ে দেখছে কতটা স্লিম হল।ওর ওয়েট লুজ করাটা ম্যানিয়ার পর্যায়ে পৌঁছল।
          গত দুদিন  ধরে কিচ্ছু খাচ্ছে না মোহর।জুস এর ওপরেই আছে।রাত্রিবেলার দিকে ওর শরীর খুব খারাপ করতে শুরু করল।দুর্বল লাগছে,মাথা ঘুরছে আর খুব ঘাম হচ্ছে।ও কোনওরকমে ওর সেই বান্ধবী  রিয়া কে ফোন করল।কথা কথা বলতে বলতেই ওর চোখ বন্ধ হয়ে এল।অন্ধকার।অন্ধকার।মোহর এর মনে হচ্ছিল ও যেন গ্যাস বেলুন এর মত দূরে কোথাও ভেসে চলেছে।ঘড়ির টিকটিক শব্দ আর চারপাশে ওষুধের গন্ধ।রিয়া আর ওর কয়েকজন বন্ধুরা মিলে মোহর কে একটা নার্সিংহোম এ ভর্তি করেছে।ডাক্তার বলেছেন,"রোগটার নাম anorexia nervosa মানে নিজের ফিগার মেনটেন করার জন্য সব খাবার বন্ধ করে দেওয়া।ব্যাপারটা একটা ম্যানিয়া।নিজেকে আরো স্লিম ট্রিম আর সুন্দর দেখার একটা ম্যানিয়া"।এর মধ্যে নার্স এসে খবর দিলো "ডাক্তার বাবু,কেবিন নং সাত এর patient is sinking"ডাক্তার বললেন,"শিগগির support system ready কর।আর dextrose 5% injection টা আবার দাও।"মোহর সেই অন্ধকারের ভেতর থেকে শুনতে পেল ওকে ওর মা ডাকছে," তাতাই,তুই কবে বাড়ি আসবি?"আসলে গত তিন বছরে একদিন ও বাড়ি যায়নি মোহর।আর হয়ত যেতেও পারবে না।ও কিছুতেই সাড়া দিতে পারল না।ডা.রায় দেখলেন ECG মনিটর গ্রাফ straight line হয়ে গেল আর পেশেন্ট এর চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।

gourab.ray7@gmail.com

কলকাতা 

No comments:

Post a Comment