1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, March 31, 2021

ইদুর ধরা সহজ নয়

 

ছবি  : ইন্টারনেট 
ইদুর ধরা সহজ নয়
সঞ্জীব ঘোষ


প্রতিদিন বাড়তে থাকা ইঁদুরের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল হয়ে পিতার আমলের একখানা ইঁদুর ধরার কল নিয়ে সকাল থেকে মেতেছিলাম। সময় এখন সুবিধার যাচ্ছে না।উপর উপর তিনদিন অফিস কামাই হয়ে গেল,তাও কিনা ক্ষীণজীবী ইঁদুরের অছিলায়।প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা কিছু গোপনীয়তা থাকে, এই আমার যেমন দুপাটি ফলস দাঁত! রাতে ঘুমনোর আগে মাথার কাছে টুলের ওপর একটা বাটিতে রেখে শোয়া আমার প্রতিদিনের হ্যাভিট। কিন্তু আজ সকালে উঠে দেখি শূন্য বাটিটা মেঝেতে গড়াচ্ছে। দাঁতটা গায়েব।কোথায় গেল! মাথায় হাত।এই ব্যাপারটা স্ত্রী ছাড়া আর কেউ জানে না।বিয়ের আগে এই বিষয়ে গোপনে সেটেলমেন্ট হয়েছে। দুজনে গোটা বাড়ির আনাচে-কানাচে আঁতিপাতি করে খুঁজলাম।এমনকি ভাঁড়ার ঘরের রহস্যময় গর্তগুলোতে প্রাণের মায়া ছেড়ে হস্তপ্রসারণ করে যখন নাগাল মিলল না তখন লজ্জায় আমার মূর্ছা যাবার জোগাড়! ঠিক করে কথা বলতে পারছি না।এই ফোকলা মুখ নিয়ে লোকসমাজে বেড়ানো বিপদ। তাই সর্বদা ঠোঁট চাপা ব্যাজার মুখ।গজাননের বাহন কীনা শেষটায় মান সম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিল! একটা ক্ষীণজীবী প্রাণীর কাছে অপদস্ত হতে হল!এই তিক্ত ব্যাপারটা হজম হয় না।রাগে মাড়ি  সিরসির করছে যত, ততই মনে হচ্ছে পরশুরাম মুরগির বংশের ওপর যেমন করালমূর্তি ধারণ করেছিলেন, তেমনি কল ফিট করে ওদের শায়েস্তা না করে শান্তি নেই।

হাতে ধরা কলটি বয়সে প্রাচীন।সামনে খাঁচার জালটা মরচে ধরে ঝুরঝুরে অবস্থা! একটু কেরামতি দেখতে গিয়ে কাঠের ফ্রেম থেকে হুস করে ছেড়ে গেল।যাঃ! এখন দুদিক উন্মুক্ত, পিছনে কাঠের তোলা-ফেলার চাকতিটা প্রথম থেকে গায়েব।তা না হয় ম্যানেজ করা যেত।এখন দু-মুখ খোলা অকেজো কলটা মুখের সামনে তুলে চৌকো পরিসরের ভেতর দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাইনোকুলার মত বেশ যুত করে আকাশ,গাছপালা দেখতে দেখতে চোখ গেল দোতলার ব্যালকনিতে দাড়িয়ে থাকা গিন্নির দিকে।সবটা এতক্ষন ও সহ্য করছিল বিনা বাক্যব্যয়ে।চোখ পড়তে একরাশ অপরাধবোধ গ্রাস করল আমায়।আজ ভোররাত থেকে গিন্নির পেট কামড়াচ্ছে। কিন্তু ফোকলা মুখে ডাক্তার ডাকার সাহস হয়নি!তড়িঘড়ি ব্যাপার ঢাকতে হাতের কলখানা দুম করে মাটিতে ফেলে আড়ষ্ঠ জড়ানো গলায় বললাম,

-শরীর কেমন?

কোনো উত্তর এল না।মহিলাদের নীরবতার অনেক রকম মানে থাকতে পারে।তবে এখন নেহাতই নিজের নির্বুদ্ধিতার প্রতীক বলে মনে হল।ফোকলা মানুষেরা কি বউয়ের চিকিৎসায় ডাক্তার ডাকে না? তবে ডঃ সেন বড় বাক্যবাগীশ মানুষ, তার ওপর খোঁচা মেরে কথা বলায় পটু।এমন দন্তহীন অবস্থায় দেখলে টেবিল চাপড়ে সেই ফেমাস অট্টহাস্যের সঙ্গে টেকো কম্পাউন্ডার কে দেখিয়ে রসিকতা করতে কার্পণ্য করবে না।কেমন রাগ চড়ে বসলো।হতচ্ছাড়া নেংটি ইঁদুরগুলোর জন্য এমন ফ্যাসাদে পড়তে হল।স্ত্রী ঘৃণ্য বিরূপতার শিকার হতে হল কিনা শেষটায়!ক্রোধ প্রশমিত করতে পারলাম না।রাগ যত বাড়ছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইঁদুর নিধনের সংকল্প।তার জন্যে দরকার একটা কল।তাই বাজারমুখো হতেই হবে।

মনকে সান্ত্বনা দিয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে তিনবার প্রণাম ঠুকে বেরিয়ে পড়লাম।যা থাকে কপালে! ত্রস্ত পায়ে পথে নেমে কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে পা চালাচ্ছিলাম। আজ কোনো ভাবে কারোর প্ররোচনায় সাড়া দেবো না।শুধু ঠোঁট টিপে হেসে ব্যস্ততা দেখিয়ে কাটাব।

কিন্তু গলির মুখে ভাগ্যশ্রী ক্লাবের অপগণ্ডগুলো বসে।আমাকে দেখে এক্ষুনি না লাফিয়ে তেড়ে আসে।সপ্তা'খানেক আগে দুশো টাকা বাজি হারার পর আর ওই মুখ হইনি।আপাতদৃষ্টিতে এরাই প্রথম ও প্রধান প্রতিপক্ষ। ওদের যা আবার ত্রিকালদর্শী চোখ, এড়ানো কি চাট্টিখানি কথা! এদিকে নিজের মান সম্মান দাওপে... কি করা যায় ভেবে সামনের চা দোকানে কিছুক্ষনের জন্য গা ঢাকা দেব বলে সাইড হতে যাচ্ছি অমনি বেখেয়ালে ঠোকাঠুকি। নিজেকে সামলে কপালে হাত বুলোতে বুলোতে চেয়ে দেখি,ঝেটা গোঁফের নিচে দেঁতো হাসি ছড়িয়ে ট্যারাদা সম্মুখে দাড়িয়ে।

_“এই যে গুরু এত তাড়া কিসের শুনি?"

আচম্বিত প্রশ্নের প্রথম ধাক্কা সামলে যেই টার্ন নিয়েছি অমনি হাতটা চেপে ধরল।

ট্যারাদা স্বনামধন্য মানুষ।ফুটবল পায়ে বাঘা বাঘা ডিপেন্ডারদের কাৎ খাইয়ে আর ল্যাঙ মেরে ফেমাস।ওর বিপক্ষে খেলা যে কি ঝকমারি! এই ট্যারাদা তো যত অঘটনের মূলে।সেবার আমাদের ভাগ্যশ্রী ক্লাবের সঙ্গে ট্যারাদার বন্ধুমহল ক্লাবের ম্যাচ। সেকেন্ড হাফের শেষে দশ মিনিটের খেলা চলছে।দুপক্ষ গোল শূন্য।ট্যারাদার পায়ে বল।পড়িমরি অবস্থা।যে কোনো মুহূর্তে ভালোমন্দ কিছু একটা ঘটতে পারে।ওদিক থেকে রয়াল বেঙ্গলের মত ছুটে আসছে ও। রক্ষণ থেকে উঠে আক্রমণ প্রতিহত করতে যেই তেড়ে গেছি, শূণ্যে ভাসমান বলটাকে কায়দা করে মারতে গিয়ে ওর মুগুর সমান মুন্ডুটা সজোরে ধাক্কা লাগে আমার মুখে।সেই ঘায়ে দাঁত ছরকুটে পড়ে চোখে তখন সর্ষেফুল দেখছি। দাঁতের গোড়া নড়ে বাঘা ঘায়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা!শেষমেষ ম্যাচ পরিতক্ত হল। অবধারিত হার থেকে বাঁচালো ভাগ্যশ্রী ক্লাব, কিন্তু আমি হয়ে গেলাম সম্পূর্ন শাকাহারী।ওই ঘটনার কিছুদিন পর নড়বড়ে দাঁতগুলো ডেন্টিস্টের চিনেমাটির বাটিতে গোপনে বিসর্জন দিয়ে চোখের জলে ডাক রোস্ট,চিকেন কোর্মা, মটনকারি ত্যাগ দিয়ে মনে মনে সন্ন্যাসী হয়ে গেলাম।এহেন ট্যারাদার প্রতি আমার মনোভাব স্বভাবতই নরম-গরম।

_“বস না,একটু গল্প করি। কাল মোহনবাগান ম্যাচটা হারায় বড় আঘাত পেয়েছি।একটা সার্ফ পেনাল্টি ছিল দিল না জানিস .... হ্যাঁরে, তোকে আর খেলার মাঠে দেখিনা কেন?

"কিরে অমন মুখ ভোতা করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছিস যে,বস্!বুঝেছি ডিমের অমলেট হাতের নাগালে না রাখলে মুখ খুলবে না তোর।ঠিক আছে।কৈ হে ভাজো দুপ্লেট ডিম ডবল - ডবল।"

এদিকে আমি কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না! আমার পেটুক স্বভাব সর্বজন বিদিত।না খেলে নির্ঘাত সন্দেহ করবে।একবার মনে হল আমার ফোকলা শো দেখিয়ে ওর কৃতকর্মের মুখোমুখি জবাব দিই।আবার মনে হল এ সব দেখে ও আবার গর্ববোধ করে।বুকের ছাতি চওড়া হয়ে ওঠে ওর।একবার বিপক্ষের এক ফুটবলারের ঠ্যাঙ ভেঙে আহ্লাদে লাফালাফি করে দশজনকে বলে বেরিয়েছিল!এমন স্বভাব। তাই আবার দমে গেলাম।খামোখা ব্যাপারটা লিক করে লাভ নেই।

ও দিকে আবার ভাগ্যশ্রী ক্লাবের দুটো ছেলে এদিকে আসছে, হয়তো চা পান করতে। কিন্তু আমার কেমন সন্দেহ হল!সেই পাওনা দুশো টাকা হাতানোর মতলবে এদিকে আসছে নাতো?আবার জবাবদিহি,বচসা!এখন টাকার চিন্তা হচ্ছে না,হচ্ছে নিজের।মুহূর্তে ওর হাত ছাড়িয়ে ফুটপাত থেকে একলাফে রাস্তায় নেমে আসতে ট্যারাদা হাউমাউ করে উঠল।

"যাস কোথায়! না খাস অন্তত আমাকে খাওয়া।টাকা,টাকাটা অন্তত দিয়ে যা মাইরি।"

টাকার ওপর জোর দিয়ে হেড়ে গলায় পাওনাদারদের মত এমন চিৎকার করলো যে শরমে আমার মাথা কাটা গেল।রাস্তার লোক কি ভাববে আমার মত ফেরেব্বেবাজ দুনিয়ায় নেই। ছিঃ! এদিকে আবার ক্লাবের ছেলেগুলোর নজর আমার ওপর পড়েছে।নাম ধরে ডাকতে ডাকতে এদিকে ছুটে আসছে।সেই সঙ্গে ট্যারাদা আবার আমার পিছু নিয়েছে।ভালো ফ্যাসাদ।কি করব ভেবে না পেয়ে চিরকালীন ট্র্যাডিসান, দিলাম এক দৌড়!পিছনে ওরা দল বেঁধে ছুটে আসছে দেখে শেষে কোনদিকে যাবো পথ না পেয়ে চটজলদি সামনে একটা চলন্ত বাস দেখে উঠতে গিয়ে পদনিতে জোর ঠোকা লেগে কন্ডাক্টরের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।বেচারা তখন নিবিষ্ট মনে টাকা গুনছিল।আচমকা ধাক্কায় বেসামাল হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল সিটে বসা বৃদ্ধার কোলে রাখা পুটুলির ওপর। তার পয়সার ব্যাগটা ছিটকে গেল।আমি কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিলাম।

বিপদ যখন আসে এমন ঘটা করে আসে বুঝি!

ক্ষনিকের আকস্মিকতা কাটিয়ে বৃদ্ধা খ্যানখ্যানে গলায় তেড়ে ওঠে,

_“ আমার কি সব্বনাস করলি রে, মিনসে! নাতির জন্য ডিম কলা নিয়ে যাচ্ছিলাম এখন দিলিতো সব ধেসকে!"

কলা ও ডিমের রস মাখা ব্যাজার মুখ তুলে কন্ডাক্টর বোঝাতে চায়, দোষটা আসলে তার নয়। আঙুলের তাক আমার দিকে নির্দেশ করে।

এই যে দোষী আমি! নিজের দোষের এক সিকি ঢাকতে তৎক্ষণাৎ ছড়ানো পয়সাগুলো কুড়োতে শুরু করেছি। মধ্যবিত্তের মাঝারিমানের জুতোর পাশে ছড়ানো কয়েন গুলো কুড়োতে কুড়োতে হঠাৎ চোখ আটকায় চকচকে এক জোড়া গ্রিসিয়ানে।চোখ তুলতে রোদ চশমা পরা লোকটার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই আমার হাতটা কেমন অসাড় হয়ে গেল।মনে হল শরীরে কোনো সাড় নেই।

_“এখন টাকা বুঝি কুড়িয়ে মিলছে? তাই অফিসে আর টিকি দেখা যায় না? তুমি না আমায় পথে বসবে! সদানন্দ রায়ের সঙ্গে ডিল ক্যানসিল হল।গুড প্রোডাকশন কম হচ্ছে আর তুমি এদিকে নবযৌবনে ফিরে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়াচ্ছো!" ফ্যাক্টরির ম্যানেজার দত্তবাবুর তির্যক উক্তি কানে আসতে তৎক্ষণাৎ খাড়া হয়ে দূরত্ব বজায় রেখে কয়েক মুহূর্ত অপলক দৃষ্টি বিনিময় চলল।খেয়াল ছিল না এটা অফিস টাইম। কিন্তু এখন বাঘের সম্মুখে,নিরুপায়।উচ্চিংড়ির মত লাফাতে লাফাতে আমার দায়িত্ব কর্তব্য জ্ঞান নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা শুরু করেছেন তিনি।উত্তেজনায় নাকের ডগা হয়েছে পাকা করমচা ও কানের লতিদুটো গোলাপের পাপড়ি।বুঝলাম তিনি বেজায় চটেছেন।এই রূপ দত্ত মশাই বেজায় ডেঞ্জারাস।হাতের নাগালে যা পান তাই ছুড়ে মারেন। ভীত চোখে ওর হাতে ধরা ব্রিফকেস দিকে আড় চোখে তাকালাম।

তবে মারুক ক্ষতি নেই! মানসম্মান এমনিতে উনিশ-বিশ সবটা গেছে। তা বলে “নবযৌবন" এই উক্তি সহিতে পারলাম না।ফোকলা দাঁতকপাটি নিয়ে নবযৌবনের স্বপ্ন নেহাতই আক্ষেপের কিনা! কিন্তূ বোঝাই কি করে।

নিজেকে সামলে কন্ডাক্টর তৎক্ষণাৎ আমার হাত থেকে পয়সার ব্যাগ ছিনিয়ে পটাপট গুনে গম্ভীর গলায় নির্দেশ দিলেন, 

_" পঞ্চান্ন টাকা হিসেবে কম হচ্ছে, খুঁজুন।সব টাকা মিলিয়ে দেবেন।"

বয়ষ্কা এতক্ষন চুপ ছিলেন কী ভেবে, এবার নাকি কান্নার সুর ভেঁজে বললো, 

_"এই ছোঁড়া আমার নাতির ডিম কলা দে ফিরিয়ে..."

এই মুহূর্তে ঠিক কী করা উচিত বুঝতে পারলাম না! তিনমূর্তির তিনরকম আস্ফালনের সঙ্গে বাস ভর্তি লোকের কটূক্তি! আর আমি সাইলেন্ট ছবির গোবেচারা নায়ক।পালিয়ে যাবার পথ পর্যন্ত নেই।এমন অস্থির সময় মস্তিষ্কের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে।একমুহুর্ত মনে হল চলন্ত বাস থেকে ঝাঁপ দিই। কিন্তু রিস্ক আছে।ওপাশ থেকে গাড়ি এসে পিষে দেয় যদি! দ্বিধার মধ্যে কিছুক্ষণ কাটলো।এদিকে পরিস্থিতি আরো ঘোরালো হচ্ছে।কন্ডাক্টর এখন রীতিমত হুশিয়ারি দিচ্ছে,বৃদ্ধা হাত বাড়াচ্ছেন আমার নাগাল পাবার চেষ্টায়, আর আমি স্পষ্ট বুঝলাম দত্তবাবুর ব্রিফকেস ধরা হাতটা কেমন নিশপিশ করছে, মুহূর্ত বিলম্ব করিনি। রীতিমত ভড়কে গিয়েছিলাম। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছামৃত্যু! শহীদ হতে হবে কীনা ভাবতে ভাবতে দিলাম এক ঝাঁপ!

বাস শুদ্ধু লোক হৈ হৈ করে উঠল। ড্রাইভার কোনো কিছু ভ্রুক্ষেপ না করে আমাকে ফেলে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে চলে গেল।

তারপর যা ঘটলো সবই আমার অগোচরে।সংক্ষেপে বলি,যখন জ্ঞান ফিরলো স্বর্গ না মর্ত কোথায় আমার অবস্থান তা নিয়ে খানিক দোলাচলে কাটলো।পরক্ষণে কটু গন্ধ নাকে আসতে আমার ভাবনা নির্ভুল হল। এ স্বর্গ হতে পারে না।চোখ খুলে দেখলাম আমার প্লাস্টার করা সাদা পাদুটো শূন্যে ভাসমান।যাকে ডাক্তারি পরিভষায় বলে ট্রাকসান। মর্ত্যলোকে আমার এখন এই অর্ধভাসমান অবস্থা।

একটু আগে গিন্নি এসেছিল।কান্নায় ফোলা চোখ।ওর মুখ থেকে শুনলাম,একটা মোটর গাড়ি আমার পা পিষে দিয়েছে।কি সৌভাগ্য গায়ের ওপর দিয়ে যায়নি।রাস্তার লোক ধরাধরি করে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গেছে।

কিন্তু কী বলবো দুঃখের কথা! এখানেও ইঁদুরের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছি না। আর কি তাদের হর্ষউল্লাস আর হুটোপুটি!আমাকে ঘিরে রীতিমত তারা ঠাট্টা তামাশা শুরু করেছে।যেন বলতে চাইছে, এখন কেমন লাগছে, ঘোষাল? আমাদের জব্দ করতে যাচ্ছিলে, হল তো হিতে বিপরীত!আমার এমন ত্রিভঙ্গম অবস্থা যে মুখ বুজে সব সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই।একটা ইঁদুর খাটিয়া বেয়ে আমার গা ডিঙিয়ে নির্দ্বিধায় পথ পারাপার করলো।আর একটা আমার ভাসমান পা বেয়ে ওঠার খানিক ব্যর্থ চেষ্টা চালালো। আমি এক বিঘৎ দূরে থেকেও কিচ্ছু করতে পারলাম না।আক্ষেপ হল,কান্না প্রশমিত করতে পারলাম না। যাদের শয়তানিতে মান-সম্মান গেল,চাকরি যায় যায় অবস্থা (দত্ত বাবু ব্রিফকেস ছুঁড়তে না পারার রাগ হয়তো এ ভাবে মেটাবে), আর তারা কীনা আমায় নিয়ে নিদারুণ খেলায় মজেছে।রাগে মাড়ি শিরশির করছে… কি বলব দাঁতগুলো পর্যন্ত নিয়ে গেছে ;আমাকে এক্কেবারে হোপলেস করে।

ghshsanjib@gmail.com
২৪ পরগণা দক্ষিণ 


No comments:

Post a Comment