1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, August 1, 2020

নাইট চ্যাটিং

                                                                                                  ...শুভজিৎ সরকার 



           কুয়াশা বাড়ছে, মফঃস্বলের কুয়াশা বাড়ার মতো করে কুয়াশা বাড়ছে। আর এই সময়টাই রিজান এর ঘুম আসে না, এই সময়ের ছেলেপুলের এটাই বড়ো দোষ। নাইট চ্যাটিং।  এর বিকল্প কোনো ব্যাবস্থা নেই এটা ও জানে, সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয় তাই এটুকু অত্যাচারে ওর অভ্যাস হয়ে গেছে। রিজান  আগে জানতো না একটা মানুষ তার ঘুমের সময় থেকে মুহূর্ত চুরি করে যে আড্ডা মারতে পারে, কিন্তু এই সব কলেজে ওঠার পর জলভাত। না হলে ওকেও হয়তো শুনতে হতো বন্ধুদের টিপ্পনী।

পৌলমী ওকে প্রথম জোর করেছিল কলেজ গ্রুপে অ্যাড হওয়ার কথায়, সেখানে নাকি রাত তিনটে অবধি বন্ধুরা আড্ডা মারে। ভারী মজার মজার গল্পই নাকি সেখানে হয়। রিজান ও সেই সব গ্রুপে আড্ডা মেরেছে প্রথম কয়েক মাস। তার পর ওর আর ভালো লাগেনি। আপাত ইন্ট্রোভার্ট এক জনের অত লোকের মাঝে ওই ভাবে নিজের অনুভূতি, নিজের কথা বলা যায়না। তাই সরে এসেছে, কিন্তু ওর নাইট চ্যাটিং অভ্যাস বৃদ্ধি তার ঠিক পরে পরেই।

স্কুলবেলা থেকেই রিজান এর বন্ধু ভাগ্য খারাপ, খুব বেশি কোনো দিনই ছিলো না। আর বান্ধবীর সংখ্যা হাতে গুনলে সে নিজেই লজ্জা পায়। তবু এই নতুন কলেজে বছর দুয়েক ওর সাথে যারা মেশে, যারা মিশেছে তার মধ্যে পৌলমী ওর একমাত্র বান্ধবী। তাই ওর সাথেই প্রায় রাতের আড্ডা জমে উঠতো রিজানের, ধীরে ধীরে ওটা দৈনিকে পরিণত হয়েছে।  ও প্রথম দিকে আলগা কথা কম বলতো, কিন্তু পরে পৌলমী ওকে চেপে ধরত খোলাখুলি আলোচনার। সেদিন থেকেই ও বুঝেছে প্রত্যেকটা পুরুষই নির্বাক আনুগত্য স্বীকার করে নেয় নারীর কাছে। একটার পর একটা দিন বাড়ার সাথেই রিজান সহজেই অনুমান করে ফেলছিল পৌলমীর ভার্চুয়াল আড্ডা-বাক্য কি হবে, কোনো কথা লেখার সাথে সাথেই ওর এই অনুমান মিলিয়ে দিয়েছে পৌলমী। এতে যেকোনো মানুষ ই বিপরীত মানুষের সাথে এমন ঘটালে মানষিক আকর্ষণ অনুভব করে, রিজানও তেমন টান অনুভব করত নাইট চ্যাটিং এ পৌলমীর প্রতি।  পরে সে নিজেকেও প্রশ্ন করে, সে কী কোথাও জড়িয়ে ফেলছে নিজেকে?

এরপরই ওর পরিচয় হয় মহিমার সাথে।
সোস্যাল নেটয়ার্কিং সাইট গুলোতে খুব সহজেই বন্ধু করা যায় এ এক অদ্ভুত সুবিধা। প্রথম দিকে পরিচিত মানুষ ছাড়া ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতো না , কিন্তু একদিন মহিমার প্রোফাইল চেক করেই রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করে ফেলে রিজান। এরপর ওদের বন্ধুতা জমে ওঠে , মহিমাও হয়ে ওঠে নাইট চ্যাটিং এর সঙ্গী।

রিজাননের সাথে ওর খোলাখুলি গল্প হয় না কোনোদিন। রিজান ভাবত পরে হয়তো বিষয়টা চেঞ্জ হবে, কিন্তু না মিনিটে মিনিটে, ঘন্টায় ঘন্টায় ওদের চ্যাট বক্স ভোরে গেলেও মহিমা প্রতি মুহূর্তে আনপ্রেডিক্টেবল ঠেকে ওর কাছে। একই সঙ্গে রিজান যখন চ্যাট করে পৌলমীর সাথে, মনে হয় সে যেন ওর সব কিছুই জানে। তবু ওর সাথে রিজানের বন্ধুতা গাঢ় হয়না, সম্পর্কের আকর্ষণ অনুভব করে উঠতে পারে না হয়তো পৌলমী।

যাকে বাঁধা যায় না , সেই রকম বস্তুর প্রতি মানুষ বার বার তাড়িত হয়। এটা নিয়ম। রিজানও দুবছরের বন্ধুতা আকর্ষণ স্তিমিত করে প্রতিটা ন্যানো সেকেন্ডে হাতরাতে থাকে মহিমার চ্যাট বক্স , কিন্তু ও তো জানে ও আকর্ষিত নয় কোনো ভার্চুয়াল বন্ধুতার প্রতি । এসব তো শুধুই নেশা , রাতের দুএক ঘণ্টার নাইট চ্যাটিং মাত্র। এই সুযোগে ভার্চুয়াল বুদ্ধির পরীক্ষা চলে।

মহিমা রিজানের সংকেত বুঝ তে পেরে যায় মাঝে মাঝে। একটা ছবি রাত আড়াইটার সময় এঁকে সেন্ড করে হোয়াটসঅ্যাপে। রিজান ছবির বোদ্ধা না হলেও দু মিনিট স্থির দেখার পর চমকে ওঠে, সেই ছবি একাধিক বার জুম করে তবুও একই।  সম্পূর্ণ পাতা হীন একটি গান দাঁড়িয়ে আছে মাথা তুলে , উপরের মগডালে একটা পাখি গড়ে তুলছে বাসা, উরন্ত পাখিটার মুখে দুয়েক টুকরো খড়কুটো।
রিজান চমকে ওঠে দেখে , কিন্তু হাসতে হাসতেই টেক্সট লিখতে থাকে মহিমা কে -

"ভালই তো আকিস, কিন্তু তোর ছবিটা গোলমেলে জানিস, অমন আকলি কেন বলত? তুই তো জানিস.."

মহিমা সাংকেতিক উত্তর দেয়-

"আমি ওই পাখিটার মতই, তুই অবশ্য বুঝবি না"

দুজনের ভার্চুয়াল বার্তা চলতে থাকে, রিজানও চমকে উঠেছিলো এর মানে বুঝে। তবে সব একবারে জানানো যায়না। ছবির পাখিটার মতই ওর মাথাতেও ঘুরছে এক বৃষ্টির রাতের কথা। রিজান এক ঘন্টা পর একটি ছবি সেন্ড করলো মহিমা কে,  রিজানেরও আর কিছু বলার নেই এরপর।
ছবিটি খুলে মহিমা দেখতে থাকলো, তারই ছবির পুনরাবৃত্তি। দুটি পাখি একটা ন্যাড়া, পাতা হীন গাছে মগডালে ফিরে আসছে, তাদের বাসায়, এক বৃষ্টির রাতে।

সব সংকেত শেষ হলে যেমন মনে হয়, মহিমার ও তাই হচ্ছে। এরপর তাদের ভার্চুয়াল চ্যাট বক্স ভরে যবে একাধিক বার। কিন্তু কোনো সংকেত এর ব্যবহার নয় । সরাসরি। খোলামেলা হয়ে উঠবে তারা।
রিজান ও জানে তার সব কুয়াশার মতো আনপ্রেডিকটেবল সূত্র গুলো। শুধু তার মফঃস্বল এর মন, আকর্ষণের ইউটার্ন নিতে পারছে না। বারবার নিজেকেই টেক্সট লিখছে, কুয়াশার নাইট চ্যাটিংয়ে-

"আমি কি ভার্চুয়ালের থেকে কোনো স্থির বন্ধুতায় আটকে যাচ্ছি? নাকি ভার্চুয়াল এর থেকে স্থির সম্পর্কে? নাকি অনিশ্চিত বেদনায়?"
rifonsircar269@gmail.com

1 comment: