1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, August 1, 2020

জ্যোৎস্নানাথ



...অভিজিৎ চৌধুরী


               সদর স্ট্রিটেই প্রথম জন্মদিন । বয়স ২৭ । এক অখ্যাত , ধিক্কৃত যুবক । ভাগ্নি বেলফুলের মালা পায়ের কাছে রেখে যেতেই ঘুম ভেঙেছিল রবির ।
সেই জন্মদিনের সকালের অনাড়ম্বর শুরু । দাদা জ্যোৎস্নানাথ একটা বই উপহার দিয়েছিলেন । তার চেয়েও সুন্দর যে কথাগুলি লিখে দিয়েছিলেন ।
মনে পড়ছে না রথীনের । আলস্যও হচ্ছে আবার নিজের সেই পুরোনো লেখা উল্টে দেখা ।
সুদীপ !
ফোনে ডাকল রথীন ।
একটু অপেক্ষা । বিকেলের হাওয়ায় তখন ঝড়ের গন্ধ ।
কে ?
সুদীপ বলল ।
আমি জ্যোৎস্নানাথ ।
তার মানে ! রং নাম্বার ।
ফোনটা প্রায় কেটে দিচ্ছিল সুদীপ ।
আরে না , না , - রথীন ।
তাও ওপারের কণ্ঠস্বরে থমকে থাকা রইল সামান্য পলের ।
কেমন আছিস !
সহজ হলো ভালোবাসার হাওয়া ।
জ্যোৎস্নানাথ বললেন – রবি , বইটা পড়ো ।
রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন – পড়ব ।
দাদাকে প্রণাম করলেন ।
সুদীপ বলল- জ্যোৎস্না – বলছিলি কেন !
হাসল রথীন , বলল – সদর স্ট্রিটের সেই প্রথম জন্মদিন ।
মনে পড়ল সুদীপের । বলল – তোদের সেই অডিটরিয়মে রবীন্দ্র-জয়ন্তী করতাম ।
দুজনেই টেলিফোনে খুব হাসল ।
শর্মিলা খুব অসুস্থ । সুদীপ বলল । শুনতে পেলো না রথীন ।
সুদীপ আবার বলল – তোদের বিপরীত বাড়ি । শর্মিলা – মনে পড়ছে না তোর ! সোমাদের বান্ধবী । আমার বউয়ের ।
হ্যাঁ , আমার খুড়তুতো বোন তো !
কি হয়েছে ওর !
সুদীপ বলল – হাই সুগার তো ছিলই । এখন কিডনিতে এফেক্ট করেছে ।
মনে পড়ছে রথীনের তাদের অপ্রশস্ত বাড়িগুলি । কিন্তু একটা উঠোন ছিল জ্যোৎস্না-মাখা ।
সুদীপ বলল – কিছুই মানতো না , ওষুধ পত্তর ঠিকঠাক খেতো না ।
রথীন বললো – সুন্দর দেখতে ছিল একসময় । গানের গলাও ছিল চমৎকার ।
সুদীপ বলল – ঠিক বলেছিস ।
তবে শেষবার যখন দেখেছিলাম , চেহেরা একদম ভেঙে গেছে । চেনা যাচ্ছিল না একদম ।
কোন্নগরের একটা ফ্ল্যাটের তলা স্মৃতিতে এলো । একটা ছোট্ট মেয়ে রথীনদের বলছিল – আমার ‘মা’ তোমাদের ডাকছে ।
যাওয়া হয়নি ।
সুদীপ বললো – কি যা তা বলছিস !
যাওয়া হয়নি । তুই কি কোন ঘোরে আছিস !
রথীন বলল – মদ্যপান করিনি এমনটা বলবো না । এতোটা বেরসিক নই । তবে এখন পান করে নেই ।
সুদীপ বলল – আচ্ছা যাই হোক , তোকে একটা স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে ।
রথীন বলল – আদিবাসীদের নিয়ে !
হো হো করে হেসে উঠল সুদীপ ।
না , অতোটা বোকা আমরা নই ।
বিষয় – তোর যেমনটা মনে হয় ।
রথীন বলল – আমাদের জীবনটা অনেকটা রবি ঠাকুরের মতোনই ।
সুদীপ বলল – যেমন !
সেই খ্যাতি নেই , সেই সৃজন নেই , সেই শোকও নেই ।
সুদীপ হেসে বলল – কোথায় মিল তবে !
অবজ্ঞা , অবহেলা , বিশ্বাসের অভাব , আর যৌবনের চারদিকে সেই ছি , ছি ।
সুদীপ বলল – জ্যোৎস্নানাথও ছিল কিন্তু !
দুজনেই খুব হেসে উঠলো ।
সুদীপ বলল – লিখে ফেল তবে !
কিশোরবেলার বন্ধুদের কিন্তু ঠকানো যায় না । সবটা জানা আমাদের ।
হাসল রথীন ।
রথীনের ফোনটা শেষ হতেই সুদীপ ফোন করল স্যান্ডিকে ।
স্যান্ডি , স্যান্ডি ।
স্যান্ডি বা সন্দীপ বলল – কথা হলো !
হ্যাঁ । তবে !
সন্দীপ বলল – কি !
ভাষ্যপাঠ তোকে অনেকটাই করতে হবে । সন্দীপ বলল – তুইও তো করতে পারিস ।
সুদীপ বলল – না , তোকেই করতে হবে ।
এরকমটা ভাবছিস কেন ! নাটক তো সংলাপ নির্ভর হবে ।
সুদীপ বলল – নাট্যকার তো নয় ‘ও’ ।
সন্দীপ বলল – দেখা যাক , কি পাঠাচ্ছে ।
তারপর গ্রুপ কলিং-এ ঠিক করা যাবে ।
দীপংকর ফোন করল সুদীপকে ।
হ্যালো । লেখক ব্যাপক ঝুলিয়েছে তো !
সুদীপ হেসে বলল – মনে হচ্ছে ।
কি-সব – জ্যোৎস্নানাথ , জ্যোৎস্নানাথ বিড়বিড় করছিল ।
দীপংকর বলল – তুই ‘আদিবাসী’ ক্লু-টা দিলি । ব্যাপক স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছিলাম রবীন্দ্রসদনে ।
সুদীপ বলল – মহিলা চরিত্রের কথা বলছিল ।
দীপংকর বলল – তুই কি বললি !
না । চলবে না ।
সুদীপ এবার বললো – শিবাজীদাকে বললেই তো হতো !
দীপংকর বলল – এটা তো স্টেজ শো নয় ।
লক ডাউনে ফাজলামি । তবে তানাকে লিখতে দিলে ফাটাফাটি হতো ।
সুদীপ বলল – নাট্যকারের সন্ধানে আমারা এখনও রয়েছি । নাথিং ফাইনাল ।
দীপংকর বলল – রাইট ।
তারপর গ্রুপ কলিং শুরু হলো ।
তানা , সুদীপ , সন্দীপ , প্রদীপ , বিশ্বজিৎ , শংকর দত্ত , পার্থ , চিন্ময় , অনুপ , অনুংকর এবং আরো আরো অনেকে ।
ভয়েস রেকর্ড করছিল সোহম চৌধুরী । নেদারল্যান্ডে বসে গান গাইছিল স্বাগতা চক্রবর্তী । সন্দীপের মেয়ে । আলাদা কোন নাটক নয় । তবুও সব কিছু হয়ে গেলে সুদীপ ফোন করল – হ্যালো হ্যালো – জ্যোৎস্নানাথ ।   
sahityeravi@gmail.com
পশ্চিম মেদিনীপুর

No comments:

Post a Comment