...অনুসূয়া ওঝা
বাড়ির পুরনো দেওয়াল
ঘড়ি টায় ঢং ঢং করে চারটের ঘন্টা বাজল। কৃষ্ণকান্ত বাবু অভ্যাসমতো বিছানা ছেড়ে
উঠে পড়লেন। তখনো ভোরের আলো ভালো করে ফুটে উঠতে পারেনি। প্রত্যেক দিনের অভ্যাস মত
কৃষ্ণকান্ত বাবু ভোরবেলা উঠে প্রথমে যান বাড়ির পিছনে কামিনী ফুলের বাগানে।
কৃষ্ণকান্ত বাবু কামিনী ফুল বড়ই ভালোবাসেন, যার দৌলতে তিনি তার বাড়ি নামও রেখেছেন কামিনী।
কৃষ্ণকান্ত বাবু
রোজ তার সাধের কামিনী ফুলের বাগান কে নিজের হাতে পরিচর্যা করে ভোর পাঁচটার সময়
হাত মুখ ধুয়ে যান মর্নিং ওয়াকে। সত্তোর্ধ বয়সের বৃদ্ধের এইটি রোজকার নিয়ম। শীত হোক কিংবা গ্রীষ্ম বা
হোক বর্ষা, কৃষ্ণকান্ত বাবুকে রোজ ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে
দেখা যাবে মাঠে।কেবল মাঝে কয়েকটি দিন অসুস্থতার কারণে যাননি,না হলে তাকে
আটকায় কে?
কৃষ্ণকান্ত বাবু হলেন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত এক
কর্মী, সাদা চুলে ভরা
মাথা, পরনে সবসময় সাদা
ধুতি আর সাথে মানানসই জামা।একদম শান্ত ভদ্র সভাবের কৃষ্ণকান্ত বাবুর এক পুত্র আর
একটি পুত্রী নিয়ে সংসার। পুত্র পুত্রী উভয়ই
বিবাহিত। পুত্রের একটি কন্যাও আছে। অর্থাৎ কৃষ্ণকান্ত বাবুর এখন ভরা
সংসার।তবে তার স্ত্রী মারা গেছে,তারও ১০ বছর হয়ে গেছে।
এতদিন পর্যন্ত কৃষ্ণকান্ত বাবুর জীবন
একপ্রকার ঠিকই ছিল।ভোর চারটে ওঠা, কামিনী বাগান পরিচর্যা করা,পাঁচটায় মর্নিং
ওয়াকে যাওয়া,আর আটটায় বাড়ি ফেরা। এই ঘেরাটোপের মধ্যে ছিল তার জীবন বাঁধা আর নাতি-নাতনি
ছেলেপুলে তো আছেই।
রোজকার মতো সেদিনও কৃষ্ণকান্ত বাবু গেছিলেন
মর্নিং ওয়াকে।কিন্তু ফেরেননি সময়মতো। আটটা বেজে ন'টা হলো, দশটা হলো,এগারোটা বাজলো,কিন্তু তিনি এলেন না। ছেলে তখন চিন্তায় পড়েছে
কি করবে ভেবে।কৃষ্ণকান্ত বাবু ফোনও ব্যবহার করেন না।তাঁর মতে,"ওসব ফোন-টোন
তোমাদের ব্যাপার বাবু।আমি বুড়ো মানুষ।একাই ঠিক আছি।" তেমন বন্ধু-বান্ধব নেই তার।কি করা যায় ভাবতে ভাবতে
কৃষ্ণকান্ত বাবুর ছেলে অনির্বাণ তৈরি হতে গেল ঘরে।পুলিশের কাছে যাবে বলে যেই ঠিক
করেছে ওমনি বেল পড়ল দরজায়।দৌড়ে গিয়ে সদর দরজাটা খুললেন অনির্বাণের স্ত্রী জয়া।
দরজা খুলতেই দেখা গেল কৃষ্ণকান্ত বাবু দাঁড়িয়ে আছে মুখে মৃদু হাসি নিয়ে,কি বলবে বুঝে
উঠতে না পেরে অনির্বাণ শুধু এইটুকু বলল,"বাবা এবার একটা ফোন নিয়ে নিন।চিন্তা তো হয়
আমাদের। " একটু থতমত খেয়েই কৃষ্ণকান্ত বাবু উত্তর দিলেন,"আরে বাবা অত
চিন্তা করতে হবে না।৭০ পেরিয়ে এসেছি।অত সহজে কিছু হবে না আমার।তোমরা ওতো
দুশ্চিন্তা করোনে বাবু।"
এর আগেও শতবার এই
ফোন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অনির্বাণ তার বাবাকে। এবং প্রত্যেকবারই
কৃষ্ণকান্ত বাবুর একই উত্তর দিয়েছিলেন,'না' তাই এবারে খুব একটা অনুকূল উত্তর আশা করেনি
অনির্বাণ। কিন্তু তবুও অনির্বাণ বাবুর এতবার অনুরোধ তিনি ফেলতে পারলেন না।অগত্যা
একপ্রকার বাধ্য হয়েই কৃষ্ণকান্ত বাবুকে রাজি হতে হলো ফোন নেওয়ার জন্য। অবশেষে
অনির্বাণ বাবুর ইচ্ছা পূর্ণ হল।বিকেলে একটি নতুন ফোন এল এবং তাকে ফোন করা আর ফোন
ধরা সবই শিখিয়ে দিল কৃষ্ণকান্ত বাবুর বছর পাঁচেকের ছোট নাতনি শ্রুতি।
একদিন দেরি ঠিকই ছিল। অনির্বাণ তার বাবাকে একবার জিজ্ঞাসাও
করেছিল, "বাবা ছিলেন কোথায়?" কৃষ্ণকান্ত বাবু কথা এড়িয়ে গেলেন দেখে ছেলেও
আর কথা বাড়ায়নি। সবারই কিছু না কিছু গোপনীয়তা তো থাকে,তারও আছে হয়তো। অনির্বাণ সম্পূর্ণ বিষয়টিকে
অগ্রাহ্য করে দেয়। কিন্তু এরপর থেকে প্রায়ই দেরি হতে লাগল কৃষ্ণকান্ত বাবুর। ফোন
করে বৌমাকে জানিয়ে দিতেন কখন আসবেন তিনি।কিন্তু কখনো ভুলেও বলতেন না কোথায় আছেন
তিনি।
অনির্বাণের অফিসে দুদিন ছুটি এক শুক্রবার অপরটি
সোমবার। তাই কৃষ্ণকান্ত বাবু কায়দা করে সপ্তাহের এই দুই দিন ঠিক সময় বাড়ি ঢুকতেন। আর বাকি দিন ঢুকতেন
দেরিতে।জয়া সব লক্ষ্য রাখতেন।অনির্বাণ তার বাবার এই কাণ্ডকারখানা জানলেও কিছু বলেন
নি তাকে। কারণ বিগত কয়েক মাস ধরে এরকম চলতে থাকলেও,কৃষ্ণকান্ত বাবুর মুখের সেই প্রাণোচ্ছল হাসি
এবং আনন্দ হারাতে চাইনি অনির্বাণ এবং জয়া।
অনির্বাণ বাবু
ঠিক করলেন বুধবার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তিনি পিছু নেবেন তার বাবার। হাজার হোক বাবা
তো খেয়াল রাখাটা তার কর্তব্য। বাবার যা ইচ্ছা তাই করুক কিন্তু সুরক্ষা করা
অনির্বাণ বাবু নিজের দায়িত্ব বলে মনে করেন। অতএব যেমন চিন্তা ওমনি কাজ, সকাল সাতটায় ওঠা মানুষটাকে সেদিন অ্যালার্মের
আওয়াজে উঠতে হলো ভোর পাঁচটায়। জেগেই বিছানায় শুয়ে ঘুমের ভান করছিলেন অনির্বাণ, উদ্দেশ্য একটাই
বাবা বেরোলে তিনি পিছু নেবেন।
প্রথমে সবকিছুই ঠিকঠাক,কৃষ্ণকান্ত বাবু মাঠে গিয়ে যথারীতি হাঁটাহাঁটি
শুরু করেলেন। পিছনে যে অনির্বাণ বাবু আছেন তা তিনি খেয়াল করলেন না। অনির্বাণ বাবু
লক্ষ্য করলেন হাঁটাহাঁটি করার সময় কৃষ্ণকান্ত বাবু এদিক ওদিক দেখছেন, যেন তার চোখ
সর্বদা কাউকে খুঁজছে। অনির্বাণ বাবু এক মুহূর্তের জন্য ভয়ই পেয়ে গেছিলেন এই বুঝি
তার বাবা তাকে দেখে ফেলবে আর অনির্বাণ বাবুর সম্পূর্ণ প্ল্যানটাই ভেস্তে যাবে।
কিন্তু না সেসব কিছু হয়নি।কিছুক্ষণের মধ্যেই
একজন বৃদ্ধা এলে।ষাট -সত্তোর বছরের বৃদ্ধা। অনির্বাণ তাকে আগে কখনও দেখেনি।
বৃদ্ধাকে দেখে কৃষ্ণকান্ত বাবুর চোখগুলো আনন্দে ঝলমল করে উঠল,মুখে মিষ্টি হাসি
আর খুব ভালোবাসার সঙ্গে আলিঙ্গন করলেন বৃদ্ধাকে। দৃশ্য দেখে অনির্বাণ বাবু তো
স্থির বনে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন,"এই বয়সে বাবা প্রেমে পড়লেন!!! এত মডার্ন বাবা
আমার আমি তো জানতামই না।" এই কথা ভেবে অনির্বাণ নিজেই হেসে দিলেন।
এইভাবে তিনজন তাদের মর্নিং ওয়াক তো
সারলেন।কিন্তু সেরেই বসলেন না। কৃষ্ণকান্ত বাবু এবং অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা হাঁটলেন
মাঠ পেরিয়ে সোজা বড় রাস্তার দিকে।আরো মিনিট পনেরো হাঁটার পর, একটা ছোট্ট গলি
দিয়ে ঢুকে তিন নাম্বার বাড়ির সদর দরজা খুলে দিলেন বৃদ্ধা। দরজা খুলে কৃষ্ণকান্ত
বাবু এবং সেই মহিলা ঢুকে গেলেন বাড়ির ভেতরে। এই দৃশ্য দেখে অনির্বাণ বাবু হাঁ
করে দাঁড়িয়ে থাকলেন রাস্তার উপর।অবশেষে গাড়ির হর্নে তার জ্ঞান ফিরল। বাড়ির
দরজার সামনে গিয়ে অনির্বাণ দেখতে পেলেন দরজার উপর লেখা "রুক্মিণী
দাশগুপ্ত"। অনির্বাণ আন্দাজ করলেন বাড়িটি রুক্মিণী দেবীর এবং অজ্ঞাত বৃদ্ধার
পরিচয় হয়তো রুক্মিণী দেবী।
অনির্বাণ বাবু বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন
মিনিট পাঁচেক। তারপর তার মাথায় কিছু একটা ফন্দি এল। তিনি তৎক্ষনাতৎ তার বাবাকে
ফোন করলেন। দুবার ফোনের রিং হতেই ফোন ধরলে কৃষ্ণকান্ত বাবু। ফোনে বেশ গম্ভীর গলায়
অনির্বাণ তার বাবাকে বললেন,"বাবা রুক্মিণী দেবীকে আসার সময় বাড়ি নিয়ে আসবেন।জলখাবার
এবং দুপুরের খাওয়াটা তিনি আমাদের সাথেই করবেন।" এই বলে তিনি ফোনটা কেটে
দিলেন।
কৃষ্ণকান্ত বাবুর এক মুহূর্তের জন্য চারপাশ
অন্ধকার হয়ে গেলো।তিনি শুধু ভাবতে লাগলেন,"ছিঃ! ছিঃ! কি লজ্জার ব্যাপার।শেষ পর্যন্ত
এইভাবে ধরা পড়তে হবে ছেলের হাতে।" এই সব সাত-পাঁচ চিন্তা করে,অবশেষে ছেলের কথা
অমান্য করতে না পেরে কৃষ্ণকান্ত বাবু রুক্মিণী দেবী কে নিয়ে হাজির হলেন তার বাড়ি
'কামিনী' তে।
কৃষ্ণকান্ত বাবু একপ্রকার লজ্জায় মাথা নিচু করে
বাড়ির বেল টিপলেন।অনির্বাণ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাদের। সদর দরজা খুলে
অনির্বাণ সসম্মানে রুক্মিণী দেবীকে বাড়ি ঢোকালেন। তারপর রুক্মিণী দেবী কে নমস্কার
করে বললেন," আমি অনির্বাণ।বাবার বড় ছেলে।"
তারপর জয়ার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন," উনি আমার স্ত্রী
জয়া।"
ওদিকে ততক্ষণে চা নিয়ে এসেছে জয়া।সেও ঘরে এসে
রুক্মিণী দেবী কে প্রণাম করলেন।রুক্মিণী দেবী তার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,"সুখী হও
মা।তোমাদের কল্যাণ হোক।"
কৃষ্ণকান্ত বাবু চুপ করে বসে আছেন দেখে অনির্বাণ
নিজেই খাওয়ার টেবিলে জলখাবার খাওয়ার জন্য সবাইকে নেমন্তন্ন করলেন। জয়া গরম গরম
লুচি তরকারি পরিবেশন করলেন। এবং খাওয়া-দাওয়া শেষে সকলের প্রশংসা কুড়িয়ে জয়া
আর অনির্বাণ কৃষ্ণকান্ত বাবু এবং রুক্মিণী
দেবীকে বসালেন এক জায়গায়। এবং জানতে চাইলেন তাদের অজানা গল্পটি।
অবশেষে কোন উপায় দেখতে না পেয়ে কৃষ্ণকান্ত
বাবু শুরু করলেন তার রহস্যময় গল্পটি।তখন কৃষ্ণকান্ত বাবুর বয়স হবে ওই সতেরো কী
আঠারো। তখন একসাথে একই পাড়ায় থাকতেন পনেরো বছরের ছোট্ট রুক্মিণী। ছোটবেলা থেকেই তারা বন্ধু।এই
বন্ধুত্ব কখন যে ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছে ভালোবাসার,তা কখনোই বুঝতে পারেনি কৃষ্ণকান্ত এবং
রুক্মিণী। অনেকটা লজ্জা,অনেকটা বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে তারা নিজেদের
ভালোবাসার কথা একে অপরকে বলতে পারেনি।শুধু অনুভব করে গেছেন নিজেদের
ভালোবাসাকে।চোখে চোখে সেই কথা বলা,সেই মধুর কতসব স্মৃতি গুলোকে নিয়ে, বাক্সবন্দী করে
এতগুলো বছর কাটিয়ে এসেছেন তারা দুজনে।
এতক্ষণ বলার পর অনির্বাণ বাবু কৃষ্ণকান্ত বাবুকে
থামালেন। হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন," তার মানে কৃষ্ণকান্ত এবং রুক্মিণী এই দুটো নাম
মিলিয়ে কি কামিনী হয়?এর জন্যই কী এই বাড়ির নাম কামিনী?আর তোমার প্রিয়
ফুল কামিনী?আর রোজ সকালে কামিনী ফুলের বাগান কে নিজের হাতে পরিচর্যা করো এই কারণে?" অনির্বাণ বাবুর
এরূপ শিশুসুলভ আনন্দে এবং প্রশ্নবাণে কৃষ্ণকান্ত বাবু লজ্জিত হলেন।মৃদু হেসে তার
প্রশ্নগুলোর উত্তর হ্যাঁ বললেও মুখে কিছু বললেন না।এগিয়ে গেলেন গল্পের পরবর্তী
অংশে।
অনির্বাণ বাবু বুঝতে পেড়ে কথা বাড়ালেন না।শুনতে
থাকে তার বাবার গল্প। এরপর রুক্মিণী দেবী বলতে থাকলেন,"তারপর আর যা হওয়ার তাই। এক বছরের মধ্যে আমার
সম্বন্ধেও এসে গেল।আর সুপুত্রও যোগাড় হয়ে গেল। কৃষ্ণকান্ত তখনো চাকরি পায়নি।
তাই বাবাকে কিছু বলতে পারিনি। দেখতে দেখতে ওর চোখের সামনে আমার বিয়ে হয়ে যায়।আর
ধীরে ধীরে ওর স্মৃতি আপ্ছা হতে থাকে আমার কাছ থেকে। আমার এক মেয়েও আছে।আমার
স্বামী মারা গেছে সাত বছর আগে।মেয়ে আর জামাই এখানেই থাকতো,কিন্তু হঠাৎ বদলি
হয় আমার মেয়ের।আমাকে বলেছিল নিয়ে যাবে,কিন্তু আমার মন যায়নি এখান থেকে যেতে।"
এই বলে একটু থামলেন রুক্মিণী দেবী। টেবিলের উপর
রাখা জলের গ্লাস থেকে জল খেয়ে আবার বলতে শুরু করলেন,"অতঃপর এখানেই থেকে গেলাম।শেষে ভাবলাম সকালে
প্রাতঃভ্রমণে যাব।আর বুড়ো-বুড়িদের সাথে একটু না হয় বন্ধুত্ব করে বাকি জীবন
কাটিয়ে দেবো।কিন্তু আমি কি জানতাম যে বুড়োটাকে আমি আবার পাব।"বলে তিনি
তাকালেন কৃষ্ণকান্ত বাবুর দিকে। কৃষ্ণকান্ত বাবুর তখন লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠেছে।
রুক্মিণী দেবী আবারও বলতে থাকলেন,"প্রথম দিনই চোখে পড়েছিল কিন্তু পাত্তা
দেইনি।আসলে আমি ভাবতেই পারিনি যে সে সেখানে থাকবে। কিন্তু সেদিন কৃষ্ণকান্ত নিজেই
এল কথা বলতে আমার সাথে।"
-" তুমি রুক্মিণী না?সেই চন্দ্রপুরে রুক্মিণী?তোমার বাবা কৃষক
ছিল,তাই নয় কী?"
মনে মনে খুব আনন্দ হল উত্তেজনাকে মনের মধ্যে
আটকে রেখে রুক্মিণী দেবী উত্তর দিলেন," হ্যাঁ কিন্তু আপনি কে আপনি আমায় চেনেন?"
-" আলবাত চিনি আমি আপনাকে।আর তুমি আমাকে ভুলে গেলে?আমি কৃষ্ণকান্ত।
চিনতে পারছ না?সত্যি ভুলে গেলে আমায়?"
কৃষ্ণকান্ত বাবু
কষ্ট পেলেন দেখে রুক্মিণী হাসতে হাসতে বলে উঠলেন," আমি চিনব না তা কি হয় আমি তোমায় আগেই দেখেছি,তুমি আমার আজ
দেখছো।"
এইভাবে আস্তে আস্তে শুরু হল রুক্মিণী দেবী এবং
কৃষ্ণকান্ত বাবুর হারিয়ে যাওয়া প্রেম। আস্তে আস্তে কথার মাধ্যমে এত বছরের সমস্ত
গোপন রহস্য বেরিয়ে আসলো দুজনের সামনে। সেই দিন থেকে বদলে গেল তাদের জীবন।
মাসকয়েক এই ভাবেই চলতে থাকল তাদের মর্নিংওয়াক,গল্প করা আর কৃষ্ণকান্ত বাবুর দেরিতে বাড়ি
ঢোকা।
গল্প শেষে
অনির্বাণ খুব উত্তেজিত হয়ে বললেন,"তা রুক্মিণী ম্যাম আর বাবা, তোমাদের সম্মতি
থাকলে নতুন মায়ের স্বাগতমের ব্যবস্থা করতে পারি?"
কৃষ্ণকান্ত বাবুর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। বড়
বড় চোখে তাকিয়ে থাকেলেন ছেলের দিকে।এতটা তিনি একদমই আশা করেননি ছেলের কাছ
থেকে।ছল ছল নয়ণে তিনি অনির্বাণের দিকে তাকিয়ে বললেন,"তোমাদের কোনো অসুবিধা নেই?" প্রত্যুত্তরে
অনির্বাণ বললেন," তুমি আমাদের বাবা।তুমি এত কাল আমাদের
সুখ-দুঃখ-আনন্দের খবর রেখেছো। আমার আর জয়ার প্রেমকে সম্মতি দিয়েছ। আর আমি তোমার
ছেলে হয়ে, তোমার খুশির জন্য এইটুকু করতে পারব না?"
অনির্বাণ এর উত্তরে মুগ্ধ হয়ে জড়িয়ে ধরলেন
কৃষ্ণকান্ত বাবু তাকে। অনির্বাণেরও চোখের
কোনে জল এলো। সে বলল,"বোনকে ফোন করে দিয়েছি।বলেছি আসার কথা।আর মা
তুমি ও তোমার মেয়েকে,মানে আমার নতুন বোনকে ফোন করে বল চলে আসতে।
তারপর সবাই একসাথে মিলে তোমাদের পুরনো প্রেমটাকে এক করব।" অনির্বাণ বাবুর মুখ
থেকে মা শব্দটা আশা করেনি রুক্মিণী দেবী আনন্দের সাথে ফোন করে সেও ডাকলো তার
মেয়েকে।
অবশেষে সবই ঠিক হলো।দুপক্ষেরই কিছু কিছু লোকের
অসম্মতি থাকলেও, সবকিছুকে তোয়াক্কা না করে অনির্বাণ বাবু এবং অন্যান্য সবাই মিলে রুক্মিণী
দেবী এবং কৃষ্ণকান্ত বাবুর শুভ বিবাহ সম্পন্ন করে তাদের পুরনো প্রেমকে স্বীকৃতি
দিলেন।
বিয়ের শেষে অনির্বাণ বাবু লক্ষ্য করলেন জয়ার
মুখে চিন্তার রেখা। অনির্বাণ তাকে জিজ্ঞাসা করল,"কি হয়েছে জয়া?কি ভাবছো তুমি?"অনির্বাণের কানে কানে বলল,"তুমি তো এই
বাবারে ছেলে।তোমার আবার কোনো পুরোনো প্রেমিকা নেই তো? পরে এনে বলবে একে আমি বিয়ে করবো। আমি মরে গেলে
কিন্তু ভূত হয়ে এসে ওর ঘাড় মটকে দেবো।"হতভম্ব দৃষ্টিতে অনির্বাণ জয়ার দিকে
তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারল না।শুধু হো হো হো হো করে হেসে দিলো।
anushuvanu30dec@gmail.com
উত্তর ২৪ পরগনা
No comments:
Post a Comment