চলচ্চিত্র সমালোচনা : তরুণ চক্রবর্তী
ভাষা - হিন্দি
পরিচালক - আইজাজ খান
সময় - ১০৮ মিনিট
———————————
করোনা মহামারির এই অন্ধকার সময়ে , লকডাউনের বিষণ্ণ মুহূর্তগুলো যখন কাটতেই চায় না , তখন বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্মে কিছু কিছু সিনেমা দেখতে দেখতে ,যেন বেঁচে থাকার নতুন রসদ পাই । হামিদ এরকমই একটা সিনেমা । দেখা যাছে নেটফ্লিক্সে।
কাশ্মীর নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা স্বাধীনতার পর থেকেই চলছে । এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ক্ষেত্র এটা নয় । কিন্তু , আমরা সাধারণ বুদ্ধিতে এটা বুঝি , এই অবস্থার জন্য , শাস্তি পাচ্ছে সাধারণ মানুষ , হিন্দু - মুসলমান নির্বিশেষে । মাঝখান থেকে ফয়দা লুটছে কায়েমি স্বার্থ।
কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্তিতিতেই এই কাহিনীর শুরু । একটি বাচ্ছা ছেলের বাবা হটাৎই হারিয়ে যায় । সে বাজারে গেছিল , তার ছেলের আবদার মেটাতে একটা জিনিস আনতে ।তারপর আর ফেরেনি । ছেলেটির নাম হামিদ । বাবার নাম রাহমত্ ।মার নাম ইসরাত্ । নামগুলো যাই হোক । এটা সারা পৃথিবীর , যেকোনো ধর্মের , যেকোনো বর্ণের মানুষের গল্প । যারা , অবিরত প্রশাসনের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে, তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য , তাঁদের প্রিয় মানুষটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য ।
হামিদকে বলা হয় , তাঁর আব্বুজান আল্লাহ্র কাছে গেছে । যে আব্বু শিকারা বানাত , উর্দুতে কবিতা লিখত । আল্লাহ্র নাম্বার ৭৮৬ । হামিদ , তাঁর আব্বুজানের যন্ত্রপাতির বাক্সে , একটা মোবাইল পায় । যার ব্যাল্যান্স শেষ । ব্যাল্যান্স ভরে , সে আল্লাহ্কে ফোন করে । তাঁর আব্বুকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য । ৭৮৬ সারা দেয়না । মোবাইলের দোকান থেকে সে জানতে পারে , মোবাইল নাম্বার দশ সংখ্যার হয় । সে একটা আরোপিত নাম্বারে, যার মধ্যে ৭৮৬ সংখ্যাটা আছে, ফোন করে । যে নাম্বার তাকে পৌঁছে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সদস্যর কাছে । হামিদের বিশ্বাসে , সেই তাঁর আল্লাহ্ ।
হামিদ কি তাঁর আব্বুকে ফিরে পেল , কি করে আল্লাহ্র বদলে সেই সেনাবাহিনীর সদস্যের পরিচয় তাঁর কাছে উন্মুক্ত হোল সে তো অন্য গল্প । আসল গল্পতো , একটি নিষ্পাপ শিশুর তাঁর বাবাকে হারানোর গল্প , তাঁর বিশ্বাস ভঙ্গের গল্প , প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাঁর রুখে ওঠার গল্প , আবার অসীম ঈশ্বরভক্তি নিয়ে মায়ের সাথে তাঁর নতুন জীবন শুরুর গল্প ।
কাহিনীর চরিত্র অনুযায়ী ফটোগ্রাফি অনুজ্জ্বল । সচেতন ভাবেই পরিচালক কাশ্মীরের উজ্জ্বল নিসর্গ ছবিতে দেখান নি । লো লাইট ফটোগ্রাফির পারফেক্ট উদাহরণ এই ছবিটি ।
আবহ সঙ্গীতেও কিছু কাশ্মীরি সঙ্গীত যন্ত্রের ব্যবহার ও কাশ্মীরি লোকসঙ্গীত পরিচালকের রুচি , ও পরিমিতি বোধের পরিচায়ক ।
চিত্রনাট্যও যথেষ্ট টানটান এবং পরিণত ।
অভিনয়ের কথা শেষে বললাম । কারণ অভিনয়ই এই সিনেমার প্রাণ ও প্রধান চালিকাশক্তি । বিশেষ করে হামিদের ভূমিকায় তালাহ আরশাদ রেশি ও ইসরাত এর ভূমিকায় রসিকা দুগাল এর অভিনয় অনেকদিন মনে থাকবে ।
আশা করবো , পরিচালকের কাছ থেকে এই ধরনের আরও সিনেমা , আমাদের সিনেমার ভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করবে ।
tchak1961@gmail.com
কলকাতা
দেখেছি সিনেমাটা। আপনার রিভিউ একদম যথাযথ।
ReplyDelete