অনেকের কাছেই
শুনেছিলাম অফবিট স্পট হিসাবে সদ্য মাথাচাড়া দেওয়া জায়গা জি-প্লটের কথা। তাই
অনেকদিন ধরে যাব যাব করে শেষে ঠিক করলাম দিনক্ষণ। নির্দিষ্ট দিনে আমরা পাঁচজন ভোর
ভোর চলে এলাম সুভাষগ্রাম স্টেশনে। টিকিট কেটে দেখি মিনিট ১০ এর মধ্যেই
লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল আসছে। উঠে গেলাম ট্রেনে। একে অতো সকাল, তার উপর ডাউন
ট্রেন, ফাঁকাই ছিলো
মোটামুটি। পা মেলে বসে গল্প করতে করতে চললাম আমরা। ৭.৪০ এ পৌঁছে গেলাম
লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশন।
এবার আমাদের
রামগঙ্গা জেটিঘাটে যেতে হবে, সেখান থেকে নৌকা। স্টেশন থেকে বাইরে এসে দেখি
সার সার ইঞ্জিন ভ্যান। অনেক দর কষাকষি করে জন প্রতি ৫০ এ রফা হলো। চললাম আমরা।
প্রায় পৌনে দু'ঘন্টা পর আমরা এলাম রামগঙ্গা ঘাটে। তখন সবে ৯.৩০ বাজে। কিন্তু নৌকা আসবে ১০.২০
তে। তাই কাছের দোকান থেকে লুচি তরকারি দিয়ে প্রাতঃরাসটা সারলাম।
১০.৩০ এ নৌকা
পাথরপ্রতিমা থেকে এলো। এই ধরনের নৌকাতে উপর নিচে দুজায়গা বসা যায়। তবে খুব ভিড়।
বিভিন্ন ঘাটে থামতে থামতে প্রায় ১ ঘন্টা পর আমরা নামলাম জি প্লট চাঁদমারি ঘাটে।
এখান থেকে আমাদের হোমস্টে অনেকটা পথ তাই আমরা খোঁজ করতে লাগলাম ইঞ্জিন ভ্যানের।
স্ট্যান্ডে গিয়ে শুনি নিজেদের সুবিধার জন্য তারা পুরো রাস্তাকে ভাগ করে নিয়েছে আর
আমাদের যেতে হবে সেভাবেই। কি আর করা যাবে, ঠিক করলাম এভাবেই যাব। তাই চাঁদমারি ঘাট থেকে
ভ্যানে গেলাম টোটোর বাজার, সেখানে আবার ভ্যান চেঞ্জ করতে হলো। এবার আমরা
এলাম ইন্দ্রপুর। সেখান থেকে আবার ভ্যান। এবার এলাম সখের বাজার। এখান থেকে আমাদের
ঝাউমন হোম স্টে মাত্র ২ মিনিটের হাঁটা পথ। আর আমাদের হোম স্টে থেকে ৫ মিনিট
দুরত্বে গোবর্ধনপুর বীচ। এটা খানিকটা মোহনা, এর তিনদিকে নদী আর অপর দিকে বঙ্গোপসাগর।
যখন আমরা এলাম
তখন প্রায় দুপুর, আর পেটে ছুঁচোতে ডন দিচ্ছে। তাই আর দেরি না করে ডান হাতের কাজ টা সেরেই
ফেললাম। দুপুরের মেনুও জবরদস্ত ছিলো। ভাতের সাথে ডাল, ভাজা, ১টা সবজি। সাথে চিংড়ি মাছ আর পার্শের ঝাল। আহঃ
তৃপ্তি করে খেলাম। পেট পুজো হয়ে গেলে একটু বিশ্রাম নিয়েই আমরা বেড়িয়ে পরলাম।
প্রাকৃতিক পরিবেশ বারবার মন ভুলিয়ে দেয়। আর তার সাথে নদী আর গ্রাম্য পথ ও মাটির
বাড়ি। এতদিন পরেও আয়লা আক্রান্ত জায়গাগুলো দেখে খারাপই লাগে। নদীর দুপাশে চড়াতে
শুয়ে আছে অলস কুমির। এই প্রথম আমি শঙ্খকে চলতে দেখলাম।
গ্রামের পথ ধরে
একটু এগোতেই দেখলাম বাচ্চারা খেলছে। আর দূরে সুর্যাস্তের লাল আভা আকাশটা কে রাঙিয়ে
দিচ্ছে। সন্ধ্যা নামতেই আমরা আবার ঘরে ফিরে এলাম। পিঁয়াজি মুড়ি আর চা দিয়ে সান্ধ্য
আহার বেশ ভালোই হলো। টিফিন খেয়ে বাকিরা তাস খেলতে বসে গেলে আমিও একটু গল্পের বই এ
মন বসালাম। রাত যখন প্রায় ৯টা তখন ডিনারের ডাক এলো। এবারের খাবার রুটি আর দেশি মুরগী
কশা। খাবার খেয়ে ১০.৩০ নাগাদ শুয়ে পড়লাম। পরের দিন আবার ফেরা আছে আমাদের।
পরদিন বেশ
তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙলে চা খেয়ে নিলাম। আজ বেলা ১০টার মধ্যে রওনা দিতে হবে। সেরকম ই সব
গুছিয়ে নিয়ে লুচি তরকারি সহযোগে ব্রেকফাস্ট করেই আমরা বেড়িয়ে পরলাম।
গতকালের রাস্তা
দিয়ে না ফিরে আজ অন্য দিক দিয়ে ফিরবো সেরকমই মনস্থির করা হলো। সেরকম ভাবেই আমরা
টোটো করে সীতারামপুর ঘাটে এসে পৌঁছালাম। এখান থেকেই সেই নৌকা করে রামগঙ্গা জেটি
ঘাট এলাম। আর তারপর ডাউন লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল করে বাড়ি।
বলতে দ্বিধা নেই, স্বল্পসময়ের
মধ্যে জি-প্লট সত্যিই weekend destination হিসাবে একটি আদর্শ জায়গা হয়ে উঠছে।
জিপ্লট
যাতায়াত
খরচ (জন প্রতি)
*****************************
যাওয়া
********
১. ৬.২৪ এর লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল (৩৪৭১৮) ভাড়া ১০টাকা
২. লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে রামগঙ্গা জেটি ঘাট - ৫০ টাকা জন প্রতি
৩. রামগঙ্গা জেটি ঘাট থেকে G Plot চাঁদমারি ঘাট - ১২ টাকা
৪. ভ্যানে টোটোর বাজার-ইন্দ্রপুর-সখের বাজার - ২০ টাকা করে
*****************************
যাওয়া
********
১. ৬.২৪ এর লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল (৩৪৭১৮) ভাড়া ১০টাকা
২. লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে রামগঙ্গা জেটি ঘাট - ৫০ টাকা জন প্রতি
৩. রামগঙ্গা জেটি ঘাট থেকে G Plot চাঁদমারি ঘাট - ১২ টাকা
৪. ভ্যানে টোটোর বাজার-ইন্দ্রপুর-সখের বাজার - ২০ টাকা করে
ফেরা
*******
১. টোটো করে সীতারামপুর ঘাট - ২৫ টাকা
২. সীতারামপুর ঘাট থেকে রামগঙ্গা জেটি ঘাট - ২০ টাকা
৩. রামগঙ্গা জেটি ঘাট থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর - ৫০ টাকা
৪. লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে বাড়ি - ১০ টাকা
থাকা*******
১. টোটো করে সীতারামপুর ঘাট - ২৫ টাকা
২. সীতারামপুর ঘাট থেকে রামগঙ্গা জেটি ঘাট - ২০ টাকা
৩. রামগঙ্গা জেটি ঘাট থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর - ৫০ টাকা
৪. লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে বাড়ি - ১০ টাকা
*******
আমরা ছিলাম ঝাউমন হোম স্টে তে। থাকা খাওয়া ১২০০ টাকা জন প্রতি।
souptik.25@gmail.com
No comments:
Post a Comment