১
স্বপ্নে
একা বৃষ্টি ভিজছিল মহাসুখে বৃষ্টি। ভিজে একদম একসা। বালিশ কোলে করে নিভৃতে একপাশে ভাবছিল
একুশে কুঁড়ি কথা। একটা একটা করে বসন্ত পার করে সে বসন্তের আনন্দে মশগুল। একুশ বছরে
কলেজ জীবন শেষ করে সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্করে প্রবেশ।
এখন সুঠাম শরীরের
এক যুবক অনিমেষ আড়চোখে দেখে বৃষ্টিকে লাইনে দাঁড়িয়ে। এক ঘণ্টার মধ্যেই ভর্তি
হওয়ার কাজ সুসম্পন্ন। বৃষ্টির সময় একটা পেন পড়ে গিয়েছিল। অনিমেষ পেনটা কুড়িয়ে
নিয়ে বৃষ্টিকে বলল এই যে আপনার পেনটা পড়ে গেছিল। এই নিন। বৃষ্টি বলল 'থ্যাঙ্ক
ইউ।
বৃষ্টি জিজ্ঞাসা
করল আপনি কোন বিষয়ের ছাত্র।---আমার বাংলা আর আপনার?
মিষ্টি
হেসে বলল, আমারও বাংলা। আপনি কোথা থেকে আসেন
---আমি লিলুয়া থেকে আর আপনি।
---আমি কোন্নগর। আমার গ্রামেই বাড়ি। কোন্নগরে
আমার মামার বাড়ি।
তাহলে আমরা
একসঙ্গে আসা যাওয়া করব।
সঙ্গী থাকলে
ভালো লাগে অবশ্যই।
---আমারও
তাই মনে হয়। মনে বলল আপদ।
---অবশ্যই চলুন যাওয়া যাক
----আবার ক্লাস শুরু হবে 5 দিন পরে আসবেন তো
---- হ্যাঁ আসবো আমি রোজ আসার চেষ্টা করব। কামাই
করতে ভালোবাসি না।
---ঠিক। চলুন যাওয়া যাক।
বৃষ্টি হাঁফ ছেড়ে
বাঁচল। মেয়েদের সঙ্গে তার ভালো লাগে।
ছেলেদের ভাল লাগে না ছোট থেকেই।
কলেজে
ভর্তির প্রথম দিনেই অনিমেষ আর বৃষ্টির পরিচয় হলো ভালোভাবেই।
বৃষ্টি অনিমেষ
ফিফটি সেভেন ধরে হাওড়া স্টেশনে। ট্রেনে
চেপে অনিমেষ বলল আপনি কি লেডিস এ যাবেন। তাহলে আরো একটু হেঁটে সামনে যান।
--ঠিকই বলেছেন।মনে ভাবল ছেলেদের সঙ্গ আমার ভাল
লাগেনা। তবুও ভদ্রলোক তো। তবু ভদ্রতা দেখিয়ে বৃষ্টি বলল তুমি আসো যদি একসঙ্গে যাব।
বৃষ্টি বলল, আমাকে আপনি বলবেন না তুমি তুমি বলবেন আমিও
দেখছেন না আপনাকে তুমি তুমি বলছি। আজ থেকে আমরা দুজনে বন্ধু। এর থেকে বড় সম্পর্ক
আর হয়না। বৃষ্টি মনে মনে ভাবে বন্ধু হতে পারো কিন্তু প্রেমিক নয়। ছেলেদের সঙ্গ
পছন্দ করিনা। ট্রেন ছেড়ে দিল অনিমেষ নেমে গেল। আর বৃষ্টি চলে গেল কোন্নগরের দিকে।
অনিমেষ ভাবল মেয়েদের আমি পছন্দ করিনা আর আমার সঙ্গে পরিচয়।
অনিমেষের এক বন্ধু
বাবা-মায়ের সঙ্গে ইউরোপে থাকে তার নাম আবির।
আবির এসেছে অনিমেষের সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল। অনিমেষ
আবিরের গল্প শোনে। অনিমেষ গ্রামের ছেলে পড়াশোনার জন্য লিলুয়া দাদার বাড়িতে এসেছে
প্রায় 5 বছর এখানে। এসেছে ফলে বন্ধু-বান্ধব আছে দু-একজন।
আবির হায়ার
সেকেন্ডারি পড়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য বাবার সঙ্গে ইউরোপে থাকে।
আর তার বাবা ওখানকার একটা কলেজের প্রফেসর। প্রায়
একমাস পরে আবির একবার মায়ের সঙ্গে আর বড়দার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। বাবা টাকা
পাঠিয়েছেন মায়ের হাত দিয়ে। একমাস পরে আবার ইউরোপ চলে যাবে।
আবির শহরের
ছেলে হলে খুব স্মার্ট চালাক।
অনিমেষ বিকেলবেলা
একদিন ছাদে একা পেয়ে জিজ্ঞাসা করল ইউরোপে ঘোরাঘুরি করলে কেমন লাগলো বল।
আবির বলল বাবার
সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় ঘুরেছি। ইউরোপের খুব ভালো লেগেছে বলনা তোর কাছে শুনি।
ইউরোপের কথা। কোনদিন তো যেতে পারবো না। অনিমেষ আবিরের চোখে প্রেমের দৃষ্টিতে
দেখেন। সে বলে ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে খুব ভালোলাগে। বেলজিয়ামের আয়নায় কথা শুনেছিস।
খুব ভালো তাই না।
হ্যাঁ
এখানকার কাঁচ জগৎবিখ্যাত।
রাজধানীর
মার্কেট স্কয়ার, মার্কেট স্কয়ার দেখার মত একটা ফুলের মার্কেট। বিভিন্ন স্থান থেকে
আসা ফুলচাষীরা এখানে এসে বসে ফুলের মেলা দেখতে খুব ভালো লাগলো তারপর দেখলাম একটা
1609 সালে তৈরি মিউজিয়াম আছে চার্চ আছে আর্ট গ্যালারি আছে অনেক চার্চ আছে।
তারপর দেখলাম
ম্যানিকিন 2016 সালে তৈরি রাসেল মিউজিয়াম আছে চার্চ আছে আর্ট গ্যালারি আছে অনেক কিছু দেখার আছে।
আর কি দেখলি বল আমি
আজকে জানতে চাই।
অজানাকে জানতে আমার খুব ভালো লাগে।
আমি তো
কোনদিন ইউরোপ যেতে পারব না। তুই বল জুরিখের সামনের রাইন ফলস।
সকালে
আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম সকলে।
আমরা মুগ্ধ হয়ে
গেলাম সাজানো-গোছানো সুন্দর বাগান দেখে। বেশ ভালো লাগলো।
বাকি স্থানগুলো পরে
দেখব এখন তো ওখানেই থাকবো।
আবারো বললো তারপর
বিভিন্ন দোকানে শিল্পকর্ম। চকোলেটের ছড়াছড়ি। তাই নাকি ভারি মজার ব্যাপারতো।
ব্রাসেলসের চকলেট কি সুন্দর দেখতে।
খাব না
সবাইকে দেখাবো। রেখে দেব চকলেটের দেখ এক্সপায়ারি ডেট লেখা আছে।
তারপর
বল আর কি দেখলাম একদম অন্ধকার ভূতের ভয় লাগছিল যদি কামড়ে দেয় মাঠের মধ্যে তাঁবু
খাটানো পর্যটকরা ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেলে এই কাটানো হোটেলে খেয়ে নেয় সকলে তারপর
একটা সাইকেলের দোকান দেখলাম কত সুন্দর টেকনোলজীর বিভিন্ন রকম পোশাকের দোকান সাজানো
গোছানো পরিপাটি পরিবেশ।
মনে রাখবি জুরিখ আর
শাফাউসনের মাঝখানের রাইন ফলস।
ফলস থেকে তোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল বারবার তোর কথা
ভাবছিলাম ঠিক আছে ঠিক আছে যতবার ভরসা আসবি আমাকে ইউরোপে গল্প বলবি চলে গেল এরপরে পড়তে
বসবো জল নিয়ে এসে রান্না করে তারপর খাবো দাড়াও রান্না করেন এরপর দুজনেই দুজনের বাড়ি
চলে গেল তখন জোনাকির আলো জ্বলতে শুরু করেছে।
মানুষের জীবনের
গতিতে গতিপথ কোনদিকে মোড় নেবে মানুষ নিজেই জানে না বৃষ্টি অনিমেষের বন্ধু ছিল
অনিমেষ নিজের মনকে প্রশ্ন করে সত্যি কি একটি ছেলে ও একটি মেয়ে বন্ধু হতে পারে?
অনিমেষ জানেনা।
উত্তর খুঁজে পায়না। মনের এক কোণে আলো জ্বালিয়ে বসে আছে বৃষ্টি।
কিসের আলো প্রেমের?
নিশ্চয়ই তা না হলে
বৃষ্টিতে এত ভালো লাগবে কেন অনিমেষ ভাবে কি অপূর্ব সৃষ্টি সৃষ্টি হলো এমন যন্ত্রণা
শত আক্ষেপ মুহূর্তে উধাও হয়ে যায় কি করে হয় অনিমেষ জানে না সেভাবে বৃষ্টিতেও
তাকে ভালবাসে মনে রাখে বৃষ্টি অনিমেষকে বন্ধু বলেই জানে তার বাইরে সীমানা তারা
কোনদিন লংঘন করে নি একদিন অনিমেষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আ্যানেক্স হলে বসেছিল
হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে দেখা দুজনেই এমএ কমপ্লিট হয়ে গেছে এখন দুমাস ফাঁকা।
এরপরে পিএইচডি
করে দুজনের ডক্টরেট করার আশা সিঁড়িতে বসে আজ বৃষ্টি জীবনের আরেকটি কথা অনিমেষকে জানালো
বৃষ্টির সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে তার বাবা-মা অনিমেষ শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো
প্রায় দশমিনিট এই দশ মিনিটে তার সমস্ত বুদ্ধি অহংকার ভুলে সে নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে
রইল বৃষ্টির দিকে বৃষ্টি বলল আমি বিদেশে যাব আর দেখা হবেনা তবু তোমার কাছে যে বন্ধুত্বের
পেয়েছি তা ভোলার নয় অনিমেষ অনিমেষ এখানে কথাগুলো বৃষ্টি কি তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে
অনিমেষ অর্থ শুরু করলো।
ডিভাটা বৈশাখে
দুপুর অনিমেষ ভাত খেয়ে মাটির দোতলা বাড়ির জানলা দিয়েছে আছে এই গ্রামটার অত্যন্ত
প্রিয়।
২
ভালোবাসা থাকলেই
গ্রামেই সফল হওয়া যায়। দুপুর রোদে তার মন বলেছে এই গ্রামে জীবন বয়ে চলেছে
অনাদিকাল ধরে।
মিশে মানুষ
শান্তিতে ঘর বেঁধে আছে যুগের পর যুগ কলেরা ম্যালেরিয়া কিছুই তাদের গ্রামছাড়া
করতে পারেনি অতীত স্মৃতির অতলে হয়তো এই গ্রামের জঙ্গলে প্রথম চকমকে আগুন আবিষ্কার
করেছিল মানুষ এই গ্রাম প্রধানত তপশিলি ও আদিবাসীদের গ্রাম।
ব্রাহ্মণ কায়স্থ
সামান্য কয়েক ঘর আছে আম জাম ইউক্যালিপটাস বকুল সেগুন শাল-পিয়ালে রায়গ্রাম
গাছগুলো কি কেউ এনেছে না নিজে থেকেই মাটির মাটির আদরে হয়েছে ঠিক অনিমেষ ভাবে মাটি
আর জলের আদরে বেড়ে উঠেছে ঘন বন মানুষ আর মারাংবুরু দাঁড়িয়ে রেখেছে বিশ্বাসী
গ্রামগুলো এখানে তোমার সাঁওতাল প্রতিবেশী এখানকার এঁটেল মাটিতে ফসলের মধ্যে ধান
খুব ভালো ফলে তাছাড়া বিভিন্ন সবজি আছে।
অজয় ধরে ধরে
বিভিন্ন তরুরাজি বিরাজ করছে এঁকেবেঁকে চলেছে অজয় একদম অনিমেষের দোতলা মাটির বাড়ি
হয়তো দুই এক বছরের মধ্যেই তলিয়ে যাবে তাদের গ্রামের বাড়ি চলে গেছে এবার তাদের
পালা মিলেমিশে গ্রামের সৌন্দর্য অপরূপ হয়ে উঠেছে।
জীবন যেখানে জীবনে
যেখানে আনন্দ নেই কোন রস নেই অজয়ের বন্যায় ভেসে যায় দুয়োরানীর দুঃখের ঘর। সুখ
নেই। দুমুঠো ভাত জোগাড় করতেই দুপুরে চলে লড়াই 40 ডিগ্রি তাপমাত্রায়। মানুষ
আরেকটি নদীতে শান্তি খোঁজে। পরম আপন করে পাওয়া শান্তি।
দুপুরে
আজ মনে হচ্ছে আগুন লেগেছে।
অনিমেষ বেরিয়ে
পড়ে গামছা ভিজিয়ে নেয় মাথায় তারপর অজয় ধারে ধারে যেখানে ব অক্ষরের মতো নদীর
মাঝখানে দুদিকে জলেশ্বর চলে গেছে। সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। তীর তীরে জলের ঢেউ।
দাবদাহের
আড়ালে আবার চোরাবালির ফাঁদ।
কতজন যে এই ফাঁদে
পড়ে জীবন হারিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
এখানে অজয়ের
গ্রাসে বর্ষাকালে ফসল হয় না।
এই পলি শুকিয়ে
গিয়ে গ্রীষ্মকালের ভরিয়ে তোলে প্রাণ। এখানে জমি বাঁজা।
তবু জীবনের কি
বাহার।
জীবন অনিমেষ ভাবে
কেমন কলসি কাঁখে জল নিয়ে যায় বধু তাদের স্বামীরা দুপুরে নিয়ে গিয়ে খেতে বসে
একসাথে তখন সবকিছু ভুলে গিয়ে বাজে জীবনের বাজনা।
ঘরবাড়ি অধিকাংশ
নড়বড়ে সিটে বেড়া বা মাটির চালা নদীগর্ভে চলে যাবে বলে এখন থেকেই সকলে পঞ্চায়েত
অফিসে লাইন দিয়ে আবেদন করে রেখেছে কাগজপত্র ঠিক করে রাখে তা নাহলে কি করে পরে
আবার বাড়ি পাবে।
একটা গামছা বেঁধে
পেটে হরিমটর চিবোয় অভাবি মানুষ। অজয় এর
উপর একটা বাঁধ হয়েছে ও শুধু নামেই বাঁধ। অজয় বর্ষাকালে তাকে থোড়াই কেয়ার করে।
ভাসিয়ে
নিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম।
এখানেই পরপর গ্রাম। বাস করছে বারেন্দা চড়খী বেলুন
গ্রামের লোকেরা।
বছর তিরিশের অনিমেষ
আর পাশের বাড়ির রুমকির বয়স বাইশ।
গ্রাম নিয়ে চিন্তা করে গ্রামকে ভালোবাসে। অনিমেষের
কাকা অজিতবাবু একবার রুমকিকে যাত্রা দলে কৃষ্ণ সাজিয়েছিলেন। পাঁচ গ্রামের লোক বলেছিল
হ্যাঁ কৃষ্ণ বটে সাক্ষাৎ গোপাল গো। তারপর অভিনয় মুগ্ধ হয়েছিল সবাই। অজিতবাবু তখনই
বুঝে ফেলে রেখে দিয়ে অনেক ভালো কাজ হবে।
বাইশ বছরের রুমকি
বাংলার সুন্দরী মনে মনে প্রথম দর্শনেই ভালোবেসে ফেলেছে একই কলেজে পড়ে একবার রুমকি
কলেজ যাওয়ার পথে চারজন গুন্ডা লোকের পাল্লায় পড়ে ছিল।
যাদের একজন এগিয়ে
এসে বলল তুমি কি সুন্দরী মেয়ে একবার আমার কোলে এসো। সামনে ছিল একটা লোক। এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করেছিল এবং কিশোরকে
লক্ষ্য করে বলল আপনার সাহায্য আমার প্রয়োজন নেই আমি আপনি আসতে পারেন অনেক দুঃখ
পেয়ে চলে গেছিল কিশোরটি। তারপর সে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখল রুমকি লোকটার কাছে
গিয়ে লোকটার গালে থাপ্পর কষিয়ে বাস চেপে ধরল।
বদমাশ গুলো বুঝতে
পারেনি একটা মহিলার কাছে এরকম ভাবে তাদের অপদস্থ হতে হবে।
৩
অনিমেষ খুব খুশি
হয়েছিল। মেয়েটি আত্মরক্ষায় সক্ষম এই কথা ভেবে তা আনন্দ হয়েছিল কলেজে গিয়ে
রুমকি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সহজ ভাবে মেলামেশা করে। কিন্তু অনিমেষ ভালোবাসে ছেলেদেরই। যায় কলেজে। এক
বান্ধবীর সাথে তার খুব মেলামেশা এবং তার বাসায় যায় তার বান্ধবীর নাম বৃষ্টি।
বৃষ্টি তার বাড়িতে
খোলাখুলিভাবে কথা বলেছিল তার মাকে মা আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে তুমি ভুল করেছো আমি
ছেলে ভালোবাসি না। আমি মেয়ে ভালোবাসি। আমি লেসবিয়ান। ছেলেটার সঙ্গ আমার ভাল
লাগেনা আমি কে আমি ঘৃণা করি তার মা বলেছিলেন তুই কি ভয়ঙ্কর কথাগুলো বলছিস জানিস
সমস্ত কে মেনে মেনে নেবে না বৃষ্টি বলেছিল আমি পরোয়া করি না লোকের কথায় আমার
কিছু যায় আসে না।
তারমা বৃষ্টির
বাবাকে বলেছিল কথাটা তার বাবা খুব দুঃখ পেয়েছিলেন এরকম জেনে তিনি হতাশ হয়েছিলেন
তারপর তারা তাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আমি বৃষ্টি হস্টেলে হোস্টেলে শহরের
একটা ঘর ভাড়া করেছিল একা থাকত আর মাঝে মাঝে রুমকি আসলেই তাদের দুজনে যৌনচর্চা
তাদের আনন্দে জগতে নিয়ে যেত।
দুজনে দুজনকে
গভীরভাবে ভালোবাসতো জীবনে কাউকে রুমকি এত ভালোবাসা নিয়ে সেই স্যারের কাছে
প্রার্থনা করে তাদের ভালোবাসা যেন অটুট থাকে আবির নিয়ে নিয়েছিল কারণ সে অনিমেষকে
ভালোবাসে বৃষ্টি ভাবে মেয়েরা মেয়েকে ভালোবাসতে পারে এক্ষেত্রে স্বাধীনতা আছে
সুপ্রিম কোর্টের রায় বলে ছেলেরা ও একটা ছেলেকে ভালবাসতে পারে এটাই তো ব্যক্তিগত
স্বাধীনতা তবু ভারতবর্ষের মতো দেশে সমাজ এখনও এই তত্ব মানতে রাজি নয়।
সমকামিতাকে সুপ্রিম
কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট যতই মান্যতা দে এখনো সময় মানতে রাজি নয় কলেজে বৃষ্টি আরো কি
একসাথে থাকেনা যদি কারো সন্দেহ হয় তাই কিন্তু তারা চোখে চোখে কথা বলে রুমকির
বাড়িতে বাবা মা ও দাদা আছে মেয়েকে রুমকি বাবা-মা খুব ভালোবাসেন
বৃষ্টির বাসার পাশে
একটা 30 বছরের যুবক ভাড়া থাকতো। একটা অফিসে চাকরি করে। একদিন বৃষ্টিকে সে বলল
আমাদের অফিসে একটা পোস্ট ফাঁকা আছে। আপনি কি চাকরি করবেন। যুবকটি বেশ ভদ্র সভ্য
বলেই মনে হয়। বৃষ্টি তাই বলল আমি আগামীকাল বলব। পরের দিন কলেজে এসে রুমকিকে
জিজ্ঞাসা করেছিল আমি একটা প্রাইভেট অফিসে ক্যাশিয়ারের কাজ করতে কাজ পেয়েছি।
তোমার কি মত।
রুমকি বলল,
আমাদের ভবিষ্যতের জন্য চাকরির প্রয়োজন কিন্তু পড়াশোনা কিভাবে হবে আর মাত্র একবছর
পরে আমরা গ্যাজুয়েট হবো। বৃষ্টি বলেছিল নাইট কলেজে পড়বো আর দিনে কাজ করব।
কি বলো, এত পরিশ্রম
আর ধকল সইতে পারবেতো? বৃষ্টি বলেছিল মাত্র এক বছর তো মাই ডিয়ার তুমিও না করো না। আজ বাড়ি গিয়ে প্রথমেই বৃষ্টি কে
বলেছিল আমার মত আছে। চাকরিতে জয়েন করলো
স্যালারি ভালো কোনো অসুবিধা নেই। ক্যাশিয়ারের পোস্টে কাজ করতে তার ভালোই লাগছে।
এই কথাটা সে জানালো রুমকিকে। একই কলেজে নাইট কলেজে ভর্তি হলো।
এক বছর কেটে গেলে
তারা দুজনেই এমএ পাশ করে গেল তারপর তারা মনে করল আর পড়াশোনা নয়। দুজনেই চাকরি
করবে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত না থাকলে এই অসম প্রেমের পরিণতি ভালো হবে না।
তাদের আশা ছিল পিএইচডি করবে ডক্টরেট করবে। কিন্তু আশা তো আর সব সময় সফল হয় না।
তাই রুমকি চাকরির
সন্ধান করতে থাকলো। প্রায় এক মাস পরে সে রেলওয়ে কোম্পানিতে একটা চাকরি পেল। বেশ
ভালো চাকরি। আর কোন চিন্তা নেই বৃষ্টিতো চাকরি করে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে। কবে
বন্ধ হয়ে যাবে ঠিক নেই। বৃষ্টি বলল, আমরা বিয়ে করব এবার। কিন্তু তার আগে তোমার
বাবা-মা দাদাকে তোমার ব্যক্তিগত ভালোলাগার কথা জানাও।
বৃষ্টির কথামতো
রুমকি আজ বাড়িতে গিয়ে অকপটে প্রথমেই আদরের বাবাকে বললো বাবা আমি মেয়েদের
ভালোবাসি আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি আমি ছেলেদের ভালোবাসি না তাদের ভালো লাগে না
তার বাবা কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন তিনি মাথায় হাত দিয়ে বললেন বলিস কি মা। তাই
আবার হয় রে। সমাজ মানবে না। রুমকি বলল, আমি সমাজের পরোয়া করিনা।
বাবা
তার স্ত্রীকে ডাকেন ছেলেকে ডাকলেন সকলের সামনে তিনি রুমকির কথা বললেন রুমকি বলল আমি
সমকামী। আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। আমি রেলে একটা চাকরিও
পেয়েছি। তাই তোমাদের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। মেয়ের কথা শুনে তার মা অজ্ঞান হয়ে
পড়ে গেলেন। রুমকির দাদা কোন কথা না বলে ধীরে ধীরে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। শুধু বাবা
রুমকির বাবা মেয়েকে অভয় দিলেন মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, যাও তোমার পথ তুমি বুঝে
নাও তুমি ভালো থেকো তাহলেই আমি খুশি।
রুমকি মাকে খাটে
শোয়ালো তারপর জল দিয়ে সুস্থ করে তুলল। তারপর বলল, মা যখন তোমাদের প্রয়োজন হবে
আমাকে ডেকো আমি আসবো। এখন আমি চললাম। তার বাবা বললেন তোর পোশাক আর কিছু টাকা নে।
রুমকি বলল বাবা আমি এখন চাকরি করি আমি কিছুই নেব না।
ঘর খালি করে রুমকি
চলে এলো বৃষ্টির কাছে বৃষ্টি বলল একেবারে চলে এলে কি বলল হ্যাঁ চলে এলাম সে করছিলে
এবার গেলে অতিথি হয়ে যাব ভালোবাসার অপর নাম আত্মত্যাগ।
৪
পাশের বাড়ির
টোটন জানত না দুটি সমকামী মেয়ে তাদের পাশেই
থাকে। সে বৃষ্টিকে চোখে চোখে রাখে। সব সময় অফিসে যায়। একই অফিসে চাকরি করে তারা।
বৃষ্টি একদিন সমীরদা কে ডেকে বলল সমীরদা আমি এসব পছন্দ করিনা। তুমি আমার পিছনে পিছনে
আসবে না।
টোটন কিন্তু হাল
ছাড়লো না একদিন অফিস ফেরার পথে ঘোর ঘোর বর্ষায় একটা পোড়ো বাড়িতে টেনে নিয়ে গেল
বৃষ্টিকে চারজন মিলে তারপর তারা নৃশংস ভাবে অত্যাচার করল আর শেষে ধর্ষণ করলো কেউ
জানলো না পুরো বাড়ির মধ্যে পড়ে রইল বৃষ্টির শরীর।
রিঙ্কি বৃষ্টিকে
বাড়ি ফিরতে না দেখে থানায় ফোন করল তারপর থানা থেকে বড়বাবু তাকে সান্ত্বনা দিলেন
যে করেই হোক বৃষ্টিতে খুঁজে বার করবেন প্রায় ঘন্টা পরে থানা থেকে খবর এলো বৃষ্টির
সন্ধান পাওয়া গেছে 1 প্র বাড়িতে উলঙ্গ অবস্থায় পড়েছিল বৃষ্টি।
থানা থেকেই বৃষ্টি
কে হসপিটালে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল রুমকি হাসপাতালে গিয়ে বৃষ্টিকে সঙ্গে করে
বাসায় ফিরে এলো বৃষ্টি এখন অসুস্থ।
স্বামীর ঘর অফিস আসে
না সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের ভয়ে। স্বতন্ত্র বাসা
নির্দিষ্ট নয়। তারা কোথায় যে টাকা দিয়ে আড়াল হয়ে যায়। তাদের খোঁজ পেতে অনেক
বেগ পেতে হয়।
রুমকি ধর্ষিতা
বৃষ্টিকে মায়া মমতা দিয়ে ঘিরে রেখেছে সে কখনো বুঝতে দেয়নি তার যন্ত্রণার কথা
তার মানসিক আঘাতের কথা। বৃষ্টিকে মানসিকভাবে সুস্থ করার জন্য তার চেষ্টা অন্ত নেই।
ভালোবাসার শেষ নেই। ভালোবাসার এখানেই জয় ভালোবাসার এখানেই জয়।
টোটন
চাকরি ছেড়ে গা ঢাকা দিল। যেখানে গেল সেখানে পতিতাপল্লি আছে। পকেটে পয়সার অভাব নেই।
একটা পতিতার সঙ্গে আলাপ করে গা ঢাকা দিল। দাড়ি গোঁফ রেখে, মাথা নেড়া করে এক ছদ্মরূপে
থাকতে লাগল। টোটন নারীলোলুপ ধান্দাবাজ শঠ, লম্পট। ভালবাসা তার অভিধানে নেই।
বাসে যাওয়া করে
পতিতা মেয়েটি। টোটনকে ডেকে নেয় সুযোগমত।
বাস থেকে মোবাইলে
কথা বলে পতিতা মেয়েটি।সে বলছে, হ্যালো,হ্যাঁ বাসে আছি। বল। না একা নই। বৌদি সঙ্গে
আছে। কথা বলবি। পরে বলবি বে। বুজলি আমরা দুজনেই একই গুয়ের গু। বৌদি সব জানে। দুর
শালা, তোর আগের পাঁচশো টাকা বাকি আছে। দিয়ে দিবি। কবে দিবি। বেশ আজকে কাজের পরে
এক্কেবারে হাজার দিবি। বৌদি থাকবে। দুজনে মিলে মজা দোবো। লিতে পারবি না। নিগন
চটিতে নামবো। চলে আয় আমার সাদের নাঙ।
বুঝলি, সোয়ামী আবার
মেরেচে লাঠি দিয়ে। পাঁচ দিন আগে। তোর কাছে চলে যেচিলাম।বুজরুকি নয়।
সত্যি রে।
সব গোছানো হয়ে গেসিলো। তারপর হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়ে কি আদর। শালা ক্যালাচোদা। কিছুই পারে
না। আমার আদ্দেক পথে, ওর বিসর্জনের ফুর্তি। তাহলে তোর মতো মরদ না হলে চলবে। বল তুই
বল।
বেশ রসিয়ে
লিতে পারিস। বাসে সবাই শুনচে না।ঘুমিয়ে আচে। আমার অতো ঘোমটা লাই রে। লাচতে নেমে ঘোমটা
দিয়ে কি হবে? এই দেক না, পেছনে কে আঙুল দিয়ে খোঁচাইচে। মরুকগো। পয়সা দিলেই দোবো। তোর
যত আজেবাজে কতা। এবার আসল কতায় আয়। পালিয়ে তোর বাড়ি গেলে লিবি তো? না মেরেই ছেড়ে দিবি।
তোদের মতো চোদনাদের আমার চেনা আচে। তাই বললাম।
হ্যালো,কি
বলচিস। তোর শুধু খিস্তি। না, আমি খিস্তি দিলে
বাসের লোকগোলা মারবে। রাতের বাস। সব ব্যবসাদার। কত দূরে যায়। আবার রাতে ফেরে। বেশির
ভাগ লোক ঘুমুইচে। তার জন্য এত কথা খোলাখুলি বলতে পারচি।
তোর বউ? জানতে
পেরেছে? হ্যালো,শুনতে পেচি না। বাসের যা ঝাঁকুনি। আবার পেচোনে খুঁচুনি। বল,বল।
এবার শুনতে পেচি। তা জানলেই বা। এসব লুকোনো থাকে না। জানতে একদিন পারবেই। আমার
মরদটাও জানে আমার বেশ্যাগিরির কতা। ওর তো মদের পয়সা লিয়ে কাজ। না দিলেই মারে। আর
দিলে পরেই আদর। শালা ছিবড়ে করে দিলো। মেয়েদের গতরটাই তোরা দেকলি। তাদের যে একটা মন
আচে, সেটা বুজলি না। বুড়ি হলে আর ফিরে দেকবি না। রাস্তায়,ফুটপাতে কুকুরের মত মরণ।
আর তোরা অনেকে আশি বছর বয়সে ছুকরি খুঁজিস। লজ্জা শালা লজ্জা। তবে ভালো মরদও আচে।
এই আমাদের পাড়ার বিপুল বউ মরে যাওয়ার পরে সাদু হয়ে গেলো। আর তার খোঁজ নাই। কি
বলচিস। সাদু না চদু। তা বললে হবে। সবাই কি তোর মত নাকি?বেশ, এবার শোন। বাস থেকে
নেমে আঁদারে দাঁড়িয়ে আচি।
বেশ শোন
নিগন চটিতে নামলাম। বিছানা। এখান থেকে রিক্সায় যাবো অনেক দূর। না,সেখানে দড়ির খাটিয়া আচে। তু তো আমার ওপরে চাপবি।
আমার মরণ। কি বলচিস। আমি ওপরে থাকবো। বেশ তাই হবে। বৌদি অন্য মরদ খুঁজে লেবে। ওরও সোয়ামী
মারে লাঠি দিয়ে। একদিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েচিলো। আমি ঘাট থেকে এসে জল দিয়ে আগুন
নেবাই। পুড়ে গেয়েচিলো অনেকটা। আজও তার দাগ আচে দাবনায়। বৌদি বলে,মরদগোলা কাপড় তুলে
পোতমে শুধোয়,এটা কিসের দাগ। বলতে বলতে ঘেঁটা পরে যায় মুখে। ভালো লাগে বল,কি বলচিস।
না, না খেয়ে আসবি কেনে। একসঙ্গে খাবো। এতে ভালোবাসা বাড়ে। মাংস,ভাত,রুটি সব পাবি চটিতে।
মাঝ মাঠ। তবু সব রকমের ব্যবস্থা আচে। কত লরি,হাতি গাড়ি এখানে থেমে রাত কাটায় দেকবি।
ভালো লাগবে রে। আমার সোয়ামী। ও তো মদ খেয়ে বাগ্দি বাড়িতেই থাকে। বাড়ি কম আসে। দুকুর
বেলা পেটে টান পরলে আসে। তারপর খেয়ে,দেয়ে,আবার চলে যায় বাগ্দি বাড়ি। অইখানেই খানকির
ডেরায় মরবে শালা। কি করবো। কিচু করার নাই।
তোর বউটা
কেমন? কি বললি,একই গুয়ের গু। শালা আমাদের জেবনটাই এরকম রে।
জানিস আমার
ছোটোবেলায় একটা ছেলে বন্ধু ছিলো। আমাকে ছাড়তো না। পেচনে পেচনে ঘুরতো।
আমতলা,বেলতলা,নেবুতলা সব জাগাতেই আমার সঙ্গি হয়ে থাকতো। চু,কিত কিত খেলতাম। সাত
গুটি। কাগজ জড়ো করে দড়ি দিয়ে বেঁধে বল হতো। ছুটোছুটি করে বল খেলতাম। একদিন বল
খেলার সময় পা গড়িয়ে রক্ত দেকে ও বললো,কোতায় কাটলো। রক্ত কেনে। তখন আমার চোদ্দ বছর
বয়স। পা ধরে খুঁজতে লাগলো ও। আমিও জানি না রক্ত পরচে কেনে? শেষে ও আমার প্যান্ট খুলে দেকলো। আমার খুব ভালো
লাগচিলো। আবার ভয় হচিলো রক্ত দেকে। ও বললো আঙুল দিয়ে আমার যোনিতে হাত রেকে, এখান
থেকে পরচে। কেনে রে? আমি বললাম,জানি না। মাকে শুধোবো। তারপর মা বললো,এই বয়সে শুরু
হয়। মাসে মাসে হবে এইরকম। একে মাসিক বলে। মেয়েদের হয়। ছেলেদের হয় না। ওদের চিরিক
করে মাল পরে। আমি তখন কিচুই বুজি নাই। একদিন বাবুদের গোল বাড়িতে আড়ালে বন্ধুটা আমাকে
ন্যাংটো করে কি করচিলো। নুনু নুনু খেলা বলতো। শেষে দেকতাম, চিরিক চিরিক করে সাদা
কি পরে। আমার বেশ ভালো লাগতো। তারপর বালিকা বদু হলাম আমি। মাতালটার সঙ্গে বিয়ে
হলো। বাবা মোটা টাকা পেয়েচিলো মাতালটার কাচে। তারপর আনন্দ শেষ। মাতালের মাতলামি
চলতো আমার খোলা বুকে। লাল হয়ে যেতো। কাঁনতাম। তারপর পাশের বাড়ির বাঁটুল আমার প্রথম
নাঙ। আমার গু মুত চেটে খেলো। বুজলাম বেটা ছেলে কি বটে? জড়িয়ে ধরতাম আবেগে। স্রোতের
মধ্যে ভাসত ভালোলাগার ঝড়। তারপর কতজন চান করলো জলে। নদী বাঁদ মানে না রে? আরও চাই।
তু এলি। এখন তোকে ঘিরেই স্বপন আমার।তোর টাকা আচে।গতর আচে। লাইতে জানিস আমার নদীতে।
ছেলেপুলে আমার হবে না। বাঁধন আমার শক্তপোক্ত। কোনো পুরুষ বাঁধন ভাঙতে পারে নাই।
হেরে গেয়েচে আমার নদীর বানে।
আর এখন বেশ আচি।
রোজগার করি। সোয়ামীকে মদ খাওয়ার টাকা দিই। তু আচিস। ছেলেপিলার ঝামিলি নাই। হা রে, একটা সন্তান দিতে পারবি নি? কেউ পারলো না। মিচে করে আশা দেয়। সব বুজি।
একটাই দুক। মা হতে পারলাম নি। তা যা বলেচিস বটে। ছেলে লিয়ে কি হবে। বড় হয়ে লাত
মারবে। আর মেয়ে হলে লাইনে নামবে। আমাদের ঘরে আর কি হবে। তবু মা ডাক...
মরুক গো।
কিচু তো করার লাই। তাইলে তু আসচিস তো। কোতায় মনে আচে তো? একবার বল তো আমাকে। হ্যাঁ,নিগন
চটি...
হ্যালো,কি বলচিস।
ভালো লাগচে শুনতে। তা তো লাগবেই রে। বেশ্যাকথা কার না ভালো লাগে। আরও বলবো। তবে
শোন। আমাকে সবাই পাকা খানকির মেয়ে বলে। কেনে জানিস? বাবা মদ খেতো। কাজ করতো না। মা আমাকে বাঁচাবার জন্য লাইনে নামে।বেশ্যাগিরি
করতে শুরু করে। তারপর আমি বড় হলাম। বেশ ডাগর ডোগর হলাম। মা একদিন বললো,ধার দেনা
হয়েচে অনেক। দিতে না পারলে আমাকে মেরে দেবে বলেচে বোকাচোদা রমণীবাবু। কি করবো বল।
বলচে, তোর মেয়েকে সন্দেবেলায় পাটিয়ে দিলে সব শোধ হয়ে যাবে। মা বললো,আমি তো তোকে এই
কাজ করতে দোবো না। তাই আজকে আমি মরবো। তু ভালো থাকিস। আমি বললাম,তোমার জন্যে আমি
সব করবো। তুমি মরবে না। আমি যাবো। সন্দেবেলায় রমণীবাবু আমাকে মদ খাওয়ালো। আদর
করলো। বুড়ো আমার মুখে মুতে দিলো। কিচুই বলি নাই। মায়ের মুখ তাকিয়ে। তারপর থেকে
বুড়ো ভাম আমাকে চেটে খেতো পতি রাতে।
তারপর আমার
বাবা সুযোগ বুজে অনেক টাকা নিয়ে এক মাতালের সঙ্গে বিয়ে দিলো। মাতাল সোয়ামী কিছুদিন
যাওয়ার পরেই বললো,খানকির মেয়ে। খানকিগিরি কর। আমাকে পয়সা দিবি। আমার আর মদ খাওয়ার পয়সা
নাই।
তারপর থেকে এই
লাইনে। তু আমার একজন বাঁধা নাগর। তোকে
লিয়ে আমার বাঁচা মরা সবকিচু। তু শালা শুদু কাচে পেলেই কাপড় তুলিস। ভালোবাসা বুজিস
না। তবে পাকা খেলোয়ার বটে তু। তাই তোকে ছাড়তে পারি নাই। নিগন চটি চলে আয়। তারপর
রিক্সা করে যাবো সেই ঠিকানায়। তু তো জানিস। চলে আয়। চিন্তা নাই।
বৌদি সঙ্গে
আচে। চলে আয়। আজ তোর পোয়াবারো। ডগারও খাবি তলারও কুড়োবি। চলে আয় শালা পোঙা মারানির
পো। শালা আজ তোর একরাত কি, আমার রাত। দেখাই যাক। মোবাইল রাক।চলে আয় তাড়াতাড়ি।
৫
সাধের নাঙ টোটোন
চলে এলো। একা নয়। অনেক বন্ধু এনেছে। আমি আমার নাঙ টোটনকে বললাম,কি রে মোবাইলে কিচু
বললি না। কোতায় যাবি?
টোটন বললো,তোরা
চ।আজকে ওসব বাদ দে। নিগন চটি থেকে রিক্সা য় সবাই ন্যাশনাল পাড়ার ভূতের বাড়িতে রাত কাটাবো।
চ, তু পয়সা পেয়ে যাবি, আবার একটা নতুন অভিজ্ঞতা হবে। আমি বললাম,ভূতের ব্যাপারে অবহেলা
করে কারও সাথে কোনোদিন তর্ক করতে নেই। আমার বৌদি বললো,আমি ওকে চিনি। ট্যাক্সি চালায়
টোটন। সেই হিসাবে ট্যাক্সি ইউনিয়নের সদস্য।
প্রচুর বন্ধুবান্ধব। ফেসবুকের বন্ধুও অনেক।
ভয় বলে শব্দটা ওর বুকে নাই। শালার ফুটানি আচে। বৌদি বললো,ওরা একদিন বন্ধুরা সবাই আড্ডা
মারছে। এমন সময় অমল বলে উঠলো, জানিস ন্যাশানাল
পাড়ার বনের ধারে যে তিনতলা লাল বাড়িটা আছে সেখানে নাকি ভূত দেখা গেছে।
মিহির বললো,
তাহলে তোএকদিন সবাই মিলে গিয়ে দেখে আসতে হবে।
টোটোন বলে উঠলো,
তোরা খুব আজগুবি কথা বলিস। আরে টোটোন
থাকতে ভূতের বাপও বাড়ি ছেড়ে পালাবে। চল তাহলে একদিন দেখাই যাক। আমরা সামনের অমাবস্যায় ওই বাড়িতে যাবো। ফিষ্ট করবো।
মাংস আর লাল জল। বুঝলি কিনা। জমবে
ভালো। শালা মদ,মাগি আর মাংস। অমল বললো, শোন আসল কথাটা বলি। আমার মামুদপুরের মেশো
একদিন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো।
বিকালে ওই বাড়ির দিকে বেড়াতে গেছিলো।
একট বাচ্চা ছেলে কাঁদতে কাঁদতে মেশোকে বললো, আমার খিদে পেয়েছে। মামা জিলাপি কিনে ছেলেটাকে বললো, যাও খেয়ে নাও।
ছেলেটি
নাছোড়বান্দা। বললো, আমার বাবাকে দেখবে
এসো। কতদিন খেতে পায়নি। এসো দেখে যাও।
মেশো সরল
লোক। মায়া হলো। ভিতরে গিয়ে দেখলো বাবা নয়। এক ভয়ংকর স্কন্ধকাটা
ভূত। বললো, আমার গলা কেটে সবাইকে মেরে আমার
সংসার শেষ করেছে তোর মতো একটা পাষন্ড। আমি
কাউকে ছড়বো না। কাটা মুন্ডুটা হাতে। সেই মুন্ডুই
কথা বলছে।
মেশো ভয়ে
কাঁপতে শুরু করেছে। এবার ভবলীলা সাঙ্গ ভাবছে
মেশো। এমন সময় ছেলে্টি সামনে এসে বললো, বাবা
এই লোকটি ভালো। জিলাপি কিনে দিয়েছে। এই বলে
ছেলেটি উড়তে উড়তে জিলাপি খেতে লাগলো। উড়ন্ত অবস্থায় ছেলেটির মা বললো, এঁকে ছেঁড়ে দাঁও। যাঁও যাঁও।
জিঁলাপি খাঁও।
তখন সুযোগ
বুঝে মেশো পালিয়ে এসে বাঁচে।
টোটোন ভয় লুকিয়ে
বাতেলা দিলো অনেক। বললো, ঠিক আছে আমরা
কুড়িজন একসাথে যাবো ওই বাড়িতে। দেখা
যাবে। কত ধানে কত চাল।
চালাক টোটোন। তাই দল বাড়াচ্ছে। ঠিক হলো কুড়িজন বন্ধু একসাথে যাই
চ।অনেক ছেলের মাঝে নিশ্চয় ভূত আসবে না।
৬
রাতের বেলা
ন্যাশানাল সিনেমা হলের কাছে সবাই একত্র হলো।
সবাই চললো এবার সেই অভিশপ্ত বাড়িতে।
টোটন চুপ। কোনো কথা নেই। অমল বললো, কি রে টোটোন, চুপ মেরে গেলি
কেন? কথা বল। অর্পিতা ও বৌদি বললো,চ
পালিয়ে চ। ভূত দেকবো না।
টোটোন বললো, এই দেখ
আমার অস্ত্র। একটা মস্ত নেপালা বের করে দেখালো।
তারপর বললো, ভূতের দফা রফা করবো আজই।
কথায় কথায় বাড়িটা
চলে এসেছে কাছে। অমল বললো, চল ভিতরে ঢুকি।
দুজন লোক
পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। বললো, মরতে যেচো কেনে ওই
বাড়িতে? খবরদার ওই দিকে মাড়িয়ো না। গেলেই মজা টের পাবে।
এখন আর ফেরার
কোনো ব্যাপার নেই। হুড়মুড় করে সবাই ঢুকে পড়লো বাড়ির ভিতরে। তারপর মাকড়সার জাল, ধুলো
পরিষ্কার করে রান্না শুরু করলো। এখনও অবধি
কোনো ভৌতিক কান্ড ঘটে নি। ভয়টা সকলের কমে গেছে।
টেটোন বললো,
অমল তোর মেশোর গাঁজার অভ্যাস আছে নাকি?
সকলের সামনে
অমল একটু লজ্জা পেলো। তারপর ভাবলো, বন্ধুরা একটু ইয়ারকি মারে। ওতে ইজ্জত যায় না।
টোটোন এক
পিস কষা মাংস নিয়ে লাল জলে মন দিয়েছে। সে এই
দলের নেতা। সবাই অলিখিত ভাবে তাকে মেনে নিয়েছে
নেতা হিসাবে। নেতা কষা মাংসতে কামড় মারার সঙ্গে
সঙ্গে কষ বেয়ে লাল রক্ত। বোতলে রক্ত ভরতি। সবাই দেখতে পাচ্ছে কিন্তু নেতা দেখতে পাচ্ছে না। নেতাকে রক্ত মাংস খাওয়া ভূতের মতো লাগছে। অর্পিতা ভয় পেলো।
অমল কায়দা
করে তাকে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো। নেতা
নিজের রূপ দেখে ভয়ে বু বু করতে লাগলো। সবার
প্রশ্ন এত রক্ত কোথা থেকে এলো?নেতা অজ্ঞান
হয়ে গেলো।
তাকে জল দিয়ে জোরে
হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে লাগলো বৌদি ও অর্পিতা।
তারপর জ্ঞান ফেরার পরে আবার ভয়ের পালা।
রাত তখন দশটা। দরজাগুলো বন্ধ হয়ে গেলো।
আর চার দেওয়ালের গা বেয়ে নেমে আসছে রক্তের ধারা। এত রক্ত যে মেঝে দিয়ে
গড়িয়ে সকলের পা ভিজে যাচ্ছে। নেতা এবার
জোড় হাত করে বলছে, আমাদের ছেড়ে দাও, এই কান মুলছি, নাক মুলছি আর কোনোদিন এই বাড়িতে
ঢুকবো না। দয়া করো আমাদের দয়া করো। টোটোন ভয়ে অর্পিতাকে জড়িয়ে ধরেছে। অর্পিতা
বললো,মিনসেকে মানা করলাম। লে এবার ঠেলা বোঝ। টোটোন বললো,ক্ষমা করো আমাকে।
তখন আড়াল থেকে কথা
শোনা গেলো, তুই তো নেপালা এনেছিস। সবাই
দেখলো নেপালা নিজে থেকেই শূণ্যে ভাসছে।
তারপর ভূত হাজির। নেপালা একবার
ভূতের মাথা কাটছে আর জোড়া লেগে যাচ্ছে।
বলছে, আমাকে কাটবি। মাথা
কাটবি। তোর মাথা কাটি। নেতা ভয়ে কাঁপতে
শুরু করেছে।
তখন অমল বললো, আমরা
তোমার সাহায্য করবো। কে তোমাকে মেরেছে বলো।
আমরা পুলিশকে জানাবো। সে শাস্তি
পেলে নিশ্চয় তোমার আত্মার শান্তি পাবে। কথায় কাজ হলো সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেলো। রক্ত মুছে গেলো। আর একটা ছবি হাওয়ায় উড়ে এলো।
টোটোন ছবি দেখে
বললো, একে আমি চিনি। নিশ্চয় একে পুলিশে
দেবো। আমরা কুড়িজন সাক্ষী দেবো। তারপরে
পুলিশ সব দায়িত্ব পালন করেছিলো। সেই বাড়ি
এখন পুলিশ থানা। চাকরি পেয়েছে কুড়িজন সাহসী ছেলে।
যাদের চেষ্টায় খুনী ধরা গেছে। আর
অতৃপ্ত তিনটি আত্মা মুক্তি পেয়েছিলো। আর টোটোন চাকরী না নিয়ে চলে এসেছে কলকাতায়
অর্পিতাকে সঙ্গে নিয়ে। টোটোন সব ছেড়ে কলকাতায় বাসা নিয়েছে।
৭
অর্পিতা নিজেকে
বেশ্যা বলে না। যারা লুকিয়ে চুরিয়ে খানকিগিরি করে। বাবা,মা, স্বামী,ছেলেকে ঠকায়
তারাই তো বেশ্যা। কিন্তু সমাজ এসব বোজে না। টোটোনের সঙ্গে ছোটো থেকে সে বড় হয়েচে।
গ্রামের ওখানেই ওদের প্রথম পরিচয়। আর পরিচয় থেকে ভালোবাসা। আর তারপরেই ছাড়াছাড়ি। আবার বিয়ের পরে তারা স্বামী স্ত্রী র মত থাকে। মনে তাদের ভালোবাসা
আচে পরস্পরের প্রতি। দুজনেরই আলাদা সংসার আছে। তবু দুজনে একরাতও থাকলে ওরা শান্তিতে
থাকে। ওরা একসাথে খায়,শোয়। বাড়িতে সবাই জানে। সবাই মেনেও নিয়েছে। এখন ওরা কলকাতায়
থাকে। আর গ্রামে যায় না। বিয়ে করে নিয়েছে আজ পাঁচ বছর। টোটোন লেখাপড়া জানে।
অর্পিতাকে শিখিয়েছে। এখন অর্পিতা বেশ্যা নয়। সংসারী গৃহবধূ। সব পুরোনো ময়লা ঝেড়ে
ফেলে দুজনে একসাথে সুখে আছে। টোটোন একটা কারখানার ম্যানেজার ভালো মাইনে পায়। অভাব
নেই। কথাবার্তা,চালচলন সব পাল্টে গেছে ভালো পরিবেশের গুণে।
আজ অর্পিতার মন
ভালো নেই। তাই ও আজ খায় নি। অর্পিতা এখন শুয়ে আছে। পাশে টোটন। সে চিন্তা
করছে,অর্পিতা কি ঘুমিয়েছে। তারও ভালো লাগছে না। ঝগড়া না করাই ভালো। এখন মনের
ব্যথার ভাগটা কি কেউ নেবে। বোকার মতো ঝগড়া করলাম। আমি যদি চুপ করে যেতাম তাহলে
এতটা বাড়াবাড়ি হতো না। অর্পিতা খেলো না পর্যন্ত। কোনোদিন না খাওয়া হয়নি। বিছানায়
সব ঠিক হয়ে যায়। আমি। তাই বিছানার নাম রেখেছি প্রান্তিক সীমানা। সব বিচার বিছানায়
হয়। একটু আদর করলেই সব বরফ গলে জল হয়ে যায়। কিন্তু না খেয়ে ঘুমোচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে
মুখটা। ঘুমোলে ওকে ভারী সুন্দর লাগে। একটা চুমু খাবো কপালে। না,যদি রেগে যায়। পেট
খালি থাকলে রাগ বেশি হয়। দরকার নেই। আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারারাত। শাড়ি পরেই আছে।
আজ আর চেঞ্জ করে নি। অন্যদিন ম্যাক্সি পরে নেয়। শাড়িটা হাঁটুর উপর উঠে আছে। আ হা
দারুণ পজিশন। না,ডিসটার্ব করবো না। মেয়েরা তার বাবা,মা,ভাই,বোন ছেড়ে স্বামীর ঘরে
আসে। তার চেনা জগতটা ছেড়ে একটা নতুন পরিবেশে
তাকে খাপ খাওয়াতে হয়। কত কষ্ট,গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। রান্নাবান্না করতে হয়।
শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেক সদস্যদের চাহিদা মেটাতে হয়। তারপর স্বামীর পাগলামী তো আছেই।
আহা, একটু হাত বুলিয়ে দেবো। না যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়। আবার ঝগড়া হবে। তারপর না খেয়ে
আছে। অসুস্থ হয়ে পরবে। আমার মনে পরছে কলেজে যেদিন প্রথম ভর্তি হলাম ওর চোখে চোখ
পরে গিয়েছিলো। প্রথম দর্শনে ভালো লেগে গেলো। মধুকর মন।মধু খোঁজে নিশিদিন। আমি
মৌচাকে এলাম। না চাইতেই মধু। সময় হলে ঠিক পাওয়া যায়। তা না হলে বৃথাই ছটফটানি।
শহরে ক্যান্টিন ছিলো।কফির দিকে মন নেই। কি করে বলি,নতুন করে,ভালোবাসি। দু বছরের
মধ্যে ভালোবাসা মধ্যগগনে। চাকরী পাওয়ার আগেই বিয়ে করলাম। এতদিন রক্ষিতা হয়ে
ছিলো। ব্যস, ভালোবাসা। দি এন্ড। এখন শুধু
চেয়ে চেয়ে আছি সারাদুপুর। ভালোবাসা শেষ হয়নি। তা না হলে চেয়ে আছি অপেক্ষায় কেন?
৮
অর্পিতা লম্বা ঘুম
দিয়েছে। না খেয়ে ঘুম আসে। আমার আসে না।
তাহলে ঘাপটি মেরে আছে নাকি? হাত দেবো না। ভুল হবে। মায়া হয়। এখনও কোনো সন্তান হয়
নি। ওষুধ খাচ্ছে। আহা কেউ এখন কাছে নেই। আমি ছাড়া। ও আমাকে ভরসা করেই তো বেঁচে
আছে। আমি তো অফিস চলে যাই। একা থাকে। একদিন অফিস থেকে আগে ফিরলাম। ওকে মনে পরলো।
বসকে বলে ছুটি নিলাম। আমার দোতলায় ফ্ল্যাট। পাশেই একটা ছোটোদের স্কুলে এক দিদিমণির
সাথে আমার জানাশোনা। কথা বলতে গেলাম। আমার ফ্ল্যাটের দিকে চোখ গেলো। বিছানায় অর্পিতার
সঙ্গে কে? মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আবার আগের
স্বভাব কেন? আমারও তাই। শালা রক্তে মিশে যায় কুঅভ্যাসগুলো। যা বটে,তা বটে। ওই তো
দুজনে শুয়ে পরলো। ওপরে অর্পিতা। বসে বসে লাফাচ্ছে। দিদিমণি মুচকি হেসে বললো,ওটা
রোজকার নীল ছবি। আমরা দেখি। আপনি চেনেন নাকি? আমি বললাম,না না।সবাইকে আমি বাড়ির
ঠিকানা দিই না। দিদিমণি বলছে,চলুম আজ লজে যাই। ঘর বুক করা আছে। আমার মনে পরলো।
মনটা হাল্কা হলো। মদিরার দোকানে একটা ছোটো নিয়ে মাগিকে নিয়ে গেলাম লজে। স্কুলের
বাইরে মাগি আমাকে খিস্তি দিয়ে কথা বলে। ও বলে,সেক্সের আগে এগুলো প্রয়োজন। মাল খেলাম
দুজনেই। জানালার দৃশ্য দেখে রাগের ঝালটা মাগির ওপরে ঝারলাম। শালি বললো,ভালো
খেলেছো। চারবার গোল হলো। আমার রাগটা কমে গেলো। লজ থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম ফ্লাটে।
অর্পিতাকে বিকেলে খুব সুন্দর দেখতে লাগে। ফুরফরে মেজাজ। চা করে আনলো। ডিমের রোল।
খেলাম। এবার ওর ভালো থাকার কারণ বুঝতে পারলাম। আর তার পর থেকে অশান্তি। আমি জানি
ওর খেলা। কিন্তু ও তো আমার খেলা দেখেনি। অর্পিতাকে আমার সঙ্গে সক্রিয় হয়ে খেলতে
দেখিনি। অথচ একটা পরপুরুষের সঙ্গে একদম বিন্দাস। ভালো থাকলেই ভালো। দেখুক যদি
সন্তান হয়। কই দুবছর চলছে, থোর বড়ি খাড়া। হোলো না। রেজাল্ট জিরো। আজ আমার আসতে রাত হয়েছে। মুখে মদের গন্ধ। ঝগড়া
হয়ে গেলো।আমি মাল খেয়ে ছিলাম। বলে দিয়েছি। আমাকে ভালো লাগে না। পরপুরুষের বেলায়
লাফানি। অর্পিতা থেমে গেলো। জোঁকের গায়ে নুন পরেছে। আর তারপর থেকেই কথা বন্ধ
হলো। এখন ঘুমোচ্ছে।
আমার রাত জেগে কাটলো। সকালে তাড়াতাড়ি অফিস চলে গেলাম। ফিরলাম তাড়াতাড়ি। পাশের
স্কুলে দোতলায় উঠলাম। এখন দেখছি, একা বসে আছে অর্পিতা। দরজা বন্ধ। আর বাইরে সেই
লোকটা দরজা ঠক ঠক করছে। ও গিয়ে ভিতর থেকে কি বললো। লোকটা চলে গেলো। আমি ফ্লাটে
ফিরলাম। মাগির সঙ্গে গেলাম না। অর্পিতা আমার চা আনলো। খেলাম। তারপর ঠেলে বিছানায়
ফেলে বিপরীত সঙ্গম শুরু করলো। একঘন্টা কাটলো। কোনো কথা না বলে। তারপর বললো,আমাকে
ক্ষমা করে দাও। আমি বললাম,ঠিক আছে। আবার আমি এই সুযোগে বিছানায় ফেললাম।
বললাম,খেয়েছো। ও বললো,না একসঙ্গে খাবো। আমি উঠে পরলাম। ও এখনও খায় নি। জানলে আমি
খেলতাম না।
৯
এখন ও রান্নাঘরে।
রান্না করছে।একসঙ্গে খাবো।একসঙ্গে রাত জাগবো।আবার কলেজ জীবনে ফিরে যাবো। ওই
বেশ্যামাগীর কাছে আর যাবো না। আমার পাপে অর্পিতা খারাপ হলো।তা না হলে ও মেয়ে
হিসাবে ভালো। মেয়েরা এমনি এমনি খারাপ হয় না। ওরা সব বোঝে। আমাকে একদিন
বলেছিলো,তোমার গালে, পিঠে কার ঠোঁটের ছাপ। তারপর আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু
মদ,মাগী দুই ছিলো। তাহলে ও পরে পরে মার খাবে কেন?ভালো করেছে।যা করেছে বাধ্য হয়ে
করেছে।
সেই রাতে খাবার
আগেই ওর মা মরে যাওয়ার খবর এলো। লোকটা যেতে বলছে তার সঙ্গে। বলছে,আপনি দেখার পরে
শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি কি করে বলি,ও খায় নি। মা মরে গেছেন। সব রান্না ফেলে
আমরা সবাই রওনা হলাম গ্রামে। ট্রেনে চেপে আমার বার বার মনে পরছে,ও খায় নি। এখন
খেতেও পাবে না। মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পরে চা হলো। সবাই চান করে তারপর চা
খেলাম। পেট ভরতির খাবার সকালে হবে। সকালে উঠেই বেনাগাছে জল দেওয়ার পালা।শ্রাদ্ধ
বাড়িতে খাওয়ার জন্য বলতে ভালো লাগে না। শোক বলে কথা। নতুন পুকুরে বেনাগাছে জল
দেওয়া হলো। আত্মার শান্তি কামনা করে জল দেওয়ার প্রথা। তারপর ভিজে কাপড়ে বাড়ি এসে
হবিষ্যি রান্না করে খাওয়া। আমি দেখলাম ও খেতে পারলো না। জল খেয়ে উঠে পরলো। পরে
শরবত খেলো। আমিও খেলাম না। পাতা গুটিয়ে বাইরে ফেলে এলাম। বাইরের দোকানে চা খেলাম।
ও খায় নি,আমি কি করে চোখের মাতা খেয়ে গব গব করে ভাত খাই। যতই হোক সহধর্মিনী বলে
কথা। কিছু যে খাচ্ছি না। তা নয়। তবে পেটভরে ভাত না পেলে,খাওয়াটা বেশ খাওয়া হয়ে ওঠে
না। অর্পিতা এটা সেটা খেয়ে চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভরপেট খাচ্ছে না। দুর্বল হয়ে
পরবে। ও না খেলে আমার মন খারাপ হয়।
একটা ভিখারী
বললো,আর বোলো না গো। দুদিন খাই নাই। দশটা টাকা দাও। কিছু কিনে খাই। টোটন পঞ্চাশ টাকার
নোট দিয়ে বললো,ভালো করে খেয়ে নিও। এইতো এরা না খেয়ে দিনের পর দিন উপবাসি থাকে। টোটন
দেখলো এটা অর্পিতার আগের স্বামী। অন্ধ হয়ে ভিক্ষা করছে। মদ খেয়ে খেয়ে শরীরটা মাটি হয়েছে।
আর বাঁচবে না। না খেয়ে কি করে বাঁচে।
তাহলে,আমরাও থাকি
দুদিন উপোসি। ওতে কিছু যায় আসে না। না খেয়ে লোকে মরে না। বেশি খেয়েই মরে। স্বয়ং
বুদ্ধদেব না খেয়ে সাধনা করেছেন। ওনারা সাধক লোক। ওঁদের কথা আলাদা। টোটন তার আগের
বৌটার খবর পেলো হেবোর কাছে। সখি সর্দার তাকে বিয়ে করে নিয়ে পালিয়েছে। সে মনে মনে
ভাবলো,আপদ গেলো।
কান্নাকাটি করে
অর্পিতার চোখ,মুখ বসে গেছে। অর্পিতা বলছে,এবার যাওয়ার মিতাকে নিয়ে যাবো। ও আমার সাথে থাকলে আমার
সুবিধা হবে। কাজ করবো দুজনে। আমার ওই প্রস্তাব শুনে ভালো লাগলো। দুহাজার টাকা
মাইনে দেবো। বললো,অর্পিতা। মিতার মা বাবা রাজী হলো। গ্রামের বাড়ি এসে একঢিলে
দুইপাখি মারলো অর্পিতা। তিনদিনের পরে মেয়ের কাজ হলো। মায়ের আত্মার শান্তির জন্য
মেয়ের প্রার্থনা ভগবানের কাছে। হবিষ্যি খেয়ে এই কদিন চলেছে। মায়ের ছবিকে প্রণাম
করে আমরা তিনজনে বেরিয়ে পরলাম শহরের দিকে।ফ্লাটে ঢুকে আমি বললাম,আমি রান্না
করছি।তুমি আর মিতা গল্প করো। রান্না আমি ভালো করি। ভাত আর ডিমের ঝোল। খেতে বসলাম
একসাথে। আমি হিসাব করে দেখলাম অর্পিতা পাঁচদিন ভালোভাবে খায় নি। ও না খেয়েই ছিলো।
শুধু জল আর দুধ খেয়েছে। ও এখন বাথরুমে গেছে। আসুক তারপর খাবো। ও না খেলে আমি খাই
কেমন করে?
অনেকক্ষণ
আগে বাথরুম গেছে। কি হলো? যাই একবার দেখে আসি। কই গো কি হলো তোমার? এই যে পরে গেছো। অজ্ঞান হয়ে গেছে। এই মিতা,এখানে
আয়। ধর, ধর তোর বৌদিকে ধর। যা তুই খেয়ে নে। আমি দেখছি। বিছানায় রাখ। ঠিক আছে।তুই যা।
খেয়ে নে। বাকি খাবার সব ঢাকা দিয়ে রান্নাঘরে রেখে দে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো।
আমি ওকে নিয়ে নার্সিং হোমে যাই। মিতা দরজা বন্ধ করে দে। নিচে নামিয়ে আনলাম আমরা
দুজনে। এবার টোটোওয়ালাকে ডাকি। এই টোটো। দাঁড়াও। ধরো ধরো। রোগী মানুষ। সেবাসদনে
চলো।
টোটোন দশ মিনিটের
মধ্যে সেবাসদনে এলো। রোগী ভরতি হলো। এক ঘন্টা পরে ডাক্তারবাবু বললেন,পায়ে চিড় ফাট
হয়েছে। প্লাস্টার করেছি। একটা সুখবর আছে। আপনার স্ত্রী মা হবে। তাই মাথা ঘুরে
পরেছে। চিন্তার কিছু নেই।
১০
টোটনের খুব ভালো লাগলো।
অন্যকিছু বিচার করে লাভ নেই। মনে মনে ভাবছে,যা হয়, ভালোর জন্যই হয়। শুভ বাড়ি গেলো
না। নিচে ওয়েটিং রুমে ঘুমিয়ে নিলো।
প্রায় তিন
ঘন্টা পরে অর্পিতার জ্ঞান ফিরলো। সে এবার ভাবছে,রান্না করেও খেতে পেলো না টোটন। খুব
খারাপ লাগছে। আমার মা হবার আশার সংবাদে ওর কি খুব আনন্দ হয়েছে। নাকি খারাপ লেগেছে।
জানি না। পরে জিজ্ঞাসা করা যাবে। আচ্ছা সকাল হয়ে গেলো। এখনও এলো না কেন? তাহলে কি স্কুলে
ছেলেদের খাবার দিতে গেলো। কোনো খুশির খবর হলে পাশের মর্নিং স্কুলে বাচ্চাদের খাবার
দেয়। সন্দেশ,কেক আরও কত কি?ডে স্কুলে ছেলেরা মিড ডে মিল খায়। সবাই খায় তো? সকলের খাওয়া
উচিত। ও বলে ছেলে,মেয়েরা হলো সাক্ষাৎ ঈশ্বরের
দূত। ওরা খেলে ভালো লাগে। ও বাচ্চাদের এত ভালোবাসে বলেই হয়তো আমি মা হতে পারবো। স্কুলের
দিদিমণি ওকে খুব সম্মান করে। ওই তো বলেছিলো। আমি দিদিকে চিনি না। তবু মনে হয় ওর সাথে
কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই তো? না, না হয়তো আমার ভুল ভাবনা।
দুপুরের দিকে টোটন
এলো। তুমি খেয়েছো? টোটন জিজ্ঞাসা করলো। না,আমাকে খেতে দিয়েছে। ঢাকা দিয়ে
রেখেছি।একসাথে খাবো বলে। অর্পিতা বলছে,আমাদের সন্তান হবে। তোমার মতো হবে।
টোটন বলছে,না না তোমার মতো একটা কন্যা
সন্তান হলে ভালো হয়। চলো,এবার দুজনে খেয়ে নি। দুজনে খাওয়ার আগে আলোচনা করছে,বাড়িতে
মিতা আছে। কাজ করবে। ও রান্নাবান্না করেছে তো। যদি না খায়। অর্পিতা বললো,তাহলে
চলো, ডাক্তারবাবু তো বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বললেন,এক মাস। তাহলে টাকা পয়সা মিটিয়ে
দিয়ে বাড়ি যাই। তারপর তুমি আর মিতা হাতেপাতে লেগে রান্না করে খেয়ে নাও।।
বেশ দিন চলে
যাচ্ছিল টোটনের। কিন্তু সে জানত না আইনের হাত অনেক লম্বা।
অনিমেষ ভাবে এক
ভয়ঙ্কর বন্যায় তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেল মাটির বাড়ির সব ভেঙে গেল তারপর বাবা
মারা গেলেন আর দু'বছর পরেই মারা গেলেন এখন
একা সে।
আর কেউ নেই
সেভাবে এবার বৃষ্টিকে বিয়ে করে সুখী হবে সেভাবে বৃষ্টি নিশ্চয়ই তাকে ভালোবাসে তা
না হলে অফিসে কেন সে এত কথা বলে
কই আর
কারো সাথে তো কথা বলেনা মনে মনে বৃষ্টিকে ভালোবেসে
ফেলেছে স্থির সিদ্ধান্তে এলো। এবার সে বৃষ্টিকে তার নিজের কথা বলবে ইউরোপ থেকে এর কাছে
পেলে আর কিছু চায়না।
অনেমেষ ভাবে,
বৃষ্টি জানে না বোধহয় যে, আমি সমকামি।
অনিমেষ বলে আমি
বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসবো তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না কিন্তু তুই তো আবার ইউরোপে চলে
যাবি।
আবির বলল
আমরা এখন প্রাপ্তবয়স্ক আমাদের সম্পর্ক বাড়িতে মেনে নেবে না।
আমরা পালিয়ে যাব,
কিন্তু আমাদের চাকরি নেই আমরা খাব কি?
ঘর ভাড়া কি করে
দেব?
আবির বলল আমার কাছে
30 হাজার টাকা আছে আর তুই তো টিউশনি করিস কিছু নেই তোর?
বলল আমরা কলকাতায়
গিয়ে একটা ঘর ভাড়া করবো। তারপর প্রাইভেট ফার্মে একটা চাকরি জোগাড় করবো। ঠিক চলে
যাবে আমাদের দেখবি। অনিমেষ একটা চিঠি লিখল শ্রদ্ধেয় বাবা ও মা,
আমি চিরদিনের জন্য তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমরা
দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ আমাদের স্বাধীন জীবন আছে অর্থাৎ আমরা পূর্বপুরুষদের রীতি
মানতে পারছি না। ক্ষমা করো।
এটাতো আমাদের
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঈশ্বর এভাবেই তৈরি করেছেন।
মন খারাপ
করো না আবির দের বাড়িতে বাড়িতে তোমরা বলে দিও।
আমাদের
খোঁজ করো না আমাদের বিয়ে হবে আমাদের বিবাহ তোমাদের সমান মেনে নেবে না।
আপনার লুকিয়ে
নিজেদের মতো থাকবো এটা অপরাধ নয় সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই সমকামিতা মেনে নিয়েছে
সমকামিতা ঈশ্বরের আশীর্বাদ।
প্রণাম নিও।
চিঠি রেখে
অনিমেষ রাতের অন্ধকারে চলে এলো বড় শহর
কলকাতায়।
প্রথম রাতে
মিলন সুখের। এক হোটেলে।
তার পরদিন অনেক
খোঁজাখুঁজি করে একটা ঘর ভাড়া করলো একটা নির্ধারিত সময়ে।
এরপরে তারা চাকরি
খোঁজে হাঁটা শুরু করল। রাত দশটায় বাড়ি এলো।
বাড়িওয়ালা বলল,
ইতনা রাত মাত করো ভাইয়া। জলদি খা লো। তবিয়ত খারাপ হো যায়েগা।
ওরা বলল, আমরা
খেয়ে এসেছি বাইরে থেকে। এলো বললো ঠিক কিয়া ভাইয়া।
আজ ও
বিরাট অনিমেষের দ্বিতীয় রাত।
তারা পরস্পরকে মালা
বদল করল
স্বপনে।
পৃথিবীর
কেউ জানলো না দুইজন পুরুষ আজকে রাতে এক আনন্দঘন মুহূর্তে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করল মিলন।
সকালে উঠেই
অনিমেষের বাবার হাতে চিঠিটা গেল চিঠি পড়ে, তিনি চিৎকার শুরু করলেন কইগো শুনছো
তোমার এমএ পাস করার ছেলে কর্ম দেখে যাও।
অনিমেষের
মা বাথরুম থেকে ছুটে এলেন সকালবেলা চিৎকার করছো কেন কি হয়েছে বল?
তার বাবা বললেন সর্বনাশ
হয়ে গেছে বিয়ে করে পালিয়েছে।
কি পাগলের
মতো বকছ। ছেলে একটা ছেলেকে বিয়ে করে নাকি?
বাবা-মা চুপিচুপি
আবিরের বাবা-মাকে সমস্ত কথাগুলো বলল।
আপত্তি আছেআমাদের। কিন্তু আমরা সব জানতাম একদিন এরকম
হবে।
কিছু করার নেই বিদেশে এটা সহজ ব্যাপার।
মা দুদিন
পরেই বাড়িতে তাড়াতাড়ি ইউরোপ চলে গেলেন। মন শক্ত করে পড়ে রইল অনিমেষের বাবা আর মা।
বাবা বললেন আমরা ও
গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাব। জমি জায়গা আছে আমাদের চলে যাবে হতভাগা ছেলেটা যেন কষ্ট
না পায়, থাকুক সে যেন সুখে থাকে।
এক মাসের মধ্যে
তারা সমস্ত ব্যবস্থা করে মালপত্র গুছিয়ে
গ্রামের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
তারপর
শুরু হল এক অন্য জীবন।
গ্রামে
জমি জায়গা দেখাশোনা করা আর সবাইকে মিথ্যা বলে তাদের কাজ হলো একজন গ্রামবাসী বললেন
তোমাদের ছেলে অনিমেষকে দেখি না কেন?
বাবা বললেন, আর
বলবেন না ঈশ্বরের বিধি তো মানতেই হবে।ছেলে আমাদের আর নেই।
বলেই ডুকরে কেঁদে কেঁদে ফেলেন তিনি।
আর কেউ প্রশ্ন করেন না সবাই জেনে গেছেন অনিমেষ নেই।
সে ওখানে চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে আর অনিমেষের বাবা-মা মিথ্যার বোঝা নিয়ে ঘুরেন।
বৃষ্টি বলছে
আবিরকে,
তুমি তো
জানো আমি সমকামী।
মেয়েদের
পছন্দ করি।
তবু তুমি
বিয়েতে রাজি হলে কেন।
আবির
উত্তর দিয়েছিল এটা প্রয়োজন ছিল।
আমাদের
সংসার এর মান সম্মান রক্ষার্থে আজ আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
এখন আমরা গোপনে কি
করছি কেউ দেখতে পারবেনা। আর এখন তুমি আর আমি আর কেউ জানবে না আমাদের কথা। কলকাতা
বড় শহর।লোকের সময় নেই।
বৃষ্টি বলেছিল তুমি
ঠিক বলেছ।
এখন আমরা
সকলে কলকাতা শহরে আছি তোমার বাবা-মা চলে গেছেন।
অনিমেষে
বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এখন আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারব।
এত কেটে গেছে
অনেকগুলো বছর অনিমেষ আর আবির সুখেই আছে।
সকাল বেলা বাজার
করা কাজ তারপর দুজনে রান্না বান্না সেরে অফিসে চলে যায় অফিস থেকে ফিরে যায় তারপর
রাতের খাবার পরে শুয়ে পড়ে।
এই পাঁচ বছরে
এলাকায় পরিস্থিতি বেড়েছে প্রতিবেশীরা পরামর্শ দেয় এবার তোমরা বিয়ে করে এবং
তোমাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে কেউ বলেন তোমরা কি কি কি তোমরা কি বিয়ে করবে না নাকি?
তারা সমস্যায় পড়ে
যায় তাদের গোপন কথা তারা বলতে পারে না। তাদের পাড়া ছাড়তে হবে এভাবে কতদিন আর
পালিয়ে বেড়াবে।
কলকাতা বড় শহর এক
প্রান্তে আবির অনিমেষকে নিয়ে থাকে। অপরপ্রান্তে রুমকি বৃষ্টিকে নিয়ে তোকে
বৃষ্টিকে।প্রতিবেশিরা প্রশ্ন করে কি গো তোমরা দুজনে মানুষের একা একা থাকো কি করে?
ভয় করে না।
সেদিন বৃষ্টি একা
ছিল। ভাবছিল প্রতিবেশি, কাকিমা, জেঠিমা আর ঠাকুমারা সন্দেহ করতে শুরু করেছে। এবার
অন্য কোথাও সরে যেতে হবে।
ষড়যন্ত্র
শুরু করল কাকিমা জেঠিমা ঠাকুমা। সমস্বরে বলল ঠিক বলেছেন ঠাকুমা, চলুন আজ রবিবার দুজনেই
নিশ্চয়ই বাড়িতে আছে। আমরা কথাটা বলে আসি।
সদলবলে হাজির হলো।
বৃষ্টির ঘরের দরজায় ঠোকা। দরজায় আওয়াজ
শুনে বেরিয়ে এলো বললো কিসের চাঁদা কাকিমা?
কাকীমা বললেন চাঁদা
নয়। তোমরা বিয়ে না করে তোমাদের এখানে থাকা হবে না।
রুমকি বলল আমরা বিয়ে করেছি তো। তারমানে কাকে বিয়ে
করেছে।
আমি এই বৃষ্টি কে
বিয়ে করেছি। আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি। কাকা বললেন, কি নোংরা কথা বলছে। আমরা একটা
মেয়ে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারে নাকি। এত নোংরামি আমাদের পাড়ায় এসব চলবে
না। আমাদের পাড়ার ছাড়তে হবে।
এগুলো ঠিক আছে।
আমরা পাড়া ছেড়ে দেবো। কিন্তু আইনের আমরা সাহায্য নিতে পারি। কাকিমা রাগে তাকিয়ে
বললেন, পুলিশ কতদিন দেখবে তোমাদের। তা আমাদের ছাড়া তোমাদের কি করে থাকবে। আমাদের
সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে পারবে?
আমরা কিন্তু
অনেক কিছু করতে পারি। তারপর রুমকি এসে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা দুজন
আলোচনা করছিল বসে বসে। সমাজের সঙ্গে লড়াই করে তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে আমরা একা
পারব না। এর জন্য শিক্ষা বিস্তারে প্রয়োজন আছে।
ঝগড়া মারামারি করে
মানুষের মনের পরিবর্তন করা যায় না। কথায় বলেনা, গুঁতিয়ে হরিনাম হয় না।
শরীরে জৈবিক
প্রবৃত্তি বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকমের বিভিন্নতা দেখা যায়।
এর জন্য আমরা দায়ী মানুষ নয়। এর জন্য প্রকৃতি দায়ী।
আবির, অনিমেষ
পাড়ায় থাকে। পুজোতে কোন অনুষ্ঠানে দুজনেই হাজির থাকে। মোটা টাকা চাঁদাও দেয়।
মরে গেলে শ্মশানেও যায়। ফলে জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে ভালোবাসা।
পাড়ার
খোকন দা বলেন, এবার বিয়ে করলে করুন। আপনাদের
আর পড়াশোনা করতে হবে না। কবে ছেলেমেয়ে মানুষ করবেন। পড়াশুনা আর চাকরি করেন একসাথে।
এবার বিয়ে করুন। আমরা ভোজ খাই।
আবির বলে, দাদা
আমরাও ভাবছি। দেখা যাক কি হয়।
অনিমেষ বাসা
বাড়িতে ভাবে, কতদিন আর লুকিয়ে বেড়াবে। আবির বলল,বৃস্টি আর রুমকিকে আমরা ফলস বিয়ে করব।
তারপর চারজন একসাথে থাকব। অনিমেষ বলে, বেড়ে আইডিয়া। ওরাওদুজনে লেসবিয়ান। ওদের ফোন করি
একবার।
বৃষ্টি বাড়িতে ছিল
চিন্তায়। সমাজের জেঠিমারা শাসিয়ে গেছে। এমন এক কঠিন সময়ে অনিমেষের ফোন। বৃষ্টি
বলে, আমরা খুব বিপদে পড়েছি দাদা।
অনিমেষ বলে
আমাদেরও একই অবস্থা। আমরা সমকামি। এসব কথা সমাজ মানবে না। তাই আমি তোকে বিয়ে করব আর
আবির রুমকিকে বিয়ে করবে। তারপর একসঙ্গেই থাকব।
বৃষ্টি যেন হাতে
চাঁদ ধরল। একটা উপায় বেরিয়েছে উর্বর মস্তিষ্ক থেকে। আর কোন চিন্তা নেই।
তারপর একদিন বিয়ের
দিন দেখে চারজনের বিয়ে হল। পাড়া প্রতিবেশি জমিয়ে ভোজ খেল।
বাড়িতে বসে চারজনে
আলোচনা করছে সমাজের মানুষের মানসিকতা নিয়ে। আবির বলল,সমকামিতা কোন রোগ নয় বিকৃত
মানসিকতার নয় সুস্থ সুন্দর ভালবাসার নাম সমকামিতা তবু শোনে না কেন একজন পুরুষ আর
একজন পুরুষকে পছন্দ করে আর একজন মহিলার একজন মহিলাকে পছন্দ করে। সমকামি ইউরোপবাসি
গিনজা, বিশ্বাস করেন, ইট ইস এ কম্প্লেক্স অফ জেনেটিক হর্মনাল এন্ড এনভারমেন্টাল
ইনফ্লুয়েন্স।
একটা জটিল শারীরিক
প্রক্রিয়া এটি উনবিংশ শতাব্দী থেকেই সমাজে মান্যতা পাবার দাবি জানিয়ে আসছে এ দেশে
অনেক জায়গায় স্বীকৃত কিন্তু আমাদের ভারতবর্ষের সুপ্রিম কোর্ট আইনত স্বীকৃতি দেয়
কত মানুষ জীবন কাটায় কেউ তার হিসেব রাখে না সমাজে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত বলে আমি
মনে করি।সে আরও একবার বলল,ফিমেল সেক্সুয়ালিটি ইস মোর ফ্লুয়িড দ্যান মেল
সেক্সুয়ালিটি।
নারী যে কেউ সমকামী
হতে পারে এটা কোন অপরাধ নয় তাই কোন
সমকামী সন্ধান পেলে তাকে নিয়ে থাকতে দেওয়া উচিত সমাজের স্বাভাবিক আচরণে তারা
জীবন যাপন করুক।
এবার অনিমেষ বলল
আমাদের প্রতি বেশি পাড়ার লোকে সন্দেহ বাড়তে পারে এবার আমাদের বিয়ের পরে সন্তান
বিষয়ে তাদের প্রশ্ন বাড়বে দু বছর বা চার বছর পরে সন্তান নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। এখন
আমরা ভাড়া থাকি না। নিজেরা বাড়ি করেছি।
আমার স্ত্রীকে আমাদের কাছে এনে রেখেছি।
বৃষ্টি বললো, কথাটা
মন্দ বলনি অনিমেষ কয়েকবছর সন্তান নিয়ে প্রশ্ন করল আমরা অনাথ আশ্রম থেকে চারজন
শিশু দত্তক নেব। তারাই আমাদের সন্তান হবে।আমরা তাদের মানুষের মত মানুষ করব। তারাই
একদিন সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে।
তারা বর বউ সেজে থাকলো। পাড়ার কেউ গোপন খবর জানল না।
মানুষ মানুষের ভালো চাইবে, প্রতিবেশীরা একে অপরের উপকারে ছুটে
যাবে এটাই তো মানুষের কর্তব্য। পৃথিবীর জন্ম থেকে মানুষ একা একা থাকত। ধীরে
ধীরে দলবদ্ধভাবে থেকে মানুষ দেখলে সুবিধা
বেশি।
এই অরণ্য জীবন
থেকেই মানুষের যৌনপদ্ধতির বিভক্ত হয়ে যায়। স্বাভাবিক নর-নারীর মিলনের 90% মানুষ
রাজি। স্বাভাবিক নর-নারী মিলনে 90% মানুষ অভ্যস্ত। কিন্তু শতকরা 10 ভাগ মানুষ
আলাদা হলো যৌন মিলনের ক্ষেত্রে। পুরুষ পুরুষ পছন্দ করে। আর কোন মহিলা মহিলা পছন্দ
করলো। এসব নিয়ে তখনকার দিনে কেউ মাথা ঘামাতো না। কিন্তু মানুষ যত উন্নত হলেও
তাদের বুদ্ধি ও বাড়ল। শুরু হলো লড়াই সন্দেহ অত্যাচার। অনিমেষ বসে বসে ভাবছে, এমন
সময় সে বলল, আমাদের লোক দেখানো বিয়ে তো দু বছর হয়ে গেল। এবার আমাদের চারজন শিশু
দত্তক নিতে হবে। চলো আজ আমরা যাই অনাথ আশ্রম।
আবির এলো বৃষ্টি
এলো বৃষ্টি বলল রুমকি তোমাকে আর আমাকে গর্ভবতী হওয়ার অভিনয় করতে হবে কয়েক মাস
আমরা অফিস যাব না। মাতৃত্বকালীন ছুটি নেব। পাড়ার সকলে দেখবে আমরা গর্ভবতী তারপর
একদিন রাতে আমরা অনাথ আশ্রম এগিয়ে সদ্যজাত শিশুকে নিয়ে আসবো। অনিমেষ বললো তাহলে
চারজন শিশুর প্রয়োজন নেই। দুইজন শিশু মানুষ করতে পারলেই আমরা ধন্য হব।
তারপর পেটে বালিশ
বেঁধে গর্ভবতীর অভিনয় করে সমাজকে দেখালো রুমকি আর বৃষ্টি।
তারপর
বাবার বাড়ির নাম করে চলে গেল বাইরে।
প্রায় এক বছর পর
ফিরে এলো দুজন বাচ্চা ছেলে নিয়ে অনাথ
আশ্রম থেকে। সদ্যোজাত শিশুদের ফেলে অনেক মা রা পালিয়ে যায়। সেই শিশু দুজনকে
নিয়ে এসে তারা মানুষ করতে শুরু করল।
আসমান বাড়িতে,
তারা, আয়া রাখলো। চেহারায় কঠিন পরিশ্রমে দুইজন সন্তানকে বড় করে তুলল। কি কঠিন
পরিশ্রম। তবু তাদের আনন্দের সীমা নেই।
বৃষ্টিদের
সংসারে এসে শিশু দুটি শুধু দেবদূত হয়ে এলো তারা এক নতুন কাজের মেয়ে দেখেছে। সে শিশুদের
দেখাশোনা করে। আর একজন কে রেখেছে রহিম। রান্নাবান্না করে বাজার করে রহিম খুব বিশ্বাসী
ছেলে। সে তাদের সংসারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। অনিমেষদার টাকার অভাব
নেই চাহিদার বেশি তারা তাদের পাড়ায় যেকোনো প্রয়োজনে তারা হেল্প করে। তাদের সংসার
নিয়ে প্রতিবেশীর নিয়ে বেশ সুখেই আছে।
ঈশ্বর মানুষকে
সবকিছু একসাথে দেন না কিছু দিলে অন্য কিছু অপূর্ণ থেকে যায় সব পাওয়া হয়ে গেলে
জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দ আর থাকে না না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে জীবন কাটানোর মধ্যেও
একটা আনন্দ আছে একটা সংগ্রাম আছে।
ছেলেদের নাম রেখেছে
সুজয় আর বিজয় তারা পড়াশোনায় খুব ভালো যে তারা মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার
পরে কলেজে ভর্তি হলো তারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং চালাক।
দিন ছুটির দিনে
সকলের বাড়ি আছে দুপুরে খাওয়ার পরে ওরা চেয়েছিল চারটি ঘর একটিতে সুজয়ের বাবা মা
আরেকটি ঘরে বিজয়ের বাবা মা ওরা একটা ঘরে থাকে আরেকটি ঘরে কাজের মাসি থাকে এইভাবে
ছোট থেকে শুনে আসছে।
দুপুরবেলা বিজয়
বাথরুম যাচ্ছিল হঠাৎ সিজারের ঘরে নজর গেল বিষয়গুলো ঘরে মার সুজয় শুয়ে আছে তারা
বিচিত্র কাজকর্ম করছে।কান। লাল হয়ে গেলো লজ্জায় সঙ্গে নিয়ে দেখল দুজনেই
সম্পূর্ণ উলঙ্গ। দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে বোধ হয়। এদিকে বাবাদের দরজা বন্ধ। দেখা
যায় না কিছু।
সুজয় বলল সমকামীরা
এরকম ব্যবহার করে এগুলো তো বলেছি। তাহলে আমরা কি ওদের সন্তান নয়। বিজয় বলল তা
কেন। সমকামী মেয়েরা সন্তান নিতে পারে ইচ্ছে করলে। তারা সন্তান নিতে পারে, আবার না
হতেও পারে। আমরা এ ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নেব।
সুজয় আর বিজয়
অন্যরকম হয়ে গেল তাদের বাবা মা জিজ্ঞেস করে তোদের কি শরীর খারাপ কি হয়েছে বল
বিজয় বলে না না কিছু হয়নি আমি ঠিক আছে সুজয় বলে শরীর ঠিক আছে কিন্তু মন ভালো
নেই পড়ার খুব চাপ তারা পড়ার দিয়ে বাড়িতে চুপ করে থাকে তাদের মনে একটাই প্রশ্ন
সমকামীদের সন্তান হয় না? তাহলে তারা কোথা থেকে এলো? নিশ্চয়ই তারা অনাথ আশ্রমের ছেলে? তা না হলে? সমকামি মেয়েরা কি সন্তান ধারণ করে? এইসব নানা প্রশ্নে কিশোরমন কুঁড়ে কুঁড়ে ব্যথা
পায়।
তারা কাছাকাছি থাকা
একটা অনাথ আশ্রমের গেল এলাকার একটাই অনাথ আশ্রম সেখানে খোঁজ নিল তারা তাদের বাবা
মায়ের নাম আলাদা করে বলল পুরনো রেজিস্টার বের করে বৃদ্ধ নরেশ বাবু দেখছিলেন
নামগুলো বিজয় বলল আপনি যদি অনুমতি দেন আমরা আপনাকে হেল্প করতে পারি আমরা দেখে
দিচ্ছি দিন পাতা উল্টাতে উল্টাতে তাদের নজরে পড়লো কুড়ি বছর আগে করা তাদের
বাবা-মায়ের অকপট স্বীকারোক্তি আমরা স্বেচ্ছায় দুইজন শিশুসন্তানকে পালনের জন্য
দত্তক নিলাম।
তার সঙ্গে কাজ করা
কিছু আইনি কাগজপত্র। বাড়িতে কিছু না বলে তারা দুজনে চলে গেল শহর ছেড়ে। যে
বাবা-মা তাদের তিলে তিলে কষ্ট করে বড় করে তুলেছে তাদের কথা তারা অভিমানে অভিমানে
ভুলে গেল। বিজয় একটা প্রাইভেট ফার্মে কাজ করে কাজ করতে শুরু করলো অনেক দূরে। মনের
অনেক দূরে।
বৃষ্টি আর রুমকি
সুজয় আর বিজয়কে দেখতে না পেয়ে কেঁদে কেঁদে আকুল। তারা শুধু অনিমেষ আর আবিরকে বলে
তাদের ছেলেদের ফিরিয়ে আনার কথা। তারা থানায় জানিয়েছে। তারা বলেছেন, খোঁজ চলছে
পাওয়া গেলে জানানো হবে। আমারাও বাবা মা কে দুঃখ দিয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছি।
তারপরে আমরা আছি এই দুঃখের মাঝে। চাকার মত ঘোরে কৃতকর্মের ফল।
সুজয় আর বিজয় যে
বাড়িতে ভাড়া এসেছে সেই মালিকের নাম বলে না। মালকিনের নামে বাড়ির নাম লেখা,
নন্দিতা।
বৃষ্টি বলল ঠিক
বলেছ আমাদের এটাই পাওনা ছিল কি করব আমরা ঈশ্বর আমাদের শরীরে কিভাবে তৈরি করে দিছেন
ওরা তো ওরা হয়তো কোনরকমে তা জানতে পেরেছে তাই তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেল
প্রতিবেশীরা জিজ্ঞাসা করে কোথায় তোমাদের ছেলেরা চাকরি পেয়েছে দুজনে এখন আর এখানে
থাকবে না চাকরি জায়গাতেই থাকবে।
বছরের পর বছর চলে
যায় ওরা আর ফিরে না অনিমেষ আর আবির একদিন টাটা সুমোতে চেপে মন্দিরে যাচ্ছিল। হঠাৎ
পথে দুর্ঘটনা দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। কিন্তু কেউ ছিল না তারপরওরা পরলোকে
চলে গেল। বাঁচানো গেল না।
কিন্তু বৃষ্টি আর
রুমকি একদম একা হয়ে পড়ল। তাদের বাবা-মা পুত্র স্বামী কেউ নেই। পৃথিবীতে তারাই
একা। কেবল একে অপরে খোঁজ রাখে। আর খোঁজ নেয় প্রতিবেশীরা। বৃষ্টির যৌবনের বয়স
পেরিয়ে গেছে। তারা কাজের লোকের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। নিজেরা রান্নাবান্না
করতে পারে না। কষ্ট করে কোন রকমে বাথরুমে যায়।
সুজয় আর বিজয়
বিয়ে করেছে তারা আলাদা বাসা ভাড়া করেছে। সুজয় ছেলেদের নিখোঁজের কথা
পুলিশ খুঁজতে
খুঁজতে ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দুজন ছেলেকে আর দুজন লোককে পেয়ে গেল রাস্তার মাঝে তারা
ছবি তুলে নিল সেই ছবি তারা বৃষ্টিকে দেখে দেখালো বৃষ্টি বলল এই দুই ছেলের মাঝে এই
যে ছবি দেখছেন এর নাম টোটন।এই টোটনের নামে ডায়েরি করা আছে। ডায়েরি নাম্বার তিনশ
পাঁচ। পুলিশ ফাইল খুলে পেয়ে গেল রেপ কেসের ডিটেলস। পুলিশ হানা দিল একরাতে টোটনের
গোপন বাড়িতে।টোটন শেষ বয়সে ধরা পড়ল পুলিশের হাতে। কিন্তু সুজয় আর বিজয় ভাড়া বাসা
ছেড়ে চলে গেছে অন্য কোথাও।
সুজয় আর তার স্ত্রী ভট্টনগরে থাকে। আর বিজয় ও স্ত্রী শ্বশুর
বাড়ি সোনারপুরে থাকে। তাদের মধ্যে খুব কম দেখা হয়। এর ফলে তাদের একদম ভালো লাগে
না।
ঘটনাচক্রে
একদিন কলকাতায় সুজয়ের সঙ্গে বিজয় দেখা হলো বিজয় বলল আমি শুনেছি বাবা এবং কাকু অ্যাক্সিডেন্টে
মারা গেছেন একবার আমাদের যাওয়া উচিত চল বাড়ি গিয়ে খবর নিয়ে আসি।
কলকাতায় তারা ছোট
থেকে মানুষ হয়েছে তারা চলে গেল বাড়ি rumky-r বৃষ্টি তাদের দেখে আনন্দে আত্মহারা
হলো তারা হাতজোড় করে সুজয়কে বলল তোরা ঘরে ফিরে আয় তোদের তোদের বিয়ে আমরা
হাসিমুখে মেনে নিচ্ছি তোরা ঘরে ফিরে আয় সুজয় বিজয় বউদের নিয়ে এক মাস পরে বাড়ি
ফিরে এলো।
তারা ছেলেদের ডেকে বলল
তোরা সুখে থাকলেই আমরা সুখী টাকা-পয়সা বাড়িঘর তৈরি থাকলো আমাদের পেনশনের টাকায়
চলে যাবে আমরা বৃদ্ধাশ্রমের থাকবো তোরে কষ্ট দেবো না।
ছেলেরা বউরা কেউ
আপত্তি করল না। তারাও মনে মনে এটাই চাইছিল। কিন্তু বলতে পারছিল না। তারা আলোচনা
করছিল এই বুড়ি বয়সে ওদের আবার কে দেখবে? আমাদের আমরা অফিস চলে যাই কাজের লোক
আমাদের সন্তানসম্ভবা বউদের দেখাশোনা করবে। এগুলো থাকলে আমাদের অসুবিধা হবে।
মা ছেলেদের মনের
কথা বুঝতে পারেন। তাই হয়তো দুই মা একত্রে ঠিক করেছেন তারা বৃদ্ধাশ্রমের থাকবেন।
ছেলে বৌদের খুব আনন্দ। আর কয়েকদিন পরেই বুড়ি দুটো বৃদ্ধাশ্রমের যাবে। সুজয়
বৃদ্ধাশ্রমের সমস্ত কথা বলে, পরে বাড়ি
ফিরে এলো।
পাড়ার সকলে খুব
আনন্দিত হলো। কারণ পাড়ার লোকজন জানত তো, সুজয় বিজয় তাদের মাদের দেখবেনা।
বৃদ্ধাশ্রমে তবু তারা ভালো থাকবে।
সুজয় আর বিজয়ের
বউ অন্তঃসত্ত্বা। তাদের বাচ্চা হবে আর দু-তিন মাসের মধ্যে। দুজনে কাজে বেরিয়ে
যায়।রুমকি আর বৃষ্টিকে দেখার কেউ নেই তাদের বয়স হয়েছে। কাজের লোক বৌমাদের যত্ন
করতে ব্যস্ত। খুব তাড়াতাড়ি মধ্যেই তারা বৃদ্ধাশ্রমের চলে যাবে মনস্থির করল।
তারপর একদিন শুভদিন
দেখে দুজনে চলে গেল ছেলেদের সঙ্গে। বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে দিয়ে ছেলেরা ফিরে এল। খুব
আনন্দ করলো তারা বউদের নিয়ে।
সমাজ জানলো না
সমকামী চারজন ছেলে মেয়ের জীবন কাহিনী। তাদের সমস্ত কিছু সঞ্চিত ধনও তারা
উদারচিত্তে পালিত পুত্রদের দান করে গেল। বৃদ্ধাশ্রমের পাশেই অনাথ আশ্রম।সেখান
থেকেই তারা ছেলেদের দত্তক নিয়েছিল। আবার সেই ছেলেরা বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে এলো তাদের
জননীদের।
এটাই বাস্তব জীবন।
এখানে মায়া দয়ার কোন স্থান নেই। আবেগে যারা ভাসে তারা বোকা। তারা এই পৃথিবীতে
অযোগ্য।বোকারা আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর, বোকারা আছে বলেই এত ফুল ফোটে।
তারপর
সুখে দুঃখে শোকে বৃষ্টি আর রুমকির জীবন কাটতে লাগল। তাদের মনে পড়ল ছোটবেলার কথা, মা-বাবাকে কত কষ্ট দিয়ে তারা পালিয়ে এসেছে তা এই একটা কারনেই। তার কারণ হল তারা
সমকামি।
বাবা-মা মেয়েরা
সমকামী জানলে কষ্ট পাবেন। ছেলে মেয়েরা সমকামী হলে ভারতবর্ষের বাবা মারা কষ্ট পান।
তারা মেনে নিতে পারেন না এই সহজ আর পবিত্র সম্পর্ক। সমকামিতা যেকোনো সম্পর্কের
মতোই স্বাভাবিক সুন্দর জীবন। কিন্তু এখানকার সমাজ তা মানতে চায় না তারা এটাকে
অপরাধ ভেবে দূরে সরিয়ে রাখে।
বৃষ্টি বলে, হে
ভারত তুমি সাবালক হও আর কতদিন নাবালক হয়ে থাকবে। সারা পৃথিবীর দেশ যখন ছুটে উন্নত
দিকে এগিয়ে চলেছে, তুমি কেন পিছিয়ে পড়বে। তুমি এগিয়ে চলো, উন্নত হও আমার মা
আমার দেশ আমার জননী।শিল্প,মানবসম্পদ,ঐতিহ্য পাশাপাশি এগিয়ে চলুক সবুজের গতি নিয়ে।
বিকশিত হোক শত শত মূর্খ জীবন।
তুমি কি বলো
ভারতের সমাজ। তোমরা মানুষকে বাঁচতে দাও। সংসারে সম্মান বাঁচাতে গিয়ে আমাদের
জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে যেতে হয় বারেবারে। তবু সমাজের চেতনা ফেরে না। আইন মেনে
নিলেও সমাজ মানে না। এই সম্পর্ক গুলো সুস্থ হোক স্বাভাবিক হোক। সমাজ মেনে নিলে,
তবেই হবে ধন্য রাজার দেশ।
এই মূর্খ চুতিয়া
সমাজের জন্য বৃষ্টি রুমকি অনিমেষ আর আবিরের মত সমকামীদের লুকিয়ে থাকতে হয় তাদের
জীবন যাপনের স্বাভাবিক ছন্দ থাকেনা। আনন্দ থাকে না। উৎসব থাকে না। তারা মনে মনে মানসিক রোগে ভুগতে থাকে।
সমাজে তারা
লেসবিয়ান, গে, বলে পরিচিত হয়। তর্জনী তুলে সমাজের কিছু লোক বলে, ওই দেখ ওই
চুতিয়া সমকামী ছেলে হয়ে ছেলেকে বিয়ে করে আর শালি মেয়ে হয়ে মেয়েকে বিয়ে করে।
সমকামিতা অপরাধ নয়
একদিন নিশ্চয়ই লেসবিয়ান যারা, তারা মাথা
উঁচু করে বাঁচবে। বৃষ্টি বলেছে আশার কথা। বৃষ্টি বলছে আর কয়েক বছরের মধ্যেই এই
পবিত্র সম্পর্ককে সমাজ মেনে নেবে আশা করি।
রুমকি বলে, মৃত্যুর
আগে আমি এই কামনা করি, লেসবিয়ান যারা, তারা মাথা উঁচু করে স্বাভাবিক সম্পর্কের
মতই এই সম্পর্কেও খুশি হোক। সব লজ্জা কেটে
গিয়ে ঘৃণার কালো মেঘ কেটে গিয়ে আকাশে দেখা দিক আশার লাল সূর্য।
পূর্ব বর্ধমান
sudipghoshal59@gmail.com
No comments:
Post a Comment