1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, February 21, 2021

মেহেন্দি

ছবি  : ইন্টারনেট 

 

 মেহেন্দি
সুনন্দা ঢালী

কাল পঞ্চমী। দুই বোন বসেছে রূপ চর্চায়। ছোট জন কলেজে পড়ে আর বড়ো জন সদ্য কলেজ পাশ করে আইটি ফার্মে কর্মরতা। দুজনে হাতে মেহেন্দি করতে বসে পরেছে। দিদি আগে বোনেরটা করবে। তারপর বোন দিদিরটা। ঠাম্মা পাশে এসে বসলো। অনেক্ষন ধরে দেখছিল আমাদের দক্ষযজ্ঞ। বললো, আমারে পরায়া দিবা দিদিভাই? সাদা থান ছাড়া ঠাম্মাকে দেখিনি কোনদিন। পুজো-আর্চার দিনগুলোতে বড়োজোর একটু চওড়া পাড়ের সাদা শাড়ি। বেশ অবাক হলেও অপটু হাতে মেহেন্দি করা শুরু করলাম। ঠাম্মার চোখে মুখে শিশুসুলভ হাসি। গাল ভাঙ্গা কুচকানো চামড়ার আমাদের ফোগলা ঠাম্মা। পরানো হলে হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে বলল, খুব সুন্দর লাগতাসে। তোর দাদুরে দেহায়া আহি।
 
ঠাম্মা এক গাল হাসি নিয়ে ফিরে আসে। বলে, আমরা যহন ওই দ্যাশে সিলাম এই হগল কিসুই দেহি নাই। এই দ্যাশে আইস্যা তোর দাদু এক জজমানের বাসায় বউ মাইয়্যা গুলারে হেইডা পরতে দেকসিল। লইয়া আইত হ্যাসে আমারে পরায়া দিত। কত্ত বস্বর পর আইজ পরলাম।
 
জানিস দিদিভাই বিকাল হইলেই ফিতা লইয়্যা চুল বানতে বইতাম। তোর দাদু কাজল, চুরি, আলতা লইয়্যা আইত। বিস্যুদ বার হইলেই পাঁচালী পড়নের আগে আলতা পড়তেই লাগতো। তোর দাদু খুশি হইত। বছরে দুই খান শাড়ি দিত। একখান পুজায়। একখান বিয়া বাস্যরিকের দিন। পাড়া প্রতিবেশী ঠাট্টা কইত্য। ঠাম্মার ভাঙ্গা গাল দুটো লাল হয়ে গেল। বিয়ার দিন রাইতের বেলা আমারে মিষ্টি পান দিসিলো। বলসিল এই লাল লাল ঠোঁট গুলান সবসময় হাসি হাসি রাখবা।  মনে কষ্ট হইলে আমারে কইবা। আমি আরো একখান মিষ্টি পান নিয়া আসুম।
 
যহন দ্যাশ ছারনের লাইগ্যা আইয়া পরতে হইবো শুনলাম, পেটে তোর বড়ো পিসি ৭ মাসের। বাড়ির তিনটা গরুরে ফালাইয়া আইসিলাম। ওরাই আমার পোত্থম সন্তান। অনেক দৌড়াইতে হইসিল। তোর দাদু নৌকায় ওঠার পর পায়ের তলায় মালিশ করসে। আর আমার চৌক্ষের জল মুচাইসে। লাগতাসিল মইরাই যাম। তোর দাদু মরতে দেয় নাই। বুকে জড়ায়ে রাকসিল আর ধুতির কোচর থিক্যা মুড়ি বার কইরা খাওয়াইতাসিল।
 
তোমাকে এত ভালবাসত দাদু?, বোন বলে। সমানে চোখ থেকে জল পড়ছে ঠাম্মার। কই বাবা যে বলে তোমাদের খালি খালি ঝামেলা হত। বোন, ভালোবাসলে একটু ঝামেলা বেশি হয় জানিস না?!
 
আমার কথা শুনে ঠাম্মা খুব হাসতে থাকল। এমন হাসি খুব কম দেখেছি। ঠাম্মা কে বরাবর গম্ভীর গোছের দেখেছি। দাদু কে আমরা চোখে দেখিনি। দাদু নাকি পকেটে করে তেলেভাজা নিয়ে ঘুরত। আর ঠাম্মার জন্য পান নিয়ে আসত মনে করে। অনাড়ম্বর ভালোবাসা গুলো মিষ্টি হয়। চোখে মোটা চশমার ঠাম্মা এখনও নিয়ম করে সাদামাঠা ভালোবাসা মাখে...
rimpa.sunanda@gmail.com
কলকাতা

No comments:

Post a Comment