1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Tuesday, January 26, 2021

একটুকু বাসা

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

একটুকু বাসা  
মৌসুমী দেব-ঘোষ

      মানুষের জীবনের সব শখ,সব সাধ কখনোই পূর্ণ হয় না। তবুও ওই সব অপূর্ণ সাধ আঁকড়ে ধরে কত মানুষের সারা জীবনটাই কেটে যায়!মন কিছুতেই যেন ভুলতে পারে না তা।
    ঠিক যেমন সেই সাত বছর বয়স থেকে এই সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত একটা অপূর্ণ সাধকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন মনিকুন্তলাদেবী।একদিন সাত বছরের ছোট্ট মনি তার বাবার গলা জড়িয়ে আবদার করেছিল-‘আমাদেরও অমন একটা বাড়ি চাই বাবা,ঐ চৌধুরীদের মত মস্ত বড়, একটা বিরাট বাগান থাকবে,অনেক গাছ থাকবে।একটা পুকুরও থাকবে ,তাতে মাছ ধরব তুমি-আমি।’  
     গ্রামের স্কুলের মাস্টার চন্দ্রনাথ-মনির বাবা।চাকরীসূত্রেই এখানে থাকতে আসা,সেও তো অনেক কাল হয়ে গেল!নন্দীদের বাড়ির দু-কামরা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছিলেন,এখনো সেখানেই থাকেন। মাস্টারির পয়সায় এর বেশি কিছু করে উঠতে পারেন নি। তবু মেয়ের ঐ অদ্ভুত আবদার শুনে খাতা দেখতে দেখতেই হেসে বলেছিলেন-‘হবে হবে,আর যদি না হয় তাহলে তোর আমি এমন বাড়িতেই বিয়ে দেবো, দেখবি যাদের ঐ চৌধুরীদের মত বড় বাড়ি আছে,বাগান আছে, পুকুর আছে,বুঝলি পাগলী।’ছোট মেয়েটা বুঝত না বাপের কথার গূঢ়ার্থ! একা একাই খেলাপাতি নিয়ে খেলাঘর সাজিয়ে খেলত, চৌধুরীদের বাড়ির মতো মস্ত একটা  বাড়ির স্বপ্নে মশগুল হয়ে।     
     না, শেষপর্যন্ত চন্দ্রনাথের পক্ষে সম্ভব হয়নি নিজের বাড়ি করার।সামান্য বেতনের স্কুল শিক্ষক বই তো নয়, পুঁজিও ছিল না। বাড়ি ভাড়া, সংসার খরচ, স্ত্রীর অসুখ, মেয়ের পড়াশুনো এসব দেখতেই সব শেষ, জমানো হয় নি কোনদিন! তাই চৌধুরীদের বাড়ির মতো বাড়িও করা হয় নি।  
     ছোট্ট মেয়েটাও ততদিনে অনেক বড় হয়ে গেছে।বুঝে গেছে তার বাবার পক্ষে কোনদিনই সম্ভব নয় ওরকম বাড়ি করা,তাই আবদার করতো না আর। তবে মনে মনে কল্পনা করাটা কোনদিনই মনি ছাড়েনি! 
      চোদ্দ-পনেরো বছর বয়েসে একবার মায়ের সাথে বেড়াতে গেছল,ওর মাসতুতো দিদি ললিতাদির শ্বশুরবাড়ি, কোলকাতায়। অবাক হয়ে গেছল, ললিতাদিদের বাড়িটা দেখে।কি বিশাল, কি সুন্দর! পুরনো  আমলের জমিদার বাড়ির মতো ,এই মোটা মোটা থাম দেওয়া চকমিলানো বাড়ি ,ঠাকুরদালান, গাড়ি-বারান্দা আরও কত কি! চৌধুরীদের বাড়ি যত বড়ই হোক এর কাছে কিচ্ছু না! 
     ফিরে আসা অবধি কতবার যে বাবাকে ললিতাদির বাড়ির গল্প করেছে তার ঠিক নেই। চন্দ্রনাথ ধৈর্য ধরে মেয়ের সব কথা শুনে বলতেন- ‘বেশ তো, ঐ বাড়িটা যখন তোর এতো পছন্দ ,ললিতাকেই জিগ্যেস করবো না হয় ওর কোন দেওর-টেওর আছে নাকি ?’ কথার ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে ছুটে পালাতো মণিকুন্তলা।অবশ্য সত্যি যদি ললিতাদির দেওর থাকত মনি বাবার প্রস্তাব মানতে দুবার ভাবতো না।  
     আসলে চন্দ্রনাথ তো জানতেন কোনদিনই তাঁর অমন বাড়ি করা হবে না,মেয়ের মনের কথাটাও জানতেন। তাই তাঁর সহজ সমাধান ছিল-বিয়ে দিয়ে মেয়েকে অমন বাড়ি খুঁজে দেওয়া।   
                             ******
    চন্দ্রনাথ স্কুল মাস্টার ছিলেন বলেই হোক,বা যে কোন কারনেই হোক মেয়েকে কিন্তু পড়াশুনা করাতে কার্পণ্য করেন নি। মুখে যাই বলুন না কেন অল্প বয়েসে মেয়েকে পাত্রস্থ করতে চান নি, মনি তাঁর একমাত্র সন্তান বলেই হয়তো।এমনকি ওর মাও কোনদিন বিয়ের জন্য পিড়াপীড়ি করেন নি। তাই যথাসময়েই মণিকুন্তলা স্কুলের পড়া শেষ করে কলেজে ঢুকেছিলেন।কো –এড কলেজ,প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও বেশ মানিয়ে নিয়েছিলেন।   
    কলেজে পড়তে এসে আলাপ হয়েছিল অনুতোষের সাথে, তার তখন আর্টিস্ট হবার ভীষণ ঝোঁক। ছবি যা আঁকত তার একমাত্র গুণমুগ্ধ দর্শক মণিকুন্তলাই।ছোটবেলার স্বপ্নগুলো তখনো মোছেনি ওর মন থেকে,বরং তা আরো রংবেরঙের পাখনা মেলেছে।যখনই দুজনে মুখোমুখি হতো ,একথা- সেকথার পরেই মনি বলত-‘জানো অনু, আমার না একটা ইচ্ছা আছে,আমাদের একটা বিরাট বাড়ি হবে।ওই যে সেদিন সিনেমাটা দেখলাম না, ওইরকম! একটা বড় হলঘর থাকবে,গালিচা পাতা। একটা স্টুডিয়ো থাকবে তোমার আঁকার।আর আমার থাকবে একটা লাইব্রেরী কাম মিউজিক-রুম,তাতে অনেক বই থাকবে,আর গানের ইন্সট্রুমেন্ট –পঙ্কজ মল্লিক, হেমন্ত, মান্না,লতা-আশা, সুচিত্রা-মিত্র আরও অনেকের গান----‘ মণিকুন্তলা চোখ বন্ধ করে একনাগাড়ে বলে যেতো। ও যেন সত্যি অমন একটা বাড়ি দেখতেই পেতো চোখের সামনে!  
    অনুতোষ প্রথম প্রথম অবাক হলেও ,এখন ব্যাপারটায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মনে মনে অবাক হয় মেয়েটা যেন কেমন,আর কোন কথাই নেই!সারাক্ষণই একটা বাড়ির স্বপ্নে মশগুল হয়ে থাকে।দু একবার চেষ্টাও করেছে মনির কল্পনার বাড়িটাকে ওর ক্যানভাসে ধরতে। কিছুতেই সেটা ওর মনোমত হয়েনি। মাঝে মাঝে ভাবতো মনিকে আঁকা শেখানো গেলে ও ঠিক নিজের মনের মতো করে এঁকে দেখাতে পারতো ওর স্বপ্নের বাড়িটা।
    একদিন অনুতোষ বিরক্ত হয়েই বলেছিল-‘আচ্ছা মনি, তুমি যে সবসময়ে বাড়ির কথা বলো কখনো ভেবে দেখেছো ওরকম একটা বাড়ি করতে কতো টাকা লাগবে?’না ,এই কথাটা কোনদিন ভেবে দেখেনি মণিকুন্তলা।কল্পনার রঙ দিয়ে মনে মনে ছবি হয়তো আঁকা যায়, সত্যি তো তাতে বাড়ি হয় না,তার জন্য টাকা লাগে,অনেক টাকা!আসলে মণিকুন্তলা চেয়েছিল একদম নিজের বাড়ি, যা ও নিজের মনের মতো করে সাজাবে-গোছাবে। তাই একটু দমে গেলেও পরক্ষণেই খরখরিয়ে বলতে ছাড়তো না-‘টাকা ? সেতো লাগবেই,তার জন্য এত ভাবছো কেন! আরে বাবা তুমি তো চিরকাল এখানে বসে ছবি আঁকবে না। কত নাম হবে তোমার, কত দাম হবে তোমার ছবির।তাছাড়া আমিও নিশ্চয়ই ততদিনে একটা চাকরী পেয়ে যাবো।দুজনের টাকা দিয়ে অমন একটা বাড়ি করতে পারবো না বলো?’   
      ওর ওই স্বপ্নে মাখামাখি মুখটার দিকে তাকিয়ে প্রতিবাদের ভাষাও যেন হারিয়ে যেত অনুতোষের!  আসলে মণিকুন্তলা ধরেই নিয়েছিল ওর সাথে অনুতোষের বিয়েটা হচ্ছেই।
    কিন্তু সত্যি এটাই,অন্য অনেক ব্যর্থ প্রেমের গল্পের মতোই শেষ পর্যন্ত এই বিয়েটা হয়েনি।কেন ,সে প্রশ্ন অবান্তর।হঠাৎ একদিন দেখা গেল ,অনুতোষ ওর তল্পিতল্পা সহ উধাও!মনির ওই স্বপ্নের বাড়ির খরচের কথা ভেবে কিনা কে জানে! সব সত্য কি জানা যায়!    
    মণিকুন্তলা ভীষণ মুষড়ে পড়লো এই ঘটনাটায়।কদিন খাওয়া নেই ,ঘুম নেই,এরকম যে হতে পারে তাতো ও ভাবতেই পারেনি।আঘাতটা জোরই লেগেছিল।কিন্তু মানুষের জীবনের অন্য সব ক্ষতের মত এই ক্ষতও শুকালো সময়ের হাত ধরে একদিন। 
                         ***********  
        এরপর বাবা-মায়ের পছন্দ করা পাত্রের গলাতেই মালা দিয়ে ফেলল মণিকুন্তলা।লাল বেনারসী শাঁখাসিঁদুর –গয়না মোড়া হয়েই শ্বশুরবাড়ি করতে গেল অমৃতেন্দুর হাত ধরে। 
    অমৃতেন্দু সরকারি অফিসের টাইপিস্ট, থাকতো সরকারি কোয়ার্টারে।দুকামরার ছোট ছোট পায়রার খোপের মতো ঘর,এক চিলতে বারান্দা।তাতেই বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে শুরু হল ওর নতুন জীবন।এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল মণিকুন্তলার পৃথিবী।দমটা যেন আটকে যেতো ওর। অভিমানে চোখে জল আসতো, বাবা তাঁর দেওয়া কথা রাখলেন না!  
   তবু স্বপ্নটা মাথাচাড়া দিতো মনের মধ্যে থেকে থেকেই। কেবল এবার স্বামীর রোজগারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বপ্নটাকে একটু কাটছাঁট করে নিয়েছিল ও । কারন সেই সেবার অনুতোষের ভুলটা ধরিয়ে দেবার পর থেকেই, মনি বাড়ির চিন্তার পাশাপাশি তার খরচের দিকটাও ভেবে দেখত বইকি। 
     এখন মনি আর চৌধুরীদের মতো অতো বড় বাড়ি চায় না,শহরে ওসব বাড়ি গোয়াল –পুকুর-বাগান একদম মানায় না। ললিতাদির শ্বশুরবাড়ির মতো মোটা মোটা  থাম-ওয়ালা বাড়ি- ওতো এখন ওল্ড মডেলের হয়ে গেছে।অনুতোষের সঙ্গে থাকার জন্য যে বিশাল বাড়ি করতে চেয়েছিল,তারই বা দরকার কি ! অমৃতেন্দু  তো আর্টিস্ট নয়,একেবারেই  ছাপোষা চাকুরীজীবী ঘোরতর সংসারী মানুষ।তাছাড়া নিজের গানবাজনার শখ –সে তো কবেই চুকেবুকে গেছে! এখন একটা ছোট বাড়ি হলেই ওর চলবে,নিজের বাড়ি! 
       অমৃতেন্দু নতুন বউএর আবদার শুনে পাশ ফিরে শুতে শুতে বলতো –‘ হবে হবে অফিসে লোন নিয়ে ওরম একটা বাড়ি তোমায় আমি করে দেবো ঠিক ।বাড়ির নাম রাখবো- মণিকুন্তলা ।’ সেই সব রাত কেটে যেত বাড়িটা কার নামে হবে-ওর না অমৃতেন্দুর নামে তাই নিয়ে ঝগড়া করে।   
       কিন্তু রাতের পর রাত স্বপ্নই দেখা হল শুধু।দিন গেল,রাত গেল,বছরের পর বছর গেলো –বাড়ি আর হলো না।কত পুজা এলো , কত বোনাস, কত ডি এলো –গেল।মণিকুন্তলার স্বপ্নের বাড়ি অধরাই থেকে গেল ! এখন ওতো ঘোরতর সংসারী, শাশুড়ি-মা গত হবার পর পরিবারের কর্ত্রীও বটে ।দুই ছেলে,তাদের স্কুল -টিফিন, স্বামীর অফিস এই নিয়ে ভী-ষণ ব্যাস্ত। অবসরই পায় না।তবু অলস দুপুরে যখন একা একা বসে থাকেন, মনের কোনে পূর্বজন্মের স্মৃতির মতো ঝিলিক মেরে যায় স্বপ্নের বাড়িটা!    
      মণিকুন্তলা এখন আর আবদার করেন না,অভিযোগ করেন।উনিশকুড়ি বছরের পুরানো বউ  মণিকুন্তলা,স্বামীকে খোঁচাতে ছাড়েন না-‘আজ অবধি তো শুধু শুনেই আসছি,এবছরই তুমি জায়গা কিনছো ,লোন নিচ্ছো ,কই?চাকরীর তো আর ক’বছরই বাকি ।রিটায়ার করলে তো আর এই কোয়ার্টার থাকবে না,  তখন ছেলেদের নিয়ে কোথায় যাও দেখবো।’ঠিক অফিস যাবার মুখে নিত্যদিন বউএর খোঁটা শুনতে শুনতে ক্লান্ত অমৃতেন্দুও রেগে গিয়ে বলতেন-‘ সবসময়  বাড়ি বাড়ি করো নাতো, আমার কি একটা আলাদীনের  আশ্চর্য প্রদীপ আছে যে, বললাম আর বাড়ি হয়ে যাবে? টাকা কি হাওয়ায় ওড়ে!সংসারটা কিভাবে চলে  খোঁজ রাখো কিছু? টাকা জমিয়ে কি হবে ,দুটো ছেলে তো মানুষ হছে নাকি। জানবে ওরাই তোমার ফিক্সড  ডিপোজিট, ভাগ্যে থাকলে ওরাই তোমাকে বাড়ি করে দেবে মনি।’ আবার আরেকটা আশ্বাস পেলেন!
     মণিকুন্তলা কিন্তু বিশ্বাস করেছিলেন স্বামীর কথায়।সত্যি তো তাঁর ছেলেদুটোই তো সবথেকে বড় অ্যাসেট- সুনিত আর নবনীত ।অমৃতেন্দুও তো কম পরিশ্রম করে না, ও বিড়ি খায় না, নেশা করেনা ,কোন বাজে খরচই নেই।উদয়-অস্ত খেটে চলেছে শুধু মাত্র সংসারের জন্য! ছেলেদের নামী স্কুলে পড়াচ্ছে, বাড়িতে ভালো টিউশন দিয়েছে, ওরও কোন অভাব রাখেনি, আর কি চাই! 
     মণিকুন্তলা ছোট থেকেই ছেলেদের মাথায় ওর স্বপ্নের বাড়ির কথা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।রূপকথার রাজকন্যা-রাজপুত্রের চেয়ে অনেক বেশি শোনাতেন রাজবাড়ীর গল্প। ওরা যেন মন  দিয়ে পড়াশুনা করে,ফাঁকি না দেয়। সুনিত-নবনীত দুজনেই বেশ ভালো ছাত্র ছিল।মণিকুন্তলার স্থির বিশ্বাস ছিল ,অমৃতেন্দু না পারলেও ছেলেরা তাকে বিমুখ করবে না।তাই ধৈর্য হারান নি কোনদিন।   
     কিন্তু বিধি বাম! মণিকুন্তলার আশঙ্কাই সত্য হলো। ছেলেদের পড়াশুনা, কলেজ, অফিসের লোণ, ,বাজারের হিসেব মিটতে না মিটতেই দুম করে একদিন ভোররাতে চলে গেলেন অমৃতেন্দু – স্ট্রোকে ।কিছুই করা গেল না।হার্টের অবস্থা যে এতো খারাপ কাউকেই বুঝতে দেয় নি কোনদিন।তখনো চাকরী শেষ হতে বছর দুয়েক বাকি ।অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চাকরীটা পেল সুনিত,উচ্চশিক্ষার আশা ছেড়ে বাবার চাকরীতে যোগ দিতে হলো। নবনীত তখন বি টেকের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।মাথার উপর থেকে ছাদ সরল ,কোয়ার্টার ছেড়ে উঠে আসতে হল ভাড়া –বাড়িতে ।    
     তবে সুনিতের মধ্যে প্রস্পারিটি ছিল, তাই ডিপারমেন্টাল পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে একদিন উঠে গেল বাবার সামান্য কেরানির চাকরী থেকে অনেক উপরে।বদলি হতে হল দিল্লির অফিসে, ততদিনে বড় ছেলের বিয়ে দিয়েছেন মণিকুন্তলা।ভেবেছিলেন সবাইকে নিয়ে সোনার সংসার গড়বেন, ভগবান আবার ভেঙে দিলেন ওর স্বপ্নটা!প্রথম দু-এক মাস একা থাকলেও ,একদিন এসে বউকে নিয়ে গেল সুনিত।অফিস থেকে ওকে নাকি বিশাল কোয়ার্টার দিয়েছে ,রান্নাখাওয়ার অসুবিধা হচ্ছে ,তাই---। একটু গুছিয়ে নিয়েই নাকি মাকে নিয়ে যাবে ও।আবার আরেকটা আশ্বাস !     
    অনিবার্য ভাবেই মণিকুন্তলা ঝুঁকে পড়লেন ছোট ছেলে নবনীতের দিকে, তাঁর শেষ সম্বল,শেষ আশা! নবনীত প্রথম যেদিন চাকরী পেয়ে মাকে প্রনাম করলো ,দু-হাত ভরে আশীর্বাদ করে তিনি বলেছিলেন-‘ নবু ,এবার একটা জায়গা দেখ, এভাবে আর কতদিন  ভাড়া বাড়িতে থাকা যায় বল!’ নবনীত সেই কোন ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছে মায়ের এই ইচ্ছাটার কথা, তাই হেসে বলে-‘ঠিক বলেছ মা, এবার একটা বাড়ি আমাদের চাইইইই।ঠিক তোমার সেই স্বপ্নের বাড়ির মতো বাড়ি! দাঁড়াও আগে তো একটা ভালো জায়গা দেখি’। ছেলের কাছে সমর্থন পেয়ে মণিকুন্তলা যেন কিশোরীর মতো উচ্ছল হয়ে উঠেছিলেন।এতদিন পরে তাঁর স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে তাহলে!ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন! ভুলতে বসা,প্রায় মুছে যাওয়া ছবিটা ঝেড়ে মুছে তকতকে করে ফেললেন মনে মনে।      
     মা-ছেলেতে মুখোমুখি হলেই আজকাল শুধু বাড়ির কথাই হয়।কেমন বাড়ি হবে,ঠাকুরঘর কোন তলায় হবে, কটা বাথরুম হবে,মেঝেতে কি টাইলস বসবে এই সব কথা। নবনীতকে সামনে দেখলেই মণিকুন্তলা প্রথম যে কথাটা বলেন তা হল-‘কি রে তোর জায়গা দেখা হলো ,একটু ভালো যেন হয় পাড়াটা দেখিস বাপু, কথায় বলে না,প্রতিবেশী ভালো না হলে বাস করা দায়!” 
        *******
    ঠিক  এরকম একটা পরিস্থিতিতে ,নবনীত একটা কাণ্ড ঘটিয়ে বসল। একদিন বলা নেই কওয়া নেই, সন্ধ্যাবেলায় একটি মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত, মণিকুন্তলা সেই সবে সন্ধ্যা দিয়ে ঠাকুর ঘর থেকে বেরাচ্ছেন।একেবারে যাকে বলে হকচকিয়ে গেলেন!মেয়েটি নীরবে প্রনাম করে উঠে দাঁড়াতে, আশীর্বাদ করতেও ভুলে গেলেন মণিকুন্তলা। সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়েছিলেন ছেলের মুখের দিকে।নবনীত অন্য দিকে তাকিয়ে লজ্জা লজ্জা কণ্ঠে স্বভাবসিদ্ধ ভাবে বলে-‘ তোমার দাসী নিয়ে এলাম মা,ও সুস্মিতা আমার কলিগ’। মুহূর্তে একটা যেন প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন তিনি। 
   কিন্তু ধাক্কাটা সামলেও নিলেন ,তিনি বুদ্ধিমতীও বটে।তাঁর তো ইচ্ছা ছিল নতুন বাড়ি হলেই নবনীতের জন্য একটা সুন্দর দেখে বউ আনবেন, বড় ছেলের বিয়েটা বড্ড তাড়াহুড়ো করে দিতে হয়েছিল।ছোট ছেলের বিয়েটা খুব ঘটা করে দেবেন ভেবেছিলেন।আগে নতুন ঘর, তারপর ঘরের লক্ষ্মী! কিন্তু ভাবনার সাথে কি সবসময় সব কিছু মেলে? তাঁর জীবনে তো কখনই মেলেনি! মনে মনে ভীষণ ভাবে আশাহত হলেও,নিজেকে স্বান্তনা দিয়েছিলেন এই বলে-না হয় লক্ষ্মীই আগে ঘরে এলো ,হাতের লক্ষ্মী কেউ পায়ে ঠেলে! ঘর তো হচ্ছেই।            
   তাই মনের কষ্ট মনেই চেপে রেখে হেসে হাত রেখেছিলেন মেয়েটির মাথায়,বলেছিলেন-‘ছিঃ ,ও কি কথা নবু, দাসী হতে যাবে কেন,ওত আমার ঘরের লক্ষ্মী।কিন্তু বাবা ,এভাবে কেউ ঘরের লক্ষ্মী আনে! শাঁখ  বাজল না,সানাই বাজল না!’  
   নবনীত বলেছিল-‘ মা,সবাই না হয় শাঁখ –সানাই বাজিয়ে বউ আনে, তোমার ছেলের নাহয় একটু অন্যরকম হল,বউ আসার পর শাঁখ- সানাই বাজবে,খুশি ?’ খুশি বলে খুশি,মণিকুন্তলা যে এত খুশি কোথায় রাখবেন ভেবেই পান না!  
    অবশ্য নবনীত কথা রেখেছিল, বিরাট পার্টি দিয়েছিল বইকি। তবে তিনি যে ভেবেছিলেন নতুন বাড়িতে ছেলের বিয়ের সানাইটা বাজবে-তা আর হল না।সে আর কি করা যাবে,ছেলেরই যখন তর সইলনা! 
                    ********
    ছেলের সাথে সাথে শুরু হল মায়েরও জীবনের নতুন এক অধ্যায়।যত সহজে মণিকুন্তলা মেনে নিয়েছিলেন সুস্মিতাকে, তত সহজে সে কিন্তু মেনে নিতে পারল না শাশুড়িকে।আসলে সুস্মিতা বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। এই ‘একমাত্রের’’অধিকার নিয়েই শুরু হল এক ঠাণ্ডা লড়াই ।অবশ্য প্রকাশ্যে নয়,অন্তরে- নবনীতকে নিয়ে। মণিকুন্তলা যাই করুন ,যাই বলুন,তা নাকি ঠিক আপগ্রেডেড নয়,সেকেলে।বিশেষ করে সারাক্ষণ ছেলে-ছেলে করে তাঁর এই আদিখ্যেতা নাকি অসহ্য।আজকাল মা-ছেলের দেখাই হয় কতটুকু ,কথাও ওই রাতে খাবার টেবিলে, যেটুকু সুযোগ মেলে।নবনীতের ব্যাস্ততা আগের থেকে এখন অনেকই বেড়ে গেছে।কাজের চাপও।        
    তবু একটা ব্যাপারে মনিকুন্তলার সাথে সুস্মিতার অসম্ভব মিল-সে ওই নতুন বাড়ির স্বপ্ন।একটা নতুন বাড়ি সত্যিই চাই,ভাড়া বাড়িতে আর কদ্দিন!তবে বাড়িটা শাশুড়ির প্লান মাফিক হবে না,হবে সুস্মিতার মাসতুতো দাদার প্লানে- বড় আর্কিটেক্ট।কানাঘুষোয়ে জানতে পারলেন সল্টলেকে জায়গা খুঁজছে ওরা।সুস্মিতার বাবাই সব করে দেবেন, তাঁর আদরের একমাত্র মেয়ে ,একমাত্র জামাইয়ের জন্য। 
   মনে মনে ভীষণ দমে গেলেন মণিকুন্তলা, এমন বাড়ি তো তিনি চান নি। চেয়েছিলেন ছেলের নিজের একটা বাড়ি হোক ,তাবলে তার শ্বশুরের টাকায় সেই বাড়ি হবে,এটা মানতে পারেন না যেন।একদিন সুযোগ পেয়ে চেপে ধরেছিলেন ছেলেকে,সব শুনে কিছুটা অসন্তুষ্ট হয় নবনীত ,বলে-‘ব্যাপারটাকে তুমি এভাবে কেন দেখছো মা, ওর বাবা-মারও তো কিছু ইচ্ছা থাকতে পারে নাকি, সুস্মিতা তো ওনাদের একমাত্র মেয়ে,যদি ভালবেসে মেয়েকে কিছু দিতে চান,আমি কি করে আটকাই বলো?’ না, কিছু বলার ছিল না তাঁর,কিই বা বলতেন!আজ যে নিজের মায়ের ইচ্ছার থেকেও,বউএর মা-বাবার ইচ্ছার মুল্য নবনীতের কাছে অনেক বেশি! 
    এই মানসিক যন্ত্রণার সমাধান হবার আগেই নতুন একটা সমস্যা এসে জুটল। নবনীতকে ওদের অফিস থেকে কিসব ট্রেনিঙে ছয়মাসের জন্য জার্মানি পাঠাবে জানা গেল, এই সময়সীমা নাকি প্রয়োজনে আরও বাড়তে পারে।এতদিন তো আর দুটো মহিলার পক্ষে একা থাকা সম্ভব নয়! ঠিক হল ওই সময় সুস্মিতা থাকবে ওর বাপের বাড়িতে ,কারন ওখান থেকে ওর অফিসটা কাছে হয়।কিন্তু মা? সুনিত জানাল  ওর নিজের শরীরই ভালো নয়,এখন ওর পক্ষেও মায়ের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব হবে না।    
   অগত্যা ---।সমাধান করল সুস্মিতাই।বলল-“ মা,তো যেতেই পারতেন আমার সঙ্গে,আমার বাবা-মাও বলেছিলেন।কিন্তু উনি তো আবার সেখানে যাবেন না।দাদার ওখানেও সম্ভব নয়! তাহলে এই ক’মাসের জন্য নাহয় কোন ভালো ওল্ড এজ হোমে----’। সুস্মিতা ইচ্ছা করেই কথা অসমাপ্ত রাখে।নবনীত ভীষণ দোটানায় পড়ে যায়,বলে-‘মাকে শেষপর্যন্ত ওল্ড এজ হোমে রাখব?’ সুস্মিতা ওর অভিমানটা বোঝে, কাছে এসে বলে-‘আহা!চিরদিন তো আর রাখতে বলছি না,----তুমি যতদিন না ফিরছো--- আমাদের নতুন বাড়িটা না শেষ হছে—ততদিন নাহয়---‘। নবনীত কিছু বলতে পারে নি,চুপ করে থেকেছে।   
    শেষপর্যন্ত অবশ্য এই সমাধানই ওকে মেনে নিতে হলো।হাতে সময়ও বেশি ছিল না।খুঁজে খুঁজে শহরের সব থেকে নামকরা ওল্ড এজ হোমেই মায়ের থাকার ব্যাবস্থা করে এলো নবনীত। প্রস্তাবটা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে বসেছিলেন মণিকুন্তলা। হ্যাঁ- না কিচ্ছু বলতে পারেন নি,অবশ্য ছেলে তো তাঁর মতামত চায়নি,সব ব্যাবস্থা করেই জানাতে এসেছে ।গলার মধ্যে কান্নার একটা গোলা ওঠা –নামা করতে থাকে কেবল,কিন্তু তাকে চোখের জল হয়ে নামতে দেননি কিছুতেই।
    বাড়ি ছেড়ে যাবার দিন ট্যাক্সিতে ওঠার সময়ে কেবল ছেলের হাত ধরে বলেছিলেন-‘ আমাকে ফিরিয়ে আনবি তো নবু?’ নবনীত কিছুটা কৈফিয়ত দেবার ঢঙে বলেছিল-‘তুমি যে কি না মা, এত ভেঙে পড়ার কি হলো শুনি? জায়গা দেখা তো হচ্ছেই,খুব তাড়াতাড়ি নতুন বাড়ির কাজ শুরু করবো দেখো।আমি জার্মানি থেকে ফিরে এসেই তোমাকে নিয়ে যাবো মা,কিচ্ছু ভেবো না।’ আবার একটা প্রতিশ্রুতি- বিশ্বাস না রেখে উপায়ই বা কি মনিকুন্তলার! 
                ********
     সেও আজ বছর তিনেক হয়ে গেল বোধহয়।এখন দিন-মাস –বছরের হিসেব আর রাখেন না মণিকুন্তলা। সত্যি এটাই, ফেরা আর হয়নি তাঁর।নবনীত অবশ্য দেশে ফিরেছে ,সেও প্রায় বছর দুয়েক হয়ে গেল। মাঝে মাঝে আসে মায়ের কাছে,মাসের প্রথমে তো টাকা দিতে আসতেই হয়।আসলেই মণিকুন্তলা বলেন-‘কি রে কবে নিয়ে যাবি ,এখানে আর ভাল লাগে না।কতদিন তোদের সবাইকে একসাথে দেখি না বলত!’ 
    নবনীত একথা –সেকথায় প্রতিবারই এড়িয়ে যায়,কাজের অজুহাত দেয়। বাড়ির কথা উঠলেই বলে-‘আরে বাবা,হচ্ছে হচ্ছে।মনের মতো জায়গা পাওয়াই তো মুস্কিল।বাড়ি করা কি আর মুখের কথা মা!’ মুখের কথা যে নয় তা, মনিকুন্তলার চেয়ে বেশি কে জানে!  
   কিন্তু মণিকুন্তলা যেটা জানেন না তা হলো, নবনীতের সল্টলেকে জায়গা বহুদিন আগেই কেনা হয়ে গেছে,বাড়িও প্রায় শেষের পথে।সুস্মিতার সেই আর্কিটেক্ট দাদার প্লান মাফিকই বাড়িটা হচ্ছে-একদম আলট্রা-মডার্ন ডিজাইনের ঝাঁ চকচকে বাড়ি!সেখানে কোথাও নেই তাঁর স্বপ্নের ঠাকুরঘর, সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে খাবার মতো খাবারঘর। আসলে নবনীত কোনদিনই তো বউএর কথার উপর কথা বলেনি,এখনই বা বলে কি করে!তাই শেষপর্যন্ত মেনে নিতে হয়েছে সুস্মিতার কথাই-‘কি দরকার শেষ বয়েসে আর মাকে টানাটানি করার! বেশ ভালই তো আছেন,সমবয়সী মানুষের সাথে আছেন---তাছাড়া মায়ের জন্য তুমি তো কম খরচ করছো না বাপু,’ ঠিক কথা বইকি,সে তো মায়ের কোন অভাব রাখেনি।প্রতিমাসে এতগুলো করে টাকা—কর্তব্যে তো কোন ত্রুটি রাখেনি ও দাদার মতো।নিজেকে নিজেই আজকাল যেন কৈফিয়ত দেয় নবনীত।   
                            ***** 
    আজো এসেছিল নবনীত ,টাকা দিতে। যদিও এই মাসটা শেষ হতে এখনও দিন দুয়েক বাকি আছে।আসলে আগামী সোমবার ওদের সল্টলেকের বাড়ির গৃহপ্রবেশ, ওই সপ্তাহটা খুব ব্যাস্ত থাকবে।তাই তো দুদিন আগেই চলে এসেছে টাকাটা দিয়ে যাবে বলে- যাতে মায়ের কোন অসুবিধা না হয়! 
    সিঁড়ি দিয়ে একেবারে দোতলায় উঠে আসে নবনীত।আগেও অনেক বার এসেছে, ও জানে বারান্দার শেষ মাথার দক্ষিণের ঘরটাই মায়ের ঘর।মনিকুন্তলা বসে ছিলেন বারান্দার ইজিচেয়ারে,কোলের উপর খোলা একটা বই।অবশ্য তিনি বই পড়ছিলেন না,চশমাটা হাতে ধরা।অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলেন অলসভাবে, তাই ছেলেকে দেখতে পেলেন না।    
     শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় মায়ের দিকে চেয়ে নবনীতের কেন জানি মনে হলো, এই মাকে সে চেনেই না। এযেন ওর নয়, অন্য কারো মা!ওর মাও যে একসময়ে খুব সুন্দর কবিতা বলতেন,ছোটবেলায় মায়ের কোলের কাছে শুয়ে ওরা দুভাই কত কবিতা শুনেছে,গল্প শুনেছে মনে পড়ে যায় হঠাৎ। সেই হারিয়ে  যাওয়া বয়সটার মতো মাকেও যেন হারিয়ে ফেলেছে ও। এই কদিনে মায়ের বয়েসটাও বোধহয় অনেক বেড়ে গেছে, চুলগুলো এত সাদা কবে হলো!বার বার হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিচ্ছে মায়ের  চুলগুলো।    
    মনিকুন্তলার হাতে রবীন্দ্রনাথের বই ,কবিতা পড়তে বেশ লাগে তাঁর।দুপুরে ঘুম আসে না,বই পড়েন তাই। আজ পড়তে পড়তে থেমে গেছিলেন ,মনটা কেমন করে ওঠে ছোট ছেলেটার জন্য। বেচারার কবে যে একটা নিজের বাড়ি হবে!কতদিন আর শ্বশুরের বাড়িতে পড়ে থাকবে,নবাবনন্দিনী বউ কি আর ওর ঠিক মতো যত্ন করে –কে জানে!কতদিন যে ছেলেটাকে নিজের হাতে রেঁধে খাওয়ান নি-একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক চিরে।কবিতার বইটা তুলে নিয়ে নিজের মনে আবার পড়তে থাকেন তিনি। কবিতার প্রতিটা শব্দ যেন ধাক্কা মারতে থাকে নবনীতকে,ঠেলতে থাকে পিছন দিকে।     
   না,অসম্ভব! এই মায়ের সামনে আজ কিছুতেই যেতে পারবে না নবনীত। আজ মাকে মিথ্যাটা ও  কিছুতেই বলতে পারবে না,কিন্তু সত্যি বলার উপায়ও কি আছে! মা তো জানেই না ওর আসার  কথা,এইসময়ে তো ও আসে না সাধারণত।সেই ভালো, অফিসেই আজ টাকাটা দিয়ে যাবে বরং ,বলে যাবে তাড়া ছিল বলে দেখা করেনি।লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নামতে থাকে নবনীত।ওর নামার তালে তালে বুকে এসে ধাক্কা মারছিল মায়ের পড়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইনগুলো ----  
                  ‘তাহারে জড়ায়ে ঘিরে
                       ভরিয়া তুলিবে ধীরে
                         জীবনের কদিনের কাঁদা আর হাসা
                         ধন নয়,মান নয় একটুকু বাসা
                                      করেছিনু আশা।’
debghoshmousumi@gmail.com
কলকাতা



No comments:

Post a Comment