1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

ভূতের আখড়া

ছবি : ইন্টারনেট 

ভূতের আখড়া

সন্দীপ ঘোষ

   ঘুটঘুটে অন্ধকার, নিশুতি রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকের মাঝে হঠাত্ কিসের যেন ছলাত্ ছলাত্ আওয়াজ ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেহের প্রতিটি লোমকূপকে খাড়া করে তোলে | জানলার বাইরে খড়খড়িয়ে এপাশ থেকে ওপাশে চলে যাওয়াটা পিপুলের খুব একটা সুখকর মনে হোল না |

          দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র পিপুল বাবার রিজেক্টেড বুলেট প্রুফ জ্যাকেটটা গায়ে চাপিয়ে আর আত্মরক্ষার সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ে | গন্তব্য তার ভূতের আখড়া | এই ভূতগুলোর শায়েস্তা না করলেই নয় | গ্রামের লোকেদের একেবারে অতিষ্ঠ করে তুলেছে | কিছুদিন আগে মেরে ফেলেছে নিতাই রুইদাস নামের এক জেলেকে | তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে ঐ ভূতের আখড়ায় |

    এই ভূতের আখড়াটা পিপুলের জেঠুর বাড়ির পিছনে, প্রায় চারফুট উচ্চতার পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে পড়া পাঁচিলের ভিতরে | ঘন ঝোপঝাড়ে ভর্তি | বেশ কিছু ফলের গাছ আছে | ফল খেতে গ্রামের ছেলেপিলেরা রোজ হানা দিত ওখানে | নিতাই মারা যাওয়ার পর ওখানে ভয়ে আর কেউ না যাওয়ায় জায়গাটা ভীষণ ভয়ংকর হয়ে উঠেছে | এত ঘন যে, দিনের বেলাতেই সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না | এই কুচকুচে কালো অন্ধকারে পিপুল যে কি করবে কে জানে !! খুটখাট,খুসখুস, ফড়ফড় শব্দ শুনতে শুনতে সে স্থির-নিশ্চল হয়ে পড়ে | সামনে ফুট তিরিশেক দুরে কালোর উপরে যেন ভাসমান দুটো হলুদ বর্ণের চোখ দেখে ঘাবড়ে যায় পিপুল | চারপাশ থেকে মৃদু গর্জন তার মস্তিস্ককে সতর্ক করে তোলে | যেদিকে তাকায় ঐ হলুদ বর্ণের চোখ | কি ভয়ংকর রাক্ষুসে চোখগুলো তার দিকে  এগিয়ে আসছে | যেন শিকার ধরতে | পিপুল টর্চ জ্বালতেই মুহূৰ্তের মধ্যে  গাছের উপর থেকে  ঝাপিয়ে পড়ে তার ওপর | অন্ধকারের ভূত  টর্চ কেড়ে  নেওয়ার চেষ্টা করে | পিপুল জ্বলন্ত টর্চের আভায় সামনে ঘন ঝোপ আর বড় কয়েকটা গাছ ছাড়া কিছুই দেখতে পেল না | সে ক্ষিপ্র বেগে ঘুরে দাঁড়িয়ে সামনে কিছু একটা আছে ভেবে টর্চটা দিয়ে জোরসে আঘাত করে | কোত্ শব্দে কিছু একটা মাটিতে পড়ে গেল মনে হোল | ধাক্কায় জ্বলন্ত টর্চটাও মাটিতে পড়ে গেছে | তুলে নিতে যায় পিপুল | বাধা পায় হলুদ চোখওয়ালা ভূতের কাছে | সরু মতো কিছুর ধাক্কায় পিপুল উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে যায় | ভূতেরা ভয়ংকর শব্দ করে উল্লাসে মেতে ওঠে | পিপুল উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই খুব জোরে তার কোমরে লাঠির বাড়ি পড়ল | আবার পড়ে যায় সে|  বোধহয় তার প্রাণটা কেড়ে নেবে ওরা | বাঁচার চেষ্টা করতেই হবে | হাল ছেড়ে দেবার ছেলে পিপুল নয় | হাতটা চালান করে দেয় প্যান্টের সঙ্গে গুঁজে রাখা রিভলবারের ওপর | শোওয়া অবস্থায় ত্বরিত্ গতিতে ফটাফট এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে | গুলির শব্দে নিঝুম-নিস্তব্ধ পরিবেশ কেমন যেন বেসামাল হয়ে পড়ে | পাখির কান্না আর চিত্কারে ভরে ওঠে ভুতের আখড়া | কয়েক সেকেন্ড পর শান্ত হয় | উঠে দাঁড়িয়ে পিপুল মাটিতে পড়ে থাকা জলন্ত টর্চ হাতে তুলে নেয় | টর্চের আলো ফেলে সামনে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে | পড়ে আছে দু'দুটো জ্যান্ত ভূত------ এগিয়ে যায় ওদের দিকে | ওরা উঠে পালাবার চেষ্টা করতেই পিপুল একটা ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করে হুমকি দেয় ;   

------" পালাবার চেষ্টা করলেই মাথার খুলি উড়িয়ে দেব |"

       ভূতগুলোর মুখে টর্চের আলো ফেলতেই তাজ্জব হয়ে যায় পিপুল | সে হতবাক… সারা দেহ শিরশির করে ওঠে তার | কিছুক্ষণ পর গর্জে ওঠে পিপুল ;

------" ডিস্কো তুই ??? আর তোর সঙ্গে ওটা কে ?" ডিস্কো আর তার সঙ্গী কাঁপতে থাকে | পিপুল ধমকে ওঠে ;

------"বল বলছি, না বললে ট্রিগার টিপে দেব | মরে পড়ে থাকবি | কাকপক্ষীও টের পাবে না |"

ওরা নিরুত্তর | পিপুলের বাবা বর্তমানে স্থানীয় থানার চার্জে আছেন | নাইট ডিউটি | একটু ভেবে নিয়ে বাবাকে ফোনে ধরায় পিপুল | থানা থেকে ঘটনাস্থল খুব কাছেই হওয়ায় খুব দ্রুত পুলিস নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন তার বাবা  | ডিস্কো ও তার সঙ্গীকে গ্রেফতার করে | পরে একে একে সবকটা ভূত ধরা পড়ে পুলিশের জালে |

জানা যায় পিপুলের জেঠু দীর্ঘদিন গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কর্মসূত্রে শহরে বসবাস করায় তারা নিয়মিত গ্রামের বাড়ি দেখভাল করেন না | সেই সুযোগে নেশা করার ঠেক বানানোর জন্য এই জায়গাটি তারা বেছে নেয় | ভূত সেজে নাটক করে ভয় দেখিয়ে প্রাণ হরণ করে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল গ্রামের মানুষকে | সাহসী পিপুল তার কাছে থাকা নকল অস্ত্র রিভলবিং এয়ার গান দিয়ে আতঙ্কমুক্ত  করল গ্রামবাসীকে |

sghoshkabi@gmail.com
বাঁকুড়া

No comments:

Post a Comment