1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

যোজনগন্ধা

ছবি : ইন্টারনেট 

যোজনগন্ধা

শাশ্বতী মুন্সী

    " নাহ.. ব্রাহ্মণ বংশ ছাড়া অন্য জাতের মেয়েকে পুত্রবধূ রূপে কিছুতেই স্বীকার করবেন না! অন্ধ সংস্কারাছন্ন মানুষ দুটোকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে নতুন যুগের আলোয় আনতে ব্যর্থ হলাম "--- হতাশার স্বরে বললো প্রিয়ম |

ব্রাহ্মণ বংশে না জন্মানোতে তার অপরাধটা কোথায় ? আজ আর এই প্রশ্ন তুলে গুরুজনদের প্রতি অশ্রদ্ধার অনুপাত বাড়ানোকে সঙ্গত মনে করে নি শ্রমণা |

" ওনারা যা চাইছেন তাতে রাজি হয়ে যাও, বাবা মায়ের অমতে বিয়ে করে আমরা হয়তো সুখী হতে পারবো না.. "

" মানে! কি বলতে চাইছো তুমি? "

সূর্যাস্তের নরম কমলা আলো যেন নদীর জলে  আবির ঢেলে দিচ্ছে | বালিয়াড়িতে হাঁটুর উপর মুখ রেখে বসে মৃদু স্বরে শ্রমণা বলে,

" সব প্রেমের সম্পর্ক বিয়ে তে পরিণতি পায় না, আমাদেরটা নাহয় তেমনই হলো..!"

" আমায় একটা অন্য মেয়ের সাথে আজীবন বিয়ের বন্ধনের অভিনয় করতে বলছো.. তুমি কি সত্যি ভালো বেসেছো আমায়? "--- শ্রমণার দু কাঁধ ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে ব্যথিত কণ্ঠে বলে প্রিয়ম |

 "সাড়ে চার বছরের বেশি মেলামেশা করে তোমার মনে এই প্রশ্ন জাগছে? "

 " জাগাটা কি খুব অস্বাভাবিক? "

 " হ্যাঁ, কারণ আমার বাবা প্রেমের বিয়ের বিপক্ষে জেনেও আমাদের সম্পর্ককে মাঝপথে থামিয়ে দিই নি.. তোমায় ভীষণ ভাবে ভালো বেসেছি বলেই ছেড়ে যেতে পারি নি.. "

" তাহলে কেন বেঁধে রাখছো না জোর করে? "

 পছন্দের জীবন সঙ্গিনীর দূরে চলে যাবার সমূহ সম্ভাবনায় অবুঝ হচ্ছে প্রিয়ম |

 " আমার ভালোবাসা যে শর্তহীন প্রিয়ম.. বাবা মায়ের থেকে ছেলেকে আলাদা করার অভিশাপ নিয়ে সুখের ঘর বাঁধতে পারবো না আমি.. "--- দৃপ্ত স্বরে বলে |

" আমাদের বাবা মায়ের চাওয়াকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলছো এবং বাধ্য মেয়ের মতো অভিভাবকদের পছন্দ বিয়ে করবে তুমি!"

সজল নয়নে কিয়ৎক্ষণ প্রিয়মের মুখপানে তাকিয়ে থাকে | মন বলে, কবেই তো স্বামীর জায়গায় তোমাকে বসিয়েছি! কিন্তু মুখ বললো, ভবিষ্যতই বলবে সেকথা..

  সন্ধ্যে গাঢ় হয়ে আসছে, আবির মুছে নদীর জলে কালি মিশে যায় | শ্রমণা তাড়া দেয়,

  চলো ওঠা যাক, এরপরে খেয়া বন্ধ হয়ে যাবে |


--------

       ইতিহাসে মাস্টার্স করে বি.এড পাস করার পরে স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা দিয়ে বারাসাতের একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় চাকরি করছে শ্রমণা | নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হবার দরুন নিজের পায়ে দাঁড়ানোই তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল | বাবার একার উপার্জনে সংসার চালানোর দায়িত্ব থেকে সানন্দে অব্যাহতি দিতে কাঁধে নিয়েছে আর্থিক দায়ভার |

 স্বাবলম্বী হবার পরে শ্রমণার বাবা-মা চেয়েছিলেন মেয়েকে সংসারী করতে | দু'একটা সম্বন্ধ দেখেও  ছিলেন | কিন্তু মেয়েকে সে কথা জানাতে শ্রমণার স্পষ্ট জবাব,

 বিয়ে, বর, সন্তান... এই সরলরেখায় জীবন কাটাবো না আমি | তবে একটা বাচ্চা চাই, যাকে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে লালন পালন করবো, ওর গলায় আধো আধো  মা ডাক অন্য রকমের পূর্ণতা দেবে আমায়.. অনন্য সেই আনন্দ!

 ভারতীয় সমাজে একলা মায়ের জীবন যাপন এখনো তেমন চলতি প্রথা নয় | তাই মেয়ের এ হেনো মনোভাবে বাবা তপেনবাবু ও মা প্রমীলা দেবী স্তম্ভিত হয়ে গেছিলেন! বিয়ে না করে মা হবি?

 দু'জোড়া কুঞ্চিত ভ্রু'র দিকে তাকিয়ে বলেছিল,

 " এতে অবাক হবার কিছু নেই মা..বৈবাহিক সম্পর্ক না গিয়ে মাতৃত্বের স্বাদ পেতে বিদেশে এর প্রচলন হয়েছে বহু দিন | এমনকি রয়েছে 'সিঙ্গেল মম'স ক্লাবও | গত ২০ বছর হৈ হৈ করে বেড়েছে একক মায়ের সংখ্যা | এখন তা এ দেশেও সম্ভব | ধীরে ধীরে গ্রহণযোগ্যতাও তৈরী হচ্ছে..  |

 "তাহলে তুই কি সন্তান দত্তক নিতে চাস? "--- প্রশ্ন করলেন তপেন বাবু |

" না, নিজের গর্ভজাত সন্তানের মা হবো আর সেটাও এখন সম্ভব |

এবার যুগপৎ চমকিত ও বিস্মিত হলেন তাঁরা |

 কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণের প্রক্রিয়ার ব্যাপারটা বিস্তারে জানাতে রাগত স্বরভঙ্গিতে প্রমীলাদেবী বলেন,

" চেনা নেই, জানা নেই একজন অপরিচিত পুরুষের বাচ্চাকে জন্ম দিয়ে মা হবি তুই? "---

 "বিয়ে করে মা হতে গেলে যে সেই পুরুষটির আদ্যোপান্ত চিনে জেনে থাকি আমরা, এমন তো নয় বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামী নামক পুরুষটি আমাদের কাছে অনেকাংশে অপরিচিত থাকে.. আর এক্ষেত্রে আমি কার ঔরসজাত সন্তানের মা হচ্ছি সেটা জানাটা বেআইনি এবং জানতে চাইও না..আমার গর্ভজাত সন্তান হবে একান্ত আমার, যার ওপর আর কারো অধিকার থাকবে না...

 বিয়ে ব্যাপারটাতে মেয়ের যথেষ্ট আপত্তি বুঝে জোর করেন নি ওনারা | এবং ' মা ' ডাক শোনার প্রবল ইচ্ছার পথে বাধা দেওয়ার যুৎসই কারণ না পেয়ে একপ্রকার সায় দিয়েছিলেন | বলা ভালো কর্মরতা, সুউপায়ী মেয়ের অটল জেদের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন |

  তাদের অন্তিম সাক্ষাতের দিনটি ছিল প্রিয়মের জীবনের পরম সুখপ্রাপ্তির | তারপর দুজনের যোগাযোগের সব রাস্তা বিচ্ছিন্ন হয়েছে শ্রমণার  তরফ থেকে | বন্ধ করে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার একাউন্ট, এমনকি বদলেছে মোবাইল নাম্বার ও হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার | প্ৰিয়তম মানুষটির ত্রিসীমানা থেকে নিজে সরে এসেছে বিশ মণ ভারী পাথর বুকে চেপে | যোগাযোগের ক্ষীণ সূত্র যে তার মনকে দুর্বল করে দিতে পারে..

 শ্রমণার সাথে সম্পর্কের কথা বাড়িতে প্রথমবার জানাতে একবাক্যে নাকচ করে দিয়েছিলেন ওর বাবা-মা | নিরুপায় প্রিয়ম তখন বলেছিল,

 " দুই বাড়ির ভিন্ন মত যখন আমাদের একসাথে থাকার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে, তখন একটাই পথ খোলা আছে, পালিয়ে বিয়ে করে আলাদা সংসার করবো.. "

 " পালিয়ে বিয়ে! আর তোমার চাকরি? "--- স্বরে প্রশ্নবোধক ভঙ্গিমা |

 " ওটা কোনো ব্যাপার নয়, আমার যা কোয়ালিফিকেশন তাতে জব ইন্টারভিউ দিয়ে ভিনরাজ্যে চাকরি পেতে অসুবিধা হবে না, বরং স্যালারি এখানের চেয়ে বেশি হতে পারে.. "

" হুম, তা বুঝলাম কিন্তু কষ্ট করে লেখাপড়া শিখে নিজের যোগ্যতায় পাওয়া সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা ছেড়ে তোমার সাথে যাই কি করে বলো! তাছাড়া আমরা দুজনেই বাবা মায়ে দের একমাত্র সন্তান, বয়স কালে ওনাদের দেখভাল করাও যে অন্যতম কর্তব্য..

 মূলত এই দুটি কারণে প্রিয়মের প্রস্তাবে রাজি হয়ে সুখের নীড় গড়তে মনের সম্মতি পায় নি সে |

  দেশের সর্বোচ্চ আদালত একক মাতৃত্বকে সম্মান দেয় অথচ অবিবাহিত একলা মাকে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা একটু দূরে ঠেলে রাখে | তাকে ঘিরে তৈরী হয় আশেপাশের লোকের কল্পনা প্রসূত ধ্যান ধারণা | যদিও লোকের কটূক্তি, অশালীন মন্তব্যের পরোয়া কোনোদিন করে না শ্রমণা | অকারণ পলায়ন প্রবৃত্তি তার স্বভাব বিরুদ্ধ | কিন্তু সামাজিকতার ভদ্র মুখোশধারী লোকের বাঁকা চাহনির ব্যাঙ্গাত্মক প্রশ্ন যাতে, আগত সন্তানের শিশু মনে নানা জিজ্ঞাসা উঁকি দিতে না পারে,  তাই এখানকার ভাড়া বাড়ির বাস উঠিয়ে সপরিবারে উত্তরবঙ্গে চলে যায় সে |

 সরকারি চাকরিতে কোনো না কোনো সময়ে বদলির অর্ডার আসবেই | ব্যক্তিগত তাগিদে নির্দেশ আসার আগেই বদলি নিয়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বেষ্টিত পরিচিত মহল ছেড়ে কোচবিহারের একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজে জয়েন করে | এবং স্কুল কোয়ার্টারে বসবাস করতে লাগে | সন্তান জন্ম দেওয়া ইস্তক বড় করা অবধি কোনো অবাঞ্ছিত পরিবেশে না রাখতে বদ্ধপরিকর শ্রমণার মাতৃসত্তা |

--------

 " দ্যাখ মনা( শ্রমণার ডাকনাম), রজনীগন্ধা ফুলের গাছে বড় হয়েছে কিন্তু এখনো ফুল ধরলো না? "

 কোয়ার্টার সংলগ্ন জমিতে বাগান করেছে প্রমীলাদেবী | নানা রকম ফুল ও কিচেন সবজির | পরিচর্যার দায়িত্ব সকালে তপেনবাবুর এবং বিকেলে তাঁর |

 বিশেষ অনুরোধে একতলা সেপারেট কোয়ার্টার পেয়েছে শ্রমণা | আগাম মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছে এখন | বাগান লাগোয়া বারান্দায় বেতের সোফায় বসে নিষ্পলক আনমনা দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল রজনীগন্ধার | মায়ের কথায় চকিতে ভাবনা অতীতমুখী হলো | মনের পর্দায় ভেসে উঠলো স্বপ্নাবেশ মাখা এক দৃশ্য...

   প্রেমপর্ব চলাকালীন খড়দার একটি পার্কে প্রায়শ দেখা করতো তারা | তেমন একটি শীতের দুপুরে পলাশ গাছের নিচে ঘাসের গালিচায় বসে প্রেমালাপে মগ্ন প্রণয়ী যুগলে | গাছগাছালি ঘেরা পরিবেশে  ভালোলাগার অনলস মুহূর্ত যাপন করতো সুখের আবর্তে | শ্রমণার কোলে মাথা রেখে শুয়ে ওর ডানহাতের কোমল তালু দুই করতলবদ্ধ করেছিল | রঙিন চোখে ভবিষ্যত স্বপ্নের জাল বুনতে বুনতে প্রিয়ম বলেছিল,

 " আমাদের সন্তান সে ছেলে হোক বা মেয়ে তার এমন  নাম দেবো, যা সচরাচর শোনা যায় না, বেশ ইউনিক টাইপের..

 " তাই বুঝি! তা সেরকম নাম কিছু ভেবেছো? "--- সলজ্জ হাসি শ্রমণার ওষ্ঠদ্বয়ে |

" হুম, ভেবেছি বৈকি.. মেয়ে হলে যোজনগন্ধা আর ছেলে হলে দুত্যিমান "---  উৎসুক স্বরে বলে |

 " বাহ্..নাম দুটো তো ভারী সুন্দর.. "

 " অবশ্য মেয়ের নাম নির্বাচনের পশ্চাতে তোমার পছন্দের যোগসূত্র আছে.. চোখে-মুখে দুষ্টুমির আভাস |

 শ্রমণার প্রশ্নসূচক চাহনির প্রত্যুত্তরে বলে,

 " মিলন ঋতুর শেষে পুরুষ হরিনের পেটের কাছ নাভি থেকে সুগন্ধি গ্রন্থিটি খসে পড়ে যায় | আমাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু আলাদা.. মিলনের পরে আমাদের ভালোবাসার ফসল রূপে ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতিকার গায়ের সুমিষ্ট আতর গন্ধ 'কস্তুরী 'র মতো যোজন দূর থেকে পাবো আমি... সে পৃথিবীর যেখানেই থাকি.. কেননা, বহু গুণসম্পন্ন প্রাণীজ সুগন্ধির ঘ্রাণ প্রকৃত অর্থেই যোজনগন্ধা | সর্বোপরি তোমার সবচেয়ে পছন্দের ফুলের নামের অন্তমিল থাকবে ওর নামে..."

   বিচ্ছেদের মাস দেড়েক আগে রজনীগন্ধা ফুলের একটি চারাগাছ শ্রমণার জন্মদিনে উপহার  দিয়েছিলো প্রিয়ম | সেই গাছটির হাল্কা সবুজ শরীর বেড়ে উঠে বাগানের শোভা বর্ধন করছে |

 শিক্ষিত, সংস্কারমুক্ত, আধুনিক মনস্ক প্রিয়মের বাবা-মা কিন্তু প্রাচীন পন্থী মনোভাবে বিশ্বাসী | বংশমর্যাদার অপলকা ধ্বজা তাঁরা এ যুগেও মহাদর্পে ওড়ায় | মা কুন্তলা দেবীর বদ্ধমূল ধারণা, বেজাতের মেয়ের রক্তের সাথে ব্রাহ্মণ বংশের রক্ত মিশলে রক্তের শুদ্ধতা থাকবে না, বংশ অধোগামী হবে | প্রিয়মের বাবা অখিলবাবুও একই ধারণা পোষণ করেন | কায়স্থের মেয়ের গর্ভের সন্তান চ্যাটার্জী বাড়ির বংশগৌরবকে কালিমা লিপ্ত করবে, জীবিতকালে তা কখনোই হতে দেবেন না |

   বিয়ের পরপরই কোম্পানির প্রজেক্টের কাজে তিন বছরের জন্য সস্ত্রীক বিদেশে পাড়ি দিয়েছে প্রিয়ম | বিয়ের দু'বছর পেরিয়েও সন্তান আসে নি তাদের | ওদিকে নাতির মুখ দেখার তীব্র বাসনাজনিত মায়ের বারংবার তাগাদা বিড়ম্বনায় ফেলেছে | প্রিয়মের সমস্ত টেস্ট রিপোর্ট নরমাল | কিন্তু সমস্যা আছে আসল জায়গায় | মা-বাবার পছন্দের ব্রাহ্মণকন্যার জরায়ু সন্তানধারণে অক্ষম | তাতে অবশ্য বিশাখাকে দোষ দেয় না | বংশ গরিমার ঠুনকো অহংবোধ হয়তো আজীবন পিতৃত্বের স্বাদ অনুধাবনে বঞ্চিত রাখবে তাকে |

--------

   সেদিন এপারে ফেরার সময় নৌকার ছই-য়ের ভেতর বসে প্রেয়সীর শেষ ইচ্ছাপূরণের অঙ্গীকার করেছিল প্রিয়ম | চিরবিরহের বেদনাতুর দুটি হৃদয় তৃপ্তি খুঁজে নিয়েছিল পরস্পরের শরীরী অবগাহনে | অজান্তেই প্রেয়সীর গর্ভে রোপন করেছিল নিজের বীজ | মিলন রাতের সেই চিহ্ন শ্রমণার ভবিষ্যত জীবনের গতিপথকে প্রচলিত প্রথার বিপরীতে ঘুরিয়ে দেয় | সিঙ্গেল মাদারের কথা জানাতে গিয়ে এটুকু সত্য গোপন করেছিল বাবা মায়ের কাছে |

 ছোট্ট শিশুর আগমনে পরিবারে খুশির বাতাবরণ | নতুন সদস্যকে নিয়ে সারাদিন কেটে যায় শ্রমণার বাবা-মায়ের | চিন্তনে এসেছে বিস্তর পরিবর্তন | সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে মেয়ের মাথায় হাত রেখে অকুন্ঠ আশীর্বাদ করে তপেনবাবু বলেছেন,

  তোর সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে ঘোলাটে কাঁচের চশমা পাল্টে জীবনকে দেখতে শিখলাম ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গিতে | গর্ভজাত সন্তানকে একার অভিভাবকত্বে মানুষ করায় নেই অস্বচ্ছতা, ভ্রষ্টাচারিতা, আছে নির্ভীক মননের লড়াকু প্রবণতা |

 বছর দুয়েক আগে শ্রমণা জন্ম দেয় একটি ফুটফুটে বাচ্চার | কোলে আসে কাঙ্খিত কন্যা সন্তান | নাম রেখেছে " যোজনগন্ধা " | ওকে ঘিরে তৈরী হয়েছে নিজস্ব এক দুনিয়া |

 সবচেয়ে আশ্চর্য্যের ব্যাপার সেদিনই প্রথম রজনীগন্ধার গাছে ফুল ফোটে!

 স্বহস্তে গাঁথা অদর্শনের প্রাচীরের ওপারে থাকা মানুষটির অদ্যাবধি কোনো খোঁজ রাখে নি শ্রমণা | কিন্তু চোখের আড়াল করলেও সর্বাঙ্গ জুড়ে অনুভূত হয় প্রিয়মের অবাধ উপস্থিতি | মোবাইলের  সিক্রেট ফাইলে সযত্নে রক্ষিত একত্রে মধুর সময় যাপনের অ্যালবাম বন্দি ছবিগুলোই ওর বিগত জীবনের মূল্যবান স্মৃতি-সম্বল |

 বাৎসল্যে সিঞ্চিত মাতৃহৃদয়ের অন্তঃস্থলে চোরাস্রোতের ঘূর্ণিতে অহরহ ঘুরপাক খায় শুধু একটি প্রশ্ন ---

  " সার্থকনামা হবে কি মেয়ের পিতৃদত্ত নামকরণ? "

saswati.munshi1987@gmail.com
হুগলী

No comments:

Post a Comment