1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

বৃষ্টিভেজা স্মৃতির পাতা

ছবি : ইন্টারনেট 

বৃষ্টিভেজা স্মৃতির পাতা 

প্রাণেশ মণ্ডল

    ঘরবন্দী জীবনে এবছরের বর্ষা দেখার সাধ শুধু ঘরের একচিলতে জানালা কে সম্বল করেই মেটাতে হচ্ছে। ঘন কালো মেঘের আনাগোনা, গুরু গম্ভীর গর্জন আর সোঁদা মাটির ঘ্রাণ চঞ্চল করে তোলে আমার অবুঝ মনকে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়ি শ্রাবণ ধারার প্রেমে...মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি তার ভরা যৌবনের অপরূপ রূপের দিকে।

ঝিরি ঝিরি অঝোর ধারায় যখন ঝাপসা সব মাঠঘাট, দূরে গাছের সারি আর সবুজ ঘেরা পথ...মহানন্দে ছুটে বেড়ায় কচিকাঁচার দল, যেন ওরা পথ ভোলা! আনমনা মনে তখন ভেসে ওঠে ফেলে আসা আমার সেই ছেলেবেলা। 

স্মৃতির পাতার ভিড়ে খুঁজে পাই ধুলোমাখা কত কথা! বৃষ্টিস্নাত সকাল যেন চুপি চুপি দিয়ে যেত অঘোষিত ছুটির বার্তা। মুখভার করে থাকত আকাশ, তবু স্কুলে যেতে ভুলতাম না। গ্রামের মেঠো পথ ধরে দুই কিমি পায়ে হেঁটে যখন স্কুলে পৌঁছতাম, তখন  চোখে পড়ত এক অসাধারণ শিল্পের ছটা। আধভেজা লাল-সাদা পোশাকে ধূসর-বাদামি ফোঁটা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা সুনিপুণ নক্সা, জানান দিত পায়ের তলায় কর্দমাক্ত হাওয়াই চপ্পলের উজ্জ্বল উপস্থিতির কথা। ভিজে পোশাকে বেশিক্ষণ ক্লাস করা অসম্ভব, তাই দু-এক পিরিয়ডের পর যথারীতি বাজত ছুটির ঘন্টা। ছাতা থাকলেও কেউ খুলতাম না, রাস্তার ধারে অনাদরে গজিয়ে ওঠা কচুপাতা ছিড়ে নিয়ে সবাই মাথা ঢাকতাম। বইখাতা গুলোকে আগেই পলিথিন প্যাকেটে পুরে ফেলতাম। তারপর আর একপ্রস্ত বৃষ্টি গায়ে মেখে,  রাস্তায় জমে থাকা জলে লাফ দিয়ে, ছিটকে যাওয়া কাদাজলে অন্যদের আপাদমস্তক স্নান করিয়ে যখন ঘরে ফিরতাম তখন দেখতাম অন্ধকার নেমে এসেছে। 

সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ সেরে এক অদ্ভুত ভৌতিক রূপে বাড়ির লোকেদের চোখে ধরা দিতাম। তাঁরা অনেক কষ্টে আমাকে সনাক্ত করতে পারলেও বুঝে উঠতে পারতেন না-- আমি পড়তে না চাষ করতে গিয়েছিলাম! 

বর্ষণ মুখর দিনের রোম্যান্টিক সুধা আকন্ঠ পান করার পরিণতি পরদিন সর্দিকাশি সহকারে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। তাই কপালে জুটতো অনিচ্ছা সত্ত্বেও আরও দিনসাতেকের ছুটি, সাথে বকুনি। তখন অবশ্য হাত পা গুটিয়ে ভদ্র সভ্য হয়ে ঘরে বসে থাকাটা ছিল আরও বড় শাস্তি!

drmondalpranesh@gmail.com
পূর্ব বর্ধমান

No comments:

Post a Comment