1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

সোফা

 

ছবি  : ইন্টারনেট

সোফা

অর্ণব চ্যাটার্জী

'হ্যালো, আমি কি চঞ্চল সাহার সাথে কথা বলচি? 

' হ্যাঁ, বলুন।' ওপাশ থেকে জলদগম্ভীর স্বর ভেসে আসে।

'ও এল এক্স এ দেখলাম আপনার সোফাটা। সত্যি বলতে কি এত ভালো সোফা কাম বেড এই দামে...মানে বলতে চাইছি যেরকম দেখাচ্ছে সেরকমই তো,?'

'আমি মিথ্যার বেসাতি করি না।' ফের সেই কন্ঠ ঝাঁঝিয়ে ওঠে।' ঠিকানা তো দেওয়াই আছে। নিজে দেখে নিন।'

'না, না। তা বলতে চাইনি। তো কাল আসব কি?'

' আসুন, তবে একটা কথা। একবার নিয়ে গেলে কিন্তু আর ফেরত হবে না। যা নেবার দেখেশুনে নেবেন। আর হ্যাঁ বুঝতেই পারছেন অনেকে ফোন করেছে। তাই ক্যাশ নিয়ে আসবেন যাতে পছন্দ হলে সাথে সাথেই নিয়ে যেতে পারেন।'

শেষ কথাটা শুনে বিপিনবাবু একটু দমে যান। এ আবার কেমন কথা? নেবার আগেই ফেরতের গল্প! লোকে কি ওটাকে নিয়ে ফেরত দিতে চেয়েছে? আর লোকটা একটু তাড়াহুড়ো করছে কি?

যাই হোক, দেখতে আর অসুবিধা কোথায়? কাল তো ছুটিই আছে। আর  মেট্রোয় গেলে শোভাবাজার কি এমন দূর?

এমনিতে একটা ভালো সোফা কম বেড কেনার ইচ্ছা বিপিনবাবুর অনেকদিনের। একটাই বিছানা। ফলে লোকজন বাড়িতে রাত্রিবাস করলে শুতে দেবার অসুবিধা হয় । তার উপর ড্রইং রুমটা হালে সাজানো হয়েছে। সেখানে এই পুরানো ডিভানটা বেমানান। আরতি তো বলেই যাচ্ছে একটা ভালো সোফার কথা। কিন্তু দাম দেখে প্রতিবারই বিপিনবাবুকে পিছিয়ে আসতে হয়। ও এল এক্সে চঞ্চলবাবুর বিজ্ঞাপনটা দেখেই তাই বিপিনবাবু যোগাযোগ করেন। সোফার ছবিটা দেখেই উনার পছন্দ হয়ে যায়। বাহ! এটাই তো চাইছিলেন।আরতির ও খুব মনে ধরে ওটা। আর দামটাও আশ্চর্যজনকভাবে কম। 

তা পরদিনই বিপিনবাবু ওখানে গেলেন। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের উল্টোদিকে একটা গলির মধ্যে কিছুটা এগোলেই বাড়িটা। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় ব্রিটিশ আমলে তৈরী। সেই উঁচু উঁচু করিবড়গা। সামনে বড় দালান।বেল বাজাতেই এক বয়স্ক চাকর দরজা খুলে বিপিনবাবুকে বসতে বলল।

বিপিনবাবু অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন বাইরেটা এমন পুরনো ধাঁচের হলেও ঘরের ভেতরটা বেশ ঝাঁ চকচকে। ফার্ণিচারগুলো সব আধুনিক মানের।টাইলসের মেঝে, মসৃণ দেওয়াল থেকে ঝুলছে কিছু পেন্টিং। পরিচ্ছন্নতার ছাপ সর্বত্র। বিপিনবাবু মনে মনে চঞ্চলবাবুর রুচির তারিফ করছিলেন।

একটু পরে একজন মাঝবয়সী লোক ঘরে ঢুকলেন। বেশ শক্তপোক্ত চেহারা, মাথার কাঁচাপাকা চুল ব্যাকব্রাশ করা। চোখে মেটাল ফ্রেমের চশমা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বিপিনবাবুকে জরিপ করে নমস্কার জানালেন।

প্রতিনমস্কার করে বিপিনবাবু নিজের পরিচয় দিলেন। ভদ্রলোক কিন্তু বসলেন না। দাঁড়িয়েই বললেন ' চলুন, দেখে আসবেন সোফাটা।'

সোফা কাম বেডটা ছবিতে যেমন দেখা গিয়েছিল তেমনই। বিপিনবাবু তাও ভালো করে আগাপাশতলা চেক করলেন। নাহ! কোনো ছেঁড়া ফাটা কিছুই নেই। একদম নতুনের মত ঝকঝকে। দেখে কে বলবে এটা নতুন নয়?

বিপজনবাবু অবাক হয়ে ভাবছিলেন এত ভালো জিনিস এত কমে চঞ্চলবাবু ছেড়ে দিচ্ছেন কি করে? 

ভদ্রলোক বোধয় মনের কথা পড়তে পারেন। উনি বিপিনবাবুর দিকে খানিক তাকিয়ে বললেন ' ভাবছেন তো এত ভালো জিনিস এত কমে ছাড়ছি কেন? আসলে কি জানেন পুরানো স্মৃতি যত তাড়াতাড়ি মুছে ফেলা যায়, ততই ভালো। সে যাই হোক, দেখে তো মনে হয় আপনার পছন্দই হয়েছে। তা টাকা নিয়ে এসছেন তো?'

বিপিনবাবু বুঝলেন চঞ্চলবাবু নাম্নী এই ভদ্রলোক কোনো ভনিতা না করে সোজাসাপ্টা কথা বলতে ভালোবাসেন। তা বিপিনবাবু টাকা নিয়েই এসেছিলেন। ফলে সোফাটা নিয়েই উনি ঘরে ফিরলেন।

এত সুন্দর সোফা কাম বেড দেখে আরতিও খুব খুশী।

বলেই ফেলল ' খুব সুন্দর হয়েছে জিনিসটা। যাক! এবার বাড়িতে লোকজন থাকলেও আর চিন্তা নেই।'

সোফাটা পাতার পর ড্রইংরুমের ভোল বদলে গেছে।

বিপিনবাবু শুধু নয়, আরতিরও বিশ্বাস হচ্ছে না এই দামে এত ভালো একটা সোফা পাওয়া গেছে বলে।


ঝামেলাটা শুরু সেদিন রাত থেকে। বিপিনবাবুর একটু রাত জেগে বই পড়ার অভ্যাস। আরতি ছেলেকে নিয়ে শুয়ে পড়ে, কিন্তু উনি জেগে থাকেন বেশ খানিকক্ষণ। 

তা সেদিনও আরতি শুয়ে পড়লে বিপিনবাবু সোফায় গা এলিয়ে বই পড়ছিলেন। সোফাটা মখমলের মত নরম, বসতেই অনেকটা ভেতরে ঢুকে গেলেন বিপিনবাবু। আরামে চোখ বুজে আসছে, হঠাৎ উনার মনে হল সোফায় কেউ যেন এসে বসল। 

উনি ধরফড়িয়ে উঠলেন। কে? তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলেন না। আর দেখবেনই বা কি করে? ঘরে তো উনারা তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই! মনের ভুল ভেবে বিপিনবাবু আবার বই পড়ায় মন দিলেন। উনার কিন্তু মনে একটা অস্বস্তি রয়েই গেল, যেন স্পষ্ট অনুভব করছেন কারুর অস্তিত্ব। কিছু বুঝতে না পেরে বিপিনবাবু একটু ঘাবড়ে গেলেন। বই পড়ায় আর মন বসছিল না। উনি গিয়ে শুয়ে পড়লেন।

আরতি হাসাহাসি করবে ভেবে ওকে কিছু বললেন না। কিন্তু পরদিন রাতেও সেই একই ঘটনা ঘটল। এবার বিপিনবাবু একটু ভয় পেলেন। উনি গিয়ে আরতিকে ডাকলেন। আরতি চোখ ডলতে ডলতে এসে বিপিনবাবুর কথা শুনে তো অবাক! 

' কি ভুলভাল বকছ? ঘরে তো তুমি ছাড়া আর কেউ নেই? বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছ বোধয়। এজন্য বলি রাত জেগো না। পেটে গ্যাস হলে এমন হয়।'

বিপিনবাবু চুপ করে গেলেন। সত্যি তো! এই ঘটনার কি ব্যাখ্যা দেওয়া যায়? উনি মাথা নেড়ে আরতির কথায় সম্মতি জানালেন।

পরদিন থেকে বিপিনবাবু আর সোফায় বসে রাত জাগতে সাহস পেলেন না। তবে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লেও আবার সহজে ঘুম আসেনা। এতদিনের অভ্যাস তো! একদিন উনার একটু কৌতূহল হল। এখনো কি ওই ঘরে অমন হচ্ছে? নাকি এটা সত্যিই উনার চোখের ভুল। ভাবলেন একবার ড্রইংরুমে গিয়ে দেখা যাক। যা ভাবা সেই কাজ। উনি ওই ঘরটায় উঁকি মেরে দেখলেন। নাহ, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সাহস করে ঘরে ঢুকলেন বিপিনবাবু।

কিন্তু সোফায় চোখ পড়তেই গা শিউরে উঠল উনার। সোফায় মাঝখানটা পুরো ডেবে আছে। ঠিক যেন কেউ ওই জায়গায় বসে আছে। আর হালকা একটা তামাকের গন্ধ বাতাসে ভাসছে।

বিপিনবাবু রীতিমত ঘামতে লাগলেন। প্রায় দৌড়ে এসে শুয়ে পড়লেন। ভাবতে লাগলেন এই ভুতুড়ে সোফা কিভাবে বিদায় করা যায়? কিন্তু সাথে সাথে চঞ্চলবাবুর কথাটাও মনে পড়ল। একবার নিয়ে গেলে আর ফেরত হবে না।  বিপিনবাবুর কেন জানি মনে হল এই সোফাটা আগেও কেউ নিয়ে ফেরত দিয়েছে। তাই চঞ্চলবাবু উনাকে ওই কথা বলেছিলেন।

দিনে ওই সোফায় বসলে কিন্তু কোনো সমস্যা হয়না। যা কিছু হয় শুধু রাতের বেলা। তবে আরতির মতে বিপিনবাবুর ভীমরতি ধরছে। হয় উনি বেশি ভুতের গল্প পড়ছেন নাহলে উনার মাথার গন্ডগোল হয়েছে।

এভাবে কিছুদিন কাটল। সেদিন বিপিনবাবুর ছেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাড়িতে লোকজন এসেছে। বেশ হইচই হচ্ছে। উদযাপন প্রায় শেষের মুখে। লাস্ট ব্যাচ বসেছে। জায়গার অভাবে কয়েকজনকে সোফায় বসানো হয়েছে। খেতে গিয়ে এক ভদ্রলোকের হাত থেকে হঠাৎ মাংসের ঝোল চলকে পড়ল সোফায়। পরক্ষণেই উনি যেন কিসের ধাক্কায় মাটিতে উল্টে পড়লেন। প্লেট ছিটকে পড়ল মেঝেয়। খাবার দাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছত্রখান। ভদ্রলোক রীতিমত ঘাবড়ে গেছেন। উনার স্ত্রী একটু দূরে বসে খাচ্ছিলেন। আচমকা এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে দৌড়ে এলেন ' ওমা, কি হল গো? মাথাটা ঘুরে গেল নাকি?'

ভদ্রলোক কিছু বলতে পারছেন না। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছেন সোফাটার দিকে। কেমন মিইয়ে যাওয়া গলায় বললেন ' মনে হল কেউ যেন ধাক্কা মেরে...'

ভদ্রলোককে কথা শেষ করতে না দিযে ঝাঁঝিযে উঠলেন উনার স্ত্রী। ' ওই তো, তার মানে মাথা ঘুরছিল। কতবার বলেছি প্রেশারের ওষুধ সময়মত খেতে!'

বিপিনবাবুরাও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন। আরতি দৌড়ে এসেছে। মেঝে পরিষ্কার করছে। বিপিনবাবু উনার পরিচর্যা করতে লেগেছেন। অতিথিরাও সব খাওয়া ফেলে ছুটে এসেছে। সব মিলিয়ে এক দক্ষযজ্ঞ কান্ড!

খানিক পরে সব স্থিতিশীল হল। ভদ্রলোকও এখন অনেকটা ঠিক আছেন। তবে ওই সোফায় আর বসছেন না। কেমন ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছেন ওদিকে। বিপিনবাবু উনাকে বললেন একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিতে। যদিও মনে মনে একটা অন্যরকম আশঙ্কা উনাকে গ্রাস করছিল। উনি যা ভাবছেন তা যদি সত্যি হয়...

সবাই চলে গেলে আরতি ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বিপিনবাবু আশু কর্তব্য স্থির করে ফেললেন। কালকেই উনি যাবেন চঞ্চলবাবুর বাড়ি। আর পারা যাচ্ছে না। একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে।

কিন্তু বিপিনবাবুকে কোথাও যেতে হল না। সকালে কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলতেই উনি চমকে উঠলেন। সামনে চঞ্চলবাবু দাঁড়িয়ে। একটু হতভম্ব হয়েই উনাকে ঘরে নিয়ে এসে বসলেন বিপিনবাবু। চঞ্চলবাবুর  মধ্যে একটু অস্থিরতা দেখা গেল। উনি একটু কিন্তু কিন্তু করে বলেই ফেললেন ' কিছু মনে করবেন না বিপিনবাবু। আমি সোফাটা ফেরত নিয়ে যাব। আপনার পুরো টাকাটা আমি নিয়েই এসেছি।'

' আপনি না এলে আমিই আজ যেতাম আপনার বাড়িতে এটা ফেরত দিতে। যবে থেকে এটা ঘরে এসেছে কি সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে আপনাকে কি বলব? এই রহস্যটা একটু খোলস করে বলবেন প্লিজ।'

এই বলে বিপিনবাবু সোফা নিয়ে আসার দিন থেকে যা যা ঘটেছে সব চঞ্চলবাবুকে বিস্তারিত জানান।

চঞ্চলবাবু বিষণ্ন মুখে মাথা নেড়ে বললেন ' আপনি শুধু নয়, যেই এই সোফা নিয়ে গেছে দুদিনের মাথায় ফেরত দিয়ে গেছে। আপনি তো তাও কয়েকদিন রাখলেন।

আসলে এই সোফা ছিল আমার বাবার ভীষন প্রিয়। উনি সারা সন্ধ্যা এখানেই বসে শুয়ে কাটাতেন। খুব যত্নে রাখতেন এটাকে। উনার ঘরেই থাকত। অন্য কেউ এটাতে বসুক উনি চাইতেন না। একবার আমাদের চাকর চা দিতে গিয়ে কিছুটা চা চলকে সোফায় পড়েছিল। উনি তাকে এই মারেন তো সেই মারেন। '

বিপিনবাবুর চকিতে মনে পড়ে গেল গতকালের সেই ঘটনা। তাহলে উনি ঠিকই আন্দাজ করেছিলেন!

চঞ্চলবাবু আবার বলতে শুরু করলেন ' অনেক বছর ব্যবহারেই পর এই তো বছরখানেক আগে বাবা ওটাকে  অনেক খরচ করে আগাপাশতলা রিপেয়ার করেন। সোফাটা দেখে তখন কে বলবে যে এটা পুরানো? বাবা যখন মৃত্যুশয্যায় তখনও বারবার বলতেন ওই সোফা যেন এখানেই থাকে। কিন্তু উনি মারা যাবার পর আমার স্ত্রী ঘরে পুরানো জিনিস আর রাখতে চাইলেন না। তাই বাবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাকে সোফাটা বিক্রির চেষ্টা করতে হয়। কিন্তু প্রতিবারই যে নিয়ে গেছে সে দুদিন পরে ফেরত দিয়ে গেছে। তাই আপনাকে অমন বলেছিলাম। কিন্তু গতকালের ঘটনা সবাইকে ছাপিয়ে গেছে।

এই সোফাটা আপনাকে বিক্রি করে একটা নামি ব্র্যান্ডের সোফা কিনেছিলাম। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সেটার লন্ডভন্ড দশা। কয়েকটা জায়গা ফাল করে কাটা। জায়গায় জায়গায় পুড়ে গর্ত হয়ে গেছে।দেখে মনে হয় কেউ আক্রোশবশত ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে কেটে আর সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে ওটার এমন দশা করেছে। উপরের কভার ছিঁড়ে ভিতরের স্পঞ্জ বেরিয়ে এসেছে। এত দামি সোফার এহেন দশা দেখে তো আমার স্ত্রী প্রায় কেঁদে ফেলেন আর কি! এদিকে দেখুন বাড়িতে তো আমরা তিনজন। আর কেউ ঢোকেনা। এমনকি কাল রাতে শুতে যাবার আগে আমি ঐ সোফাতেই বসেছিলাম। রাতে কে এমন করবে? আর বাড়িতে চোর ঢুকবে শুধু সোফার ক্ষতি করতে?

এই প্রসঙ্গে জানাই যে আমার বাবার তামাকের নেশা ছিল। এছাড়া রোজ রাতে বাবা স্বপ্নে দেখা দিচ্ছেন আর ধমকাচ্ছেন। আমার ঘাট হয়েছে। এই সোফা আর আমি বিক্রি করব না।আপনি টাকা নিয়ে ওটা ফেরত দিন।'

বিপিনবাবু হাঁ করে এতোক্ষন সব শুনছিলেন।সকাল সকাল এমন ভুতুড়ে আখ্যান শুনতে হবে কল্পনাও করেননি। বিশ্বস করতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু উনি নিজেও তো ভুক্তভোগী। সোফাটা আনার পর রোজ রাতে যা ঘটে আর কাল জন্মদিনের পার্টিতে যা ঘটল তাকে আর কিভাবেই বা ব্যাখ্যা করা যায়? 

কি আর করা? এমন সুন্দর একটা সোফা কিনেও কপালের ফেরে সেটা আর ভোগ করা হলনা, ফেরত দিতে হচ্ছে।আরতির মন খারাপ। ও এসব বিশ্বাস করেনা। কিন্তু ওর মনে হল বিপিনবাবুরও ইচ্ছা নেই সোফাটা রাখার। তাই আর কিছু বলল না। ওদের চোখের সামনে দিয়ে সোফাটা নিয়ে গেলেন চঞ্চলবাবু।


বাড়ি ফিরে চঞ্চলবাবু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। উফফ! কদিন যা গেছে! বিপিনবাবুকে তো সবটা বলেননি। উনার বাবার ঘরে কেউ ঢোকে না। অথচ রোজ সকালে উঠে দেখতেন সেই ঘরে জিনিসপত্র ছড়ানো, ছিটানো। এর সাথে ওই ঘর থেকে রোজ রাতে খসখস, ধুপধাপ শব্দ পেতেন। কোনো ইঁদুর নিশ্চয়ই ভারী টেবিল, চেয়ার ফেলে দেবে না! যতবার ওই সোফা কেউ নিয়ে গেছে ততবার এরকম হয়েছে। সোফা ফেরত আসতেই আবার সব ঠিকঠাক।স্ত্রীকে বলতে সে তো হেসেই উড়িয়ে দিল। চঞ্চলবাবু নিজেও প্রথমদিকে এসব বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ তাকে অন্যরকম চিন্তা করতে বাধ্য করেছে।

সেদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে চঞ্চলবাবু একা। উনি বাবার ঘরের ওই সোফায় বসে গল্পের বই পড়ছেন। বই পড়তে পড়তে খেয়ালই নেই কখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। একসময় উনি বুঝতে পারলেন এবার উঠতে হবে। ওই তো ধীরে ধীরে মিঠে অম্বুরী তামাকের সুগন্ধে ভরে উঠছে ঘরের বাতাস!

arnab.garia@gmail.com
কলকাতা

No comments:

Post a Comment