1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

মাটি

ছবি : ইন্টারনেট 

মাটি

ড: দেবদ্যুতি করণ

     নকুল মণ্ডলের বয়স হয়েছে; সত্তরের কোঠায়। ছেলে কয়েকবছর ওয়েল্ডিং-এর কাজ নিয়ে বাইরে থাকে। বেতন যে খুব একটা পায় তা নয়। কিন্তু এখন দেশে যে চাকরির আকাল; ওই চাকরিও মন্দের ভালো। ওর পৈতৃক পেশা ঢাক বাজানো; সাত পুরুষের ঢাকি। গ্রামে তাকে ‘নকুল ঢাকি’ নামে চেনে সবাই। বাপ-কাকাদের পড়াশুনোর বালাই ছিল না। এই জীবকাই ধরে রেখেছিলেন বহুকাল ধরে। নকুুুুল এর বাইরে গিয়ে সেকালের শিক্ষায় এইট পাশ করেছে। আরও পড়াশুনো করলে হত, কিন্তু সম্ভব হয়নি। শিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ওর আগে কেউ বোঝেনি। ও বুঝেই বা কী করল! ছেলেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করে পড়িয়েছিল। ওদের মত হাভাতেদের ঘরেও দু-একটা টিউশনিও দিয়েছে। লাভ কী হল? ছেলে বিলেত যাবে -এ আশা কখনও ছিল না। ভেবেছিল একটা ভদ্রস্থ গোছের মাস্টারি বা ক্লার্কের চাকরিই বা কী এমন শক্ত! সে চাকরিতেও এখন আকাল। বহু এম.এ. পাশ করা ছেলেও বেকার হয়ে বসে আছে। এ তো জন্মের সময় তাদের বাপ মায়ের ধারণাও ছিল না।

ছেলের উপর ও আশা করা ছেড়ে দিয়েছে অনেকদিন। ওরা নিজেরটা চালিয়ে নিতে পারলেই হল। বাপ মায়ের চিন্তা ওদের করতে হবে না। শুধু ঢাকের বাদ্যি বাজিয়ে তো পেট চলেনা। ও মাঝ বয়স থেকেই বুঝেছিল এযুগে বেঁচে থাকতে গেলে একটা রোজগারে হয় না। ঢাক বাজানোর পাশে আরও কিছু করা দরকার। ভেবে চিন্তে বাজারে দোকান পেতে বসে। জুতো সেলাই কখনও ওর ধাতে আসেনি। ছাতা ব্যাগ সেলাই করে হাতে, চেন কেটে গেলে লাগিয়ে দেয়। আর সাথে রাখে দু-পাঁচটা সস্তার ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র। টর্চ, সাইকেলের লাইট, সস্তার এল ই ডি বাল্ব, গ্যাস লাইটার, সস্তার বেল্ট-মানিপার্স এইসব  হাবিজাবি আর পাঁচরকম। ওই স্বল্প উপার্জনে চলে যায়। বাকি সময়টা চাষ করে মাঠে; নিজে সাথে দু-একজন মজুর নেয়। ঘরে চাল থাকলে পেটের চিন্তা অনেক কমে যায়। ঢাক পিটিয়ে শহরে রোজগার হয় কিনা নকুল জানে না। গ্রামে হয় না। তাও কালী পুজোতে রাত জাগলে দু পয়সা দেয় বটে, এবয়সে আর ওই রাত জেগে খাটুনি আর পোষায় না।

বাজারে ছাতা সেলাই করতে এসে কেউ বলে, - খুড়ো আগামী মাসে আমাদের বাড়িতে কালীপুজো।তোমাকে বলে রাখলাম। ঢাকের বাদ্যি লাগবে। পরে এসে বায়না করে যাব।

নকুল তখন অনুনয় করে বলে, - না খুড়ো, অখন আর রেতে জাগতে পারিনে।

-         কী বলছ খুড়ো? তুমি আমাদের বাড়ির তিন পুরুষের ঢাকি। মায়ের পুজো কি ঢাকের বাদ্যি ছাড়া হয় নাকি?

-         অন্য ঢাকি দ্যাখ বাপু।– নকুল সেলাই থেকে মুখ না তুলেই অনুরোধের স্বরে বলে।– কত নাপিত পুরুত কাজ ছাড়ি অন্য কাজ লিছে। তাইতে পূজা কি আটকা আছে?

-         তোমার যুক্তি শুনছি নি খুড়ো। এবারকার মত উদ্ধার করে দিতে হবে। মানত কালী পুজো। অঙ্গহানি হওয়া চলবে নি।

নকুল তাড়াতাড়ি সেলাই করে বক্তার হাতে ছাতা তুলে দিয়ে হাত জড়ো করে বলে, - মাফ কর খুড়ো। খেমা দ্যাও। তুমি অন্য ঢাকি দ্যাখ বাপু। আমি পারবো নিকো। অ্যাই কান মুড়লেম।

-         তোমাদের জ্বালায় আর কুল রক্ষা হল নি!

         বক্তা বৃদ্ধের হাতে বিশ টাকা ধরিয়ে বিদায় নেয়।

বুড়ো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। কালী পুজোয় রাত জাগার চেয়ে তার দিনমানে এই ব্যবসা অনেক ভালো। ন’মাসে ছ’মাসে কে কবে একবার ঢাকের বাদ্যি ভাড়া করবে তাই নিয়ে উনুনে ভাত চড়ে না। নকুল খেটে খাওয়া মানুষ। তার যে গতর একেবারে নেই তা নয়। খেটে খাওয়া মানুষের গতর এত সহজে নষ্ট হয় না। ঈশ্বর ধনীকে ধন দিয়েছেন, বিদ্বানকে দিয়েছেন বুদ্ধি চিন্তাশীলতা, গায়ককে দেন কণ্ঠ, সিনেমার নায়ককে দেন বাকপটুত্ব আর সুঠাম সৌম্য শরীর; খেটে খাওয়া মানুষকে দিয়ে থাকেন অসুরের গতর, জান্তব সহ্য। কিন্তু ওই কাজ আর মন লাগে না। তার যথেষ্ট কারণও আছে। সে যথাসময়ে জানা যাবে। যাইহোক সেই গতরের জোরেই খুড়ো এখনও জমিতে জন্তুর মত খাটে; বর্ষায় ধান, শীতে আলু। এই দুই ঘরে থাকলে অনাহারে থাকতে হয় না। নিজের জমির সাথে ভাগেও কিছু জমি নিয়েছে। তাদের ফসলের ভাগ দেয়। নিজের বাড়ির পাশে একটুকু জমিতে সবজি করে বউ। ঝিঙে চিচিঙ্গা বেগুন উচ্ছে কফি শালগম- যখন যেমন ফলে।

ওর মনে পড়ে কয়েকবছর আগের কথা। বয়েস তখন পঞ্চাশের ঘরে। তখনও চাষবাসের বাইরে ওর একমাত্র জীবিকা ঢাক বাজানো। বাজারে দোকান পেতে বসা তখনও অনেক বাকি। ছেলেটা তখন ছয়ের ক্লাসে পড়ে।  মেয়েটা বড় হয়েছে, কুুড়িতে পড়ল; এবার বিয়ে দিতে হয়। অথচ চারটি মানুষের জন্য উপার্জন ঢাকের বায়নার উপর!

পান্তা থাকে তো নুন নেই, -সেই অবস্থা। মেয়ের জন্য সমন্ধ দেখা শুরু হল। পাত্রপক্ষের হাজার রকম বায়নাক্কা; কেউ সাইকেল গয়না চায় তো কেউ নগদ টাকা। যার যারা চায় না তারা মেয়েকে নিয়ে গিয়ে রাখার মত জায়গাও নেই। সেবার নকুল যেসব বাড়িতে ঢাক বাজায় তাদের কাছে হাত পাতল। যদি মেয়ের বিয়েটা উদ্ধার করে দেয়! কেউ একটা টাকাও ছোঁয়ালো না। কেউ বলল, - টাকা যে নিবি শোধ দিবি কীকরে? তোর আছেই বা কী!

টাকা যোগাড় করতে পারল না। একখানা মেয়ের বিয়ে দিতেই পৈতৃক জমির অর্ধেক বিক্রি হয়ে গেল। বাকি তিনজনের পেটে টান পড়ল। নকুল অন্যদের জমিতে ভাগে চাষ শুরু করল। ছেলেটা তখনও পড়ছে। পড়ার খরচও বাড়ছে। কেউ বুদ্ধি দিল বা নিজেই ভেবে চিন্তে বাজারে ব্যাগ- ছাতা সেলাইয়ের দোকান দিল। তখনও ঢাকের বাদ্যি বাজানো একেবারে ছেড়ে দেয়নি। তবে ছেড়ে আসার কথাই ভেবেছিল। যাদের বাড়িতে ঢাক বাজায় তাদের ব্যবহারেও মনক্ষুন্ন হয়েছিল। কারোর কাছে কোনরকম সাহায্য পায় নি। সেই মন আর জোড়া লাগেনি।

এইভাবে কত মানুষই তাদের পৈতৃক কাজ ছেড়ে দিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে অন্য জীবিকা নিতে বাধ্য হয়েছে! ও পাড়ার নিতাইপুরুত এখন কলকাতার রেস্টুরেন্টে বাসন মাজা ধোয়া দেওয়ার কাজ করে। কত কুমোর মাটির জিনিস তৈরি ছেড়েছে, কত বোষ্টমের ছেলে কীর্তন বাদ দিয়ে চুল দাঁড়ি কাটে, কত ময়রার দোকান উঠে গেছে; ক’টা জেলে বা আজ জাল দেয়! বাপের কাজ ছেড়েছে অনেকই। নকুলও একেবারে ছেড়ে দিতে চায়। নকুল মণ্ডলের নামের এই ‘ঢাকি’ উপাধিটা তার কাছে বড় বোঝা। কেউ নকুল ঢাকি বলে ডাকলে মুখে কিছু না বললেও মনে মনে খুব বিরক্ত হয়।


      **

গতমাসে নকুল মণ্ডলের হৃদরোগ ধরা পড়ে। জীবনে এই প্রথম তার হাসপাতালে যাওয়া। এইসব মানুষের রোগ হলে জড়িবুটি ভরসা; অম্বল হাঁচি কাশিতে অর্জুন- তুলসী, পুড়লে পোড়া ঘায়ে চুন, খুব চোট লেগে ফুলে গেলে হলুদ; দুধে গুলে খাওয়ার জন্য দুধও না জুটলে জলে গুলেই খেতে হয়। আর সাপে কাটলে ওঝার বাড়ি আছেই। যদিও ওঝারা এখন জীবিকা ছেড়েছে; এ গ্রামে কেউ নেই। নকুলকে কখনও সাপে কাটে নি। সাপে কাটলে সে কোথায় যেত নিজেও জানেনা। হাসপাতাল সম্বন্ধে ওর দারুন ভয় ছিল। শুনেছে বাঘে ছুঁলে আটারো ঘা, পুলিশে ছত্রিশ আর হাসপাতালে ঘায়ের শেষ নেই; - তাই তো লোকে বলে। আরও শুনেছে হাসপাতালে গেলে মরার পর বডি কাটা হয়! কিসব বিদিকিচ্ছিরি ব্যাপার। এবার হাসপাতালে এসে ওর এতটা ভয় খারাপ লাগল না।  খুব শ্বাসের কষ্ট আর বুকের যন্ত্রনা হত, মনে হতো এই বুঝি মরে যাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠল। সতেরো দিনের মাথায় বাড়ি এল।  কয়েকদিন বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে পর আবার দোকান— বাড়িতে কতদিন বা বসে থাকা যায়। ডাক্তার বলেছে : এ অসুখ থাকবে সারা জীবন। অসুখ থাকবেই যখন থাক। কাজে তো করতে হবে।

দোকান সাজিয়ে বসার পর খুড়োকে অনেকে ঘিরে ধরে।

- কী খুড়ো; তুমি তো কুরুক্ষেত্র জয় করে এলে!

- খুড়োর ছবিটা বাঁধিয়ে রাখ! এই বয়সে যা ভেলকি দেখলে।

- খুড়ো এখনও জোয়ান আছে। দেখছিস না হার্ট লাংস দিব্যি স্ট্রং! কি এলেম দেখিয়েই না এলে..

- ঠিক বলেছিস রতু। আমরা তো ভেবেছিলাম তেসে গেল বুঝি খুড়ো!

প্রতিবেশী দোকানি আর খদ্দেরদের বাহবা কৌতুকের মাঝে সে মন দিয়ে কাজ করে। জীবনে বিদ্রুপ তো কম পায় নি। এসবে কান দিলে চলে না। এদের মাঝেও একজনের উপর তার চোখ আটকে যায়।

 পর পর কয়েকটা দোকানে খোঁজ নিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছেন একজন ধোপদুরস্ত মার্জিত পোশাক পরিহিত ভদ্রলোক।

কৌতুকের মাঝে কেউ একজন বলে: ওই লোকটা আবার এসেছে রে গুবলু! খুড়োকে ধরে নিয়ে যাবে মনে হয়। খুড়ো যা একটা স্যাম্পল!

মার্জিত ভদ্রলোকটি তার কাছে এসে নমস্কার জানিয়ে বললেন, - আপনি কি নকুল ঢাকি? আমি ‘ অন্বেষণ’ থেকে আসছি। এটি একটি সমাজসেবী সংস্থা। আপনাকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানাতে।

আবার ঢাকি! নকুল বিরক্ত হল না। এই ভদ্রলোকের কথায় ব্যবহারে একধরনের মিষ্টতা আছে। সে হাত জড়ো করে বলল,- আমি, আমিই সে অধম বাবু। কিন্তুক আপনে অ্যাদ্দুর থাকি ক্যান আমারে খুঁজতে অ্যালেন?

-         আমরা সেসব মানুষের খোঁজ করছি যারা অর্থের অভাবে পৈতৃক জীবিকা ছেড়ে দিচ্ছেন বা দিয়েছেন। সেই জীবিকা গুলোর অবক্ষয় ধরছে। - একটু থামলেন। সামান্য ভেবে আবার বললেন,- আমরা এবার নববর্ষের দিনে তাদের কলকাতা নিয়ে গিয়ে গুণী মানুষের সামনে তাদের প্রতিভা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তাদের জীবিকাগুলো যাতে নষ্ট না হয়ে যায়।

-         আমি কী করব গিয়া? আমি ত বুড়া মানুষ। আগের মত আর কি ঢাক বাজাতে পারি!

-         পারবেন। আমরা যুবুক -বৃদ্ধ সবাইকেই আমন্ত্রণ করেছি। আমরা আপনার প্রতিভার যথেষ্ঠ মর্যাদা দেব। - শহুরে ভদ্রলোকটি পাঁচশো টাকার দুটি নোট এগিয়ে দেন তার দিকে। - এটা এখন রাখুন। ওখানে গেলে যথেষ্ট সাম্মানিক দেব।

বৃদ্ধ হাত জড়ো করে বলল,- আপনে অত দূর থাকি অ্যাসছেন যখন আমারে খুঁজতে; আমি যাব। অ্যাই টাকাটি আপনের কাছে রাখেন দয়া করে। ট্রেন ভাড়া দিতে লাগিব না। - ও একটু থামল। চোখ জলে ছলছল করছে। বিড়বিড় করে বলল: একসময় ছেল রোজগার ছেল না। অখন আপনেদ্যার দয়ায় তা আছে বাবু।-  কিছু খুঁজল, পেল না; - বলছেলেম কি, আপনে একটি কাগজে আপনেদ্যার ঠিকানা লিখা দিয়া যান। আমি চলি যাব।

ভদ্র লোকটি একটি কার্ড বের করে ওর হাতে দিয়ে বললেন,- পয়লা বৈশাখ সকালে এই ঠিকানায় চলে আসবেন। -চলে যেতে যেতে ফিরে দাড়িয়ে বললেন – ও হ্যাঁ, অবশ্যই আপনার ঢাকটা নিয়ে আসবেন। ওটা আছে তো?

নকুল এবার খিক খিক করে হেসে বলল, - ওইডা আছে। অতখান নিমকহারাম হতে পারি নাই বাবু।

ভদ্রলোক হেসে নমস্কার জানিয়ে চলে গেলেন।

**

পয়লা বৈশাখ যথাসময়ে ঠিকানা হাতড়ে চলে এলেন নকুল ঢাকি। এর মাঝে ওর ওই ভদ্রলোকের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে। সুন্দর ব্যবস্থাপনার শীতাতপ নিয়ত্রিত জায়গায় বসে উত্তম আহার আর পানীয়তে রাত থাকতে উঠে ট্রেন যাত্রার তীব্র ক্ষুধা নিবারণ হল।

তারপর শুরু হল উজ্জ্বল তারকাদের সামনে প্রায় চল্লিশজন ঢাকির বাদ্যি। অন্যান্য যুবক এবং বৃদ্ধদের তুলনায় নকুলের বাজনাই শুধু যে ভালো তা নয়; রিফ্লেক্সও মন কাড়া।

কয়েকজন বাদ্য শিল্পী এগিয়ে এসে তাকে সম্মান জানালেন। একজন তবলা বাদক তার হাতের বিদেশি ঘড়িটি খুলে বৃদ্ধের শীর্ণ ঝুলে পড়া চামড়ার হাতে পরিয়ে দিলেন। কেউ কেউ তাকে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন । অন্বেষণ গ্রুপ তাকে সম্মানিত করল বিশ হাজার টাকা দিয়ে।

এরপর মধ্যাহ্ন ভোজনের পর বিদায়ের পালা। যাওয়ার সময় সে খুঁজে খুঁজে সেই প্রথম দিনের ভদ্রলোকটির কাছে গেল। বিদায় জানানোর পর তাঁর হাতে কুড়ি হাজার টাকার খামটা তুলে দিয়ে বলল,- বাবু আমি কন্যাদায়ে বাপের কর্ম ছাড়িছিলাম। আমার তো আর কন্যা নাই; এই টাকাটি আমার মত কুনও হতভাগারে দিবেন। অরা য্যান বাপের কাজ না ছাড়ে।

তাঁকে কিছু বলতে না দিয়েই বৃদ্ধ বিদায় নিলেন। ঢাক কাঁধে নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে চলেন কর্মপ্রাণ কোনও আদি আত্মা। শহুরে মানুষটি চশমা খুলে ক’ফোঁটা চোখের জল মুছে আবার চশমা পরলেন। এতদিনে তাঁর অন্বেষণ বুঝি সফল হল। বিদায়ী বৃদ্ধকে দূর থেকে জানালেন পিতৃ শ্রদ্ধা।

বুড়ো মানুষটির চপ্পলটি ছেঁড়া। এতক্ষণ তার চোখে পড়েনি। চপ্পলে বোধ হয় কাদা ছিল। অফিস ঘরটির মেঝেতে সেই কাদা পায়ের ছাপ পড়েছে। তিনি অন্যদের অলক্ষ্যে মাটিতে হাঁটু রাখলেন। আচমকা নরেশ এগিয়ে এসে বলল,- আরে আরে রবিনদা পায়ে কী হল? লাগলো নাকি? এবাবা কার্পেটের উপর কাদা পায়ের ছাপ কে ফেললে! কী সব লোকজন.... অ্যাই রাধু এদিকে আয়, কাদা দাগগুলো সাফ করে দিয়ে যা তো ভালো করে।

রবিন ব্যস্ত হয়ে উঠে পড়লেন, - আরে কী করিস। এই মাটি অন্বেষণের মাটি; আমি এনেছি। এগুলো থাকবে, মুছিস না।

রবিন বেরিয়ে যায়। দূর থেকে নরেশের কথা ভেসে আসছে,- আরে রবিনদা কোথায় চললে? পায়ে লাগেনি তো? ... আরে কোথায় চললে! ‘অন্বেষণের মাটি’... দূর ছাই। মাথাটা গেছে বোধহয়।... রাধু এগুলো মুছিস না। রবিনদা বলে গেল ‘ অন্বেষণের মাটি’।

রাধু চেঁচিয়ে বলল, - কী! কীসের মাটি!

রবিন দূরে দাঁড়িয়ে মনে মনে হাসল।– বাঃ আজ আকাশটা বেশ পরিস্কার তো! কালকের বৃষ্টি, মেঘগুলো গেল কোথায়... মনে মনে ভাবলো ‘আর কিছু!’

আবার একবার হাসল। হুঁ, বয়স কত হল? হ্যাঁ ঠিক বত্রিশ।

drdebadyuti.karan@gmail.com
কলকাতা

No comments:

Post a Comment